somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনৈক শিশির শীল আর প্রতারণার আন্তর্জাতিক ফ্লেভার

২৪ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগাররা নিশ্চয়ই দারিদ্র্য বিমোচনের নামে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রিক কিছু ঘটনা লক্ষ্য করেছেন। উদঘাটিত বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, সম্মেলনটি আদৌ কোনো ‘আন্তর্জাতিক' সম্মেলন ছিল না। জাতিসংঘের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশের দারিদ্র্য নিয়ে নোংরা রাজনীতি করা এবং বিশেষ একটি এনজিওর জন্য ফান্ড যোগাড় করাই ছিল সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য।

সম্মেলনের আয়োজক ছিল ‘দারিদ্র্য বিরোধী ক্যাম্পেইন জাতীয় কমিটি'। জনৈক শিশির শীল এর সেক্রেটারি জেনারেল। সংসদ সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও একই শিশির শীল ‘সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ'-এরও সদস্য সচিব হিসেবে সম্মেলনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। খালেদা জিয়াকে তিনি জানিয়েছিলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন এই সম্মেলেনে যোগ দেবেন। কথাটা চরম মিথ্যা ও প্রতারণা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিল পিপল্স এমপাওয়ারমেন্ট ট্রাস্ট (পিইটি), ব্রিটিশ সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) এবং বাংলাদেশে তৎপর কয়েকটি দেশি-বিদেশি এনজিও। অর্থাৎ এটা ছিল সর্বতোভাবেই এনজিওদের একটি সম্মেলন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ‘হাঁড়ি-পাতিল্যা চোর' হিসেবে নিন্দিত এনজিওদের নেতৃত্বে দারিদ্র্য মোচন করা সম্ভব- এমন কথা কেবল চোরের সাক্ষী ‘গাঁট কাটারাই' বলতে ও বোঝাতে চাইতে পারে।

ওই শিশির শীল এবং তার সংগঠন সম্পর্কে বেরিয়ে এসেছে চমকে ওঠার মতো কিছু তথ্য। যেমন তথাকথিত ‘আন্তর্জাতিক' সম্মেলনটি করার জন্য জাতিসংঘের ইউনাইটেড নেশন মিলেনিয়াম ক্যাম্পেইন (ইউনাইটেড)-এর কাছ থেকে শিশির শীল এক লাখ ২৬ হাজার ডলার সাহায্য পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এ পর্যন্ত পেয়েছেন ৫০ হাজার ডলার, বাকিটা পরে পাওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি কয়েক কোটি টাকা চাঁদা উঠিয়েছেন। কিন্তু ডেকোরেটর, ফটোকপিকারী সংস্থা, রেন্ট-এ কারের কোম্পানি, স্টেজ নির্মাণকারী সংস্থা এবং খাবার সরবরাহকারী হোটেলসহ কাউকেই পুরো পাওনা বুঝিয়ে দেননি শিশির শীল।

তার নিজের কর্মচারী মিল্টন ঘোষ জানিয়েছে, খরচের টাকাসহ অনেক পাওনাদারের মাত্র ১০-৩০ শতাংশ টাকা দিয়েই কেটে পড়েছেন তিনি। পাওনাদাররা তার টিকিটিরও সন্ধান পাচ্ছে না। সবারই এক কথা, দুই নেত্রী উপস্থিত হবেন বলেই তারা এত বিপুল অর্থের কাজ বাকিতে করেছিলেন। তাছাড়া তাদের বোঝানো হয়েছিল, সম্মেলনটি সরকারিভাবে আয়োজিত হচ্ছে। সুতরাং টাকা মার যাবে না। উল্লেখ্য, শুধু ঢাকায় নয়, দেশের ৬৪ জেলায়ও শিশির শীলের নেতৃত্বে একই ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সবখানেই তিনি কোটি কোটি টাকা বাকি রেখেছেন।

এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্যটি হলো, শিশির শীলকে সংসদ ভবন এলাকায় এমপি হোস্টেলের ৩/১০ নম্বর মিনিস্টারস অ্যাপার্টমেন্টের পশ্চিম ব্লকে একটি অফিস দেয়া হয়েছে। এটা পেয়েছেন তিনি পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট ট্রাস্ট (পিইটি)-এর নামে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, তিন মাস আগে স্পিকার ও সরকার দলীয় চিফ হুইপ নাকি অফিসটি তাকে পাইয়ে দিয়েছেন। সেখানেই এক সঙ্গে চলছে পিইটি, এপিপিজি ও অ্যান্টি পোভার্টি ক্যাম্পেইন অব পার্লামেন্টের অফিস। তিনটি সংগঠনেরই নেতৃত্বে রয়েছেন ওই শিশির শীল। প্রশ্ন উঠেছে, একটি বেসরকারি এনজিও কিভাবে মিনিস্টারস অ্যাপার্টমেন্টে অফিস পেতে পারে? কারণ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার দিক থেকে মিনিস্টারস অ্যাপার্টমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। তাছাড়া শিশির শীল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন, তার এপিপিজিও সরকারি কোনো সংগঠন নয়। এর রেজিস্ট্রেশনও নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রের সংরক্ষিত একটি এলাকায় শিশির শীলকে অফিস দেয়া হয়েছে।

কথা শুধু এটুকুই নয়। দারিদ্র্যবিমোচনের নামে শিশির শীলের ওই সংস্থাটি ওয়েবসাইটও করেছে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও স্পিকারের ছবি দিয়ে। ওয়েবসাইটের পাতায় ব্যবহার করা হয়েছে জাতীয় সংসদের লোগো, বাংলাদেশ সরকারের লোগো, এরপর এপিপিজি ও পিইটি'র লোগো, জাতিসংঘের লোগো এবং সবশেষে ২০১৫ সালের মিলেনিয়াম গোলের লোগো। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের লোগো ব্যবহার করতে পারে না। তাছাড়া শিশির শীলের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সংসদ সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও এবং বেসরকারি কোনো ব্যক্তি বা সংসদ সদস্য নন এমন কেউ সদস্য হতে পারবেন না বলে বিধান থাকলেও তিনি সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ বা এপিপিজির সদস্য সচিব বনেছেন এবং সে পদাধিকার বলেই যথেচ্ছভাবে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও তিনি ওই পরিচিতি ব্যবহার করেছেন। অথচ, এপিপিজির নিয়ম হচ্ছে, শুধু এমপিরা এর সদস্য হতে পারবেন।

এখানে তথ্যগুলো তুলে ধরার কারণ সম্পর্কে সম্ভবত বিস্তারিত বলার প্রয়োজন পড়ে না। যে সম্মেলনে যোগ না দেয়ার অভিযোগে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে নিন্দা-সমালোচনার অভিযান চালানো হয়েছে, সে সম্মেলনের প্রধান নেতা ছিলেন এমন এক শিশির শীল- যিনি কোনো বিচারেই এত বড় একটি অবস্থানে যেতে পারেন না।
দ্বিতীয়ত, এই লোকটি সর্বাত্মকভাবেই প্রতারণা করেছেন- সোনিয়া গান্ধী থেকে হিলারি ক্লিনটন পর্যন্ত বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে তিনি এমনকি খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতারণা করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন।
এরই পাশাপাশি ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ছবি এবং বাংলাদেশ সরকারের লোগো ব্যবহার করেও তিনি দেশকে অসম্মানিত করেছেন।
সবচেয়ে বড় কথা, অফিস হিসেবে তাকে রাষ্ট্রীয় নিরপত্তার জন্য স্পর্শকাতর একটি স্থান ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সবকিছুর পেছনে ছিল খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলকে অপদস্থ করার হীন চেষ্টা। আর এসবই সম্ভব হয়েছে একটি মাত্র কারণে- রাজনৈতিক স্বার্থে শিশির শীলকে ক্ষমতাসীনরা ঘাড়ে উঠিয়েছিলেন। এই সুযোগে শিশির শীলও সরকারকে ব্যবহার করেছেন যথেচ্ছভাবে।
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×