আজকের এই সন্ধ্যা শ্রাবণী খুবই একা। মোটেই ওর ভাল লাগছে না। আজ সারাটা দিন ঘরে বন্দি। সেই সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। না জোড়ে না আস্তে। বাসার সামনের মেহগনি গাছ দুটি ভিজে একেবারে জবুথবু। গাছের পাতা চুঁইয়ে পানি পড়ছে। সেটাই সকাল থেকে জানালার পাশে বসে দেখছে শ্রাবণী। ওর মনটা আজকে ভীষন খারাপ। ওর মন খারাপের সাথে যেন দুটি মেহগনি গাছও কেঁদে চলেছে। কি বড়ই মিল!!

ল্যান্ডফোনটাকে পাশে নিয়ে বসে আছে শ্রাবণী। কখন শুভ্র ফোন করবে আর তখন সে ফোন রিসিভ করবে। দুপুরে ফোন করার কথা ছিল শুভ্রর। এখনও কেন পাত্তা নেই যেন। আজ কতদিন দেখেনি ওকে শ্রাবণী।

আসলে আজ শ্রাবণীর জন্মদিন। বিয়ের পর এই প্রথম জন্মদিন ওর। কিন্তু এই দিনটি ওর এমন হলো কেন। যেখানে রাত বারোটায় ফোন করে সারপ্রাইজ দিতে পারতো শুভ্র, সেখানে এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। তবুও ফোন আসছে না। একটু রাগ একটু অভিমান ভর করেছে ওর মনে। শুভ্রটা কেমন যেন আত্মভোলা টাইপের। এই স্বভাবটাই ওর ভালো না। আর সবই ভালো।

শুভ্রর সাথে শ্রাবণীর বিয়ে হয় প্রায় সাত মাস হলো। বিয়ের দুইমাসের মাথায় শুভ্র আবার চলে যায় কানাডাতে। শ্রাবণীকে সেখানে নিয়ে যেতে প্রায় আরো কয়েকমাস লাগবে। শ্রাবণীর এই কটা মাস যেন আর কাটে না। একেকটি ঘন্টা যেন একেকটি বছর। তারপরও মনকে প্রবোধ দিয়ে থাকে। ঢাকা ছেড়ে এসে এই চট্টগ্রামে শ্বশুড়বাড়ীতে থাকে শ্রাবণী। বাংলাদেশে আপন বলতে কেউ নেই। বাবা মারা গেছে কবে তা শ্রাবণীর মনে নেই। এখন মা থাকেন লন্ডনে একমাত্র বড় ভাই এর সাথে। কয়েকমাস পরেই দেশে আসবার কথা আছে ওনার।

ফোনের রিং এ বিরক্তি নিয়ে ও আবারো তাকায় ওটার ডিসপ্লের দিকে। হ্যাঁ এটা তো শুভ্রর মোবাইল নাম্বার।

..... হ্যালো।

হ্যালো। শ্রাবণী? কেমন আছো? তুমি আমার উপর খুব রাগ করে বসে আছো আমি জানি। আমার উপর আর রাগ করো না। দেখো আমার কোন দোষ নেই। আমি সেই অনেকক্ষণ থেকে চেষ্টা করছি কিন্তু বাসায় ফোনের লাইন পাচ্ছি না। আজকে তোমার জন্মদিন, তোমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

...... থামো, অনেক কথা এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেছো।

প্লিজ দেখো আমার কোন দোষ নেই। বাংলাদেশের কোথাও ফোন করা যাচ্ছে না। আমি আরো কয়েক জায়গায় চেষ্টা করেছি। কোথাও লাইন পাচ্ছি না। একবার তোমার মোবাইলে কানেকশন পেয়েছিলাম কিন্তু তুমি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখেছো। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাকে মোবাইলে মেসেজও পাঠিয়েছি। মোবাইলটা চালু করলেই তুমি পাবে। বলো কেমন কাটালে আজকে সারাটা দিন?

শুভ্র, তুমি আর একটা কথাও বলবা না। তুমি জানো, তুমি আমাকে কত কষ্ট দিয়েছো আজকে সারাটা দিন। তোমার কোন কথাই আমি শুনতে চাইনা। তোমার এই আত্মভোলা বদঅভ্যাসটা, তুমি কবে ত্যাগ করবা। আমি তো জানি তুমি আমাকে এই প্রথম ফোনে চেষ্টা করলে। আর তুমি তো এমনই। (বলেই হেসে ফেললো শ্রাবণী, ও কখনই কোন কথা সিরিয়াসলি বেশীক্ষণ বলতে পারে না)।

এভাবে চলতে থাকলো ওদের মান অভিমানের ভাঙানোর পর্ব। শেষে হার মানলো শ্রাবণী।

চলবে..........