somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Living-being Psychology 5.0

১১ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১...
প্রজাপতি ফুলে বসে থাকে।এই প্রজাপতি নিয়ম ভেঙে একটা কাঁচা পেঁপের উপর বসে আছে! ঠিক বসেও নেই, অবিরাম রঙিন পাখা ঝাপটাচ্ছে! একনাগাড়ে ঝাপটিয়েই যাচ্ছে। কেন?

একটু পরেই এটা উড়ে গেল। আমি লিখায় মনোযোগ দিলাম।আমি সাধারণত হেঁটে লিখি, রাস্তার এমাথা থেকে ওমাথা।
ফিরে এসেই দেখি, পেঁপেটা কাঁচা না, পাকা। একটা লাল ঝুটি বুলবুলি ঠুকরে ঠুকরে পেপে খাচ্ছে। আমি পাত্তা না দিয়ে লিখতে থাকলাম।

আশ্চর্য! একটু পরেই দেখি পেঁপেটার উপর যেখানে বুলবুলি খেয়ে গিয়েছে সেখানে প্রজাপতি বসে আছে।
তবে কি, পেঁপেটা পেকেছে সেটা প্রজাপতি আগেই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু পাকা পেঁপের স্বাদ পুরু খোসার জন্য নিতে পারছিল না। তাই পেঁপের উপর বসে ডানা ঝাপটিয়ে যাচ্ছিল! আসলে এটা ছিল একটা সিগনাল?
বুলবুলি বুঝতে পেরেছে সবুজ পেঁপেটা আসলে পাকা। সে ঠুকরে খেয়ে চলে যাবার পরই প্রজাপতিটার ফিরে আসা কি তাই প্রমাণ করে না?

২...
মিঠুন ডাক্তার অষুধের তাকে কিছু একটা খুজছেন, পাচ্ছেন না।
আসলে কিন্তু তিনি ডাক্তার নন, একটা কোর্স করে ফার্মেসি দিয়েছেন।সৃষ্টিকর্তা তাকে সফলতা দিয়েছেন। তার ব্যবসা ভালো, তার দিন ফিরেছে।তিনি ঢাকায় বাড়ি করেছেন। উনি মানুষ ভালো, মানুষকে ব্যবস্থাপনা ছাড়া অষুধ দিলেও নিজের পরিবারকে ডাক্তার না দেখিয়ে অষুধ খাইয়েছেন, আমি শুনিনি!

ছেলের স্কুল টিচার উনার মনোযোগ আকর্ষণ করলেন," মিঠুন দা, আপনার ছেলে শোভনের প্রধান কাজ ক্লাসে জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে থাকা। আমি আজ ওকে সরিয়ে দিয়েছি। মনোযোগী না হলে, আর যাইহোক পড়াশোনা হবে না।" তিনি হাসতে লাগলেন।
মিঠুন দেবনাথ বললেন,"স্যার, জানালার কাছে কি কেউ বসবে না? কেউ না কেই তো বসবেই! আপনি কি সব ছেলেদের এমন যত্ন নেন?"

শিক্ষক হকচকিয়ে গেলেন, তবে দমলেন না। তিনি বললেন,"দেখুন আপনার ছেলেটা বেশ অমনোযোগী,মিথ্যাও বলে খুব। আমি ভাবলাম....."
"আচ্ছা, আমার ছেলের কি ভালো কোন গুণ নেই? ক্লাসে কি কখনো সে পড়া পারে না? আমি খেয়াল করেছি আপনি সব সময় আমার কাছে শোভনের দোষ বলেন। দু'একটা ভালো গুণও বলবেন, আমার ভালো লাগবে।"
শিক্ষক মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।
"দেখুন স্যার, আমি জানি আমার ছেলেটা অত্যন্ত অমনোযোগী, পড়াশোনা করে না, একটু দুষ্টও। ক্লাসে বকাঝকা করে শাস্তি দিলে লজ্জা কেটে যাবে। একটু বুঝিয়ে বলবেন, দেখবেন ও কত ভালো! এই বয়সটাই এমন, মিথ্যা বলবে, ফাকি দিবে, তর্ক করবে, বিব্রতকর প্রশ্ন করবে, নিজের মতামত জোরে বলবে, একদৃষ্টে কোন দিকে তাকিয়ে থাকবে, আরও কত কি! আমরা ভূলটা বুঝিয়ে ঠিক করে দিব, আপনারা ঠিক করে দিবেন। এজন্যই তো আমরা আছি, আপনারা আছেন।"

৩...
বেলা ১২ টা। ঝাঝা রোদে আমি মাজারের বাধানো পুকুর ঘাটে বসে আছি। এই সময় রোদ থাকে বলেই ঘাটে কেউ থাকে না। ঘাঁট ফাঁকা পাওয়া যায়।
আমি প্রায় সব কিছুর উপরই ত্যক্ত,বিরক্ত। বিরক্তি চরম সীমায় পৌঁছালেই এখানে বসে থাকি। আজও বসে আছি।
আমার থেকে একটু দূরেই একজন লোক বসে আছেন। পানিতে পা ডুবিয়ে, মাথা ভাজ করে দু'হাটুর ভিতরে প্রায় পুরে দিয়েছেন। একটু পরপর নাক টানছেন, ঐতো আমরা কান্নার সময় যেমন টানি আরকি।

দুপুর দুটো, উনি সেভাবেই আছেন। আমি এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
:আপনি কাঁদছেন? আপনার কি খুব মন খারাপ? আমার সাথে কথা বলুন, ভালো লাগবে।
:আমাকে একা ছেড়ে দিন। আমি কথা বলতে চাচ্ছি না। আর কথা বলার কিছু নেইও!

শ্যামলা রঙ, বেশ বড় একটা চশমা পড়া, সদ্য শেভ করা চকচকে মুখটায় চোখদুটো টলমল করছে।
:আপনি কোন কারণে বিরক্ত? কার উপর বিরক্ত? বলুন, মন হালকা হবে।
:আমি নিজের উপর বিরক্ত।

আমি আস্তে আস্তে উনার কাছ থেকে সরে এলাম। পাড় পেলাম কই, সাথে নিয়ে এলাম নিজের প্রতি বিরক্ত হবার ভয়ানক রোগ!

৪...
আমি আর ও পাশাপাশি বসে আছি। এইতো সেদিন এতটুকু ছিল! রাতে আমাদের সাথে ঘুমাতে আসতো, গল্প বলতে হত সাপের, বাঘ-সিংহ-শিয়ালের, ভূত, রাজকন্যা আর কত কিছুর! মাঝরাতে কান্না জুড়ে দিত, ও মায়ের কাছে যাবে।
এখন বড় হয়ে গেছে, উচ্চতা আমার সমান!

আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,"গেন্দা, আব্বুর কথা মনে হয় না?"
"হয় মাঝেমধ্যে! যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, বা কোন বান্ধবীকে ওর বাবা স্কুলে নিয়ে আসে।এখন আর মনে হয় না।"
আমার মন ভেঙে যায়, কত সহজে তারা মানিয়ে নিয়েছে। কাকার সাথে ওদের কথা নেই, দেখা নেই প্রায় ৩ বছর।
অথচ বাবু, গেন্দা, বেবির সাথে একদিন কথা না হলে আমার বেশ অস্বস্তি লাগে। তিনজনই মায়াভরা গলায় "ভাইয়া" ডাকে। এটা শুনে ভীষণ মন খারাপ থাকলেও মন ভালো হয়ে যায়!
কাকা কিভাবে থাকতে পারেন, কে জানে?

"ভাইয়া, ভাই আর আব্বুর মাঝে পার্থক্য জানো?"
"নাতো!"
"ভাই তুচ্ছ কারণে ছেড়ে যায় না, আব্বু চলে যায়। কথাও বলে না। আব্বুর সাথে কথা হয় না, খারাপ লাগে না। তোমাদের সাথে কথা না হলে, মন খারাপ লাগে। জানো, নিহান বেবিও বলে," আম্মু, ভাইয়ারে একটা ভিডিও কল দেও। ভাইয়ার জন্য আর পেট কেমন করে।"
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×