সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যান, উন্নয়ন ও সুষ্ট সমাজ গঠনে সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে তরুণদের ভূমিকা থাকে সবচেয়ে বেশী। তরুণরাই থাকে চালকের আসনে। তরুণ সমাজের বিরোদ্ধে একটা অপবাদ রটেছে। আজকের তরুণ-তরুণীরা নাকি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে ! না আমাদের তরুণরা আত্মকেন্দ্রিক নয়। তারা হয়তো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ারের মধ্যে। সেটাও পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের স¦ার্থে। এর মধ্যেও বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাড়ানো, সহয়তা করা প্রমান করে এই তরুণেরা আত্মকেন্দ্রিক নয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মধ্যেমগুলোতে তাদের মূখর পদচারণা, সকলের খোজ-খবর নেওয়া, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, সামাজিক সংগঠন পরিচালনা করা, দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতন করানো, ক্যারিয়ার সম্পর্কে সচেতন করানো এসব কী আত্মকেন্দ্রিকতার পরিচয় বহন করে? আর এসব কিছু প্রযুক্তির মাধ্যেমে হওয়ায় ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় কই। এর মানে এই নয় এরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আজকের তরুণরা আত্মকেন্দ্রিক নয়, স¦ার্থপর হতে বসেছে। এটা হয়েছে মাত্রাতিক্ত প্রতিযোগিতা মূলক সমাজ ব্যবস্থার কারণে। যা তরুণ সমাজকে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে। উৎসাহিত করছে আত্মকেন্দ্রিক হতে।
কিন্তু এই তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ আজ বিপদগামী। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মানব জীবনকে প্রভাবিত করছে। ফেসবুক, স্মার্টফোন যোগ করেছে নতুন মাত্রা। তরুণ-তরুণীরাও এই প্রভাবের বাইরে নয়। এই বয়সে প্রতিটি মানব-মনে বয়ে আনে প্রশান্তির সুবাতাস। সময়টা পাগলা ঘোড়ার মতো এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে। পাগলা ঘোড়া পরিচালনা করার কৌশল জানা না থাকলে তাকে যেমন নিয়ন্ত্রন করা যায় না তেমনি তরুণ-তরুণীদের পাগলা ঘোড়ার মতো বয়সটাকে সংযত করতে না পারলে জীবনের রন্দ্রে-রন্দ্রে তার মূল্য দিতে হয়। হতে পারে সেটা সুখকর নতুবা কূলহীন সমুদ্রের অথৈ জল। প্রত্যেক মানুষকে এই বহমান নদী পাড়ি দিতে হয়। এই সময়টার সর্বত্রই থাকে আবেগের ঘনঘটা। অপ্রিয়কে প্রিয় করবার আকাক্সক্ষা প্রত্যেক তরুণী মনকে ভাবিয়ে তোলে। তরুণ-তরুণীদের চোখে তাদের নিজের অজান্তে একটা রঙ্গিন কাঁচের আবরণ পড়ে যায়। পৃথিবীর সবকিছু অত্যন্ত সুন্দর হয়ে ওঠে। সবাইকে প্রিয় মনে হয়। মনে হয় পাখির মত যদি ডানা থাকতো তবে আকাশে উড়ে যেয়ে ভেজা মেঘের সাথে সখ্য গড়া যেত বা মেঘের সাথে মিশে নিজেকে একটু ভিজিয়ে নেওয়া যেত। কিংবা আকাশের বুকে ঘর বাঁধার সাধটা কম নয়। সুকান্তের মত পূর্নিমা চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হয় না, মনে হয় স¦র্গের কোন আংটির পাথর। সম্ভব হলে সেটাও প্রিয়তমা বা প্রিয়তমর জন্য আকাশ থেকে নামাতে পারলে খারাপ হয় না। পাথরে ফুল ফুটানো কিংবা সাগরের ঢেউ থামানোর প্রত্যাশা কম কিসে ? কখনও আবার দুরন্ত মন হয়তো গেয়ে ওঠে- “বাঁধার প্রাচীর যত ডেঙ্গিয়ে যাব,তবু মনের বাসনা পূর্ণ করব”। ভাবনাগুলো হয় প্রিয় কাল্পনিক। আবেগে হাবুডুবু খায় অধিকাংশ তরুণ-তরুণী। বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের ধারণাটা খুব কম থাকে। সময়টা পার হয় কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। এ সময়ে তরুণ-তরুণীদের মনে চলে নানা দ্বন্দ্ব। মনের মাঝে দোলাদেয় কে আপন কে পর? কে মনের কথাগুলো বুঝবে। কে আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে। কে হবে আমার জীবন সঙ্গী ? এ প্রশ্নগুলো মনের মাঝে বারবার উকি দেয়। সময়টা পার হয় কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্য থেকে। সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন কঠিন হয়ে পড়ে তেমনি অনেক সময় সিদ্ধান্তগুলো ভুল থাকে। সময়ের একটি কঠিন সিদ্ধান্ত থাকে হুট করে প্রেমে পড়া। কারণ এ সময় আবেগ এতটাই বেশী থাকে যে- না বুঝে, না জেনে প্রেম নামক ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে অথবা অবচেতনমনে কাউকে ভাল লেগে গেলে তাকে নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে যায়। উড়িয়ে দেয় স্বপ্নের রঙ্গিন ডানা। এই রঙ্গিন ডানায় ভর করে উড়তে উড়তে কেউ কেউ অজানা বিপদ সংকুল দুর্গম পথে চলতে শুরু করে। তার সকল চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণা ও নানারকম মনেবৃত্তির মধ্যে লুকায়িত থাকে ওই প্রেম জগৎটি নিয়ে। এই কাল্পনিক জগৎ নিয়ে ভাবনার অন্ত থাকে না। লেখাপড়া, খাওয়া, ঘুম ত্যাগ করে অজানা প্রিয় মানুষটির ভাবনায় বিভোর থাকে কোমল মনটি। পিছিয়ে পড়ে তার লক্ষ্যস্থান থেকে। এই সময়টাতে বুদ্ধি থাকলেও বিবেচনা করার মত মানসিকতা থাকেনা। তরুণ-তরুণীদের এই উদাস সময়টাকে যারা সূক্ষ্ম দৃষ্টি রেখে পার করে দিতে পারে তারাই সফল হয়। এক্ষেত্রে তরুণ-তরুণীদের বুঝতে হবে আমার সব ভাললাগা মন্দলাগা সঠিক নাও হতে পারে। বুঝতে হবে পৃথিবীর সবকিছু রঙ্গিন মনে হলেও সবকিছু রঙ্গিন নয়। সব ভাললাগা স্বপ্নের মানুষ স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। আর এভাবে নিজেকে ভাসিয়ে দিলে শুধু আত্মকেন্দ্রিক কিংবা বিপদগামী নয় সইতে হতে পারে আরো কত-শত অপবাদ।