somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাগজের নৌকা- শেষ পর্ব

৩১ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব-https://www.somewhereinblog.net/blog/mhanif89/3029953

আপনার শৈশবের কথা মনে পড়ে জজো?
   হুঁ, শৈশবটা রাজশাহীতে কাটিয়েছি। বড় বড় আম বাগান। একটু বৃষ্টি হলেই দৌঁড়ে যেতাম।দল বেঁধে আম কুড়াতাম। আপনার?
   আমারটা বললে ফুরাবে না। রাতের বেলা অন্ধকারে জোঁনাকী ধরতাম। ভোরবেলা ফুল কুড়াতে যেতাম। পূর্ণিমা রাতে পুকুর ঘাটে বসে চাঁদের আলোয় গল্প করতাম। ইস, সেদিনগুলো যদি ফিরে পেতাম। সেই সুখের দিনগুলো।
   অতীতের দিনগুলো কখনো ফিরে আসে না। তবু নিজের ভালবাসা দিয়ে আবার  শৈশবে ফেরা যায় খেয়া।
  আপনি পূনর্জন্মের কথা বলছেন?
   সবাই সন্তানের মাঝে তার অস্তিত্ব খূঁজে পায়। এটাকে পূনর্জন্ম বলতে দোষ কোথায়?
   দোষ আছে জজো। ওটা আরেকটা জীবন। সে জীবনের মাঝে নিজেকে কল্পনা করা যায় মাত্র, অস্তিত্ব নয়। অস্তিত্বের জন্য চাই নিজেকে। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস আর কর্মকে। এ ও বড় চিরন্তন। স্বাভাবিকতার দ্বারে দ্বারে তার অবস্থান। আপন আপন শক্তি দিয়েই তাকে মাপতে হয়। সন্তান সে অন্য জিনিস। ভালবাসার উৎসর্গ হৃদয় নিংরানো ধন।
   হুঁ, সবাই সন্তানকে গভীর ভাবে ভালবাসে।
  কারণ মানুষের ভালবাসা অনেকটা পৃথিবীর মত। পৃথিবী যেমন সব কিছুকেই তার কেন্দ্রের দিকে টানে। স্নেহ-ভালবাসাও সেরকম, সেটা নিম্নমুখী।
   আপনার সন্তানকে কি নামে ডাকতে চান খেয়া?
   সেতো ভেবে দেখিনি জজো।    তবে ছবি বলে ডাকবেন। এ ডাকনাম। মেয়ে হলে রাখবেন। এটুকু আপনাকে দিলাম।
   আর ছেলে হলে?
   তবে রোজ।
   আপনার স্মৃতিকে রেখে দিতে চান?
   আমি স্মৃতিহারা নই, স্মৃতি রাখতে ভালবাসি।
  বেশ, কথা দিলাম। আর কিছু?
   এর বাইরে কিছু নয়।
   বলে জজো ক্যামেরাটা আমার হাতে তুলে দিল। আমি ছেলেমেয়েদের লাফালাফি আর গায়ে জল ছিটানোর ফটো তুললাম। আমার সাথে জজোও তুললো। আমার হাতে একটা সাদা কাগজ ছিল। কাগজটা দিয়ে আমি একটা নৌকা বানালাম। কাগজের নৌকা। বানিয়ে পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দিলাম। নৌকাটা ভেসে ভেসে মাঝপুকুরে চলে গেল।
  ভজজো বললো, এটাই কি আমাদের শেষ দেখা?
   আমি বললাম, আমায় দেখতে আসবেন?    যদি চান তো?
   যদি না চাই?
   তবে হঠাৎ যেন দেখা হয়।
   তাতে লাভ?
   আজ যেমন আপনি শৈশবে ফিরে গেছেন, সেদিন আমিও নিজেকে ফিরে পাব।
    সে ফিরে পাওয়ায় কোন আনন্দ থাকবে না জজো।
   তবে কি এখানেই আমার শেষ খেয়া?
   আমি জানি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
   আপনারতো কষ্ট হবার কথা নয় খেয়া?
   সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায় না জজো।
   তবে কি ভেবে নিব আপনিও আমায় ভূলে থাকতে পারবেন না?
   আপনি কিছুই ভাববেন না। তাতে শুধুই কষ্ট পাবেন।
   কষ্ট পেলেও আমি ভাববো। আমায় ভাবতে হবে খেয়া।
   সেটুকু আপনার, আমি জোর করব না।
   আপনাকে করতে হবে।
   বেলা ডুবে যাচ্ছে। আজ চলুন।আমাকে যেতে হবে।
   আপনি যাবেন না খেয়া।
   না জজো। আমাকে যেতেই হবে। প্লিজ আমাকে আটকাবেন না। সূর্য ডুবতে বসেছে। সন্ধ্যা হচ্ছে। আমার আর দেরি করা যায় না।
   আর একটু সময় খেয়া। প্লিজ আর একটু সময়।
   জজোর রিকোয়েস্ট আমার পক্ষে রাখা সম্ভব হল না। আমি চলে আসলাম। তখন  সূর্য ডুবে গেছে। আঁধার নেমেছে চারিদিকে।
   জজো বারবার করে বললো সে রেখে আসবে কিন্ত আমার ভাল লাগছিল না। মনে হচ্ছিল ওর ভালবাসা আমাকে দূর্বল করে তুলছে। আমি যেন ওকে ভালবেসে ফেলছি।
  জোরে হেঁটে এসে আমি একটা ট্যাক্সি নিলাম। ট্যাক্সি ছুটে চলতে লাগলো। রাস্তার চারপাশে কোলাহল। কিছুক্ষন চলার পর জানালার ফাঁক দিয়ে ভরা পূর্ণিমার আলো এসে আমার মুখের উপর পড়লো। আমার বুকটা বিষাদে ফেটে যেতে লাগলো। শরীরে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করলো। আনমনা মনটা নিয়ে বাইরে তাকালাম। কিন্তু আমার বড় একা লাগা শুরু হল। আমি ভাবতে লাগলাম। এতক্ষণ কে যেন আমার সঙ্গে ছিল? আমায় ভালবাসতো। আমাকে আপন করে নেয়ার জন্য ব্যাকুল  ছিল। অথচ আমি এখন একা। কিছুক্ষন পর  আরো একা হব। জজো আজ অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে। ও চলে গেলে আমার কষ্ট হবে না তো? সইতে পারবো তো হৃদয় হারানোর এ জ্বালা?জজো ভাল থাকবে তো? মনে রাখবে তো আমাকে? জজো পাশে থাকলে ভাল লাগে। এখন থাকলেও ভাল লাগতো। ভীষন ভালো।
অথচ এখন থেকে আমি একা। বড় একা।
জজো---আমার প্রেম, আমার ভালবাসা। আমার একদম কাছের কেউ----একদম কাছের----অন্তরের-----একদম নিশ্বাসের ভিতরকার।
   না, না, জজো কোথায়? কোথায়----? কতদূরে-----? আমাকে ফিরে যেতে হবে। জজোকে আটকাতে হবে-- হবেই-----।
   কিন্তু পূবালী হাওয়া বইছে। পালে ঝড় নেমেছে ভীষণ, দমকা উঠেছে। ফিরবার পথ কোথায়?
সমাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×