হযরত উসমান রদীআল্লাহু আনহু এর খেলাফাতামলে আফ্রীকা অভিযানের কাহিনীর উপর নির্ভর করে লেখা উপন্যাস ”আফ্রিকি কি দুলহান” বাংলা সংস্করণ এর অডিও বুক।
প্রথমবারের মতো চেষ্টা করলাম, যার কাছে যেমনই লাগুক না কেন সেই মতামত প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ রইলো।
ধারাবাহিক প্রচার করা হবে ইনশা আল্লাহ
গল্প- আফ্রিকার বধু
পর্ব-১
দলে দলে মসজিদে ছুটে চলেছে মদীনাবাসী। তারা তাওহীদের পতাকাবাহী। ইসলামের জন্য নিবেদিত। দেশ ও জাতির জন্য উতসর্গিত। সকলের মুখে এক অসাধারণ তেজ ও ক্ষোভের ছাপ পরিস্ফট।
সময়টা সকালবেলা। পুর্ব আকাশে সূর্য উদিত হয়েছে। ঘর দোর, মাঠ প্রান্তর, গাছ গাছালি ও পাহাড় পর্বতের উপর ঝলমলে সোনালী মিস্টি রোদ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন কোন নামাজের সময় নয়, তবুও মুসলমানেরা ছুটে চলেছে মসজিদের দিকে।
মসজিদে নববী। সেকালে এ যুগের মত আলাদা রাজ প্রাসাদ কিংবা কোর্ট কাচারি ছিল না। নবীজি (সাঃ) ও তাঁর খলিফাগন মসজিদে বসেই রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকান্ড ও বিচার ফয়সালার আঞ্জাম দিতেন। মসজিদে নববী ছিল সেকালে ইসলামী সরকারের রাজভবন-বিচারালয়-পার্লামেন্ট।
হিজরি ২৬ সনের ঘটনা। মুসলমানরা চারিদিক থেকে ছুটে এসে মসজিদ প্রাঙ্গনে সমবেত হচ্ছে। সবাই বসে পড়েছে মিম্বরমুখী হয়ে। মিম্বরের সর্বসম্মুখে ও ডানে বাঁয়ে উপবিষ্ট অনেক নেতৃস্থানীয় ও সম্মানিত ব্যাক্তি। মধ্যমাকৃতির সুদর্শন নূরানী চেহারার এক বৃদ্ধ মিম্বরে উপবিষ্ট। তাঁর মুখয়াবব থেকে ইলম মানবতা প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা ঠিকরে পড়ছে। ইনি আরব-অনারবের সম্রাট এবং মুসলমানদের আমীর ও খলিফা হযরত ওসমান (রাঃ)।
হযরত ওসমান (রাঃ) এর আশেপাশে অনেক টগবগে যুবকও বসে আছে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ), আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের, হাসান ইবনে আলী, হুসাইন ইবনে আলী এর মধ্যে অন্যতম। প্রবীনদের মধ্যে উপস্থিত আছেন হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ), আলী, তালহা, যুবায়ের প্রমুখ (রাঃ)।
সমবেত মুসলমানরা চুপচাপ বসে আছেন। হযরত ওসমান (রাঃ) দাঁড়িয়ে ভাষন দিতে শুরু করলেন-
"মুসলমানগন, মুসলমানদের শত্রুতায় খ্রিস্টানরা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তারা না নিজেরা স্বস্তিতে আছে, না মুসলমানদের শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে। আশা ছিল সিরিয়া, মিশর, বসরা, আর্মেনিয়া প্রভৃতি রাজ্য পদানত হওয়ার পরে তাদের উৎপাত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয় নি। তারা মিশরের মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু করেছে। এখন আফ্রিকার খ্রিস্টানরা মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের রাজা জর্জিস মিশর আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি জানতে পেরেছি, তারা ১ লাখেরও বেশি সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে এবং অনতিবিলম্বে আক্রমন চালাবে। মিশরে নিযুক্ত আমাদের গভর্নর আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ আফ্রিকা আক্রমনের অনুমতি প্রার্থনা করেছে। আমি অনেকের মতামত নিয়েছি। প্রত্যেকেরই অভিমত-এই কাঁটাটিও তুলে ফেলা উচিৎ। অর্থাৎ খ্রিস্টানদের এই যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে আফ্রিকা আক্রমনের পক্ষে সবাই একমত। আমি আজ আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দের নিকট দূত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাকে আফ্রিকা আক্রমনের অনুমতি দিয়ে বার্তা প্রেরণ করছি। কিন্তু আমি জানি, তার সৈন্য কম। তাই তার সাহায্যার্থে মদীনা থেকে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠাতে হবে। আপনারা যারা আফ্রিকার জিহাদে যেতে প্রস্তুত তারা মিনায় গিয়ে একত্রিত হোন।"
মিনা মদীনা থেকে মাইল তিনেক দূরে একটি অঞ্চল। কোথাও যুদ্ধে যেতে হলে মুজাহিদরা প্রস্তুতি নিয়ে মদীনা থেকে মিনায় গিয়ে সমবেত হওয়া শুরু করে।
ভাষণ সমাপ্ত করে হযরত ওসমান (রাঃ) এক যুবককে ইঙ্গিত করলে সে খলিফার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। খলিফা তাকে বললেন "সরোয়ার, আমি তোমাকে দূত নিযুক্ত করে মিশরে পাঠাতে চাই। তুমি কি প্রস্তুত আছো?"
সরোয়ার সুঠামদেহী সুদর্শন এক যুবক। দিন কয়েক পরে তার বিয়ে হবার কথা। বিয়ের কথা ভুলে গিয়ে সে বলল- "আমি প্রস্তুত খলিফাতুন মুসলিমীন। আমি আপনার নিকট আফ্রিকার যুদ্ধে অংশগ্রহনের অনুমতি প্রার্থনা করছি।"
খলিফা বললেন "আমি তোমাকে সেই অনুমতিও দিলাম। এই নাও সেই চিঠি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই চিঠিটা আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দের হাতে পৌছে দেও।"
সরোয়ার চিঠিটা হাতে নিয়ে বলল "ইনশাল্লাহ আগামীকাল ফজর নামাজ পড়েই রওয়ানা হবো।"
খলিফা বললেন "আল্লাহ হাফেয, ফী আমানিল্লাহ।"
কিছুক্ষনের মধ্যে দরবারে খেলাফতের মুলতবি হয়ে যায় এবং প্রত্যেকে যার যার গন্তব্যে ফিরে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫