somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৬ ডিসেম্বর সর্বাধিনায়ক অনুপসি'ত ছিলেন কেন?

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাপ্রিয় জাতি দীর্ঘ ৯ মাস কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। কেউ স্বাধীন দেশে গাজী হয়ে ফিরেছে। কেউবা শাহাদতবরণ করে স্নিগ্ধ শীতল শ্যামল বাংলার পবিত্র জমিনে শেষ ঠাঁই নিয়েছে। তাদের সেই অসীম ত্যাগের বিনিময়ে জাতি ফিরে পেয়েছে স্বাধীনতা। কিন' স্বাধীনতার স্বপ্ন-সাধ হলো ভূলুণ্ঠিত। গোটা জাতি ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবলে হয়ে পড়ে জিম্মি। ভাবতে অবাক লাগে, স্বাধীনতার যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় স্মারক, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠনে বাংলাদেশের কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব রাখা হলো না। কেন সে দিন রাখা হয়নি, দেশবাসীর মনে নানা প্রশ্ন জেগেছে। যে সেনাপতির নির্দেশে এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই জেনারেল ওসমানীর মাথায় না উঠে বিজয়ী যোদ্ধার মুকুট উঠল ভিন্ন দেশে এক জেনারেলের মাথায়।
এ প্রসঙ্গে আমাদের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্র বাহিনী ফ্রান্সকে মুক্ত করেছিল। কিন' জেনারেল ম্যাক আর্থার কিংবা মিত্র বাহিনীর কোনো নেতা সেদিন নরম্যান্ডি বা প্যারিসে গিয়ে বলদর্পে ঢোকেননি। বিজয় শোভাযাত্রার অগ্রভাগে ছিলেন ফরাসি নেতা দ্য গল। কিন' সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এ কী হলো? বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ওসমানীকে বাদ দিয়ে জেনারেল নিয়াজির কাছ থেকে আত্মসমর্পণ গ্রহণ করলেন ভারতীয় জেনারেল অরোরা। ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধির উপসি'তি না থাকার মূলে কী কারণ ছিল?
৯ নম্বর সেক্টর অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর এম এ জলিল লিখেছেন- ঐতিহাসিক ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসানের দিন। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। যে যুদ্ধ বাঙালিদের সশস্ত্র গণবিস্ফোরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে শুরু হয়, তা শেষ হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধিনায়কের কাছে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়কের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। হিসাব মিলছে না কেন? হিসাবের এই গরমিলের জন্য দায়ী কে বা কারা? যারা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল, যুদ্ধশেষে পরাজিত শত্রুপক্ষ সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করল না কেন? পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তো কোনো যুদ্ধ হয়নি? মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং মুক্তিকামী বাঙালি জনগণের মধ্যে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের হেতুটি দেখা দিলো কেন- কোন উদ্দেশ্যে?
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল ওসমানীর কাছে পাকিস্তানের পরাজিত জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ করলেন না কেন? আত্মসমর্পণের সময় কর্নেল ওসমানী ঢাকায় এলেন না কেন? তখন তিনি কোথায় ছিলেন? আজো বাংলাদেশের জনমনে এসব প্রশ্নের ভিড় জমছে। উত্তর দেশবাসী আওয়ামী লীগের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে, কিন' আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এবং ভারতে অবস'ানরত প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এসব প্রশ্নের জবাব দেয়ার আজ পর্যন্ত কোনো তাগিদই বোধ করেনি। (অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা, পৃ. ৩৫, ৩৬)
শুধু ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধিনায়কের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধিনায়কের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকেই বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবসের পরিবর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘ইস্টার্ন কমান্ড দিবস’ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের পেছনে আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার এবং পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্বাঞ্চলের রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয় ঘোষণা করা।
ভারতের আনন্দবাজার গ্রুপের সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ধারাবাহিক উপন্যাস ‘পূর্ব-পশ্চিম’-এর ১৮২ পর্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ওসমানীর অনুপসি'তি সম্পর্কে বলা হয়, ভারত কখনো ওসমানীর পরিচালিত মুক্তিবাহিনীর অস্তিত্বকে স্বীকার করতে চায়নি। ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিনে পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি ও ভারতীয় জেনারেল অরোরার মধ্যে ঐতিহাসিক যে যৌথ দলিল সম্পাদন হয়েছিল, সেখানে অরোরার পদবি কী লেখা হয়েছিল? এ প্রসঙ্গে দেশবাসীর পুনঃজ্ঞাতার্থে দলিলের প্রতিলিপিটি হুবহু তুলে ধরার প্রয়োজন। দলিলের প্রতিলিপি নিম্নরূপ : ÔÔThe Pakistan eastern command agree to surrender all Pakistan armed forces in Bangladesh to Lieutenant General Jagjit Singh Aurora General, officer-commanding in chief of the Indian and Bangladesh forces in the eastern theatre, This surrender includes all Pakistan land, air and naval forces and civil armed forces. They are currently located to the nearest regular troops under the command of Lieutenant General Jagjit singh.
The Pakistan eastern command shall come under orders of Lieutenant-General Jagjit Singh Aurora as soon as this instrument has been signed, Disobedience of orders will be regarded as breach of the surrender terms and will be dealt with in accordance with the accepted laws and usages of war. The decision of Lieutenant General Jagjit Singh Aurora will be final, should any doubt arise as to the meaning or interpretation of surrender terms.
Lieutenant General Jagjit Singh Aurora gives a solemn assurance that personnels who surrender shall be treated with dignity and respect that soldiers are entitled to in accordance with provisions of the Geneva Convention and guarantees the safety and well-being of all Pakistan military and para-military forces who surrenders, protection will be provided to foreign nationals, ethnic minorities and personnels of West Pakistan origin by the forces under the command of Lieutenant General Jagjit singh AuroraÕÕ (আমি বিজয় দেখেছি ও সাপ্তাহিক দেশ ১২ নভেম্বর ১৯৮৮

জেনারেল ওসমানীকে ভারতীয় বাহিনী কখনো সুনজরে দেখেনি বলেই মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়। এমনকি কারা তার হেলিকপ্টারে সে দিন গুলিবিদ্ধ করে প্রাণনাশেরও চেষ্টা করেছিল, দেশবাসী এ ব্যাপারে এখনো অজ্ঞাত।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×