somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাঁদ কে আপন মামা ভাবা মেয়েটা B:-) :`>

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- ঐ যে দূরে, ঐ যে দেখো
- কই !! কি প্লেন ?
- আরে না, প্লেন হবে কেন? দেখতে পাও না ?
- তাহলে? রকেট ?
- এ্যাহ, আসছে, প্লেন গেলেই মশাই এই পাওয়ারওয়ালা চশমার ফ্রেমে দেখতে পাবে না, আর উনি আসছে রকেট দেখা নিয়ে
- (গভীরভাবে উপরের দিকে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে) তাহলে? কি দেখতে বলো ? আর আমি এতও কানা না, দেখাও কি দেখাচ্ছিলা ?
- আরে ঐ দেখো চাঁদ মামা
- (এবার যথেষ্ট বিরক্তিভরা কণ্ঠে) ওহ, চাঁদ দেখাচ্ছিলা এতক্ষণ ? আমি তো ভাবলাম কি না কি ?
- কেন, মনে হচ্ছে আমার মামাকে তাচ্ছিল্য করলা ?
- আরে ধুর, মামা, মামা করো না তো । মনে হচ্ছে সত্যিকার অর্থেই তোমার মামা ?!! ওইটা তো বহুল প্রচলিত ডাক, সবাই ডাকে
- সবার ডাকা আর আমার ডাকা এক না
- এক না মানে ?
- চাঁদ আমার সত্যিকার মামা । আমার মায়েরা ৩ ভাই বোন, আমার আম্মা সবার বড়, এরপর আমার মেজো মামা, রিয়াদ মামা আর চাঁদ আমার ছোট মামা, চাঁদ মামা

সৌরভ তার চোখের চশমাটা হাত দিয়ে এডজাস্ট করে নিয়ে তাকালো নীলার মুখের দিকে । নীলা এখনও উপরের দিকে তাকিয়ে আছে, চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে । কিন্তু সৌরভের উদ্দেশ্য, এতক্ষণ নীলা যা বললো তা কি সিরিয়াসলি বলেছে নাকি মজা করে বলেছে, সেটা বুঝা কিন্তু নীলার মুখের ভাব দেখে সৌরভ সেটা বুঝতে ব্যর্থ হলো । সে ধরেই নিলো, নীলা তার সাথে মজা করছে । তাই সেও মজা করেই নীলার সাথে কথোপকথন চালিয়ে যাবে, এমনটা ভাবলো,

- ওহ, চাঁদ মামা তোমার আপন মামা, না ?
- হ্যাঁ, সত্যিই তো
- তা তোমার এত বয়সে একবারও সে তোমার বাসায় এসেছে ?
- আম্মা বলেছে, চাঁদ মামার বাড়ি উপরেই, আমাদের বাসায় আসতেই তার দুই দিনের মত সময় লাগবে আবার ফিরে যেতে আরও দুই দিন মানে মোট চারদিন সময় লাগবে কিন্তু তিনি তার চাকুরিতে সপ্তাহে মাত্র দুইদিন ছুটি পান, তাই চাইলেও আসতে পারেন না
- এ্যা !!! আচ্ছা, বড় ছুটি তিনি পান না ? যেমন গরমের ছুটি, দুই ঈদের ছুটি ইত্যাদি ?
- আম্মা বলেছে, আমাদের দেশে পুলিশ, আর্মি যেমন ঈদেও ছুটি পান না, চাঁদ মামার চাকুরীটাও নাকি এরকমই
- এই নীলা অনেক হয়েছে, আর মজা করো না তো । আসো অন্য কথা বলি সিরিয়াস ভাবে
- মানে কি সৌরভ ? আমি মজা করবো কেন ?

নীলার কথা শুনে এবার সত্যিই সৌরভ কনফিউশানে পড়ে গেলো । সে নীলাকে বললো,

- চাঁদ তো কোন লিভিং কিছু না । পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ । এই চাঁদ তোমার মামা হয় কিভাবে ? এতক্ষণ ভাবছিলাম তুমি মজা করছো, এখন দেখি তুমি সত্যিই...... তোমার কথা শুনে কিন্তু কনফিউশান হচ্ছে আমার

এবার নীলা যেটা করলো, তার জন্য সৌরভ মোটেও প্রস্তুত ছিল না । "দাড়াও তোমাকে প্রমাণ দেখাচ্ছি" বলেই নীলা সরাসরি তার আম্মাকে ফোন দিলো । নীলার আম্মা ফোন ধরতেই নীলা সরাসরি তার আম্মাকে বললো,

- আম্মা, দেখো, আমার এক বন্ধু, সৌরভ বিশ্বাসই করতে চাচ্ছে না যে চাঁদ মামা আমার আপন মামা হয়, মানে তোমার ভাই হয় !! মা তুমি ওর সাথে কথা বলো তো

এই বলেই সৌরভকে পুরোপুরি অপ্রস্তুত করে দিয়ে নীলা ফোনটা সৌরভের হাতে দিয়ে দিলো, অপর প্রান্তে নীলার আম্মা । তবু কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে সৌরভ ফোন কানে দিয়ে শুরুতেই সৌরভ নীলার আম্মুকে সালাম দিলো,

- আন্টি, আসসালামু আলাইকুম
- ওয়ালাইকুম আসসালাম । ভালো আছো বাবা ?
- আন্টি, এতক্ষণ তো ছিলাম কিন্তু নীলার এখনকার কথা শুনে বুঝতে পারছি না কেমন আছি
- বাবা, আমি জানি না তুমি নীলার কেমন বন্ধু তবু তোমাকে কিছু বিষয় খুলে না বললে মনে হচ্ছে তুমি ব্যাপারটা বুঝবে না । নীলার তো কোন ভাইবোন নেই, তুমি হয়তো জানো । আমাদের বিয়ের প্রায় ১০ বছর আমাদের কোন সন্তান ছিল না । আমরা অনেক ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েও কিছুতে কিছু হচ্ছিল না । অবশেষে প্রায় ১০ বছরের মাথায় অনেক চিকিৎসার পর মহান আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে আমাদের নয়নের মণি নীলা আমাদের কাছে আসে । মেয়েটার মধ্যে তেমন কোন অস্বাভাবিকতা আমরা বুঝতে পারিনি । কিন্তু ওর কিছুটা বুঝ হওয়ার পর আর ও কথা বলতে শেখার পর, আমরা খেয়াল করি, ও সবকিছুই, এমনকি সব কথাই আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করে ।

একদিন ওকে ওর আব্বা, কোলে নিয়ে আকাশে চাঁদ দেখিয়ে বলে, "ঐ যে মামনি, দেখো, চাঁদ মামা" । এরপর মেয়ে কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে, "চাঁদ তার কেমন মামা?" তোমার আংকেলও মজা করে বলেছিল "চাঁদ তোমার আপন ছোট মামা" । আসলে বাবা, আমরা দুই ভাই বোন, আমি আর আমার ছোট ভাইয়ের নাম রিয়াদ কিন্তু সেদিন থেকে নীলা বিশ্বাস করে ফেলে চাঁদ আসলেই তার আপন মামা । ছোট মেয়ে আমার তাও এত আদরের সন্তান, যাতে ওর মন না ভাংগে তাই আমি আর তোমার আংকেল দুইজন মিলেই ওর বিশ্বাসটুকুকেই মেনে নিই । আমরাই ওকে বলি, চাঁদ ওর মামা হওয়া সত্ত্বেও কেন আমাদের বাড়িতে আসে না । আমরা অবশ্য এইজন্য ওকে একজন মনরোগ চিকিৎসক দেখিয়েছিলাম । মূলত তিনিই পরামর্শ দিয়েছিলেন, নীলার বিশ্বাসগুলোকেই মেনে নিতে, নয়তো ওর নার্ভাস ব্রেকডাউনেরও সম্ভাবনা আছে ।

স্কুল লাইফের ওর সবচেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড আফিফার সাথেও ওর বন্ধুত্ত্ব ভেংগে গিয়েছিল, কারণ আফিফা ওর এই চাঁদ মামার গল্প শুনে হেসেছিল বলে । এমনকি সেইসময় এক মাস ওকে স্কুলে পাঠাতে পারিনি আমরা । এরপর তো কলেজ লাইফ পার হয়ে এখন ইউনিভার্সিটি লাইফে মেয়েটা আমার । আমরা নিজেরাও অবাক হই, এখনও তার সেই বিশ্বাস আগের মতই অটল । আমার মনে হয়, তুমি যদি এই বিষয়টা নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করো, তাহলে হয়তো ও তোমার সাথেও বন্ধুত্ব ভেংগে ফেলতে পারে, বাকিটা বুঝতেই পারছো......

সৌরভের যেন নিজের কানে কি শুনলো, সেটা বিশ্বাসই করতে পারছে না । সে স্বপ্ন দেখছে না তো ? ওর নীলা এরকম হতে পারে, এটা সে মানতেই পারছে না । কোনরকমে নীলার আম্মুকে সালাম দিয়ে ফোন কেটে দিলো সৌরভ, এরপর ফোনটা নীলাকে দিয়ে দিলো । নীলার দিকে তাকিয়ে সৌরভ বুঝলো নীলা তার দিকে তাকিয়ে আছে যুদ্ধ জয়ের ভঙ্গি সহকারে । মুহূর্তের জন্য নির্বাক সৌরভের দিকে তাকিয়ে নীলাই প্রথমে বলে উঠলো,

- কি এবার বিশ্বাস হলো? বলেছিলাম না তোমাকে ? তুমিই তো বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলে না !!

সৌরভের খুব চাচ্ছে কিছু বলতে কিন্তু তার মুখ থেকে কোন শব্দই উচ্চারিত হচ্ছে না । ওদিকে নীলা আপন মনে হেসেই যাচ্ছে । চাঁদকে আপন মামা ভাবা মেয়েটাকে খুব অচেনা লাগছে পাশে বসে থাকা ছেলেটার । ওদিকে আকাশে ঠায় দাড়িয়ে থাকা চাঁদটার এসব দেখতে বয়েই গেছে, সে ঠিকই নিজের কাজ করে যাচ্ছে মানে তার সকল ভাগ্নে-ভাগ্নিদের উদ্দেশ্য করে উজ্জ্বল আলো দিয়ে যাচ্ছে......
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:০৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×