মাঝে মাঝে এক ধরনের চিন্তা আমার মাথায় খেলে যখন আমি পুরো একা থাকি রাতে। আমার জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে। মাঝে মাঝে চিন্তা করি সেই সময়ের দিন গুলো কেমন ছিল? সেদিনের প্রতিটি দুর্ঘটনা কেমন ছিল? আমি স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়ের কথা বলছি। কত মানুষ হারিয়েছে তার বাবা মাকে, প্রিয়জনকে, কত শিশু সন্তান হারিয়ে গেছে, কত শিশুসন্তান পানিতে পড়ে গেছে, কত নারী ধর্ষিত হয়েছে তার স্বামী বা বাবা মায়ের সামনে। ওহ! চোখের সামনে গুলি খেয়ে মরতে দেখেছে কত স্বজন তাদের প্রিয়জনকে। মৃত ধর্ষিত মায়ের পাশে ক্ষুধার জ্বালায় দুগ্ধপোষ্য শিশুর কান্না। সহ্য করা যায়? একবার ভাবুন তো আপনাকে সেখানে উপস্থিত করে।
ভাবুন তো আপনার শিশুটি তার বাবা মাকে হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে অথবা বাবা মা খুঁজে পাচ্ছে না তাদের কোলের শিশুটিকে। যার বয়স মাত্র দুই তিন বছর।
এই ধরনের চিন্তা করতে করতে আমার মাথা এক সময় আর কাজ করে না। স্তব্ধ হয়ে যায়। গায়ের লোম গুলো খাড়া হয়ে যায়। তার মানে আমার চিন্তা করার লেভেল শেষ। এর বেশী আর চিন্তা করতে পারি না। আর একটু দুরে গেলেই আমি পাগল হয়ে যাবো। আজ স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরে এসে আমি এগুলো চিন্তা করতে পারি না। আর তখন যারা এগুলো ঘটনার শিকার তারা কিভাবে এগুলো দিব্যি চোখে দেখে এখনও দগদগে ঘা নিয়ে বেঁচে আছে? মানসিক ভাবে তারা কতটা দৃঢ় ছিল। আর আমি তাদের কাছে কোথায়?
আমি কেন এই ভাবনা গুলো আমার মাথা থেকে সরাতে পারি না? এসব ভাবলে আমার মাথা উলট পালট হয়ে যায়। এমন দুঃসহ ভাবনা আমার সব নষ্ট করে দেয়। কিন্তু কষ্ট লাগে তখনই যখন এতকাল পরেও আমার দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই কষ্টগুলো হাতিয়ার করে খেলা করে। তাদের মনে রাখা উচিত এগুলো কোন খেলনা নয়। এগুলো আমাদের সত্য অতীত। আজও সামন্য মতভেদ নিয়ে জাতি আজ বিভক্ত। কিন্তু মনে রাখা উচিত এ দেশ আমার, এ অতীত আমার, এ স্বাধীনতা আমার, এদেশের খারাপ হলে সেটাও আমার ভালো হলে সেটাও আমার। এটা কোন খেলনা পুতুল নয় যে যখন ইচ্ছা যেমন করে সাজাবো।