যাহা বলিব, সত্য বলিব’র বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত পোষণ করা যায় একবাক্যে। কিছু কথা যোগ করতে চাই, যা থাকলে আপনার পোস্টটি অন্যরকম হতে পারতো। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘সিডোর’ সম্পর্কে অনেক আগেই অর্থাৎ চার-পাঁচদিন আগেই জল্পকা কল্পনা চলেছে পত্রপত্রিকা তথা মিডিয়ায়। পত্রিকা এ যাত্রায় একটু এগিয়ে ছিল, পরে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হয়ে ওঠে বেশ অগ্রগামী। সরকারিভাবে ছিল প্রস্তুতি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কথা বলি, আমি ১৩ তারিখে চট্টগ্রামের এক সহকর্মীর মুখে শুনলাম ঘুর্ণিঝড়ের খবর। তিনি খবরটি জেনেছিলেন পত্রিকায়। আমি অবশ্য তেমন আমল দেই নি। কারণ আমরা যারা ঢাকা থাকি, তারা সব দুর্যোগেই যথেষ্ট নিরাপদ থাকার কারণে কোন পূর্বাভাসই তেমন ব্যাকুল করে না। তবে পর পর কয়েকদিন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক তোড়জোর দেখে কিছুটা হলেও আতঙ্কিত হই। সিডোর আঘাত হানার আগের দিনের পত্রিকাগুলো দেখলে বুঝবেন সিডোর ইস্যুতে সরকারি বেসরকারি পর্যায় আর মিডিয়ার তৎপরতা কেমন ছিল। আমি সরকারকে তেল দিচ্ছি না, দিতে চাইও না। তবে একথা অস্বীকার করলে ভুল হবে যে, এবার সরকারের যে প্রস্তুতি ছিল তা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোন দুর্যোগের েেত্রই ছিল না। আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি এই জন্যে যে, সিডোর সম্পর্কে পত্র-পত্রিকা আগেই পুক্সানুপুক্স বিশ্লেষণ করার সুযোগ পেয়েছে আমাদের আবহাওয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশাসনের সহযোগিতায়। সিডোর আঘাত হানার আগেই এর সম্পর্কে এদেশে তোলপাড় হয়ে যাওয়া চিত্র, বহু মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার খবর যদি আপনি পেতেন তাহলে বুঝতেন, আগাম প্রস্তুতি না থাকলে সিডোর-এর ধাক্কায় উপকূলে তির হিসাবটি কি দাঁড়াতো। মৃতের হিসাব তাহলে লাখের অংকেও আটানো যেতো না। ৫ লাখের অংকেও না। কারণ, অন্তত: উপক’লের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ সরকারি বেসরকারি প্রচেষ্টায় নিরাপদে আশ্রয় নিতে পেরেছিল।
দেখুন, আমেরিকা কিভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করে তার সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না। বরং আপনি বিভিন্ন দেশের সহযোগিতার ুদ্রত্ব আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন, সেই প্রশ্নে বলি, আমাদের দুর্গত এলাকায় কেউ যদি এক টাকাও শর্তহীন পাঠায় তা-ই এখন খু-উ-ব কাজে দেবে। এই এক বছরে যে দেশ দুই দফা বন্যায় বিপর্যস্ত, রীতিমত এতেই নড়ে গেছে মজুদ অর্থ ও রাষ্ট্রীয় রসদের। এর ওপর সিডোর। এত সহজে কি সম্ভব সাহায্য এড়িয়ে যাওয়া? আপনি কি জানেন, ২০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতির মুখোমুখি আমরা। আমাদের আমন ফসল এবার ৭০ ভাগ শেষ হযে গেছে ! সামনের দিকে দৌড় দিতে কিছুদূর পিছিয়ে আসতে হয়। স্বাধীনতার পর থেকে কিছুদূর পিছিয়েই চলছি আমরা। এরকম বিপর্যয় বহুদিনের জন্যই পিছিয়ে দেয় আমাদের। শহরে বসবাসকারীরা স্বভাবতই ভুলে যায়, তৃণমূল মানুষের সর্বস্ব হারানোর এই আখ্যান। কিন্তু ওই মানুষগুলো ভুলতে পারে না। পারে না কোনদিন উঠে দাঁড়াতে। আজ প্রধান উপদেষ্টা কয়েকটি দুর্গত এলাকায় গিয়েছেন। টিভিতে দেখলাম ত্রাণ বিতরণ ও মানুষের দুর্দশার কিছু খণ্ডচিত্র।
এই একবিংশ শতকে আমাদের দুর্দশা কোথায় পৌছেছে, কত বেশি তিগ্রস্ত আমরা, আসুন একটু গভীরভাবে ভাবি। সম্ভব হলে সন্তানহারা একজন মায়ের কাঁধ স্পর্শ করে বলি, আমরা এখনও বেঁচে আছি।