somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু আগে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় ভারত একটি আদেশ জারি করে। সেই আদেশে বলা হয়, সমস্ত মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডে থাকবে। মুক্তিবাহিনী বলতে কোনো আলাদা বাহিনী থাকবে না।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, স্বাধীনতার চেতনা,স্বাধীনতার চার দশক পর দেশের উন্নয়ন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য দেশের সম্পর্কসহ বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেছি মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এম হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতিকের সঙ্গে। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হল।

রেডিও তেহরান : ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পেছনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক বৈষম্যকে প্রধানত দায়ী করা হয়। আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ছাড়া পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার আরো কারণ ছিল কিনা ?

এম. হামিদুল্লাহ খান : আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ছাড়া পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পেছনে আরো কিছু কারণ ছিল। যেমন-চাকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুযোগ-সুবিধা, বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের মেধাবী ছাত্রদের পাঠানো এমনকি খেলাধুলার ব্যাপারেও আমাদের প্রতি একটা অনীহা ও বৈষম্য প্রদর্শন করা ছিল পাকিস্তানীদের জাতগত অভ্যাস। আইয়ুব খানের 'Friends of Masters' বইয়ে বাঙালীদের সম্পর্কে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, গোটা পশ্চিম পাকিস্তানী জনগোষ্ঠী একটা xenophobia-তে ভুগছিল। আমাদের প্রতি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের শ্লেষমন্যতা বা হীনমন্যতা। অর্থাৎ তারা শ্রেষ্ঠ এবং আমরা নিকৃষ্ট এমন একটা ধারণা তাদের ছিল। এক সময় ভারতের হিন্দুরা যেভাবে ব্রাহ্মণ ও শুদ্র বিবেচনা করত এবং মুসলমানরা আশরাফ-আতরাফ বিবেচনা করত ঠিক সেভাবে আমাদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানীদের একটা শ্লেষমন্যতা সাংঘাতিকভাবে বিরাজ করছিল। এসব নানাবিধ বিষয় পাকিস্তান ভাঙার জন্য কাজ করেছিল বলে আমার মনে হয়।

রেডিও তেহরান : তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তবে, যুদ্ধের শুরু থেকেই ভারত বিভিন্নভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করে এবং শেষ দিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিন ভারতের কাছেই পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পন করে। এ প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করেন, পাকিস্তান ভাঙ্গার পেছনে ভারতের ইন্ধন ছিল এবং ভারত নিজের স্বার্থেই পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

এম. হামিদুল্লাহ খান : পাকিস্তান ভাঙার পেছনে এ রকম একটা বিষয় থাকা অস্বাভাবিক নয়। কারণ ভারত চিরকালই বলে এসেছে 'অখণ্ড ভারত মাতা'। আর সে কারণে ভারত বিভক্তির পর তাদের মধ্যে একটা সুপ্ত ক্ষোভ কাজ করছিল। তবে সেটি ছাড়াও আমি বলব,পাকিস্তান ভাঙার পেছনে পাকিস্তানীরাই ইন্ধন যুগিয়েছে। ভারত গায়ে পড়ে ওই কাজে অগ্রসর হতে পারেনি। পাকিস্তানীরা সে ক্ষেত্র তৈরি করে না দিলে বা ইন্ধন না দিলে ভারতীয়দের মনের গুপ্ত বাসনা অর্থাৎ- গোটা ভারতের সবগুলোকে রাজ্যকে একীভূত করে হিন্দুবাদী শাসনে আনা- সে বিষয়টি সহজে বাস্তবায়ন হতো না। বৃটিশ শাসন থেকে ভারত ভাগের সময় কংগ্রেস নেতা সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল বলেছিলেন, 'ভারতকে ব্রিটিশমুক্ত করার জন্য আমরা বিভক্তি মেনে নিচ্ছি। তবে পাকিস্তান নামক এই অবৈধ সন্তানটিকে গ্রাস করা আমাদের দশ মিনিটের কাজ।' এর মাধ্যমে ভারতীয়দের ওই বক্তব্য বাস্তবায়নের একটা সুযোগও তৈরি হলো।

পাকিস্তানীরা যখন আমাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করল তখন মানুষ ছুটাছুটি করে ভারতের দিকে পালাতে শুরু করল। আর ভারতীয়রা তাদেরকে আশ্রয় দিল এবং ভারত সরকার পুরোপুরি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করল। তবে আমাদেরকে খুবই কষ্টের মধ্যে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ভারতীয়রাও সেই সুযোগে আমাদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করেছে এবং আমাদেরকে তা সহ্য করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, শেষ দিকে আমাদেরকে সম্পূর্ণভাবে তাদের অধীন করে ফেলা হয়। তারপরও ভারতীয়রা সে সময় আমাদেরকে যে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে সে জন্য অবশ্যই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। তবে, এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু আগে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় ভারত একটি আদেশ জারি করে। সেই আদেশে বলা হয়, সমস্ত মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডে থাকবে। মুক্তিবাহিনী বলতে কোনো আলাদা বাহিনী থাকবে না। আর এটি ছিল ভারতের চাণক্য নীতির একটি অংশ। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধে Participate করেছি এটাকে তারা পুরোপুরি সে সময় এবং আজ অবধি অস্বীকার করে আসছে। তারা ওই যুদ্ধকে বলে 'Indo-Pak War of 1971'.
আমাদের যুদ্ধ করার ইতিহাস কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, কোনো রেকর্ডে নেই। ফোর্ট উইলিয়ামে যে ছবি রাখা হয়েছে তাতে কোনো বাংলাদেশীর ছবি নেই। কোথাও কোনো বাংলাদেশীর হাত দেখা গেলে তাও মুছে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পনের দিন জেনারেল ওসমানী সাহেবকে ঢাকায় আসতে দেয়া হয়নি। সেকেন্ড ইন কমান্ড রব সাহেবকেও আসতে দেয়া হয়নি। সুতরাং এটাকে তারা তাদের সেই পলিসির অংশ হিসেবে নিয়েছে। এমনকি আজকাল যে যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের কিন্তু ভারতের পরামর্শে মাফ করে দেয়া হয়েছিল; শেখ সাহেবকে বাধ্য হয়ে তাতে সই করতে হয়েছিল।

এছাড়া আরো একটি বিষয় আমি এখানে আনতে চাই। সেটি হচ্ছে, ৭ দফা গোলামীর যে চুক্তি সই করিয়েছিল ভারত- তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। বিডিআরকে শেষ করে দিয়ে, তাদের নাম নিশানা মুছে দিয়ে গর্বিত একটি বাহিনীকে আজ নাইট গার্ডে পরিণত করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে 'র' এর প্রধান ডি রাবন বলেছিলেন, 'বিডিআর একটি ভয়ংকর বাহিনী। আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভয়ানক ক্ষতিকারক একটি ফোর্স। এগুলোকে রেখে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ভারত শান্তিপূর্ণভাবে তাদের শাসন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। '

রেডিও তেহরান : অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়নসহ নানা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বাধীনতার পর চার দশক অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পায়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে। তো, চার দশক পর বাংলাদেশ যে উন্নতি করেছে তা কি যথেষ্ট মনে করেন আপনি?

এম. হামিদুল্লাহ খান : আপনার এই প্রশ্নের উত্তরটা আমি দু'ভাগে ভাগ করে দিতে চাই। প্রথমত: দেশের মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি করেছে। আর দ্বিতীয় বিষয়টি সেটি হচ্ছে, আমলাতন্ত্র নির্ভর কলুষিত রাজনীতি। এটি আমাদের দেশকে উন্নতি তো দূরের কথা গহীন অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেছে।

প্রথম দিকটির বিষয়ে বলতে চাই- বাংলাদেশের young generation বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের উদ্ভাবনী শক্তি, উদ্যম ও মেধা দিয়ে, শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পেশায় অনেক এগিয়ে গেছে। আগে বাংলাদেশে একজন ডক্টরেট খুঁজতে গ্রামের পর গ্রাম যেতে হত। অথচ এখন আপনি বাংলাদেশের একটি গ্রামের দিকে তাকালে দেখবেন, সেখানে বেশ কয়েকজন ডক্টরেট ডিগ্রীধারী আছে। শুধু তাই নয়, ব্যারিস্টার, অধ্যাপক, সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ দেখতে পাবেন। আগে বইমেলাতে সব ভারতীয় বই বিক্রি হত। এখন বই মেলাতে Maximum বই থাকে বাংলাদেশী। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের উদ্যমী সাধারণ মানুষের সাফল্য এবং কৃতিত্বের কথা অবশ্যই বলতে হবে। এমন একটা সময় ছিল আমাদের দেশের কোন মানুষ বিদেশে যেতে পারত না। নানা রকম বাধা ছিল। আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই এ প্রসঙ্গে। আমার বড় ভাই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার পরও উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে মস্ত বাধা আসে। অবশেষে পার্লামেন্টে গিয়ে অনুমতি সাপেক্ষে স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় গিয়েছিল। অথচ তখন তিনটি তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া পাঞ্জাবীকে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা পেতে হয়নি। অথচ বর্তমানে দেখছেন বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বা বিভিন্ন কারণে যাওয়ার জন্য কোন বাধা নেই। এমনকি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও বিদেশ থেকে পিএইচডি করার সুযোগ পাচ্ছে। তো এক্ষেত্রে বলতে হবে আমাদের দেশের উর্বর মাটি এবং উর্বর মস্তিস্কের নতুন প্রজন্ম সব ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাতে পারছে। তারা উন্নতি করছে এবং আরো উন্নতি করবে। সাধারণ মানুষ তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে অনেক কিছু উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানী করছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা নেই বল্লেই চলে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক যে বিষয়টির কথা বলছিলাম- তার কারণে দেশটি পিছিয়ে পড়ছে। স্বাধীনতার এত বছর পর যে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করার কথা ছিল তা করতে পারছি না। দেশের সরকার কেবল গরীবের সম্পদ লুণ্ঠন করা, নানা রকম দুর্নীতির সাথে জড়িত। যেমন ধরুন- সরকারী টেন্ডার থেকে দুর্নীতি করা, বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা যেন একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসব পয়সা আসে কোথা থেকে- দেশের সাধারণ মানুষ বা গরীব মানুষের পকেট থেকে তা আসে। ফলে দেশের সরকারে যারা থাকে তারা এসব করে ফুলে-ফেঁপে কলাগাছ হয়ে ওঠে আর দেশের মানুষ হয়ে যায় নিম্নবিত্ত এবং তাদের কষ্টের শেষ থাকে না। সাধারণ মানুষদের সমাজের কোথাও ঠাঁয় হয় না। ফলে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, নিষ্ক্রিয়তা ও দুর্নীতিসহ নানা কারণে দেশের সাধারণ মানুষের মেধা, উদ্যম ও শিক্ষা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছে নানাভাবে। ফলে দেশে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না।
টিআইবি রিপোর্টে আপনারা সবাই দেখেছেন, যে দেশের বিচারালয় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত। ফলে আমি বলব যে, দেশের সরকার দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত-সেখানে সরকারের কাছ থেকে দেশের মানুষ কি আশা করতে পারে ! তবে তারপরও সাধারণ মানুষ নিজস্ব শিক্ষা, চেষ্টা, মেধা ও অদম্য সাহসিকতার মাধ্যমে যা করছে তাকে Miracle-ই বলা যায়।

রেডিও তেহরান : স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে ভারত, পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে বর্তমান সম্পর্ককে কিভাবে দেখছেন?

এম. হামিদুল্লাহ খান : দেখুন, স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে যে সম্পর্ক তা কিন্তু বিষ্মিত হওয়ার মত। সব শ্রেণীর মানুষের কাছে ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ে মারাত্মক খটকা লেগে যাবে। এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই- সরকার বাংলাদেশের সংবিধান থেকে যদি 'বিসমিল্লাহ' তুলে দিয়ে ভারত প্রীতির কারণে বা অন্য কোন বিশেষ কারণে ধর্মনিরপেক্ষতা এনে শাখা সিঁদুর ও উলুধ্বনি দেয়া এসব সংস্কৃতি বা নীতি আনতে চায় তাহলে দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগোষ্ঠী সে বিষয়টি মেনে নেবে না। অথচ সে রকম একটা চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতি- ঈমান আকিদা, শুক্রবারে জুমা নামাজ আদায় করা- সবার সাথে মেলামেশা বা মোলাকাত করা এসব ত্যাগ করে আমরা যদি তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে ফিরে যাই-তাহলে সেটি কি ঠিক হবে আমাদের জন্য? আজ আমাদের এখানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয় এবং ভারতীয় সংস্কৃতি প্রীতির কথা বলা হয়- সেক্ষেত্রে আমি বলব- ভারত নিজেও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়। তারা এ কথাও বলে না যে আমরা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র আবার এ কথাও বলে না যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তবে তারা সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলে, আমরাও আমাদের দেশে সব নাগরিকের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। তাহলে কেন এবং কাদের পরামর্শে এত চেঁচামেচি করে সংবিধান পরিবর্তন করে ধর্মনিরপেক্ষতা আনব এবং শাখা সিঁদুর পরাবো নিজেদের মেয়েদের ? ভারতীয় মেয়েদেরকে দিয়ে গভীর রাতে নাচানো- এসব আমাদের সংস্কৃতি নয়। তাছাড়া শহীদ মিনারে নাচের মহড়া দেয়া, থার্টি ফাস্ট নাইটে অশ্লীল কর্মকাণ্ড- এসবকে আমি সমর্থন করি না। সুতরাং- আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি, ভারত চায় বাংলাদেশে একটা খোলামেলা সমাজ হোক-এখানে গোয়া বা ব্যাংককের মত অবস্থার সৃষ্টি হোক এবং সেটাই হচ্ছে। তবে আমি এটাকে ঠিক বলে মনে করি না। আমাদের মেয়েদেরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা এবং ভারত কিংবা পশ্চিমাদের মত উলঙ্গ করা হবে- এটাকে সমর্থন করি না। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ রকমই একটা চিত্র এবং নতজানু বিষয় দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে সম্পর্ক প্রায় শুন্য অবস্থানে; বর্তমানে বিষয়টি বেশ জটিল ।

রেডিও তেহরান : বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে। ফলে এসব দেশ নানা সমস্যায় পড়ছে। মার্কিন প্রভাব বৃদ্ধির ফলে এ অঞ্চলের ভবিষ্যত কোন্‌ দিকে যাবে বলে আপনি মনে করেন।

এম. হামিদুল্লাহ খান : এ বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং অনেক কথা হচ্ছে। পেন্টাগণের সাউথ এশিয়া বিষয়ক যারা রয়েছেন- যেমন ধরুন কাপলান, রামস পিটার - তারা তাদের পক্ষ থেকে নানা গবেষণা করেছেন এবং তা প্রকাশ করেছেন। ভারতের আউট লুক পত্রিকাতেও এ সম্পর্কে বেশ কিছু প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। রমেশ ত্রিবেদীও এ সম্পর্কে লিখেছেন। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে নানাবিধ যে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তাকে স্বীকার করতে হবে। এ বিষয়ে আমি বলব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বেশ কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক। তারা এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিজেদের নতজানু করে চীনকে Face করতে চায়। আর সে লক্ষ্যেই তারা ভারতকে পরমাণুসহ সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছে। ভারতকে তাদের সাথে রাখছে। এটি তাদের একটি কৌশলগত দিক। তবে সেক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ তাদের কাছে কোন ফ্যাক্টর না।
আমি সম্প্রতি ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক এম.জে. আকবরের একটা বই পড়েছি। তাতে লেখা হয়েছে-পাকিস্তানকে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মাধ্যমে ভেঙে ফেলতে চায়- সেটা সম্ভব নয়। তবে সেই চেষ্টা চলছে। পাকিস্তান এমন একটা অবস্থায় রয়েছে যাকে jelly test বলা যায়। চক্রান্ত চললেও সে ভাঙবেও না আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারবে না। এখানকার সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোকপাত করলে যার যার নিজস্ব স্বার্থের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভারতের সাথে এক ধরনের পাকিস্তানের সাথে আবার ভিন্ন। আবার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গভীর উদ্দেশ্য রয়েছে। সেখানে তেলের বিষয়টি অন্যতম একটি বিষয়। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইসরাইলকে রক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব কিছু করতে রাজী আছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা মুক্তহস্ত। তবে অন্য রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তাদের এই দেয়া নেয়ার হিসাবটা এ রকম যে, যদি একগুণ কাউকে দেয় তাহলে চারগুণ আদায় করে। আর আগেই বলেছি, চীনকে কোনঠাসা করে রাখার জন্য তারা ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রাখছে এবং নানা রকম সহযোগিতা করছে। আর ভারতও চায় যে, আমরাও নাচতে নাচতে আমেরিকার গান গাই ও গুনকীর্তন করি।

রেডিও তেহরান : স্বাধীনতার চেতনা বলে একটি কথা সব জায়গায়ই তোলা হচ্ছে। এই চেতনা বলতে একটি মহল ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ থেকে দূরে থাকাকেই বুঝাবার চেষ্টা করে। স্বাধীনতার চেতনা বলতে আপনি কি মনে করেন ?

এম. হামিদুল্লাহ খান : দেখুন, স্বাধীনতার চেতনার প্রসঙ্গটি যখন আনলেন তখন এ সম্পর্কে আমি কি মনে করি সে কথা বলার আগে ওরা অর্থাৎ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কি মনে করে সে সম্পর্কে একটু আলোকপাত করতে চাই। তারা মনে করে স্বাধীনতার চেতনা বলতে আমরা ভারতভুক্ত হয়ে যাই। আর তা হলেই স্বাধীনতার চেতনা সফল। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এমপি মোহায়মেন সাহেবের লেখা বই আছে, দিল্লি থেকে প্রকাশিত বসন্ত কুমার চ্যাটার্জীর 'The Inside Bangladesh Today' নামের বই আছে। সেখানে বাংলাদেশের অনেক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী যারা বুদ্ধি বিক্রি করে খায়-তাদের ভাষ্যমতে, সংবিধানের ৩৭১ ধারায় একটি উপধারা সংযোজন করে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গ করে ফেললেই তারা নিরাপদ বোধ করে। ওই বইয়ে ঠিক এভাবে লেখা আছে। তো আমরা যদি ভারতভুক্তির পক্ষে কথা বলি, ভারতের পক্ষে কথা বলি তাহলে আমরা ঠিক আছি এবং স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে। ভারত পানি নিয়ে যাক আর আমরা পানি অভাবে মরে যাই; তারা টিপাইমুখে বাঁধ করুক, তিস্তার পানি নিয়ে যাক, চট্টগ্রাম পোর্ট; মংলা পোর্ট তাদের হয়ে যাক- সেটাও ঠিক আছে, বিনাশুল্কে করিডোর পেয়ে গেল- তাতেও কোন অসুবিধা নেই-তবে এসবের বিরুদ্ধে গেলেই তারা স্বাধীনতা বিরোধী এবং স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী।
দেখুন, আড়াই/তিনশ' বছর ধরে আমরা যুদ্ধ করেছি সংগ্রাম করেছি এ জন্যে নয় যে, ব্রাহ্মণ্যবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ব, আকণ্ঠ নিমিজ্জত হব। আমরা যুদ্ধ করেছি- আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সভ্যতা, ধর্ম-কর্ম, ঈমান আকিদা, নীতি আদর্শকে বাস্তবায়ন করব বলে। আমাদের দেশের চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা দেশের নতুন প্রজন্মকে সৎ সুস্থ ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। আমাদের মেয়েরা শাখা সিঁদুর ব্যবহার করবে, উলঙ্গপনা করবে এমনটি আমরা চাই না- আর এটিই হচ্ছে আমার স্বাধীনতার চেতনা।

রেডিও তেহরান : ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে কথা বললেই বিশিষ্ট মুক্তি যোদ্ধাকেও স্বাধীনতা বিরোধী আল বদর, রাজাকার বলা হয়। যেমন প্রভাবশালী সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল এবং এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে সরাসরি পাকিস্তানের দোসর বলা হচ্ছে। তো এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন ?

এম. হামিদুল্লাহ খান : দেখুন, আমরা তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছি না, তাদের কথা শুনছি না ফলে তারা তো এ কথা বলবেই। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে -আমরা বাংলাদেশী অন্যদিকে ওরা বলছে ওরা বাঙালী, আমরা বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের নীতি আদর্শ, সংস্কৃতি ও ধর্ম-কর্ম নিয়ে আমরা চলতে চাই। অন্যদিকে ওরা চলে ওদের মতো করে। ওরা গোলাপ জলের বোতল ভেঙে জাহাজ উদ্বোধন করে না, ওরা হুইস্কির বোতল ভেঙে জাহাজ উদ্বোধন করে। তো আমরাও কি ওদের মত হুইস্কির বোতল ভাঙব? না, এমনটি হতে পারে না। আমি বলব তারা চৈতন্য হারিয়ে ফেলে তথাকথিত চেতনা রোগে ভুগছে। তবে এই তথাকথিত চেতনা রোগের কোনো দাম নেই। নানা কারণে আমাদের স্বাধীনতার প্রয়োজন ছিল। আর সে কারণেই আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। তো সবশেষে এই চেতনাকে আমি একটি কুমতলবী শব্দ হিসেবে আখ্যায়িত করব।
আমি সামান্নতম বিকৃত না করে কপি করেছি। এটা সবাইকে জানানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
মূল উৎস
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×