somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধন্যবাদ বিজয়কৃষ্ণ....!! বাংলাদেশকে সম্মানিত করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ.....!!

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলন্ত ট্রেনের হাতলটা ধরে প্ল্যাটফর্মের উপরে ছুট ছিলেন এক প্রৌঢ়। কিন্তু তাল রাখতে না পেরে প্ল্যাটফর্মে পড়েও গেলেন। দৃশ্যটা সহ্য করতে না পেরে চোখ বুজে ফেলেছিলেন স্টেশনের অনেকেই। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা বিজয়কৃষ্ণ বিশ্বাস। চোখ খুলে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সেই প্রৌঢ়। কেউ তাঁকে তুলতেও এগিয়ে যাচ্ছেন না।
বিস্ময়ের ঘোরটা কাটতেই বিজয়কৃষ্ণ ছুটে যান সে দিকে। রানাঘাট স্টেশনে তখন ভিড় কম নয়। বেলা দু’টো বাজে। বিজয়কৃষ্ণ চেঁচিয়ে বলেন, ‘‘এ ভাবে পড়ে থাকলে মানুষটা মরে যাবে। আপনারা একটু হাত লাগান। হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’
স্টেশনের যাত্রী, দোকানদার, ফেরিওয়ালা কেউই তাতে সাড়া দিলেন না। বরং বিজয়কৃষ্ণকে আরও অবাক করে দিয়ে তাঁরা বললেন, ‘‘ছেড়ে দিন। রেল পুলিশ দেখবে।’’
বিজয়কৃষ্ণ কিন্তু বুঝতে পারছিলেন, রেল পুলিশের অপেক্ষায় থাকতে হলে এই প্রৌঢ়কে বাঁচানো যাবে না। তিনি তো মারা যাবেনই। সেই সঙ্গে হয়তো অনাথ হয়ে পড়বে একটি গোটা পরিবার। তিনি তাই নিজেই ছুটে যান। ওই প্রৌঢ়কে কোলে তোলেন। স্টেশনের লোক সবই দেখছিলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। এক সহযাত্রী বরং বিজয়কৃষ্ণের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে যান, ‘‘সরে যান। জানেন তো, পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা।’’
বিজয়কৃষ্ণ বলেন, ‘‘কথাটা শুনে একবার যে একটু চিন্তা হয়নি তা নয়। আমি তো ভারতীয় নই। তাই কোনও কারণে আটকে গেলে দেশে ফিরতে দেরি হয়ে যেতে পারত। কিন্তু তারপরেই ভাবলাম, আহতের কোনও দেশ হয় না। রাজনীতি আর ভূগোলের সীমানা দিয়ে মানবিকতায় পাঁচিল তোলা উচিত নয়।’’
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ওই প্রৌঢ়কে পাঁজাকোলা করে তুলে তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন স্টেশনের বাইরে। ইচ্ছা ছিল কোনও একটি যানবাহনে করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবেন তাঁকে। তবে ততক্ষণে চলে এসেছে রেল পুলিশ। একটা স্ট্রেচার নিয়ে আসা হল। কিন্তু তাতেও তো তুলতে হবে প্রৌঢ়কে। বিজয়কৃষ্ণই এগিয়ে এলেন। ভিড়ের ভিতর থেকে এগিয়ে এলেন আরও এক জন। দু’জনে মিলে ধরাধরি করে প্রৌঢ়কে তোলেন স্ট্রেচারে। তারপরে নিয়ে গেলেন স্টেশনের বাইরে। তোলা হল জিআরপি কর্মীদের আনা ভ্যানে। কিন্তু এ বার তৈরি হল নতুন সমস্যা।
ভ্যানে আর কেউই যে নেই। তার উপরে ওই প্রৌঢ় বিজয়কৃষ্ণের হাতটি চেপে ধরে রেখেছেন। বিজয়কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘ওই প্রৌঢ় কথা বলতে পারছিলেন না। তার মধ্যেই কোনওমতে বললেন, ‘আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমি মরে গেলে সংসারটা ভেসে যাবে।’ তাই তাঁর সঙ্গেই ভ্যানে উঠে পড়ি।’’ রানাঘাট হাসপাতালে পৌঁছে বিজয়কৃষ্ণই ওই প্রৌঢ়কে ভর্তি করান। তাঁর বাড়িতেও খবর দেন।
ওই প্রৌঢ়র নাম পদ্মভূষণ ভট্টাচার্য। বাড়ি কৃষ্ণনগরের মল্লিকপাড়ায়। আগে একটি বেকারিতে কাজ করতেন। এখন ধারদেনা করে বিস্কুটের ব্যবসা শুরু করেছেন। ছেলে মাধ্যমিক দেবে। মেয়ে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তাঁর স্ত্রী সান্ত্বনাদেবীর বক্তব্য, ‘‘বিজয়কৃষ্ণবাবু না থাকলে কী যে হত, ভেবে শিউরে উঠছি। উনি আমাদের পুরো সংসারটাকেই বাঁচিয়ে দিলেন।’’
মঙ্গলবার রানাঘাট স্টেশনে এই ঘটনার পরে পদ্মভূষণবাবুকে কলকাতায় নীলরতন সরকার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পদ্মভূষণবাবুর বাঁ পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। বিজয়কৃষ্ণ বুধবার সেখানেও গিয়েছিলেন। তাঁর বাংলাদেশ ফিরে যাওয়ার কথা ছিল বুধবারেই। তিনি জানান, জ্যাঠামশায়ের অসুস্থ। তাঁকে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এনেছেন। উঠেছেন বাদকুল্লাতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বিজয়কৃষ্ণবাবুর কথায়, ‘‘ভিসার মেয়াদ রয়েছে। তাই পদ্মভূষণবাবুর অস্ত্রোপচার পর্যন্ত থেকেই যাব। জ্যাঠামশায়কেও ভাল করে ডাক্তার দেখানো হয়ে যাবে।’’
বিজয়কৃষ্ণের বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার উলুকান্দা গ্রামে। এই বছরই মাগুরা আদর্শ কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছেন। মঙ্গলবার বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন। বনগাঁ থেকে ট্রেনে রানাঘাট স্টেশনে জ্যাঠামশায়কে পৌঁছে দিয়ে কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল একটা জরুরি কাজ মেটাতে। তখনই এই ঘটনার সামনে পড়ে যান।
রানাঘাট জিআরপি থানার আইসি সুভাষ রায়ের কথায়, ‘‘ওই যুবক সত্যিই খুব ভাল কাজ করেছেন। তিনিই প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন। তার পরপরই আমরাও চলে যাই।’’ সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওই যুবকের দৃষ্টান্ত থেকেই মানুষ এ বার বুঝবেন যে, কোনও আহতের পাশে দাঁড়ালে তাঁকে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয় না।’’
রানাঘাট স্টেশনের ব্যবসায়ীদের অবশ্য দাবি, আগেও এমন দুর্ঘটনা হয়েছে, তাঁরাও তখন এগিয়ে গিয়েছিলেন। রেলের এই শাখায় নিত্যযাত্রী ইন্দ্রজিৎ সরকারের বক্তব্য, ‘‘যে কোনও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষই আগে এগিয়ে যান। সে দিন স্টেশনে যা হয়েছে তা ব্যতিক্রম। তবে ওই যুবককে ধন্যবাদ। তিনি বিদেশে এসেও যে ভাবে এক জনকে বাঁচালেন, তাতে বাঙালিরই নাম উজ্জ্বল হল।’’
.
সূত্র :: আনন্দ বাজার পত্রিকা।।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×