somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমন দুঃসহ ভাবনা আমার সব নষ্ট করে দেয়

২৬ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে কিছু দুঃচিন্তা আমার মাথা থেকে নামতে চায় না। রাত গভীর হয়। আমার পাশে স্ত্রী, সন্তান সবাই ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু আমি শুধু এপাশ থেকে ওপাশ করি। ঘুম আসে না। ব্যাটারী চালিত দেয়াল ঘড়ির মোটরের গিয়ার চাকার ঘূর্ণন শব্দও আমি তখন জোড়ে জোড়ে শুনতে পাই। তন্দ্রা থেকে লাফিয়ে উঠি। সব যন্ত্রনা গুলো মাথার মধ্যে রাতে ঘুরপাক খেতে থাকে। এর অবশ্য কিছু সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যা আছে। কারণ মানুষ সারাদিন যতক্ষন জেগে থাকে। সে সবার সাথে কথা বলে, সব কিছু চোখে দেখে। কিন্তু রাতটা একেবারেই তার নিজের। অন্ধকারে কিছুক্ষণ নির্জন যাপন। সে তখন হয়ে পড়ে পুরো একা, নিঃসঙ্গ। এইজন্য একান্ত নিজের কিছু ভাবনা গুলো বারে বারে নিউরনে নিউরনে আঘাত করে। সে ব্যথা অনেক বেশী।

মাঝে মাঝে এক ধরনের চিন্তা আমার মাথায় খেলে যখন আমি পুরো একা থাকি রাতে। আমার জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে। মাঝে মাঝে চিন্তা করি সেই সময়ের দিন গুলো কেমন ছিল? সেদিনের প্রতিটি দুর্ঘটনা কেমন ছিল? আমি স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়ের কথা বলছি। কত মানুষ হারিয়েছে তার বাবা মাকে, প্রিয়জনকে, কত শিশু সন্তান হারিয়ে গেছে, কত শিশুসন্তান পানিতে পড়ে গেছে, কত নারী ধর্ষিত হয়েছে তার স্বামী বা বাবা মায়ের সামনে। ওহ! চোখের সামনে গুলি খেয়ে মরতে দেখেছে কত স্বজন তাদের প্রিয়জনকে। মৃত ধর্ষিত মায়ের পাশে ক্ষুধার জ্বালায় দুগ্ধপোষ্য শিশুর কান্না। সহ্য করা যায়? একবার ভাবুন তো আপনাকে সেখানে উপস্থিত করে।

ভাবুন তো আপনার শিশুটি তার বাবা মাকে হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে অথবা বাবা মা খুঁজে পাচ্ছে না তাদের কোলের শিশুটিকে। যার বয়স মাত্র দুই তিন বছর।

এই ধরনের চিন্তা করতে করতে আমার মাথা এক সময় আর কাজ করে না। স্তব্ধ হয়ে যায়। গায়ের লোম গুলো খাড়া হয়ে যায়। তার মানে আমার চিন্তা করার লেভেল শেষ। এর বেশী আর চিন্তা করতে পারি না। আর একটু দুরে গেলেই আমি পাগল হয়ে যাবো। আজ স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরে এসে আমি এগুলো চিন্তা করতে পারি না। আর তখন যারা এগুলো ঘটনার শিকার তারা কিভাবে এগুলো দিব্যি চোখে দেখে এখনও দগদগে ঘা নিয়ে বেঁচে আছে? মানসিক ভাবে তারা কতটা দৃঢ় ছিল। আর আমি তাদের কাছে কোথায়?

আমি কেন এই ভাবনা গুলো আমার মাথা থেকে সরাতে পারি না? এসব ভাবলে আমার মাথা উলট পালট হয়ে যায়। এমন দুঃসহ ভাবনা আমার সব নষ্ট করে দেয়। কিন্তু কষ্ট লাগে তখনই যখন এতকাল পরেও আমার দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই কষ্টগুলো হাতিয়ার করে খেলা করে। তাদের মনে রাখা উচিত এগুলো কোন খেলনা নয়। এগুলো আমাদের সত্য অতীত। আজও সামন্য মতভেদ নিয়ে জাতি আজ বিভক্ত। কিন্তু মনে রাখা উচিত এ দেশ আমার, এ অতীত আমার, এ স্বাধীনতা আমার, এদেশের খারাপ হলে সেটাও আমার ভালো হলে সেটাও আমার। এটা কোন খেলনা পুতুল নয় যে যখন ইচ্ছা যেমন করে সাজাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×