somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নকিয়া বাংলাদেশের একটি অভাবনীয় কর্পোরেট প্রতারণা, সাধু সাবধান!!

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নকিয়া, একটি বিশ্বখ্যাত ব্রান্ডের নাম। অথচ নকিয়া বাংলাদেশ এই কম্পানির সুনাম ব্যাবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতি সপ্তাহে কোটি টাকারও বেশী।
আপনারা খেয়াল করেছেন আশাকরি, প্রতি রোববার স্যাটলাইট চ্যানেল এন-টি.ভিতে সন্ধা সাতটা ২০ মিনিটে প্রচারিত হয় একটি গেম শো 'নোকিয়া টেক ফোর'(যার মাধ্যমে তারা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে)। এট যে সত্যিই গেম শো, সেটা বিশ্বাসযোগ্য করানোর জন্য তারা উপস্থাপনায় মডেল হিসেবে আনে জনপ্রিয় কোন স্টারকে। গত এপিসোডে এসেছিলেন ব্ল্যাক তারকা জন। এছাড়াও মোবাইল ফোনসেটের ফিচারস গুলো দেখানোর জন্য আরেকজন স্টারকে দিয়ে মডেলিং করানো হয়। এরকম আয়োজন দেখে আপনি হয়ত সত্যিই বিশ্বাস করবেন, এটা আসলেই একটা গেম শো!!

কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকি আছে অন্য যায়গায়! খেলাটা হচ্ছে আপনাকে বিড করতে হবে লোয়েষ্ট ইউনিক প্রাইজ। আনি একটা বিড করলেন, তার থেকে কম করে কেউ এগিয়ে গেল...বিডিং চলার সময় কোনটা লোয়েষ্ট ইউনিক প্রাইজ, সেটা ফিরতি এস.এম.এস-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন কারেন্ট লোয়েষ্ট ইউনিক প্রাইজের থেকেও কম মূল্য থাকতে পারে, সেটা আপনি বা আমি জানিনা, তবে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটেরের নির্দিষ্ট উইংএর কর্মকর্তারা তা এস.এম.এস সার্ভার থেকে দেখতে পারে যে কোন সময়! আয়োজকরা সাধারণত তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসব প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণএর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাই তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি তারা এ'ধরণের কারচুপি করল না।

কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে স্বচ্ছতার এত অভাব কেন? সর্বনিম্ন দর বিড করে যে জিতেছে বলে পরবর্তী পর্বে কেবলই একটা ফোন নম্বর দেখানো হয়। পরপর তিন পর্বে ভিন্ন তিনটা নম্বর পুরস্কার জিতে নিলেও নম্বর তিনটির ওউনার একই কন্ঠস্বরের অধিকারি!! প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই যদি কেউ জিতে থাকে, তাহলে তাকে পুরস্কার তুলে দেবার সময় স্ক্রিনের সামনে হাজির করা হচ্ছে না কেন? এরকম গেম শো টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে অহরহ হয়, কিন্তু অন্য কোনওটাতে স্বচ্ছতার এত অভাব নাই।

আর কারচুপির সুযোগ যেখানে যেখানে থাকছে, সেগুলো হল, আপনি যখন আপনার বিডিং এমাউন্টটা পাঠাবেন, তখন ফিরতি মেসেজে তাৎক্ষনিক সর্বনিম্ন দরটা জানানো হয়, অর্থাৎ আপনার পাঠানো দরটি যদি সত্যি লোয়েষ্ট ইউনিক হয়ও, এরপরে যদি আপনাকে বলা হয় এটি ইউনিক না, এতে আপনার কিচ্ছু করার নাই। কেননা এস.এম.এস সার্ভারে কখন কে কত টাকা বিড করছে, আপনি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না, সুতরাং তাদের কথা বিশ্বাস করা ছাড়া আপনার গতান্তর নাই। তারা যে প্রতারণা করছেনা, এটারও কোনও প্রমাণ তাহলে থাকছে না।

এখন প্রশ্ন তুলতে পারেন, আমি কিভাবে এত নিশ্চিৎ হলাম, এটা প্রতারণা? এই গেমশো-টা আমি শুরু থেকেই লক্ষ করছি, এবং গত পর্বে আমরা কয়েকজন বেশ আদাজল খেয়েই নামলাম এটার পেছনে, এবার পেতেই হবে। আমরা চার বন্ধু প্রথমে ঠিক করলাম, শুন্য দশমিক এক পয়সা থেকে বিশ টাকা পর্যন্ত সবগুলো এমাউন্ট আমরা দখল করে নিব। একজন এক পয়সা থেকে পাঁচ টাকা, একজন পাঁচ টাকা এক পয়সা থেকে দশ টাকা...এভাবে বিশ টাকা পর্যন্ত। তাই করা হল, প্রত্যেকের গেল পাঁচশ করে সর্বমোট দুই হাজার এস.এম.এস। এভাবে শেষ দিন পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কেননা তখন পর্যন্ত লোয়েষ্ট প্রাইজ খেলা করছিল তিন টাকা, চার টাকা, পাঁচ টাকা পর্যন্ত। আমরা নিশ্চিন্তই ছিলাম, কেননা বিশ টাকা পর্যন্ত সব ইউনিক প্রাইজই তো আমাদের। সার্ভার লক করার চল্লিশ মিনিট আগেও এটা ছিল আট টাকার নিচে। মাত্র দশ মিনিট আগে তা এক লাফে চলে যায় ২৩ টাকায়!! এটা কি আলাদিনের যাদুই চেরাগের কেরামতি?? সাত দিন ধরে যেটা আট টাকা ছাড়াতে পারেনি, অল্প কয়েক মিনিটের ব্যাবধানে সেখানে সাত টাকা থেকে ২৩ টাকা, অর্থাৎ প্রাই ১৬০০ সংখ্যক দরের ইউনিকনেস চলে যায়?? চমক আরও বাকি আছে, শেষ হওয়ার মাত্র দু-মিনিট পূর্বে এটা জাম্প করে ৪২টাকা কত পয়সাতে!! আর মাঝের সবগুলো নম্বরের ইউনিকনেস যে চলে গেছে, তা বুঝলাম, আমরা র‌্যান্ডম এক্সেসে এর মধ্যবর্তী প্রায় ৫০টারও বেশি দর বিড করেছি, যেগুলোর একটাও ইউনিক ছিল না!! একি তবে চোখের ধাঁধা!!

এখন প্রশ্ন হল, সার্ভারের সকল দর দেখে কেউ কারচুপি না করলে এরকম অভাবনী ফলাফল তো কিছুতেই সম্ভব না। তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি, আমাদের মত অন্য কেউও গ্রুপ করে একসাথে বিড করছিল, আরও ধরে নিচ্ছি, তারা আরও সংগঠিত, কিন্তু তারা ঠিক কোন যাদু বলে বুঝতে পারল, যে প্রথম ২৩০০ দরের পর থেকে বিড করা উচিৎ, আমরা যে প্রথম ২০০০টা দর আগে থেকেই দখল করে রেখেছি, সেইটা সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের ঐ উইংএর লোকজন এবং চাইলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কারো তও জানার কথা না!! তাহলে আমার ধরে নেওয়া প্রতিপক্ষ গ্রুপই বা কিভাবে জানল? পুরো ব্যাপারটাই কি একটা শুভঙ্করের ফাকি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না??

এই বিডিং কনটেস্টের প্রতি এপিসোডে থাকে একটা করে মোবাইল সেট। দাম কত হবে এর? ২০হাজার, ২৫ জাহার, বড়জোর ৩০হাজার। অথচ এর বিনিময়ে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পরে আমরা হারাচ্ছি কত টাকা? যদি এক কোটি গ্রাহকও এর প্রতি আগ্রহী হয়, কিংবা ধরে নিচ্ছি আরও কম, যদি ৫০লক্ষও এতে অংশ নেয়, প্রত্যেকে যদি গড়ে ২টা করেও দর বিড করে, তবে খসে যাচ্ছে এক কোটি টাকা!! এবং এর পুরোটাই ভাগাভাগি হচ্ছে সেইসব বিদেশি বেনিয়েদের পকেটে, কর্পোরেটের ধ্বযা ধরে যারা শোষন করছে এ'দেশের অর্থনীতিকে।

সুতরাং সাধু সাবধান। কর্পোরেট বেণিয়াদের এ'রকম অস্বচ্ছ কোন ফাঁদে পা দেবার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:২০
৩৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×