কি হইল কিছু বুঝলাম না! গতকাল রাতে এতো ঘুম পাইছিল! এইবারের পুরা ইউরো চলাকালীন আমি গড়ে চার ঘন্টা ঘুমাইছি। কয়েক রাত টানা না ঘুমায়ে থাকা আমার কাছে তেমন একটা অস্বাভাবিক না। আর এই ইহজীবনে হাঁটতে শেখার পর থেকে দিনে-দুপুরে ঘুমানোর ইতিহাস নাই। আর সেই আমার কি না কালকে পেয়ে বসলো রাজ্যের ঘুম! ঘুম বলতে ঘুম! রাত দশটা বাজতে না বাজতে আমি বসে বসে মুরগির মতো ঝিমাচ্ছি। কি খাইলাম না খাইলাম জানিনা, বাসার মানুষজনরে বললাম-খেলা দেখবো না। আমারে জাগাবা না! তারা খুব অবাক হওয়া আমার দিকে তাকায়া ছিল। কারণ, রাত জাইগা খেলা দেখা আর রাত কত গভীর হইছে চিন্তা না কইরা
গোওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওল
বলে বিকট চিৎকার করার জন্য আমার বিশেষ বদনাম আছে!
আমার এক পুচকি বান্ধবী আছে। আমি নাম দিছি "নিনা" (স্পেনিশ নাম কিন্তু! )। ঘুমানোর আগে তারে একটা এসএমএস দিলাম। ( সকালে বুয়েনোস দিয়াস আর রাতে শুভ রাত্রি বলে মেসেজ না পাঠালে সে ভাইয়ার উপর বিশাল রাগ করে! ) বললাম- আজকে রাতে ডিস্টার্ব করবা না! ঘুমাব!
তারপর কত কী হয়ে গেলো! দেখলাম- পিরলো-পিরলো থেকে ডি রসি- ডি রসি থেকে পিরলো- পিরলোর ডায়াগোনাল পাস- কাসানো- কাসানোর ড্রিবল- বুস্কেটস ডজ খাইচ্ছে- কাসানো ড্রিফট কইরা রাইট কর্ণারের দিকে চলে গেছে- রামোসকে ফাঁকি দিয়ে কাসানোর পাস- মন্তোলিভো- ডি বক্সের বাইরে আগুয়ান বালোতেল্লি- বালোতেল্লির পায়ে বল- ক্ষিপ্রগতির বালোতেল্লি মুহুর্তেই ছিটকে ফেললো দুই ডিফেন্ডারকে- বাঁ পায়ের বুলেট শট- অসহায় ক্যাসিয়াস হাঁ করে তাকিয়ে আছে- আমি চিৎকার করতে যাচ্ছি -- গোওওল গোওওওওল গোওওওওওওওল ! কিন্তু না! না! ~না চাহিলে যারে পাওয়া যায়~ তারস্বরে বাজতে থাকে মোবাইল ফোনে।
না চাহিলে যারে পাওয়া যায়- আমার সেই পুচকি নিনা ফোন করছে-- ওমা! এইসব কী! খেলা দেখেন! খেলা দেখেন! এতদিন এতো চিল্লাফাল্লা করে আজকে ফাইনাল দেখবেন না ক্যামনে হয়?
নিনার আদেশে তাই খেলা দেখতে বসলাম। মাত্রই শুরু হইছে খেলা। তখনো আমি বসে বসে মুরগির মতো ঝিমাচ্ছি! ভাবলাম- চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে আসি! যাহ! এইটা কি হইল! গোল!
আবারো নিনার ফোন করছে। আমি জানতাম সে স্পেনের সমর্থক। তার স্পেন সমর্থক হওয়ার গল্পটা খুব সহজ। সে আসলে ব্রাজিল সাপোর্টার। গত বিশ্বকাপে যেহেতু ব্রাজিল বাদ পড়েছে তাই সে চেয়েছে আর্জেন্টিনার পতন ঘটুক। যেহেতু জার্মানী আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে সুতরাং সে জার্মানীর সাপোর্টার। আবার যেহেতু এইবার ইউরোতে সেই জার্মানীকে হারাইছে তাই ইতালী তার শত্রু। সুতরাং সে ইতালীর বিপক্ষ স্পেনের সমর্থক এতে আশ্চর্যের কী আছে!
এখন গোল খাওয়ার পরই তার ফোন। ফোন ধরার পর বুঝলাম ও পাশের কন্ঠ বাষ্পরুদ্ধ। আমার ইতালী হেরে যাচ্ছে বলে সে কাঁদছে!
- আহ! কেন এমন করছো? খেলা অনেক বাকী। আমার প্রেডিকশন ছিল স্পেন ১- ২ ইতালী। তো ঠিকই তো আছে! স্পেন একটা দিছে। এর পর ইতালী দিবে!
এরপর কি হল! কিয়েল্লিনি খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠের বাইরে। আমার আর অপেক্ষা করার কিছু ছিল না। যেদিন ভাগ্য বিপক্ষে থাকে সেইদিন কোন কিছুতেই আর কিছু হয় না।
সুতরাং, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে- যখন নিনা আবারো ফোন করবে? তাই পৃথিবীর সাধারণ নিয়ামানুযায়ী নিনা আবারো ফোন করে। এইবার আর বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠ না! মানুষ যে কেন এতো কাঁদে আমি বুঝি না!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:২৩