somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোশারফ হোসেন ০০৭
বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

রেসিজম বা বর্ণবাদ নিয়ে স্কুলটিচারের ছোটখাট একটি এক্সপেরিমেন্ট ও পরবর্তীতে প্রাপ্ত বিস্ময়কর রেজাল্ট :|| #:-S

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Say no to racisms নিয়ে একটা সুন্দর গল্প। পুরোটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, দেখবেন গল্পটি থেকে কিছু শিখতেও পারবেন। পুর গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা ।

ঠিক ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে ন্যাশনাল ব্রাদারহুড উইক (১৯শে ফেব্রুয়ারী থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী)। একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড টু (ক্লাশ টু বলতে যা বুঝায়) এর ক্লাশ চলছে। এই ক্লাশে একজনও কৃষ্ণাঙ্গ বা ইন্ডিয়ান নেই, হ্যা শুধু শ্বেতাঙ্গ বাচ্চা দিয়েই পরিপূর্ণ। তো ক্লাশে ঢুকলেন তাদের ক্লাশ টিচার জুলিয়ানা মেরি (বানানো একটি নাম)।

মেরি ক্লাশে ঢুকেই বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, জানো এখন আমেরিকায় কি চলছে? সব বাচ্চারা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে বললো, "ন্যাশনাল ব্রাদারহুড উইক" অর্থাৎ জাতীয় ভ্রাতৃত্ববোধ সপ্তাহ। মেরি ব্রাদারহুড বা ভ্রাতৃত্ববোধের বিষয়টা খোলাসা করলেন এভাবে যে এটি এমন একটি বিষয় যেখানে আমরা আমেরিকার সকল নাগরিককে ভাইয়ের মত দেখবো। এর পরপরই তিনি বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আচ্ছা তোমরা কি বলতে পারো, আমরা কি সত্যিই সবাইকে ভাইয়ের চোখে দেখি নাকি বৈষম্য আছে? বাচ্চাদের মধ্যে কয়েকজন জবাব দিলো, না, নেই। আবার যারা জানে তারা জবাব দিলো, হ্যা আছে। বৈষম্য আছে কৃষ্ণাঙ্গ ও ইন্ডিয়ানদের প্রতি।

মেরি তখন বাচ্চাদের বুঝালেন, হ্যা বৈষম্য আছে, তোমরা অনেকে জানো কিন্তু কি ধরনের বৈষম্য আছে সেটা কি জানো? এবার বাচ্চারা হার মেনে নিলো, না, তারা জানে না। মেরি এবার নিজেই বুঝিয়ে দিলো, এই বৈষম্য হচ্ছে শুধুমাত্র গায়ের রং এর পার্থক্যের কারণে। একজন মানুষের জন্মের উপর তো সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারও হাত নেই, তাহলে সে যে একজন শ্বেতাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করেনি, এই জন্য তাদের কি শ্বেতাঙ্গদের মত নানান সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করাটা উচিত? বাচ্চারা আবার সবাই সমস্বরে জবাব দিলো, নাহ, উচিত না।

এবার আসলো গল্পের আসল টার্ন।

মেরি মনে মনে ভাবলো, শুধুমাত্র মুখে বুঝিয়ে বাচ্চাদের মনে এই "নো রেসিজম" ধারণা একেবারে গেথে দেওয়া সম্ভব না। কিছু একটা করতে হবে। তাই বললো, বাচ্চারা আসলে শুধু গায়ের রং নয় বরং চোখের মণির রং দিয়েও মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব যাচাই করা সম্ভব। বাচ্চারা কথাটা ঠিক বুঝলো না, তারা হা করে তাকিয়ে রইলো মেরির দিকে। মেরি বলে চললো, সবাই তো জানো, আমার চোখের মণির রং নীল, তাই না? বাচ্চারা বললো, হ্যা, নীল। তোমাদের জানা উচিত, যাদের চোখের মণির রং নীল, তারা যাদের চোখের মণির রং কালো বা বাদামি, তাদের থেকে বেশি শ্রেষ্ঠ বা শ্রেয়।

সব বাচ্চাদের এবার অবাক হবার পালা। তারা কোনদিন এটা শুনেনি। মেরি শুধু এতটুকু বলেই ক্ষান্ত হলো না। সে তার ব্যাগ থেকে কয়েকটি কালো বর্ণের কলার এনে (আজকে এই পরীক্ষা করবে বলে আগেই ব্যাগে কালো কলার রেখে দিয়েছিল) যাদের চোখ কালো ও বাদামী তাদের গলায় পরিয়ে দিলো। আরও বললো, আজ থেকে তোমরা স্কুলে, যাদের গলায় কলার পরা আছে, তারা একসাথে থাকবে, একসাথে টিফিন খাবে, বন্ধুত্ব করবে, খেলাধূলা করবে ইত্যাদি কিন্তু তোমরা কলারবিহীন দের সাথে মিশবে না। ঠিক একই কথা কলারবিহীনদেরও বলে দিলেন। এই বলে সেদিনের মত ক্লাশ শেষ করে দিলেন।

পরের কয়েকদিন এভাবেই চললো। এর মধ্যেই কয়েকটি বিষয় অদ্ভুত ধরা পড়লো। কলারবিহীনরা ইচ্ছা করেই কলার পরাদের এড়িয়ে চলছে। এমনকি ক্লাশের ছোটখাট মূল্যায়নগুলোতেও কলার পরা বাচ্চাগুলো রেজাল্ট খারাপ করতে লাগলো অস্বাভাবিকভাবে। অপরদিকে কলারবিহীন বাচ্চাগুলো রেজাল্ট আগের চেয়েও ভালো হয়ে গেলো। এই কয়দিনেই দেখা গেলো, কলার পরা বাচ্চাগুলো ক্লাশে সবসময় মনমরা হয়ে থাকে আর কলারবিহীন বাচ্চাগুলো আগের চেয়েও বেশ প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি।

এভাবে প্রায় ৩/৪ দিন পর একদিন মেরি ক্লাশে ঢুকেই প্রশ্ন করলো, কেমন আছো সবাই? উত্তরে গলার আওয়াজ শুনে মেরি বুঝলো কলার পরা বাচ্চাগুলো বেশ আস্তে জবাব দিচ্ছে। তারা ক্লাশে বসেছেও কলার অনুযায়ী।

মেরি এবার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো, আসলে আমার একটা বড় ভুল হয়ে গেছে, একরকম মিথ্যা বলা হয়ে গেছে তোমাদের সাথে। বাচ্চারা সবাই অবাক হয়ে মেরির দিকে তাকালো। মেরি তার ভুলটা বুঝালো। আমি আগে বলেছিলাম, যাদের চোখের মণির রং নীল তারা বেশি শ্রেষ্ঠ বা শ্রেয় কিন্তু এটা ভুল সিদ্ধান্ত। বরং আমি ভালোভাবে জানতে পেরেছি, যাদের চোখের মণির রং কালো বা বাদামি, তারাই বেশি শ্রেষ্ঠ বা শ্রেয়। তাই যাদের গলায় কলার পরা আছে তারা এখনই খুলে যাদের গলায় কলার পরা নেই, তাদের পরিয়ে দাও।

এই কথা শুনে, কলারবিহীনদের মুখ পাংশু হয়ে গেলো আর কলার পরাদের মুখ হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে গেলো৷ তারা তাড়াহুড়ো করে নিজেদের গলা থেকে কলার খুলে কলারবিহীনদের গলায় কলার পরিয়ে দিলো। মেরি বলে দিলো, কলারবিহীন আর কলার পরাদের কার্যক্রম কিন্তু আগেরমতই চলবে।

এভাবে চললো আর কয়দিন। এবারও রাতারাতি অদ্ভুত একটা পরিবর্তন দেখা গেলো শ্রেণী মূল্যায়নে। যারা কলার ছাড়া এতদিন ভালো ফলাফল করে এসেছে, হঠাৎ কলার পরে তাদের ফলাফল খারাপ হতে শুরু করলো। আবার আগে যাদের কলার পরে ফলাফল খারাপ আসতো, তারা এখন ভালো ফলাফল করছে। এমনকি বাচ্চাদের চঞ্চলতায় পরিবর্তন এসেছে। কর্মকাণ্ডেও।

এভাবে এক সপ্তাহ পার করে, একদিন সকালে মেরি ক্লাশে এসে বললো, বাচ্চারা আজকে তোমরা সকলেই কলার খুলে আমাকে দিয়ে দাও। বাচ্চারা আবারও অবাক হলো। কিন্তু টিচারের কথামতো তারা তাই করলো। সব কলার আবার নিজের ব্যাগে রেখে, মেরি এবার বাচ্চাদের দিকে তাকালো, আর বললো, কলারের পুরো ব্যাপারটা আর কিছু নয় বরং একটা ছোটখাট এক্সপেরিমেন্ট ছিল বৈষম্য ব্যাপারটা তোমাদের বুঝানোর জন্য।

পরক্ষণেই জিজ্ঞাসা করলো, এবার বলো, তোমাদের কলার পরা অবস্থায় জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? সব বাচ্চারা একমত হয়েই বললো, জঘন্য। তারা নিজেদের বঞ্চিত, সুবিধাহীন ভাবতো কলার পরা অবস্থায়, এই জন্য পড়াশোনাতেও ঠিকমত মনোযোগ দিয়ে পারতো না। তারপর আবার কলার আর কলারবিহীন অবস্থায় অনেকেই নিজেদের বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে আলাদা হওয়াতেও মনক্ষুণ্ণ হয়ে গিয়েছিল।

মেরি বুঝলো, তার এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে। সে এবার বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে বললো, এবার তোমরা নিশ্চয়ই বুঝলে, শুধুমাত্র গায়ের রং এর অজুহাত দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ এবং ইন্ডিয়ানদের প্রতি আমাদের মত শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্য কতটা অমানবিক!! বাচ্চারা সবাই সমস্বরে চিত্কার করে বললো, হ্যা তারা বুঝেছে।

হ্যা, গল্পটা এখানেই শেষ। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মেরি পারলেও দুনিয়াতে হাজারো মেরি এই জ্ঞানটুকু বা এই শিক্ষাটুকু ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে চেষ্টা করেও। শ্বেতাঙ্গরা কেন সফল বা কৃষ্ণাঙ্গ বা সাউথ এশিয়ানরা কেন অতটা সফল নয়, এই প্রশ্নেরও একটি উত্তর হতে পারে এই গল্পটা।



ইংরেজি একটি গল্প ঈষৎ পরিবর্তিত করে বিন্যাস ও অনুবাদঃ মোশারফ হোসেন
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪৬
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×