somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Living-being psychology 6.0

২০ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১....
আমি অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছি।
৪র্থ তলা, মহিলা ও শিশু হাসপাতাল, আব্দুল্লাহপুর। মাঝবয়সী ভদ্রলোক এমাথা থেকে ওমাথা হাঁটছেন।উনার শিশুপুত্র চেয়ারে আমার পাশে বসে আছে। পুত্র ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
শব্দ করলে মায়ের অপারেশনে সমস্যা হবে, নার্সের এই কথায় তার কান্নার শব্দ থেমেছে, চোখের পানি দ্বিগুণ হারে পড়ছে।
"বাবু, তোমার নাম কি?"
"রাঈদ, আর আমাকে বাবু বলবে না।আমি স্কুলে যাই, আমার রোল এক।"
"বাহ!আচ্ছা তাহলে বড় ভাই ডাকি। আচ্ছা, বড় ভাই আপনি কাঁদছেন কেন? বড় মানুষের কাঁদতে নেই।"
"ডাক্তার আমার আম্মুর পেট কাটবে আর আমি কাঁদবো না!"
"আমারও বোনের অপারেশন হচ্ছে, আমিতো কাঁদছি না।"
রাঈদ চোখ মুছলো, বেশ কয়েকবার মুছলো। তাতে চোখ থেকে পানি পড়া কমলো না।

রাঈদ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
"কি হয়েছে তোমার বোনের? ও কি মারা যাবে?"
"না, মারা যাবে না। পেটে একটা টিউমার হয়েছে, ডাক্তার ওটা কেটে ফেলে দিবে।"
"ওহ।"
"আমার ফোনে গেম আছে, খেলবে?"
"না, খেলবো না। আমি "আল্লাহ শাফি, আল্লাহ কাফি" পড়বো। আল্লাহ আমার মাকে ভালো করে দিবেন।"
রাঈদ কাঁদতে কাঁদতে তাসবিহ পড়ছে। আমি চুপ করে গেলাম।

একটু পর নার্স বেড়িয়ে এলেন। রাঈদের বাবাকে ডেকে বললেন, যে কোন একজন রোগীকে দেখতে যেতে পারবেন।
রাঈদ কিছু না বলেই ভিতরে চলে গেল। নার্স ভদ্রলোককে ভেতরে যেতে দিলেন না।
রাইদ হাসি মুখে ফিরে এল। আমার কাছে ফোন চেয়ে গেম খেলতে শুরু করলো।

ভদ্রলোকের অস্বস্তি বেড়ে গেল। তিনি বারবার ওয়াশরুমে যাচ্ছেন, আর চোখে-মুখে পানি দিয়ে আসছেন। উনার গালে পানি, না চোখের জল ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

দেড় ঘন্টা চলে গেল। আমার বোনের অপারেশন শেষ। আমি দেখতে যাইনি, ভাইয়া গিয়েছে। আমি চেয়ারেই বসে আছি। বোনকে ৬ ঘন্টা পর কেবিনে শিফট করবে।
ভদ্রলোক আর সহ্য করতে পারলেন না। নার্সকে ডেকে বললেন,"এই যে শুনুন, আমি কি ওকে একটু দেখতে পারি? আমার কেমন যেন লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না।"
নার্স হাসিমুখ উত্তর দিল, "না, পারেন না।"
ভদ্রলোক চেয়ারে বসে কেঁদে ফেললেন। বললেন,"এরা এত নির্দয় কেন? বেছে বেছে পাষাণ মেয়েরাই কেন নার্স হয়! জানেন? যে বার রাইদ হল, আমি প্রথমে ওটি'তে যেতে পারি নাই। আমার মা গিয়েছিল। কি যে খারাপ লেগেছে, আপনাকে বোঝাতে পারবো না। আজকে আরও বেশি খারাপ লাগছে! মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা দুলছে।"
"আপনি শান্ত হয়ে বসুন। আমি বুঝতে পারছি।"
"না, আপনি বুঝতে পারছেন না।পারবেনও না।"

২....
চামড়ায় লোম নেই, কালচে শরীর থেকে গন্ধও বের হচ্ছে। এমন হাড্ডিসার কুকুরকে আমরা নেড়ি কুত্তা বলি। এই কুকুরগুলোকে অতি দয়ালু লোকেরাও লাত্থি দিয়ে বলে,"যাহ ভাগ।"
অথচ লোকটা কুকুরটাকে গোসল করাচ্ছে। একটু আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস করলাম,"আংকেল, আপনার ঘিন্না লাগছে না?"
"না, লাগছে না। তবে প্রথমে লেগেছিল। এখন লাগে না।"
"কেন?"
"অনেক লম্বা ঘটনা। এখন বলার ধৈর্য্য নাই।"
"এখনই বলুন না। একে গোসল দিতে দিতে বলে ফেলুন।"
"তখন আমি তুখোড় রাজনীতি করি। বুঝতেই পারছ, শত্রুর অভাব নেই। পার্টি মিটিং শেষে মাঝরাতে বাসায় ফিরছিলাম। অন্ধকার গলির মাঝে দুজন লোক আমাকে জোর করে ধরে গলায় ছুড়ি বসিয়ে দিতে চাইল। পাশে থেকে এই কুকুরটাই হয়তো আমাকে বাঁচানোর জন্য তাদের উপর ঝাপিয়ে পরলো। লোক দুটো সুবিধা করতে না পেরে আমাত গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিল। একটু দূর থেকে আগুন জ্বালিয়ে দিবে। আমি ধস্তাধস্তি করে ক্লান্ত, গায়ে এক চিমটি শক্তিও নেই। হামাগুড়ি দিয়ে কিছুদূর গেলাম। ওরা আগুন দিয়ে দিল। কুকুরটা তেলের যে রেখা আছে সেটার উপর শুয়ে পরলো। আগুন আমার কাছে আসতে পারলো না, কিন্তু আমার চিৎকারে লোকজন আসতে আসতে কুকুরটার চামড়া পুড়ে গেল।
এটার জন্যই এখনো বেঁচে আছি, বুঝলে!"

৩....
রাজীব নূর ভাই কিছু ছবি শেয়ার করে বলেছেন, দেখুন মন ভালো হয়ে যাবে।
আমি ছবিগুলো দেখলাম, বেশিরভাগই মন খারাপের ছবি।আমি কমেন্ট করলাম, আমার মন বিষন্ন হয়েছে।
রাজীব ভাই ঝটপট উত্তর দিলেন, গল্প লিখুন। বিষন্ন মনে ভালো গল্প লিখা যায়।
আচ্ছা, উনি আমার সিক্রেট জানলেন কিভাবে?

৪....
:রাগ হচ্ছে খুব? আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকো, রাগ কমে যাবে।
:আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে রাগ পরে যায়। মন ভালো হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৩৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×