somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশে ধর্ষণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য আকারে বৃদ্ধি এবং তারই ফলশ্রুতিতে ধর্ষণবিরোধী গণআন্দোলনের সূচনা ও সফলতা

১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন আগের কথা বলতে এলাম আজকে, দেশে তখন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন জোরদার । তারও বেশ কিছুদিন আগে একটি গ্রুপে পোস্ট করেছিলাম, ওয়েব সিরিজ কিংবা চলচ্চিত্র কিংবা নাটকগুলোতে চরিত্রের প্রয়োজনের কথা বলে খোলাখুলি দৃশ্য কিংবা রগরগে অশ্লীল দৃশ্য বন্ধ করতে হবে - আমার এই পোস্টে অসংখ্য হা হা রিয়্যাক্ট পড়েছিল। অনেকেই কমেন্ট করেছিল, আপনার ভালো না লাগলে আপনি দেখবেন না, যাদের ভালো লাগে তারা দেখবে। এটা কেমন কথা!!



এখন পর্ণ ভিডিওগুলোর মতো এই ওয়েবসিরিজ কিংবা চলচ্চিত্রগুলোও যদি কারো কারো জন্য নারীদেহ দেখলেই ধর্ষণের প্রেরণা হয়, আমি কিন্তু সেইজন্য সেই রিয়্যাক্টধারী কাউকেই পটেনশিয়াল রেপিস্ট বলবো না (যেমনটা তোমরা সুবিধাবাদী নারীবাদীরা কিংবা কিছু কিছু আন্দোলনকারীরা যে কোন উছিলাতেই যারে তারে বলে দিচ্ছ)। জি, না, কারও নামও আমি বলবো না। তবে এরাই সেই ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিল কিনা, তা আমি জানি না, হয়ত থাকতেও পারে !!

ধর্ষণবিরোধী যে গণজাগরণ দেশে তৈরী হয়েছিল বাস্তবে এবং অনলাইনে দুই জায়গাতেই, সেটি ছিল মূলত ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি যেন মৃত্যদন্ড দেওয়া হয়, সেই দাবীতে। যারা পারছে রাস্তায় নেমে প্ল্যাকার্ড উচুতে ধরে প্রতিবাদে নাম লিখিয়েছে আর বাকীদের অনেকেই অনলাইনে তাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছিল। প্রোফাইল পিকচার কালো করা কিংবা ধর্ষণবিরোধী হ্যাশট্যাগ লাগানো ইত্যাদি তার প্রমাণ।




আগে দেখে নিই বিভিন্ন জনের মতামতের উপর ভিত্তি করে দেশে এক বছরে ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণসমূহঃ

ক) অবাধে পর্ণ ভিডিও বা সামগ্রী সহজলভ্য হয়ে যাওয়া। পর্ণ ভিডিওতে দেখানো স্ক্রিপটেড কন্টেন্ট মানুষের ভিতর মানসিকভাবে গেথে যাওয়া
খ) ওয়েবসিরিজ কিংবা চলচ্চিত্র কিংবা নাটকগুলোতে খোলামেলা বা রগরগে অশ্লীল দৃশ্য
গ) দেশে ধর্ষণ সহজ কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার ২/১ বছর আগেই বিয়ে করাটা কঠিন
ঘ) ধর্ষণের কারণে বিচার প্রয়োগে জটিলতা এবং বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশের তৎপরতার শিথিলতা
ঙ) ধর্ষিতা বা ভিকটিমের পোশাক বা স্বাধীনচেতা মনোভাব কিংবা সবদিক থেকে তারা যে পুরুষের সমকক্ষ নয় কিংবা হতে পারে না কখনোই, এটা ভুলে যাওয়া
চ) বিভিন্ন উপরিমহলের কাছ থেকে ঘটনা ঘটাবার পর সেল্টার পাবার প্রতিশ্রুতি পাওয়া
ছ) পশ্চিমা সংস্কৃতিকে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে গুলিয়ে ফেলবার অপচেষ্টাকে রোধ করবার জন্য
জ) অনেক সময় বিভিন্ন মাদকের কারণে মাদকাসক্ত ব্যক্তি উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে সুযোগ পেয়ে ধর্ষণ করে বসে। তাদের কারণে ভিকটিমগুলোও স্বাভাবিক হয় না। এক্ষেত্রে শিশু কিংবা বৃদ্ধারাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায় না
ঝ) পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে অবলা ও ভোগ্যপণ্যের সামিল ভাবা

ইত্যাদি আরও অনেক কারণ। আমি আবারও বলছি, এগুলো আমার কথা নয়। অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে বিভিন্ন জনের মতামতের উপর ভিত্তি করে এই কারণগুলো এক জায়গায় সাজানো। আসলে কারণ কোনগুলো তা নির্ধারণ করা সত্যিই কষ্টকর। কারণ সবকয়টি কারণই যুক্তিসংগত। না, না, আগে ক্ষেপবেন না। আগে আমার কথা শুনুন।

এইক্ষেত্রে সবচেয়ে বেস্ট সল্যুশন দিয়েছে ইসলাম। আপনি সেই সল্যুশন জেনে, মানতেও পারেন আবার নাও মানতে পারেন। ইসলামে জবরদস্তিও নেই।

আমি একজন মুসলিম, আর একজন মুসলিম মানতে বাধ্য যে ইসলামই তার জন্য পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। অর্থাৎ শুধু ইমান, নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত এই পাচটি নিয়েই ইসলাম নয়, ইসলামের পরিধি অনেক অনেক বিস্তৃত। ইসলাম আপনাকে কোনটা করতে হবে, কোনটা করা উচিৎ না, তাও বলে দেবে।

এই যে যারা কথায় কথায় বলে পর্দার অভাবেই এই ঘটনা ঘটছে তাদের সুরেই ইসলাম বলে নারীদের পরিপূর্ণ পর্দা করে চলতে কিন্তু তাদের জন্য সমস্যা হয় যখন ইসলাম এও বলে যে, পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই বিধান। পর্দা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই ফরজ। পর্দা শুধু পোশাকে না, আচার আচরণে, অংগের কার্যকলাপে, চলাফেরাতে সবকিছুতেই নিজেকে হারামের নিয়ন্ত্রণে রাখাই পর্দা। এখন কেউ যদি উচ্ছৃঙ্খল উপায়ে পোশাক পড়েও তার দিকে খারাপ নজর দেওয়ার বিধান আমার আপনার নেই, ধর্ষণ তো অনেক দূরের কথা।



অনেকেই বলে দেশ যখন ধর্মনিরপেক্ষ তখন মৌলবাদীরা ইসলামের আড়ালে থেকে নিজেদের সুবিধা আদায়ে সর্বদা সচেষ্ট। আচ্ছা, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানে তো সকল ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা, সকল ধর্মকে শিকেয় তুলে দেওয়া তো আর নয়। তাহলে আপনি সকল ধর্মের পজিটিভ বিষয়গুলো কাজে লাগান না, কে মানা করেছে!! ইসলাম এইক্ষেত্রে লজিকাল, সমাধানের কথা বলছে, আপনি ইসলামের এই দিকটা নেন, যদি অন্যের ধর্ম কোন পজিটিভ কিছু বলে, সমাধানের কথা বলে, আমলে নিতে সমস্যা কি?! সমস্যাটা কিন্তু ধর্মীয় নয় কিন্তু সমাধান ধর্মীয় ভাবে সহজেই করা যায়।

অনেকেই ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে সৌদি আরবের মত পাবলিকলি শিরোচ্ছেদ করার পক্ষে কিন্তু সৌদি আরবের মত ধর্মীয় শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ইহাকে হিপোক্রেসি বলে। আবার অনেককে দেখলাম ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে অন্য অনেকের মত ইসলামপ্রিয় হুজুরদের অংশগ্রহণকেও হিপোক্রেসি বলছেন, যেহেতু অনেক মাদ্রাসায় অনেক ছাত্র অনেক হুজুর শিক্ষক দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় কিন্তু আপনি এক দাড়িপাল্লায় সবাইকে মাপলে তো সাধারণ কোন পুরুষ যখন ধর্ষণের মত ঘৃণ্য কাজ করে তখন আমাদের মত সাধারণ সকল পুরুষকে ধর্ষণের দায়ে অপরাধী বলতে হয়। একটি মেয়ের জীবনে পুরুষ কিন্তু তার বাবাও, তার ভাইও, তার স্বামীও, তার ছেলেও। সকল পুরুষকে ঢালাওভাবে খারাপ বলাও কিন্তু অপরাধ।

আমার মনে হয় ধর্ষণের জন্য সবচেয়ে বড় কারণ ধর্ষণ করার পর পার পেয়ে যাওয়া। উপরিমহলের কাছ থেকে সেল্টার পাবার প্রতিশ্রুতি, রাজনৈতিক আশ্রয় কিংবা আইন প্রয়োগে শিথিলতা ইত্যাদির চেয়ে বড় কারণ হতে পারে না।



জি, না, আপনি পশ্চিমা দেশের শাস্তির উদাহরণ এখানে আনতে পারেন না, আনলে আমি বলবো আগে শিক্ষায়, চলনে, মননে পশ্চিমা দেশগুলোর মত হয়ে দেখান। তাদের মত উন্নত হন আগে। যদিও সম্প্রতি মন্ত্রীসভায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হয়েছে এবং এই অধ্যাদেশে মহামান্য রাস্ট্রপতিও সাক্ষর করে দিয়েছেন। এটা নিশ্চিত যে এই নতুন অধ্যাদেশ জারি হওয়া মানেই হচ্ছে সেই গণআন্দোলনের জয়। এই জয় আমার, আপনার আর দেশের সবার। আশা করি, এই অধ্যাদেশের কার্যকারিতার কারণে ঘৃণ্য কাজটি বন্ধ হয়ে যাবে চিরতরে ।

যাই হোক, আমার আসল কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশে ধর্ষণবিরোধী গণআন্দোলন পুরোপুরি যৌক্তিক ছিল। তবে যারা এই আন্দোলনের আড়ালে অন্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিপ্রায় করেছিল, তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই একেবারে মনের গভীর থেকে....
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×