তিনচাকার ড্রাইভার, তিন পয়সার দাম?
না-নেই, দু'পয়সাই ঢের বেশি,
চড়-থাপ্পড় কিল-ঘুসি দৈনিক পাওনা
বাকিটা ভাষার অলংকারে মোড়ানো।
প্রাপ্তির আনন্দে রবিউলের ঢেকুর উঠে যায়
কিন্তু নীরবে মেনে নেয়, মেনে নিতে হয়
কারণ রবিউলরা খেটে খাওয়া মানুষ,
দুমুঠো অন্ন এক ফোঁটা জল পেতে
নিঃশেষ হয়ে যায় শত ক্যালরি
ঘামে ভিজে চুপসে যায়-নিস্তেজ হয় না তবুও।
তপ্তরোদে রক্তঘামে এতকিছুর কী দরকার!
চাইলেই স্বর্গ চলে আসতে পারে
চাইলেই নৈরাজ্যে বসত গড়তে পারে
চাইলেই দিগন্তের আড়ালে রাজত্ব গড়তে পারে
চাইলেই বনে যেতে পারে সব্যসাচী পাতিনেতা।
এতসবে মন নেই রবিউলের
ঘরদোর নিয়েই তার স্বপ্ন,
স্বপ্নের আড়ালে খেলা করে তার দুটো চোখ
সেই চোখদ্বয়ে বাবা মায়ের মমতা,
সন্তানের হৈ-হুল্লোড় আনন্দ ভেসে উঠে
দুমুঠো ডালভাতের তাড়নায় নিত্যই কাঁদতে হয় তাকে।
রবিউল সর্বনাশের কবলে পড়ে যায়
বানের জলে কপাল যখন হাবুডুবুতে-
প্রাণ যেখানে যায় যায়, জেগে উঠে রবিউল আবার
জেগে উঠে নতুন করে দিগন্তে উড়ে যেতে
নতুন স্বপ্নে বুনে নিতে ভাঙা কুলোয় জলে ভাসা সংসার।
জমি জিরাত দু-চার কাঠা, গাঁয়ের পথেই শেষ মাথায়
ভিটেমাটিতে ফিরে আসে রবিউল
বিমর্ষ আকাশ হেসে উঠে
বিধ্বস্ত ধরণী নেচে উঠে
রবির আলোয় পালিয়ে যায় সব গ্লানি।
এখন রবিউল আর কাঁদে না, শরতের কাশফুল নয়নজুড়ে
সকালের মিঠে রোদে ফুরফুরে মনে সে-
একজন পাকাপোক্ত অটোরিকশা ড্রাইভার,
গাঁয়ের সরু পথ কাদা-মাটি ঠেলে শহরের রাজপথে
একটি অটোরিকশা ছুটে চলছে-
নবউদ্যমে ফিরে পেতে একটি সংসার।
রবিউল হাসতে চায়, কান্না তার ভীষণ অপছন্দের
হেসে হেসেই সে নির্লজ্জ কান্নাকে অপমান করে নিত্য
দূরে ঠেলে দেয়, ভ্রুক্ষেপ নেই মোটেও।
কিন্তু রবিউল আবার কেঁদে উঠে
বুলডোজারে মিছমার রিকশায় গড়াগড়ি খায় শত স্বপ্ন
ভেঙে পড়ে রবিউল, নির্বাক রবিউল
অশ্রুটুকুও নিঃশেষ করে ফেলছে
ঘুরে দাঁড়াবার সেই শপথ আজ নিস্তেজ
হাজার বছর ধরে রবিহারা কালের প্রতীক রবিউল।
(ঢাকা, ০৭/১০/১৭)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৩৩