somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শব্দ হন্তারক

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোতা ব্যাথাটা এখনো আছে। কেমন যেনো এক জায়গায় উতপত্তি হয়ে মাথার সবযায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে সমান যন্ত্রণা নিয়ে। এমন অবস্থায় সুতীক্ষ্ণ একটা শব্দ এসে তীর্যক ভাবে আঘাত করছে প্রতিটি নিউরনে। নাড়িয়ে দিচ্ছে অনুভুতি। এরকম মুহুর্তে শ্রবনশক্তি থাকাটাও পাপ মনে হয়। হাতে যদি একটা দূরনিয়ন্ত্রক থাকতো তবে শব্দহীন করে দিতাম অদূরেই অবস্থিত তারস্বরে চেচিয়ে যাওয়া মুঠোফোনটিকে। কোমলতাহীন শব্দ তাও এত উচ্চস্বরে কেউ ব্যবহার করতে পারে আমার জানা ছিলোনা। হয়তো তার কাছে শব্দটা কোমল কোনো সংগীতের মতনি। আমার কাছে ভয়াবহ রাত্রির দুঃস্বপ্নের মতন মনে হচ্ছে। ইশ! থাকতো যদি একটা দূরনিয়ন্ত্রক। ইচ্ছামত কমিয়ে বাড়িয়ে দিতাম শব্দ নামক কম্পনের তীব্রতা। মধুর সঙ্গীতকে আপন করতাম, থামিয়ে দিতাম অযাচিত কম্পনের বাহুল্য। এই মুহুর্তে উচ্চকিত মুঠোফোনটা ছাড়াও আর কি কি থামিয়ে দেওয়া যায়!! হ্যা, পেয়েছি। ঐতো উচ্চস্বরে কন্ঠনালি ফাটিয়ে চিৎকার করছে বিরক্ত উদ্রেককারী পথশিশু, তার সৃষ্ট কম্পন থামিয়ে দিলে কেমন হবে।নাহ! বিষাদ লাগছে অপুষ্ট শিশুটির শব্দহীন জগতকে। সেখানে ভনিতা নেই, তার চোখে মুখে অপ্রাপ্তির সত্যিকার ছায়া পড়েছে তার চেয়ে বরং শব্দময় জগতটায় ভালো ছিলো। তার সৃষ্ট শব্দের জন্য তিরস্কার করা যেত, বিরক্তি প্রকাশ করা যেত এখন মায়াময়তা ঘিরে ধরছে। ওর চেয়ে বরং থামিয়ে দেওয়া যেতে পারে রাস্তায় চলাচলরত যানের শব্দগুলোকে। আহ! সত্যি দারুণ হতো তাহলে। কি ছিমছাম জগত। শব্দহীন কম্পনহীন জগত। প্রয়োজনের তাগিদেই চলবে, তাড়া নাই কারো সে জগতে। একে অন্যের শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে পথ চলার আনন্দ সবার চোখেমুখে। কিংবা হাত পা ছুড়ে তীব্র স্বরে প্রতিপক্ষকে গালাগালরত নীতিনির্ধারক হতে চাওয়া ব্যক্তিটির সৃষ্ট কম্পঙ্ক কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। হা হা হা, অদ্ভুত হাস্যকর লাগছে শব্দহীনতায় ব্যক্তিটিকে। একজন ভাড় যেন পৃথিবীর আদি অকৃত্তিম সমস্ত কৌতুক একে একে পরিবেশন করছে অদ্ভুত অভিনয়ের ভঙ্গিমায়। কি হাস্যকর! চোখেমুখে বিরক্তি এবং লোভ খেলা করছে।
- তুমি হাসছো কেনো?
ধ্যান ভাঙ্গলো একটি শিশুর জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে।
এর প্রতিউত্তর সাথে সাথে দেওয়াটা দুস্কর। একজন মধ্যবয়সি লোক অতিপ্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারনি সভার অদুরে দাঁড়িয়ে হাসছে, সেটা ব্যখ্যা করা সহজ হতো যদি সত্যিই এটা একটা অভিনিত মঞ্চ হতো। আবার জিজ্ঞাসু চোখকে ফাঁকি দিয়ে সটকে পড়ার উপায় ও নেই কারন সে পালিয়ে যাওয়ার পথের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে। তাকে মিথ্যাও বলা যাবে না। কারন শিশুদের মাঝে ভণিতা নেই বলেই তারা সত্য এবং মিথ্যাকে খুব সহজেই আলাদা করতে পারে। তাদের জগতটা সত্যের সেখানে মিথ্যার প্রয়োজনীয়তা বাহুল্য বৈ কিছুই নয়। তাই তাকে সত্য বলতেই প্রস্তুত হলাম যদিও ভয় ছিলো সে সেটা বুঝতে পারবে কিনা। বললাম,
- বক্তৃতা প্রদানকারীকে লক্ষ্য করো শব্দ ছাড়া! তাহলে বুঝবে আমি কেনো হাসছি।
শিশুটি বিস্ময়মাখা চোখ দেখে ভয় পাই সে আমাকে মস্তিস্কবিকৃতদের দলে ফেলে কিনা তাই ভেবে। কিন্তু কিছুক্ষন সে সভা অবলোকন করে হাসিতে ফেটে পড়ে। আশেপাশে উপস্থিত তার বন্ধুরা তাকে ঘিরে ধরে কারন অনুসন্ধানে। হাসির মাত্রা বেড়ে যায়। এবার আমি সটকে পড়ি কারন আমি জানি হাসি সংক্রামক। উপস্থিত জনতার মাঝে ভাড়ের সত্যিকার গুনগ্রাহি কেউ থাকতেই পারে সে বা তারা শিশুদের কিছু না বললেও হাসির যোগানদাতা আমাকে ছেড়ে দেবে সেটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই।

একটু নিরিবিলিতে চলে আসি। শব্দহীন জগত সৃষ্টি করাটা খুব অসম্ভব কিছুনা। তার প্রমাণ আমি কিছুক্ষন আগেই পেয়ে গেছি। এখনো মনে হচ্ছে আমি সেই জগতে আছি, সেটা আমার অবস্থান নিরিবিলি স্থানে হওয়ার জন্য হলেও হতে পারে। একঝলক ঠান্ডা বাতাস আমাকে জড়িয়ে চলে গেলো। কিন্তু আমি তার আগমনী শব্দ শুনতে পাইনি। এবার আমি ভয় পেয়ে গেলাম সত্যি কি আমি শ্রবনশক্তি হারিয়ে ফেলেছি!! মধুর সঙ্গীতের কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলেও খুব একটা দুঃখিত হয়নি এই ভেবে যে আমার শ্রবন যন্ত্রের কাছে সবসময় মধুময় কথা বলার লোক নেই বললেই চলে। ওর থেকে শ্রবনহীন থাকাই ভালো। অনুভুতিটা তীব্র হবে।
সূর্যালোকে চোখটা জ্বলছে হঠাৎ করেই। এখন আমার চোখহীন জগত অনুভব করতে ইচ্ছে করছে প্রচন্ড!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৩৭
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×