বেশ কয়েক বছর ধরে এক অদ্ভুত ট্রেন্ড চালু হয়েছে জন্মদিন পালন করা নিয়ে । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আজ থেকে বেশ অনেক বছর আগে থেকেই এই ট্রেন্ডগুলো খেয়াল করছি আর যারপরনাই বেশ অবাক হয়েছি, হচ্ছি এখনও । ট্রেন্ডটি হলো - যার জন্মদিন, তার এই বিশেষ আনন্দ উদযাপনের দিনে তাকে দুঃখ দিয়ে আনন্দ উদযাপন করে তার বন্ধুমহল অথবা তার পরিচিতজনেরা ।
যার জন্মদিন সে যদি ছেলে হয়, তাকে সবাই মিলে ধরে, হয় অসহায় আত্মসমর্পণের মাধ্যমে কিংবা জোর করে ধরে হাত, লাঠি, শক্ত বই, পা ইত্যাদি নানান অঙ্গ কিংবা জিনিস দিয়ে শক্ত মার দিয়ে তাকে অনেক সময় অসহ্য রকমের ব্যাথা দিয়ে তার জন্মদিন পালনের উৎসব আরম্ভ করা হয় । অনেক সময় জন্মদিনের দিনটাতেই তাকে ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হয় শুধু এই কারণেই
মেয়ে হলে অবশ্য বেশিরভাগ সময় এভাবে মারা হয় না । তবে চুলে বা সারা শরীরে কাঁদা মাখিয়ে কিংবা হরেক কিসিমের রঙ লাগিয়ে দিয়ে কিংবা ময়দা - কাঁচা ডিম দিয়ে তার চুলের বারোটা বাজিয়ে তাকে ঘিরে আনন্দ উদযাপন করা হয় ।
তবে এই ট্রেন্ডটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডির মধ্যেই এখন আর সীমাবদ্ধ নয়, স্কুল, কলেজ, পাড়া মহল্লা ইত্যাদি সবখানেই এখন তরুণ তরুণীরা দলগত ভাবে জমায়েত হয়ে এই অদ্ভুত ধরনের ট্রেন্ড কে আপন করে নিয়েছে আর এভাবেই বিচিত্র ভাবে জন্মদিন পালন করেই তারা পাশবিক আনন্দ লাভ করছে ।
অবশ্য স্কুল কলেজ পাড়া মহল্লার কিশোর রা অবশ্য মারধোরের তুলনায়, আরেকটি ট্রেন্ডকে বেশি পছন্দ করেছে, আর সেটি হচ্ছে যার জন্মদিন তাকে বাঁশ, গাছ, খাম্বা ইত্যাদি কোথাও বেধে নিয়ে তার মাথায় আবার কখনও কখনও সারা শরীরে ময়দা এবং হালির পর হালি কাঁচা ডিম ফাটিয়ে জোরপূর্বক মাখিয়ে ডলে দেওয়া । এতে দৃশ্যতই দুইটি বড় ক্ষতি হয়, ১ - নিদারুণ অপচয় এবং ২ - ভিক্টিমের শারীরিক ক্ষতি ।
নিচের ছবি তিনটি খেয়াল করুন । ছেলেটির নাম রিয়াজ, বাসা নোয়াখালী । সেও এই অন্যায়ের শিকার । তারই নিজ জন্মদিনের দিনে তার বন্ধুরা তাকে এক জায়গায় দাড় করিয়ে কাঁচা ডিম তার শরীরে মাখার জন্য ডিম ভাংতেই ডিমের খোসা তার চোখে গিয়ে লাগে । এখন সেই চোখ প্রায় নষ্ট হবার উপক্রম । আচ্ছা, এতে কার কি লাভ হলো ? কতটুকু আনন্দ হলো ?
যারা এই কাজ করছে তারা হাজার চেষ্টা করলেও রিয়াজের চোখ ভালো করতে পারবেনা যদি আল্লাহ ভালো না করে । সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য রিয়াজকে সেদিনই রাত ১২ টায় মাইজদী নেওয়া হলেও সর্বশেষ আপডেট আর জানা সম্ভব হয়নি ।
সত্যি কথা বলতে গেলে আমরা এই তরুণ প্রজন্মকে এমন একটা সময়ের মুখোমুখি করে দাড় করেছি যেখানে তারা ভালো কাজের চেয়ে খারাপ কাজে বেশি আনন্দ পায় । অন্যকে কষ্ট দিয়ে আদৌ আনন্দ লাভ করা যায় না ।
আমি এসব ভয়াবহ, বিচ্ছিরি, নোংরা ট্রেন্ড এর বিপক্ষে ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৯