somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লজ্জাঃ চলচ্চিত্রের নায়ক অথচ বাস্তবের খলনায়ক শাকিব খান - নাম্বার ৪২০

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নিয়ে কোনোকালেই আমার তেমন আগ্রহ ছিলো না তবে অনেকটা আকস্মিকভাবেই গত বছরের নভেম্বরের দিকে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নিয়ে ক্রমশঃ আগ্রহী হয়ে উঠি। এই আগ্রহের পেছনে যার একমাত্র অবদান, সেই প্রিয় মানুষটি যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে আলোচিতদের মধ্যে একজন, আমাকে গত বছরের ৯ জুলাই অপু বিশ্বাস ও শাকিব খান অভিনীত সম্রাট চলচ্চিত্রের অসম্ভব শ্রুতিমধুর একটি গান শোনায় –



“সারা রাত ভোর চোখের ভেতর/স্বপ্নে তোমার আনাগোনা/নেমে আসে ভোর, থাকে তবু ঘোর হাওয়ায় হাওয়ায় জানা শোনা/তুমি দেখা দিলে তাই/মনে জাগে প্রেম প্রেম কল্পনা/আমি তোমার হতে চাই/এটা মিথ্যে কোন গল্প না”

গানটা শুনে আমি বেশ আলোড়িত হই, গানের কথাগুলো চমৎকার, সাথে পর্দায় অপু-শাকিবের চমৎকার রোমান্স। অপু-শাকিব নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন শুনতাম কিন্তু অতটা গায়ে লাগাইনি। তবে শাকিব খান নিয়ে আমার সবসময়ই বেশ সন্দেহ ছিলো – তার কিছু স্ববিরোধী বা হিপোক্রিসিমূলক আচরণের কারণে। যেই শাকিব খান কাফনের কাপড় পরে ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করেছেন, সেই শাকিব খানই পরবর্তীতে ভারতীয় বা বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবিতে নির্লজ্জের মতো চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।



এ ব্যাপারে শাকিব খানকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ খলনায়ক মিশা সওদাগর নচিকেতার একটি গানের মাধ্যমে নিজের ক্ষোভ আর হতাশা ব্যক্ত করেছেন এভাবে -


‘আমি মুখ্য-সুখ্য মানুষ বাবা কিছুই বুঝি না, এ দেশের রঙ-তামাশা কিছুই জানি না, আজকে যিনি যৌথ ছবির পক্ষে কালকে তিনি বিপক্ষে/কোনোরকম একটা সাইনিং পেলেই যুক্তি দিতে থাকেন স্বপক্ষে, কে যে কখন কার পেছনে বুঝি না কে খাঁটি, আসলে সবাই সবার পেছনেতে সবার হাতেই কাঠি’’। এ বিষয়টিকে টেনে মিশা আরো বলেছেন, ‘কেউ কাফনের কাপড় পড়ছে, আন্দোলনে দেখি কাউকে, আবার তাকেই দেখি ভারতীয় ছবিতে চুক্তি করছে। এ ধরনের দ্বিমুখী আচরণকে আমি ঘৃণা করি। আমি কাউকে পরোয়া করি না। যা উপলব্ধি আসে তা বলি।’


আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতীয় বা বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবির বিপক্ষে নই কিন্তু ‘দ্বিমুখিতা’ বা ‘হিপোক্রিসি’র বিরুদ্ধে সবসময়ই আমার অবস্থান। তাই নির্দ্বিধায় বলবো, মিশা সওদাগর চলচ্চিত্রের খলনায়ক হতে পারেন কিন্তু বাস্তবে এই প্রশ্নে তিনিই নায়ক আর শাকিব খান চলচ্চিত্রের নায়ক হলেও বাস্তবের খলনায়ক। শাকিব খান নাম্বার ওয়ান নামে তার একটি ফিল্ম দেখেছিলাম কিন্তু তিনি যেই খেল দেখাচ্ছেন তাতে তাকে এখন শাকিব খান নাম্বার ৪২০ বলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না।

যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি।

মানবতা এবং নৈতিকতা - উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে শাকিব খান চরম গর্হিত একটি অপরাধ করেছেন যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কাজটি হচ্ছে - জনপ্রিয় নায়িকা অপু বিশ্বাসকে ৯ বছর আগে গোপনে বিয়ে করে বছরের পর বছর সেটি গোপন রেখে স্ত্রীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করেছেন, তাকে গর্ভবতী করেছেন, সেই সময়ে স্বামী হিসেবে স্ত্রীর প্রতি কোনোই দায়িত্ব পালন করেননি এবং শুধু এই অপরাধগুলো করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, এর পরেও তিনি গণমাধ্যমে সদম্ভে জানিয়েছেন যে সন্তানকে গ্রহণ করে নিলেও স্ত্রীকে তিনি গ্রহণ করবেন না যা তার চরম ঔদ্ধত্যকেই প্রকাশ করছে।

হাতে নাতে ধরা খাওয়ার পরেও আত্মম্ভরী শাকিব খানের নির্লজ্জ দম্ভোক্তি অব্যাহত আছে -



বিয়ে হয়নি তো সন্তান আসলো কীভাবে ? সন্তান তো তিনি ঠিকই দাবি করছেন। শাকিব খানের বিভিন্ন অসংলগ্ন বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে তিনি অপরাধ করেছেন এবং এই অপরাধকে জাস্টিফাই করার ব্যর্থ প্রয়াসে একেক সময়ে একেক কথা বলে বেড়াচ্ছেন।
শাকিবের বক্তব্যে দুই ধরনের কথা উঠে আসছে। অপু বিশ্বাসের লাইভ অনুষ্ঠানের পরপরই শাকিব অপু বিশ্বাসকে বিয়ের কথা স্বীকার করলেও পরে সে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। অপু বিশ্বাসের লাইভ অনুষ্ঠানের পর শাকিব খান বলেন, বিয়ের কথা অপু যা বলেছে তা সত্যি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ বক্তব্য আসলেও পরে শাকিবের বক্তব্য পরিবর্তন হয়ে যায়। কোনো গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের শাকিব খান বলেছেন তিনি অপুকে বিয়ে করেননি। আবার এও বলেছেন যে তিনি সন্তানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। আবার বলছেন যে অপু বিশ্বাস ট্র্যাপে পড়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।

তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট শাকিবের এই ধরনের বক্তব্যের কারণ হিসেবে 'মাথা গরম'কে টেনে আনছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায় এই মুহূর্তে শাকিব খানের মাথা গরম আছে। তিনি আসলে বুঝতে পারছেন না কি বলবেন আর কি বলবেন না। এজন্যই একেক সাংবাদিকের কাছে একেক কথা বলছেন।

যাই হোক, এটি কী মামার বাড়ির আবদার নাকি যে তিনি একটি নারীকে বিয়ে করবেন অথচ বিয়ে গোপন রাখবেন, স্ত্রী বলে স্বীকার করবেন না, স্ত্রীর প্রাপ্য মর্যাদা দেবেন না, তাকে যৌনসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করবেন, সন্তান পয়দা করবেন আর তারপর চাহিদা মিটে গেলেই স্ত্রীকে আবর্জনার মতো রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেবেন ? চলচ্চিত্রাভিনেতা বলে কী তিনি আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবেন ? বিচারব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখাবেন আর সবাই চুপ করে বসে থাকবে ? যেই অহমিকাবোধ থেকে শাকিব খান ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন, সেই অহমিকাবোধ চূর্ণবিচূর্ণ করতে সবার এই চরম অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত। শাকিব খান এই বিয়ের সম্পর্ক গোপন রেখে এবং প্রকাশ হওয়ার পরেও স্ত্রীকে গ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণার মাধ্যমে অপু বিশ্বাসকে চরম ঠকানো ঠকিয়েছেন, চরম নিষ্ঠুর প্রতারণা করেছেন। আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থা ইউরোপ আমেরিকার মতো ফ্রি নয় বরং চরম রক্ষণশীল এবং এই রক্ষণশীলতা ইতিবাচক কিছু না হলেও আমরা যেহেতু অধিকাংশই বদ্ধ মনের মানুষে ভরা এই বদ্ধ সমাজে বাস করি, সেহেতু এই সমাজের নির্মম বাস্তবতাগুলোকে আমাদের চরম কষ্ট, লজ্জা ও ঘৃণার সঙ্গে মেনে নিতে হয় !



একজন নারী কখন কোন অবস্থায় এভাবে টেলিভিশনে সন্তান নিয়ে এসে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে এমন কথা বলতে বাধ্য হন সেটি আমাদের ভাবতে হবে –





“আমার আর শাকিব খানের সন্তানকে অনেক স্ট্রাগল করে জন্ম দিয়েছি। তখন শাকিব আমার পাশে ছিলো না। টাকা দিয়েছে, কিন্তু কেউ যদি অসুস্থ থাকে সেসময় টাকা দিয়ে সব পাওয়া যায় না। আমি যখন অসুস্থ ছিলাম, একবার চেয়েছি তার সঙ্গে হ্যালো বলি।আমি কি অন্যায় করেছিলাম? আমিতো শাকিবের ভালো চেয়েছি, এখনও চাই। তারও তো মা আছে, বোন আছে, তাদের একবার জিজ্ঞেস করুন, তারা আমার মতো কষ্ট করে কি না। আমি শাকিবকে অনেক সাপোর্ট করেছি সেটা কি অপরাধ? আমি অনেক সাফার করেছি। অনেক বিদ্রূপ, গুঞ্জন সহ্য করেছি। আমি জানতাম শাকিবকে ঠিক রাখতে হবে। আমাকে বলছে অপু, তুমি লুকায়ে রাখো, আমি লুকিয়ে রেখেছি। আমার প্রাণের ছবি ‘বসগিরি’ আমি ছেড়ে গেছি এক কথায়...স্ত্রী হিসেবে আমি একটু সম্মান চেয়েছিলাম”




এই ঘটনার সামগ্রিক অবস্থা আপনারা চিন্তা করে দেখুন –

১) বাংলাদেশের এই বদ্ধ সমাজে ডিভোর্সি নারীদের ২য় বিয়ে করা কী এতোই সোজা ?

উত্তরঃ না। সেক্ষেত্রে অপু বিশ্বাস কী করবেন ? পারবেন হয়তো ২য় বিয়ে করতে কিন্তু সেখানে অনেক ‘কিন্তু’ থাকবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১ম বিয়ে আর ২য় বিয়ের মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য থাকে। বিয়ে যে করতেই হবে - তা নয় কিন্তু একটি মেয়ের জন্য এদেশের সমাজ বাস্তবতা অনেক কঠিন এবং তাই বিয়ে করা লাগে।

২) ডিভোর্সি উপরন্তু একটি বাচ্চা আছে – ২য় বিয়েকে সোজা মনে হচ্ছে ?

উত্তরঃ খুবই কঠিন। একেই তো বাচ্চা নেই এমন ডিভোর্সি মেয়েদের বিয়ে হতে চায় না, তার ওপর আবার সন্তানসহ ডিভোর্সি হলে সেখানে ২য় বিয়ে তো আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু নায়িকাকে বিয়ে করা নিয়ে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ এদেশের বদ্ধ মানসিকতার জনগণের অ্যালার্জি আছে।

৩) নায়িকাদের সম্পর্কে আমাদের সমাজের মানুষদের চিন্তাভাবনা কীরকম ?

উত্তরঃ খুবই নেতিবাচক। তাদের মানসিকতা হচ্ছে – নায়িকাদের তারা নায়িকা হিসেবে পেতে চান, তাদের শরীর দেখতে চান, স্বপ্নে তাদের নিয়ে রোমান্সও করতে রাজি আছেন কিন্তু বিয়ে করতে চান না। ইন জেনারেলি, এদেশের অধিকাংশ মানুষ মনের মাধুরী মিশিয়ে নায়িকাদের সম্পর্কে দশগুণ বেশি ভেবে নেন যে তারা চলচ্চিত্রের পরিচালক প্রযোজকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গিনী হয়েছেন যা কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সত্য কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সত্য নয়। আর শয্যাসঙ্গিনী হলেই কী যায় আসে ? পুরুষ কী ধোঁয়া তুলসীপাতা ? শাকিব খান তো আর কচি খোকা নন, তিনি সজ্ঞানে বিয়ে করেছেন আর বিয়ে করলে স্ত্রীর যথাযথ মর্যাদা দিতেই হবে। তিনি যদি তার বিরুদ্ধে আমাদের আরোপিত অভিযোগ থেকে বাঁচতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক পুরুষের সঙ্গে শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার অভিযোগ আনেন তবে অবাক হবো না তবে বলা বাহুল্য যে এমন অভিযোগ ধোপে টিকবে না।

৪) এদেশের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সন্তানের বাবার পরিচয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শাকিব খান সন্তানের দায়িত্ব নেবেন কিন্তু স্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন না – অর্থাৎ, সন্তান তার মার আদর ভালোবাসা স্নেহ মায়া মমতা থেকে বঞ্চিত হবে এটা কোন নৈতিকতার মধ্যে পড়ে ?
উত্তরঃ বিলাস ব্যসনের ভোগী জীবনে অভ্যস্ত জঘন্য অমানবিকতার চরম উদাহরণ শাকিব খানের এমন উদ্ভট আবদার। এটা তো সকলেই জানেন, মা বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ সুস্থ সম্পর্ক সন্তানের মানসিক বিকাশে অত্যন্ত ভূমিকা রাখে। সেক্ষেত্রে আব্রাহাম খান জয়কে মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করার সাহস শাকিব খান কিভাবে দেখাতে পারেন ?

৫) শাকিব খানের মা বোন কেন এই ব্যাপারে নীরব আছেন ? তারা কী কারো স্ত্রী নন বা ছিলেন না ? তারা কেন নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে অপু বিশ্বাসকে ঘরে তুলে আনছেন না ? বাংলায় একটি প্রবাদ আছে – ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে’। শাকিব খানের এই চরম অন্যায়ের ভাগীদার তার পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য যারা এমন অন্যায় দেখেও চুপ করে আছেন। তাদেরই উচিত নিজেদের গরজে অপু বিশ্বাসকে বউমার পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলে আনা।

৬) অপু বিশ্বাস হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তারপরও যদি শাকিব খান তাকে বিয়ে করতে পারেন তাহলে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা কেন দিতে পারবেন না ? অপু বিশ্বাস শাকিব খানের জন্য মুসলমান হয়েছেন, নাম রেখেছেন অপু ইসলাম খান। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে নিশ্চিতভাবেই অপু বিশ্বাসের আত্মীয়পরিজনদের কেউ কেউ তার ওপর অসন্তুষ্ট হবেন। অপু ধর্মান্তরিত হলেন, ১০ মাস ১০ দিন সময় দিয়ে শাকিবকে কাছে না পেয়ে সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় ভারতে সন্তানের জন্ম দিলেন – এই যে কষ্ট আর ত্যাগ অপু স্বীকার করলেন, শাকিব তার ছিটেফোঁটা কষ্ট বা ত্যাগ স্বীকার করেছেন ?

উত্তরঃ না। তিনি সে সময় শুটিং এবং নতুন নায়িকা বুবলিকে নিয়ে মহাব্যস্ত ছিলেন। শাকিব খান কী বুবলিকে নিয়েও অপু বিশ্বাসের মতো এমন পরিকল্পনা করছেন বা অলরেডি অনেক কিছুই করে ফেলেছেন ? ‘ফ্যামিলি টাইম’ লেখা বুবলির ফেসবুক স্ট্যাটাসে শাকিবের সাথে ছবি অনেক প্রশ্নেরই উদ্রেক করে।

৭) শাকিব খানের এই চরম অন্যায়ের কারণে অপু বিশ্বাসের জীবনে এক বছরেরও বেশি সময় নষ্ট হলো। অপু বিশ্বাসের ক্যারিয়ারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং আরো পড়বে কেননা এই যে এক বছর তিনি চলচ্চিত্রে সক্রিয় ছিলেন না, এতে একটা ছন্দপতনের সৃষ্টি হলো আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের মানুষের একটা উদ্ভট মানসিকতা আছে যে বিবাহিতা নায়িকাদের তারা ঠিক পছন্দ করতে পারেন না। নায়িকা বিবাহিতা ? – ব্যাস এই নায়িকার দিন শেষ বা এই নায়িকা আর চলবে না - এরকমই আমাদের দেশের চলচ্চিত্র দর্শকদের নেতিবাচক মানসিকতা। শাকিব খান ছেলে বলে তার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না কিন্তু অপু বিশ্বাস মেয়ে বলে তার ক্যারিয়ারে বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে ! এছাড়া সিজারিয়ান সেকশনে স্কিনে যে দাগ পড়ে, সেই দাগ রিমুভ করাও তো ঝামেলা। কসমেটিক সার্জারি অনেকেই করতে চান না আর করলেও এতে কিছু ঝামেলাও হতে পারে।

৮) বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের বিকাশের স্বার্থে অপু বিশ্বাস আগেই বলেছিলেন যে জাজ মাল্টিমিডিয়া বা বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো তিনি করবেন না, তিনি সেই কথা রেখেছেন কিন্তু শাকিব খান এর বিরুদ্ধে সাদা কাফনের কাপড় পরে কথা দিয়েও কথা রাখেননি। শাবনূরের পরবর্তী সময়ে অপু বিশ্বাসই ছিলেন শীর্ষ নায়িকা, যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো করলে অপু বিশ্বাসের মতো একজন দক্ষ নায়িকা যে সফল হতেন সেটা অনুমান করতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না কিন্তু তিনি নিজের স্বার্থের কথা ভাবেননি, শাকিবের ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলতে আর নিজের নৈতিক বিশ্বাসের কথা ভেবে জনপ্রিয়তা ও আর্থিক দিক থেকে লাভজনক ছবিগুলো থেকে নির্দ্বিধায় সরে এসেছেন, ভালোবাসার মানুষের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ উৎসর্গ করে দিয়েছেন।

৯) সে সময় অপু বিশ্বাস প্রেগন্যান্ট না হলে বসগিরিসহ শাকিবের অভিনীত অন্যান্য ছবিগুলোতে তিনিই থাকতেন, সেক্ষেত্রে এসব ছবিতে সফলতার নাম আজকে বুবলির না হয়ে অপু বিশ্বাসেরই হতো। কিন্তু অপু বিশ্বাস ভালোবাসার কাছে ক্যারিয়ারকে বিসর্জন দিয়ে চরম ত্যাগ স্বীকার করে সেসব চলচ্চিত্র থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। পক্ষান্তরে, শাকিব খান সবসময়ই নিজের স্বার্থের দিকটা দেখেছেন।

১০) বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংস্থা, মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংস্থা এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে শাকিব খানকে এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা দেওয়া তথা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিয়ে বা সংসার ছেলেখেলা নয়। এভাবে বিয়ে করে সন্তান পয়দা করে তারপর স্ত্রীর দায়িত্ব না নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া তথা একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করার অধিকার শাকিব খানের নেই। শাকিব খান তো একজন ধর্ষক থেকেও খারাপ কাজ করছেন ! একজন ধর্ষকের শাস্তি হলে শাকিব খানেরও শাস্তি হতে হবে। সমাজের সবক্ষেত্রে, বিভিন্ন পর্যায়ে এ ধরনের শাকিব খানেরা রয়েছে। যারা প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই নারীকে অস্বীকার করতে চায়, তাকে ছেড়ে দিয়ে সন্তানকে নিয়ে যেতে চায়।




চলচ্চিত্রের নায়ক হয়ে লাভ নেই, বাস্তবের নায়ক হতে হবে। প্রকৃত পুরুষের মতো আচরণ করতে হবে, এভাবে বিয়ে নিয়ে লুকোছাপা করে গোপনে টাকা দেওয়ার কাপুরুষোচিত আচরণ চলবে না। শাকিব খানের মতো এসব ঘৃণ্য Male Chauvinistic Pigs দের অপরাধের বিচার করতে হবে, সমাজে নারীর সমানাধিকার, স্ত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিনা কারণে ডিভোর্স দেওয়া যাবে না, সন্তান জন্ম দিয়েই স্ত্রীকে অস্বীকার করলে তার জন্য শাস্তিমূলক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবে সেটি কার্যকর করতে হবে।


শাকিব খানকে অপু বিশ্বাসের কাছে মাফ চেয়ে স্ত্রীর পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে গ্রহণ করে নিতে হবে অন্যথায় তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে – সেজন্য মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংস্থাগুলোর কড়া হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। অসহায় অপু বিশ্বাসের কান্না আমাদের বিবেক তথা নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করুক এই প্রত্যাশায় শেষ করছি - সকলকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৩৯
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×