somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সাথে এক ভিখারীর কিছুক্ষণ

০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জুম্মার নাজাম পড়ে বের হয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি মসজিদের বাহিরে। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি মানুষ একে একে বেরিয়ে যায় মসজিদ থেকে। দেখলাম গেটে ৪ জন ভিখারী দাঁড়িয়ে আছে। তিন জন মহিলা আর একজন পুরুষ। যে যে পারছে তাদের কিছু পয়সা বা টাকা দিচ্ছে। পুরুষ ভিখারীটাকে তেমন কেউ কিছু দিচ্ছে না আর সেও কিছু চাইছে কারো কাছে। একটা দুরমানো মোচরানো এলুমনিয়ামের ছোট ময়লা গামলা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোন কথা বলছে না বরং কাঁপছে। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

একপায়ে দুপায়ে এগিয়ে গেলাম তার কাছে। বললাম চাচা কোথায় থাকেন? আমার দিকে আধাবোজা চোখে তাকিয়ে কি বলল কিছু বুঝলাম না। তার ইশারায় যতটুকু বুঝলাম সে দুই দিন যাবত কিছু খায়নি। একটা মানুষ দুই দিন ধরে কিছু না খেয়ে কিভাবে থাকে। খুব খারাপ লাগলো। আমি বললাম চাচা, চলেন আমার সাথে, আজকে আপনি আমার মেহমান। আমার সাথে দুপুরে খাবেন।

সে খুব কষ্ট করে আমার পিছনে পিছনে হেটে আসলো। বাসায় নিয়ে এসে তাকে ফ্যানের নিচে বসিয়ে আগে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি খেতে দিলাম। সে আরো এক গ্লাস আমার কাছ থেকে চেয়ে নিল। বললাম, কিছুক্ষণ বসেন, ঠান্ডা হোন, তারপর খাওয়া যাবে।

আমার স্ত্রী তাকে কাছে বসিয়ে খেতে দিলেন। সত্যিকথা বলতে কি আমি কোনদিন এভাবে কখনও কোন মানুষকে খেতে দেখিনি। কতদিন না খেলে মানুষ এভাবে খেতে পারে। আমাদের অবাক করে দিয়ে সে গোগ্রাসে খেয়ে যাচ্ছে।

চাচামিঞার খাওয়া শেষ হলে বললাম, আপনি কিছুক্ণ রেষ্ট নেন। তারপর আপনি যেখানে যাবেন চলে যান। সে বললো, তার সাথে তার স্ত্রী থাকে। ছেলেপুলে বড় হয়ে গেছে কোন খোঁজ খবর নেই। ভাবলাম, যে বাবা মা তার সন্তানকে নিজের মুখের খাবার না খেয়ে মানুষ করে সেই ছেলে মেয়ে বড় হয়ে বাবা মাকে ছেড়ে চলে যায়। খুব খারাপ লাগলো। আরো জানলাম, একসময় তারও ঘরবাড়ী, চাষের জমি, চাষের বলদ সবই ছিল। আজ সে নিঃস্ব। পথের ফকির। নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে গেছে। তার সাথে কথা বলে বুঝলাম সে কিছুটা হলেও শিক্ষিত।

সে বলল, সারাদিন ভিক্ষা করে যা পায় তা দিয়ে আধাকেজি চালও কিনতে পারে না। খাবে কি? আর এখন সবকিছুর দাম বাড়াতে কেউ আগের মত ভিক্ষা দিতে চায় না। খুব কষ্ট পেলাম, বেচারার অবস্থা দেখে। আমার স্ত্রী চাচামিঞার স্ত্রীর জন্য কিছু ভাত তরকারী দিয়ে দিলো। আমি তাকে হাতে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বললাম, যখন খুব সমস্যায় পড়বেন তখন আমার বাসায় চলে আসবেন। কোন সমস্যা নেই।

লোকটা কাঁদলো কিছুক্ষন। আমি বললাম, কাঁদবেন না। আল্লাহর কাছে দোয়া করেন আমাদের সকলের এই কষ্ট যেন তিনি দুর করে দেন। সে বলল, বাবা অবশ্যই আল্লাহ আমাদের সবার দুঃখ একসময় দুর করে দিবেন। আবার সুদিন আসবে। আমরা আবার সুখে থাকবো।

লোকটি আমার আর আমার স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল। আমরা তার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার চোখটা ভিজে গেল পানিতে। এত কষ্ট সহ্য করতে পারিনা।

রাস্তাঘাটে অনেক মানুষ দেখি বলে ৪ দিন খাইনি, ৫ দিন খাইনি। আহা মানুষের কত কষ্ট। এই অভাবী মানুষদের একবেলা খাইয়ে আমি কিইবা করতে পারবো। তাও তো মনে সান্তনা যে, একটা মানুষ অন্ততঃ একবার পেট ভরে খেল।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:১৩
১৭টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×