শফিকুল ইসলাম সোহাগঃ
সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অলিখিত সমঝোতা হয়েছে! সরকারের অব্যাহত দমননীতি, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেমে আসা বিপর্যয়ের মুখে সরকারের সঙ্গে জামায়াত সমঝোতার হাত বাড়িয়েছে বলে রাজনীতির অন্দর মহলে গুঞ্জন চলছে! এ জন্য দলের শীর্ষ দু-একজন নেতার ভাগ্যে যুদ্ধাপরাধের বিচারে যা-ই থাকুক তা মেনে নেওয়া, বিএনপির সঙ্গে নীরব দূরত্ব রেখে চলতে চলতে নির্বাচনে একা লড়া, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পাশে না থাকা, শিক্ষাঙ্গনে শিবির নিয়ন্ত্রণসহ নানা শর্ত মেনেই এ রাজনৈতিক পরকীয়া তৈরি করেছে জামায়াত! এমন খবর চাউর হয়েছে সর্বত্র। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সমঝোতার জের ধরেই হরতালে গাড়ি পোড়ানো মামলায় ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ ৪৫ নেতা-কর্মীর নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হলেও এজাহারভুক্ত শিবির সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বারকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো মামলায় জোটের শীর্ষ ৩৩ নেতা কারাগারে আটক থাকলেও অভিযুক্ত জামায়াত-শিবিরের তিন নেতা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সমঝোতার জেরেই তারা জানতেন আদালতে হাজির হলে আটক হবেন। তাদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীরও কোনো দৌড়ঝাঁপ দেখা যাচ্ছে না। এ তিন নেতা হলেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, মহানগর সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল ও ছাত্রশিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন। সূত্র জানায়, সমঝোতার অংশ হিসেবে জামায়াতের কাছে আরও চাওয়া হয়েছে- ১৮ দলীয় জোট থেকে বের হওয়া, সরকারের মেয়াদে কোনো আন্দোলনে না যাওয়া, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া, আগামীতে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া, দলে কমপক্ষে ৩০ ভাগ হিন্দুধর্মাবলম্বী অন্তর্ভুক্ত করা এবং জামায়াতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ ভাগ শেয়ার দূতিয়ালদের হাতে দিয়ে দেওয়া। অন্যদিকে জামায়াত সরকারের কাছে চেয়েছে- যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দিয়ে কারাদণ্ড প্রদান; জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ না করা, 'বাংলাদেশের জামায়াত' নামে গণতান্ত্রিক আদর্শ নিয়ে রাজনীতির সুযোগ দেওয়া এবং জামায়াতসম্পৃক্ত ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, কল-কারখানা, মিডিয়া, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত না করা। সূত্রটি জানায়, অনেক পয়েন্টে দেনদরবার চলছে জামায়াতের। জানা যায়, জামায়াতের পক্ষে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের শীর্ষ এক ব্যবসায়ী নেতার নেতৃত্বে একটি অংশ সরকারেরই একটি অংশের সঙ্গে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তার এ যোগাযোগকে সিনিয়র নেতারা ভালোভাবে দেখলেও ক্ষুব্ধ তরুণ নেতারা। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে হৈচৈ শুরু হয়েছে। তরুণ নেতারা চাচ্ছেন যুদ্ধাপরাধের বিচার হোক। পরিচ্ছন্ন জামায়াত আগামীতে সামনের দিকে এগিয়ে যাক।
তরুণ এক নেতা বলেন, জামায়াতের ব্যবসায়ী নেতাকে নিয়ে কেন এত হৈচৈ। তিনি কোন কেরামতিতে সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা থেকে বাদ পড়লেন, তা আপনাদের (সাংবাদিকদের) অনুসন্ধান করে বের করা উচিত। তার মতে, দেশে ফেরার পর দিনই আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, 'উনি নাকি যুদ্ধাপরাধী নন'! এ দেশে সবই সম্ভব। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জামায়াত সমঝোতা করেই সরকারের সঙ্গে চলতে চায়। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জানান, শর্ত দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না তা তার জানা নেই।
Click This Link