somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হামহাম............. এখন এক সুখময় স্মৃতি!!!!!

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা জুলাই/২০১১ এর ঘটনা। হামহাম নিয়ে পত্রিকা এবং ব্লগে অনেক লেখালেখি হয়েছে । এ রকমই এক পত্রিকায় হামহাম সম্পর্কে খোজ পাই। এর সৈন্দর্যের বর্ননা এবং ছবি দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি। তাই পরদিনই দুই দোস্তকে নিয়ে যাত্রা শুরু করি। মনেমনে কি সুখ.... জীবনে প্রথম যাচ্ছি জঙ্গলে তাও আবার ঝর্ণা দেখতে :D । কি নিতে হবে অথবা কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে তা কিছুই জানি না। পত্রিকায় পড়লাম ভোর থাকতে পৌছাতে হবে। তাই রাত ১১টার গাড়িতে রওনা দিলাম ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল। কিন্তু বজ্জাত গাড়ি আমাদের ভোর ৪টায় শ্রীমঙ্গল নামিয়ে দিলো X( । এখন এই রাতে কই যাই..... যাইহোক রাস্তায় বসে তিনগুটি খেলে আর মশা মেরে ১ঘন্টা পার করলাম। সঙ্গী কম হওয়ায় বিপাকে পড়লাম...... সঙ্গী কম হলে সমস্যা হল টাকা বেশী খরচ হবে। গাড়ি রিজার্ভ করলে ২-৩ জনের যে খরচ ৭-৮ জনেরও প্রায় একই খরচ :|। ৭/৮ হলে শ্রীমঙ্গল থেকে সরাসরি কলাবন পাড়া পর্যন্ত জিপ/ সিএনজি রিজার্ভ করে নিয়ে যাওয়া যায়। তবে রিজার্ভ করার সময় যাওয়া-আসা মিলিয়ে করে নিলে ভাল হয় (যেটা পরে বুঝতে পারছি :(( )। কারন যোগাযোগ ব্যাবস্থা খারাপ এবং গ্রামটি অনেক ভিতরে হওয়ায় বিকালের পর কোন যানবাহন সচরাচর পাওয়া যায় না। কলাবন পাড়া পর্যন্ত শুধু যাওয়া রিজার্ভ করলে ৬০০-৮০০ টাকা খরচ পরবে (এখন বেশী লাগতে পারে)।যাবার সময় জামা-কাপড় নেয়ার তেমন দরকার নেই কিন্তু আমরা ৩জনই ভালই জামাকাপড় নিছিলাম...... ঝর্ণায় গেসোল করুম তাই :D। যত পারেন খাবার-দাবার নিয়ে নিবেন...... আমরা নিছিলাম ২টা করে আন্ডা আর ২প্যাক এনার্জি বিস্কুট :(( (পরে হাড়ে হাড়ে টের পাইছি)। আর নিছিলাম কেরোসিন, ম্যাচ, মোম.......... (যদি রাত হয় তাই)। কারন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়া-আসা মিলিয়ে প্রায় ৮ কিঃমিঃ পথ হাটতে হবে (যদি রাস্তা না হারান :D )। আর যেভাবেই যান না কেন গহীন অরন্যে প্রবেশের পূর্বে কলাবন পাড়া থেকে ভাল একজন গাইড নিয়ে নিবেন। গাইড আগে থেকেও নেয়া যায়, তবে খোজ-খবর নিয়ে ভাল একজন গাইড নেয়া উচিত। কিছু লোক আছে যারা হামহাম এর সঠিক রাস্তা না চিনেও টাকার জন্য গাইড হয়। যার জলজ্যান্ত প্রমান আমরা...... ওই বজ্জাত গাইডরে এখন পাইলে কান মইল্লা দিতাম ;) । আমরা জংঙ্গলে প্রবেশের আগে ৮ সদস্যের আরেকটি গ্রুপের সাথে মিলিত হই (আমরা সংখায় কম তো... তাই ভয় পাইছি)। পরিচয় পর্ব সেরে আমরা সকাল ৯টার দিকে জঙ্গলে প্রবেশ করি। গাইড বাবাজি আমাদের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে নতুন রাস্তা তৈরি করে নিয়ে চললেন এবং ৪০মিনিট পর ঘোষনা দিলেন আমরা ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি X(( । পোকামাকড় আর জোকের কথাতো বাদই দিলাম। যাইহোক মেলা কষ্ট করে হামহাম এর কাছাকাছি পৌছুলাম..... যেখান থেকে ঝর্ণার বজ্রকন্ঠ শোনা যাচ্ছিলো। পথ যেনো আর ফুরায়না...... শরীরে ইশক-এর তেল যা ছিল তা ঝরে ঝরে পরতে লাগলো। আহহ... অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে অবশেষে দেখা পেলাম সেই ঝর্ণার। সে আর কি বলব....... এর সৌন্দর্য আমাকে পাগল করে দিলো। মন আর চাইছিলোনা এখান থেকে যেতে। কিন্তু এখানে থাকার কোন ব্যাবস্থা নাই। আমাদের ৩জনের মধ্যে ১জনের অবস্থা খারাপ..... ফিরে আসার পর কম ঝারি মারেনাই আমারে..... পরে অবশ্য থ্যাংকু দিছে (হাজার হোক আমার করনেই হামহাম স্বচোক্ষে দেখেছে)। ১ঘন্টা আরাম করার পর মানে ঝর্ণায় গা ভিজানোর পর আবার ফেরার পালা........... /:) । ফেরার রাস্তার কথা মনে হতেই শরীরটা গুলিয়ে উঠলো....... আবার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। তবে ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে এলাম.......... যেটা তুলনা মূলক একটু সহজ :P। জঙ্গলে পরিশ্রমের সময় মনে হইছিল এই জায়গায় মানুষ আসে!!!! এত কষ্ট, সাথে জোকের কামড়, সাপ আর ভাল্লুকের ভয় তো আছেই............ :-B । যাইহোক তখন ফেরার সময় আর কোন সমস্যা হয় নাই............ তবে যে দোস্ত ২টারে নিয়া গেছিলাম ওরা আর আমার কথায় কোন যায়গায় যায় না /:) । হামহাম ভ্রমণের সময় যতই কষ্ট আর সমস্যা হোক না কেনো ঢাকায় ফিরে আসার পর মনে হইছে স্বপ্নরাজ্যে গেছিলাম (যা কখনো ভোলার নয়)...... এ যেন বাংলাদেশে আমাজন জঙ্গল। আমরা যখন গেছিলাম তখন হামহাম আবিষ্কার এর প্রথম দিক........ তাই অনেক পরিশ্রান্ত এবং নাস্তানাবুদ হইছিলাম। এখন মনে হয় না এত পরিশ্রম হয়..... । মাঝে শুনলাম হামহাম নাকি ভারতের দখলে । এখন কি অবস্থা কে জানে......... আর এই লেখা পড়ে কেউ হামহাম গেলে, ফিরে এসে দয়াকরে আমাকে বকবেন না । কারন জায়গাটা আসলেই অনেক ভয়ংকর সুন্দর এবং রোমাঞ্চকর =p~ । আর যারা জোক ভয় পান তাদের তো কথাই নেই । এখানে আমাদের কিছু ছবি দিলাম......................................


কলাবন পাড়া এর একটি বাড়ি


জঙ্গলে প্রবেশের পথ


মনের সুখে জঙ্গল ঘুরতাছি :D


এরমধ্যে জোকের আক্রমন B:-)


পথ হারানোর পর আমগো গাইড X((


এই পথের শেষ কোথায়.....


পরিশ্রান্ত আমরা ক'জন


স্বচোক্ষে এই ভিউ এর দাম লাখ টাকা......... :P


এই সেই হামহাম ঝর্ণা............ :D


বড়ই শান্তি :)


ফেরার পথে...............


ভাল থাকবেন...... ধন্যবাদ =p~
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×