somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যাপয়েন্টমেন্ট আপু আর গারবেজ কাকু

১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অফিস থেকে বাসায় ফিরছি, ১৮ নম্বর বাড়ির সামনে একটা জটলা, কিছু হইচই, দেখে থমকে দাঁড়ালাম। তেতলার ব্যালকনিতে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট আপুর অগ্নিমূর্তি, দোতলায় মাখন ভাবির ঝাড়ু হাতে পোজ, নিচে পাড়ার জনা দশ বারো মহিলা, ছেলে-ছোকরাদের ফোড়ন কাটা, সব কিছু ছাপিয়ে গারবেজ কাকুর ৭০ ডেসিবেলের আওয়াজ- শবনম, লক্ষী সোনা, তুমি এত উত্তেজিত হয়ো না, আমি বিষয়টা হ্যান্ডেল করছি।

আসলে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট আপুর নাম মোটেই অ্যাপোয়েন্টমেন্ট না; ওনার নাম শবনম চৌধুরী। আজ থেকে ঠিক দু বছর দুমাস আগে উনি দয়া করে এই মহল্লায় আস্তানা গেড়েছেন। কোন একটা বিদেশী এনজিওতে চাকরি করেন। ওনার 'অ্যাপয়েন্টমেন্ট' নামের পিছনে একটা কাহিনী আছে।

তো বছর দুই আগে ছুটি, না কি একটা কাজে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আপু বিদেশে যাবেন, ভোর পাঁচটায় ফ্লাইট। উনি রাত দুটোর দিকে বিশাল বড় একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছেন, প্লেনের দরজা দিয়ে ঐ ব্যাগ ঢোকার কথা না, ছাদে বেধে নিতে হবে। সে আলাদা কথা। এখন মহল্লার দারোয়ান রোডের শেষ মাথার গেটে ওনাকে আটকে দিয়েছে।

নিয়ম হলো , রাত বারোটার পর টেলিভিশন, ফ্রিজ বা ঐ রকম বিশাল সাইজের কিছু নিয়ে কেউ বের হলে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে একটা গেট পাশ নিতে হয়। পাশে বাড়িওয়ালা ওনার ফোন নম্বর দিয়ে দেন, লিখে দেন ব্যাগেজধারী লোক/মহিলা ... নম্বর বাড়ির ভাড়াটিয়া ইত্যাদি। দারোয়ান প্রয়োজনে বাড়িওয়ালাকে ফোন করে যাচাই করে নেয়।

তো শবনম আপুর কাছে এরকম কোন কাগজ ছিল না । দারোয়ান যথারীতি ওনাকে আটকে দিয়েছে। উনি বেদম রেগে দারোয়ানকে বলেছিলেন - ছোটলোক, তোমার মালিকের মত লোকেরা আমার বাসার দারোয়ানের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও অ্যাপোয়েন্টমেন্ট করে আসা লাগে, জানো ?
সেই থেকে পাড়ার ছেলেরা ওনাকে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট আপু বলে ডাকে।

(অ্যাপয়েন্টমেন্ট আপু ঐদিন দারোয়ানের কাছ থেকে ছাড়া পান নি, পরে ফ্লাইট মিস হয়ে যেতে পারে এমন অবস্থায় বাড়িওয়ালাকে দারোয়ান রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগিয়ে পরে ওনার যাবার ব্যবস্থা হয়েছিলো।)


এদিকে গার্বেজ কাকুর নামও গার্বেজ না। ওনার বাড়ি কলিংবেলের পাশে লেখা আছে মাহাতাপ সর্দার, (বিএছছি)। উনি আগে একটা সরকারি চাকরি করতেন, ৯৬ সালের শেয়ার মার্কেটে ভালো পয়সা করেছিলেন; পরে চাকরিটা ছেড়ে দেন। এখন শেয়ার মার্কেটে টুকটাক ব্যবসা করেন, আর মহল্লার গার্বেজ এর ঠিকাদারিটাও নিয়েছেন ।

অন্যান্য মহল্লায় গার্বেজ এর জন্য মাসে ১৫০ টাকা করে দিতে হয়, যারা গারবেজ কালেক্ট করে, ভ্যান ড্রাইভার এরা ৮ হাজার টাকার মতো করে পায়। এই মহল্লার গার্বেজ কালেকশন চার্জ মাত্র ১০০ টাকা, যারা কালেক্ট করে এরা বেতন পায় মাসে ১৪-১৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বলা যায় গার্বেজ কাকু বেশ মানবিক লোক।

তো সরকারি গুন্ডারা দলের গুন্ডারা এই গার্বেজ ব্যবসা কব্জা করার জন্য বহু চেষ্টা করেছে; কিন্তু গার্বেজ কাকুর ভক্তদের মুখে এক কথা - জান দিয়ে দেব, গার্বেজ কাকুর ব্যবসা নিতে দেবোনা। শেষে কোন উপায় না পেয়ে এই সব গুন্ডারা ওনার নাম গার্বেজ কাকু রেখে দিয়েছে। কাকু গায়ে দামি পারফিউম মেখে কয়দিন ঘুরে বেড়িয়েছে, মহল্লার ছেলেগুলোকে কয়দিন চা-লেড়ো বিস্কুট খাইয়েছে, কিন্তু নাম বদল হয় নি।

কাকু তার চারতলা বাড়ির দোতালায় তার কুকুরটাকে নিয়ে থাকেন, বাকি তিন তলা ভাড়া দেয়া। মাঝে মাঝেই কুকুরটা রাতের বেলা ঘেউ ঘউ করে ডাকে। নিন্দুকেরা বলে ওটা কুকুরের ঘেউঘেউ , না কাকু গলা সাধছেন। কাকুর পাশের বাড়ির মোজাদ্দেদ জাহিদ সাহেবের ছেলে জমজ ছেলে বিলু-নিলু একদিন কাকুকে বলেই বসলো- কাকু আপনি কি শুধু কুকুরের ডাক ডাকতে পারেন? বিড়ালের ডাক ডাকতে পারেন না?

কাকু ভীষণ রেগে মোজাদ্দেদ ভাইকে কমপ্লেন করেছিলেন। মোজাদ্দেদ ভাই গম্ভীর মুখে বলেছিল আমি অবশ্যই বিচার করব। আমার ছেলে বলে ছেড়ে দেবো এটা ভাববেন না। আমার ছেলে এতটা নির্বোধ কি করে হয়? সে শুধু গলার ডাকটাই দেখলো, চেহারা আর আচরণের মিলটা দেখলো না ?
ভদ্রলোকেদের পাড়াটা কিরকম বস্তি হয়ে যাচ্ছে এই দুঃখ করতে করতে ওই দিন কাকু ফিরে এসেছিলেন।

যাগ্গে, বর্তমান সময়ে আসি। আজকের ঘটনা এই যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আপু তিন তালার ব্যালকনিতে তার সাধের টবের গাছে পানি দিয়েছিলেন , টব থেকে গোবর মাখানো এই পানি গড়িয়ে গড়িয়ে দোতালার মাখন ভাবির শাড়িতে পড়েছে। মাখন ভাবি ছেড়ে দেবেন কেন? দু'কথা শুনিয়ে দিয়েছেন । এরপরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আপু বলেছেন - ছোটলোকের জাত, গাছ চেনে? দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আমার ছোটমামা এই গাছটা পাঠিয়েছে। গাছ চিনলে এই পানি বোতলে ভরে সবাইকে দেখাতো - ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যস, লেগে গিয়েছে।

(মাখন ভাবির আসল নাম জানি না। মাখন ভাইয়ের আসল নাম মাসুদ হোসেন, কিন্তু নাদুস নুদুস চেহারার জন্য মহল্লায় ওনাকে সবাই মাখন বলে ডাকে, সেখান থেকেই মাখন ভাবি)

কিন্তু এই কাজিয়ার মধ্যে গার্বেজ কাকু কিভাবে ফিট করে?

কাকু কে জিজ্ঞাসা করলাম- কাকু কি ব্যাপার? মাখন ভাবি, আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট আপুর কবি লড়াইয়ের মধ্যে আপনি কেন? উনি তোম্বা মুখ করে বললেন- এই তোমাদের এক সমস্যা, ভালো কাজ করতে গেলে বাধা দাও, হাজার জিজ্ঞাসা। একটা মেয়েকে তোমরা এভাবে অসহায় পেয়ে ঝামেলা করবে, আর আমি মুখ বুঝে সহ্য করবো, তা কি করে ভাবলে?

আমি বললাম- কাকু, অসহায় মেয়ে দেখলেই সাহায্য করতে হবে? কাকু বললেন- না, মামুনুলকে দেখেছো না? সাহায্য করতে করতে শেষে প্রেম-ভালোবাসা-বিয়ে পর্যন্ত গড়ালো। ফেলল আমি বুঝলাম কেসটা অন্যরকম। হেসে দিয়ে চলে আসলাম ।

কাকুর 'অবলা রমনী সাহায্য করণ' প্রকল্প কাজে আসেনি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট আপু দুদিনের নোটিশে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন । বাড়িওয়ালা ওনার উচ্চ পরিবারিক মর্যাদার কথা জানতে পেরে মাসের মাঝখানে বাড়ি ছাড়ার পরেও এক মাসের যে এডভান্স জমা দেয়া ছিল তা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন।

পরের খবর- পাড়ার ফটো স্টুডিওর মালিক রাজন শুনছি গারবেজ কাকুকে পাকড়াও করেছে। ওর ওখানে অনেক উঠতি মডেল ফটো শুটিং করতে আসে। এরাও নাকি অনেক অসহায় , ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করতে হিমশিম খাচ্ছে। তো অসহায় কোনো মডেলকে সাহায্য করার সুযোগ কাকুকে মিলিয়ে দেওয়া রাজনের জন্য কোনো ব্যাপারই না।

শেষ খবর যা জানি , পাড়ার ছেলেরা কাকুকে এখন মাস্তি কাকু ডাকা শুরু করেছে ।

(কাকু, আপনি ডাকতে পারেন- এই অংশটা দুলেন্দু ভৌমিকের এক গল্প থেকে চুরি করা। শুরুর ছবি ডাকডাকগোর ইমেজ সার্চ থেকে নেয়া। বাকি সব ঘটনা কাল্পনিক। কাল্পনিক ভালোবাসার ঘটনা কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে তা সম্পূর্ণ কাকতালিয় বলে ভেবে নিতে হবে। )
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:০৭
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×