রুচি চানাচুরের একটি বিজ্ঞাপনের ডায়ালগ হলো, ঝালেই যাদু ঝালেই যাদু। এই ঝাল বাঙ্গালী খাবারের একটি বৈশিষ্ট্য। ঝাল না হলে তরকারী মজা লাগেনা। আবার বেশী হলে খাওয়া যায়না। সেদিন একজন প্রিয় ব্লগারের প্রবাস জীবনের ঝালমুড়ি কাহিনী পড়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে। অতীত বড়ই দুঃখের!
বাঙ্গালী জীবনে ঝালমুড়ির কদর বেশ। কোথাও ঘুরতে গেলে বা কারো অপেক্ষার জন্য ভালো বন্ধু হলো ঝালমুড়ি। আমি আবার জীবনের একটা বিরাট সময় মাদরাসাতে তালবে এলেম হয়ে অতিবাহিত করেছি । মাদরাসায় পড়ার সময় এই ঝালমুড়ি নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা আছে।
প্রতি রাতেই ১০ থেকে ১০.৩০ মিনিটের ভিতর ঘুমিয়ে যেতে হতো। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এই নিয়মের বাইরে হলে মার খেতে হতো। তবে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের ক্লাশের বেশ কিছু ছাত্র যারা ক্লাশ রুমে থাকতাম, তারা সবাই মিলে ঝালমুড়ির আয়োজন করতাম। তবে ক্লাশ রুম ছাড়া অন্য রুমে যারা থাকতো তারাও অংশগ্রহণ করতে পারতো।
প্রতি সপ্তাহে এর জন্য আলাদা প্রস্ততি নিতাম সবাই। দুপুরে বসে চলতো কে কে খাবে তার লিস্ট তৈরী করা। যারা খাবে বলে টাকা দিতো তারাই অন্তর্ভূক্ত হতো। এই আয়োজন চলতো যাতে কোন হুজুর না জানতে পারে সেভাবে। জানলে তো বুঝতেই পারছেন কি হতো!
এভাবে অনেক দিন চলার পর হঠাৎ একদিন ধরা খেয়ে গেলাম। আমাদের ঝালমুড়ি নিয়ে যাওয়া হলো। সাথে সকল সদস্যদেরকেও। খুবই ভয় পেয়েছিলাম সবাই। কারণ, যে হুজুরের কাছে ধরা খেয়েছি, তিনি খুব কঠোর ছিলেন। আমাদের আরবী গ্রামার পড়াতেন।
সবাইকে হাতে ৪ টি করে বেতের তোহফা দেওয়া হলো। আর সতর্ক করা হলো দিন ছাড়া যেন আর রাতে ঝালমুড়ি না খায়। সবাই তখনকার মতো উনার কথা মেনে নিয়ে চলে এলেও পরবর্তীতে আগের সময় অনুযায়ীই আমাদের ঝালমুড়ি খাওয়া চলতো।
কোখায় হারিয়ে গেলো সোনালি বিকেল গুলো সেই, আজ আর নেই। গানটির প্রতিটি কলির সাথে সকলের জীবনের মিল আছে। আজ আর তেমন ভাবে ঝালমুড়ি খাওয়া হয়না। সবাই বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছি। তবে মনে হলে বুকের ভেতর হুহু করে ওঠে। কি সুন্দর দিন ছিলো তখন।