নীল পাখি নাক বাহিয়া বাঁশ গাছের উপরে উঠিয়া তাহার তেলের ভান্ড দেখিয়া আসিল (কৈ মাছ কান বাহিয়া গাছে উঠিতে পারে, যেহেতু গল্প মৌলিক কাজেই নাক বাহিয়া উঠিতে হইবে)। তাহার তেলের ভান্ডের উপরে আজকাল অনেকেরই নজর পড়িয়াছে। ডোডো পাখি গাছ তলায় বসিয়া কাঁঠাল এর ডান্ডা খাইতেছিল (পাঁঠা কাঁঠালের পাতা এবং ছাল খায় , পাখি এসব খায় না। তবে যেহেতু গল্প মৌলিক, কাজেই ডান্ডা খাওয়াইতে হইবে। গল্প যে মৌলিক তাহা বুঝাইবার জন্য শুরুতে মাঝে মাঝেই বন্ধনির মাঝে বিরক্তিকর এইরুপ বক্তব্য আসিবে, ধীরে ধীরে পাঠক অভ্যস্থ হইবে এবং সাথে সাথে এইরূপ বক্তব্য কমিয়া আসিবে)। ডোডো পাখি কহিল ---'বাবা নিলু একটু সরিষার তেল দিবি। বড্ড আটা জড়িয়ে যাচ্চে।'
নীল পাখি কহিল--'ও তেল বিক্রির জন্য নহে।'
--'ও মলো যা, তোর কাছে কিনতে চাইলো কে। আমি এই জায়গার সিনিয়র মেম্বার। একটু মাঝে সাজে ভেট-টেটওতো দিতে পারিস।' কথার মাঝে কাক গাছের উপরের ডাল হইতে ডোডো পাখির মাথায় পটি করিয়া দিলে ডোডো পাখি চিৎকার করিয়া উঠিল--'ও ভায়রার ঝি (সম্মন্ধির পুত মৌলিক গালি না, গল্প মৌলিক তাই গালিও মৌলিক) জায়গাটাকে বস্তি বানিয়ে ফেললে। বলি এভাবে পটি করতে আছে। ডায়াপার ব্যবহার করতে পারিস না?'
--'কেন তুমি কি ডায়াপার পরেই পটি করো নাকি?' কাক এর জবাব।
--'যতসব মুখে মুখে জবাব দেয়া বাবুরা এয়েচেন। দাঁড়া আজ ঋভু পাখি আসুক। বলে যদি পিটিয়ে বাড়িছাড়া না করেছি তবে আমার নাম ডোডো না।'
--'হাসালে মাইরি।' নিঝু পাখি বলিল। 'ঋভু দাদা না তোমাকে মেরে মেরে তেত্রিশ বার এলাকাছাড়া করেছিল! প্রতিবারই নাকে খত দিয়ে ভালো হয়ে যাব বলে বন্ড সই দিয়ে ফিরে এসেছো।'
--'দেখ নীঝু তেত্রিশ বারের খোটা দিবি না বললাম। যতসব কলোনিয়াল মানসিকতা। এমনভাবে বলচিশ যেন নিজে মার খাস নি কোনো দিন। গতবারই না কান ধরে উঠবস করার সময় বললি বড়দের মার না খেলে বড় হওয়া যায় না? তাছাড়া নাইনটিন সিক্সটি ফাইভের যুদ্ধের পর সরকার এই সম্পত্তির রিসিভার দেওয়ার সময় (মৌলিক) সিনিয়র হিসেবে আমারিতো রিসিভার হওয়ার কতা। মাঝখান থেকে ঋভেটা কেমন করে ঢুকে পড়ল। তোর সাথে বকবক করতে করতে দাঁতের পোকা বেরিয়ে গেল (মৌলিক)। তা মুখ পোড়া নিলু, তেল টা দিবি কিনা।'
--'কেন তোমার কাঁঠাল তো শেষ। তেল দিয়ে কি করবে?' শিলু পাখির ফোড়ন।
--'না ভাবছিলাম একটু শুকনো লঙ্কা আর রসুনের কোয়ার সাথে তেলটা মিশিয়ে একটা মালিশ বানাবো।'
--'ওতো গায়ে ব্যাথার মালিশ, তোমার আবার কি হলো?' কাউলা পাখির উদ্বিগ্ন প্রশ্ন।
--'আর বলিস নে বাপু, সেদিন ছ্যাতালাইট মাথায় দিয়ে... ।'
--'স্যাটেলাইট! ও আচ্ছা, তুমি না স্যাটেলাইট ডিজাইন কর।' ডোডো পাখির মুখের কথা কাড়িয়া নিয়া তাতু পাখির সংযোগ।
--' আ মলো যা। বলছিলাম ছ্যাতালাইট এর কতা, এর মধ্যে স্যাটেলাইট এল কিভাবে? আর স্যাটেলাইট ডিজাইন করি সে কতা কি ক্যানেস্তারা পিটিয়ে বলে বেড়াতে হবে? বলি বাতাসেরও তো চোক আচে (মৌ)। গুপ্তচরেরা চার্দিক ঘুরে বেড়াচ্চে, কেউ শুনে ফেললে তকন?'
-- 'ছাতা লাইট লাইট এর কথা কি বলছিলে বুঝলাম না তো, তাতুটার জ্বালায় কতা কওয়া মুশকিল।' সাটু পাখির সামাল দেয়ার চেষ্টা।
--'সে আর বলিস নে বাপু। এই বর্ষার মাঝে রাত বিরাতে বড় বাইরে পেয়ে গেলে ছাতা মাতায় দিয়ে নয় বাইরে গেলুন, অন্ধকারটা সামলাবো কি করে বল দিকিনি? সেজন্য ছাতার সঙ্গে কিছু এলইডি লাইট লাগিয়ে নিয়েছলুন (ছ্যাতালাইট অ্যামাজন অনেকদিন থেকেই বিক্রি করছে এটা মৌলিক না তবে, বর্ষার দিনে ছ্যাতালাইট মাথায় দিয়ে বড় বাইরে করতে যাওয়া মৌলিক)। তা বাপু লাইটগুলো ছাতার ভেতরের দিকে লাগিয়েছলুন, বাইর থেকে দেকে তো বোঝা যায় না, ওদিক দিয়ে যাওয়ার সময় পিছন দিকে গদাম করে কে যেন একটা দিয়ে দিল। বড় ব্যথা রে বাপ। দেনা একটু তেল।
'কইলুম তো, এ তেল দেয়া যাবে না।' নীল পাখির একই স্বরে জবাব। ভদ্রলোকের এক কথা।
--'বস্তির লোকজন সব, পাঁচশ বারো ঘর ঘুরে, চুরাশি বাড়ি থেকে ভিক মেগে তবে না ঐ ১৬ ছটাক তেল পেয়েচে, তার আবার ডাট কতো। তুমি চিন্তা করোনা ডোডো দাদা, আমরা পালা করে তোমায় মালিশ করে দেব।' কলা পাখির প্রলেপ।
--'হু, মালিশ করে উলটে যাবি। কত দেকলুম। তোর খামারে কত অ্যামিবা,প্লাংটন, কোনদিন মনে করে দুটো এনেছিলি, ডোডো দাদা খাবে? এয়েচেন আমার মালিশ করনে ওয়ালা। হুহ।
বেলা চড়ে গেল । তোদের সাতে কতা কয়ে মাতাটাও গরম হয়ে গেল। ও নিলু দেনা একটু সরষের তেল, চান্টা সেরে আসি।'
--' বললুম তো ছাগলের পেটে মাখন সয়না (মৌ) এই তেল তো্মার সইবে না।' ।
--'কি এত বড় আস্পদ্দা!! আমারে তুই ছাগল বললি!!!'
--' কে তোমারে ছাগল বলল? আমার এটা কি তেল না মাখন? এটা মাখন হলে তুমিও ছাগল। যত সব প্রশ্ন ফাঁস জেনারেশন। বাংলা ভাষাও বোঝে না।'
রাগে ডোডোর জিভ হইতে ধোয়া বাহির হইতে লাগিল (মৌ)। এমন সময় এন্ডাপাখি আসিয়া বলিল--'ডোডো দাদা। এই নাও গিরিজ। যাও জলে ডুব দিয়ে আসো। ও ব্যাটা নীলুর তেলে বড় ভেজাল।'
--'ওমা কিরিচ দিয়ে আমি কি করব রে ?আমি কি বন্ড নাকি।'
--'আরে কিরিচের কথা কে বলছে ?চোখের মাথা খেয়েছ, কানের ও কি মাথা খেয়েছো। এটা হল গিরিজ।তেলের চেয়ে অনেক বেশি কনসেনট্রেটেড জিনিস। লুব্রিকেশন অনেক ভালো। তাছাড়া তেল মেখে তো সবাই চান করতে পারে, গ্রিজ মেখে কয়জন চান করে। এটার মধ্যে মৌলিক মৌলিক ভাব আছে।'
--'যা, মেলা বক বক করিস নে, তোর মত লিলিপুটের মুখে মৌলিক শব্দ মানায় না। পারিস তো শুধু মুড়ি ভাজা রচনা লিখতে (ম)।'
--' দেখো ডোডো দাদা, ওরকম লিলিপুট লিলিপুট কোরোনা।তুমি কতটা ব্রবডিংনাগ জানা আছে। দেখছো না ব্যাটা নীলুটা বস্তির ছেলে গুলোর সাথে প্যাক্ট করেচে । ওর কাছে তুমি তেল চাও কোন আক্কেলে। বেটা বস্তির ছেলে যদি তেলের সাথে কিছু মিশিয়ে দেয়। তোমার সাথে তো ঋভু দাদার ভালো খাতির। ঋভু দাদাকে বলে ওদেরকে এখান থেকে খেদিয়ে দাও না।'
--'তা যা বলচিস। ঋভেটা আমাকে অবশ্য খুব মানে, সেদিনই বলছিল আমার মধ্যে একটা পাখবিক ( ) ভাব আছে। আচ্ছা গিরিচই সই। দে একটু দিকুনি, এখন একটু মেকে চানটা সেরে আসি।'
লেখা উৎসর্গ আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়। কাউকে লেখা উৎসর্গ করার বিশেষ আগ্রহ আমার নেই। তবে এ লেখাটা আমাদের গুপ্তচর লেখক পদাতিক চৌধুরী কে উৎসর্গ করলাম। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ছাইপাশ লিখে যাচ্ছেন, মৌলিক কিছু লিখতে পারছেন না। এ লেখা থেকে তিনি যদি মৌলিক কিছু লেখার প্রেরনা পান তবে এ লেখা সার্থক হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:১০