somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি একাত্তর সালে যুদ্ধের সময় আপনি থাকতেন আপনি যুদ্ধে যেতেন?

১১ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনটা ষোলই ডিসেম্বর। অন্যদিন যেমনই হোক, এই একটা দিন যেন আমাদের দেশপ্রেমটা জেগে উঠে। তো এই ষোলই ডিসেম্বরে আমার এক ছাত্রী আমাকে ফোন করছে...

-আচ্ছা ভাইয়া, যদি একাত্তর সালে যুদ্ধের সময় আপনি থাকতেন আপনি যুদ্ধে যাইতেন না?

-শুনো উপমা! তোমাকে হতাশ করতেছি! আমি যুদ্ধে যাইতাম না!

-কী বলেন, ভাইয়া! ছিঃ! কেন যাইতেন না?

-আমি ভাব দেখাতে চাইলে বলতে পারতাম যুদ্ধে যেতাম, কিন্তু সেইটা সত্যি হইত না। আমি জানি সেই সময়টাতে আমার যুদ্ধে যাওয়া হত না।

-ধুর, ভাইয়া!

-এইটাই বাস্তবতা। যা সত্যি তাই বলতেসি। আমি যুদ্ধে যাওয়া টাইপ ছেলে না।

-তাহলে ঐ সময়ে কী করতেন?

-এইটা বলা কঠিন। হয়ত অনেকের মত ইন্ডিয়া পালাইতাম। হয়ত পালানোর সাহসও করতাম না।

-আপনি ভীতু।

-হা হা হা! বলতে পার। কী জানি, আসলে ঐ সময়ে কী করতাম বলা খুব কঠিন। আচ্ছা, হূমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল- উনাদের কথা বলি। যুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তরতাজা যুবক। উনারা সরাসরি যুদ্ধে যায়নি। উনাদের বাবা যুদ্ধে শহীদ হইছেন। সবাই কি আর যুদ্ধ করেছে? তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছ এই কথা-যুদ্ধের সময় উনি কোথায় ছিলেন?

-বাবা না কি ক্লাস থ্রীতে।

-হুম। আমার বাবা তখন করাচীতে। ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়েছিলেন ওখান থেকে। আমার বড় ফুফুর সাথে থাকতেন। ফুফার চাকরীর পোষ্টিং ছিল করাচীতে।

-উনাদের কোন সমস্যা হয়নাই সেখানে? যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে...

-আমার বাবা যুদ্ধের সময় দুইবার দেশে আসতে গিয়ে পারেন নাই। আর ফুফুরা কিভাবে আসবে? বাবা চলে আসছিল যুদ্ধের পরপরই। কিন্তু ফুফুদের আসতে দেরি হইছে। ফুফুদের মত এরকম আরো অনেক বাঙ্গালী পরিবার আটকে পড়েছিল। পাকিস্তানী যেসব যুদ্ধবন্ধীদের, মনে হয় ১৯৫ জন ছিল, তাদেরকে যে শেখ মুজিবের সরকার ছেড়ে দিছে তার একটা কারণ ছিল এইসব আতকে পড়া বাঙ্গালীরা।

-ও! জানতাম না। যাই হোক, বুজছেন ভাইয়া- আমার ছোট বোনের সাথে বাজী ধরছিলাম-আপনি যুদ্ধে যাবেন এইটা নিয়ে। আপনার জন্য হেরে গেছি। ;(

-হা হা হা! আমার পরিচিত আত্নীয়-স্বজনের মধ্যে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন। আমার নানা তখন চিটাগাং-এ চাকরি করতেন। জানো, উনি টানা তিনদিন হেঁটে হেঁটে চাঁদপুর গেছেন সেই যুদ্ধের সময়! আমার নানুর কাছে শুনছিলাম। কী যে একটা আতংকজনক সময় কাটাইছে তখন মানুষ! আচ্ছা, তুমি জাহানারা ইমামকে চিনো? একাত্তরের দিনগুলি পড়েছ?

-চিনি। কিন্তু পড়া হয় নাই।

-তুমি যুদ্ধে যাওয়ার গল্প শুনতে চাইছ তাই তোমাকে একটা গল্প বলি। রুমী ছিল জাহানারা ইমামের ছেলে। যুদ্ধের সময় উনার বয়স কত? এই তোমার এখন যেমন। খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিল। পড়ুয়া, বিতার্কিক, তবে কোন মতেই রাজনিতির সাথে ছিল না। উনার এমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। উনার মত ছেলে যুদ্ধের সময় পুরা ক্যারিয়ার ফেলে দিয়ে যুদ্ধে চলে গেছেন। উনি আর উনার বন্ধুরা ঢাকার গেরিলে বাহিনীতে ছিলেন। উনার বন্ধু ছিলেন আজাদ। অবশ্য বয়সে সিনিয়র ছিলেন। আজাদের বাবা ছিলেন ঢাকা শহরের সবচেয়ে ধনী লোক। উনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন দেখে আজাদের মা সব প্রাচুর্য ছেড়ে আজাদকে সাথে নিয়ে একেবারে আক্ষরিক অর্থে কুঁড়েঘরে থাকা শুরু করলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আজাদ মাস্টার্স শেষ করতে পারছিল, বোধহয়। যাই হোক, যুদ্ধে উনারা ঢাকার গেরিলা বাহিনীতে ছিলেন। ভয়ংকর সব অপারেশন চালাইছেন। ২৯ আগস্ট রাতে উনাদের একটা বিশাল বাহিনী পাকিস্তানীদের হাতে ধরে পড়ে। আজাদের মা খবর পেয়ে আজাদকে দেখতে থানায় থানায় ছুটতে থাকেন। দেখেন, আজাদকে খেতে দেয়া হচ্ছে না। উনি সেই সময় আজাদকে বলছেন-বাবা, সব মুখ বুজে সহ্য করবা। কোন ভাবেই তোমার সঙ্গীদের খবর কাউরে বলবা না। পরদিন আজাদের মা আবারো আজাদের জন্য আজাদের ভাত রান্না করে নিয়ে যান। কিন্তু আজাদকে আর পাওয়া যায় না। সেই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। এরপরও আজাদের মা আরো চৌদ্দ বছর বেঁচে ছিলেন। উনি জীবনে আর ভাত খাননি, উনি আর কখনো নরম বিছানায় ঘুমাননি। বুঝছো উপমা, এইসবই হচ্ছে আমাদের যুদ্ধের গল্প!
২৩টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×