প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও এসি ছেড়ে রেখেছে মাহমুদ সাহেব। তাও দরদর করে ঘামছে। অফিসের বয় টাকে কফি আনতে বলায় এমন কটমট করে তাকাল যে মাহমুদ বুঝলো তার চৌদ্দগোষ্ঠী নিয়ে গালি দিয়েছে, কর্মচারীরাও আচরনে বুঝিয়ে দিচ্ছে, ইউ আর নো বডি...!!
.
মাহমুদ মনে মনে ভাবছে, এঈ তো গতকালও সব কিছু ঠিক ছিল।মাহমুদুল হাসান চৌধুরী, বিশাল এই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জিএম সে,দেখতে বেশ কালো হলেও নিয়মিত ফেসিয়াল করে চামড়ায় ফ্যাকাশে রং এনেছে।জীবনে তার সুখের অভাব ছিল না,কোম্পানীর কন্সট্রাকশনের টাকা মেরে ঢাকায় তিনটা বাড়ি করেছে।অফিসের টাকায় নিয়মিত সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ঘুরতে তার ভালই লাগতো, অধৈধ ভাবে নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা জমিয়েছে।কোম্পানীর নারী শ্রমিকদের উপভোগ করা তার শখ..!! শালী দুটাও দুলা ভাই বলতে পাগল।একটার নাম মেহজাবীন,একটা ফাতেমা।আজ রাতে মেহজাবীনের জন্মদিনে গাড়ি উপহার দেওয়ার কথা ছিল....আজ হয় তো দুদক সব কেড়ে নিবে...!!
.
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠে,রিসিভ করতেই বউ নীলিমা আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠে,আজ জন্মদিনের পার্টিতে কোন শাড়িটা পড়বো?? মাহমুদ শান'ত ভাবে লাইন কেটে দেয়।এরই মধ্যে ক্যাশিয়ার বরকত এসে খবর দিল দুদকের কর্মকর্তারা পুলিশ নিয়ে এসেছে,সাথে শ্রমিকরাও মাহমুদের রুম ঘিরে ফেলেছে।মাহমুদ জানে কে এই সব করিয়েছে,আর মনে মনে হিসেব কষে-কাল সকালেই জলিল শেখের লাশটা বুড়িগঙ্গায় পাওয়া যাবে।
.
পুলিশ রুমে ঢুকতেই শ্রমিকরাও কক্ষে প্রবেশ করে।তবে সবার সাথে সাংবাদিক তনিমাকে দেখে মাহমুদের পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে।সে বুঝতে পারে তার ভেতর ছোটখাটো স্ট্রোক হয়ে যাচ্ছে।তনিমা ইতিমধ্যেই লাইভ দেখানো শুরু করেছে।নীলিমা,মাহমুদ কে টিভিতে দেখেই মেহজাবিন কে কল দিয়ে বলল,"এই শুনেছিস..?? তোর দুলা ভাইকে না চ্যানেল আই তে দেখাচ্ছে,..!!"আর যায় কোথায় মেহজাবিন শামসুন্নাহার হলের মেয়েদের নিয়ে টিভি দেখতে বসে যায়....!!
.
এই দিকে অবস্থা খারাপ,শ্রমিক নেতারা পুলিশের কাছে মাহমুদের সব জারিজুরি ফাঁস করে দেয়।শ্রমিক নেতারা কয়েকজন মেয়েকে হাজির করে যারা মাহমুদের লালসার শিকার।তখন পুলিশের এক অফিসার চিৎকার দেয়,এই ব্যক্তির আপনারা কি শাস্তি চান??সবাই স্লোগান তুলে,ফাঁসি চাই...ফাঁসি চাই....!! মাঝখান থেকে একজন বলে উঠে,কান ধরে উঠাবসা করতে হবে।সবাই একসাথে চিৎকার দেয়,হ্যা..হ্যা..কান ধরে উঠাবসা করতে হবে।এইবার শুরু হলো মাহমুদকে কান ধরে উঠাবসা করানো।
.
এর মধ্যেই আদরের শালী কল দিয়ে বলে,দুলাভাই তুমি এই রকম উঠাবসা করতেছো কেন??মাহমুদ বলে,এমনিতে শখ হইছে,তাই ব্যায়াম করছি......ওমনি পাশ থেকে এক কনস্টেবল মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে বলে,চুপ...!! ব্যায়াম তোর ইয়ে দিয়ে....!! ঐ দিকে দুই বোনে কান্না জুড়ে দিয়েছে।
.
হঠাত করেই শ্রমিক নেতা জলিল শেখ বলে উঠে,"এভাবে হবে না,কান ধরে চুনকালি মাখিয়ে,মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে ঢাকা শহরে হাঁটানো হবে।এবার শুরু হলো হন্টন পর্ব।মাহমুদ ঢাকার রাস্তায় কান ধরে হাটছে,রাস্তায় জ্যাম লেগে গিয়েছে।সবার দৃষ্টি মাহমুদের দিকে,মাহমুদের চেহারাটা নুর হোসেনের মত হাসি হাসি দেখাচ্ছে।বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে মহিলারা ভিডিও করছে।চুনকালি আর ন্যাড়া মাথার বদৌলতে মাহমুদের চেহারা চেনাই যাচ্ছে না।মাহমুদের খুব ক্ষিধে পেয়েছে,সরিষা ইলিশ দিয়ে গরম ভাত খেতে মন চাচ্ছে।কিন্তু হাঁটা যেন আর শেষ হয় না,মনে হচ্ছে যেন সে হাজার বছর ধরে হেঁটে চলেছে......!!আর পেছনে স্লোগান চলছে..........................
ফাঁসি চাই,ফাঁসি চাই....মালিকের ফাঁসি চাই,শোষকের ফাঁসি চাই.......!!