প্রথম পর্বের পর -
Click This Link
“ উডি যান ।। উডি যান ...... আর ঘুমায়েন ন ... উডি যান ।। উডি যান ......” মসজিদের মাইক থেকে মুয়াজ্জিনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল । তাবু থেকে বের হয়ে দেখি চারদিক অন্ধকার । মসজিদ বোর্ডিং এ ঘুমিয়ে থাকা রাজিব, রিফাত , মনটি ও রেজা ভাইকে ডাকলাম । আগের রাতেই প্লান করা ছিল আজ সকালে আবার বনে ঢুকব হরিন দেখার জন্য। সবাই রেডি হয়ে সূর্য উঠার আগেই রওনা হলাম বনের দিকে। আজ গেলাম অন্য পথ ধরে। নামার বাজার থেকে আমাদের সঙ্গী হল একটা কুকুর। আমরা প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার হেঁটেছি , কুকুরটা সারাক্ষণ আমাদের সঙ্গী হয়ে ছিল। বনে ঢুকার সময় চিন্তিত ছিলাম যে কুকুর ডাকাডাকি করলে হরিন দেখা যাবে না, কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে বনে ঘুরাঘুরির পুরো সময় কুকুরটা একটুও শব্দ করে নি। যাই হোক রাজিব, রিফাত , মনটি ও রেজা ভাই আজকেই আবার ঢাকা ফিরত যাবে কারন আগামিকাল থেকে হরতাল। ওনাদের ট্রলার ছাড়বে ৯ টায়, তাই তার আগেই রেডি হতে হবে। সারে ৮ টার মধ্যে নামার বাজার ফিরত যেয়ে তারাতারি নাস্তা করলাম। আরও টুরিস্ট দের নিয়ে একটা ট্রলার যাচ্ছে হাতিয়া, সেখান থেকে লঞ্চে ঢাকা। নামার খালে অপেক্ষমাণ ট্রলারে রাজিব, রিফাত , মনটি ও রেজা ভাইকে তুলে বিদায় দিলাম। মাত্র ২ দিনের পরিচয় কিন্তু বিদায় দেয়ার সময় কেমন অদ্ভুত কষ্ট লাগছিলো। ট্রলার ঘাট থেকে ফিরে হাসান রাসেল কে জিজ্ঞেস করলাম এখন কি করবা । আমার একটা অভ্যাস হলো, আগে থেকে প্লান করা রুটিন অনুযায়ী ট্রাভেল করি না, তাৎক্ষণিক যেখানে যা ভালো লাগে সেই মতো চলি। হাসান রাসেল বলল চলেন আজকে সারাদিন বনের মধ্যে কাটাই। আমারও এমনই ইচ্ছা ছিল। শুকনো খাবার পানি ইত্যাদি নিয়ে আবার ঢুকলাম বনে সকাল সারে ৯ টায়। বনের মাঝে হঠাৎ খাল পড়ল , খাল ভর্তি পানিতে। পার হওয়ার উপায় নেই। বনের মাঝে পড়ে থাকা কেওড়া গাছ দেখে সাঁকো বানানোর বুদ্ধি আসলো। অতঃপর কেওড়া গাছ দিয়ে তৈরি করা ব্রিজ দিয়ে খাল পার হলাম । বনে ঘুরাঘুরি করে হরিন দেখে আবার চৌধুরী খাল এর পাশে তৃণভুমিতে আসলাম। শয়ে শয়ে মহিষ , ভুল বললাম হাজার হাজার মহিষ চরছিল চড়ছিল তৃণভুমি জুড়ে । বনে ঘুরে তিনজনই ক্লান্ত তাই গাছের ফাকে তাবু টানিয়ে দিলাম ঘুম । ঘুম থেকে উঠলাম দুপুর দুইটায় । ও আসল কথাই বলতে ভুলে গেছি, বনে ঢুকার সময় দেখি একটা জেলে নৌকা মাছ ধরে ফিরত আসছে, নৌকাতে অন্যান্য মাছের সাথে দেখি ইলিশ মাছ। দরদাম করে ৩ টা ইলিশ মাছ কিনে স্থানীয় এক পিচ্ছি কে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম আলতাফ ভাই এর হোটেলে। বলে দিয়েছিলাম যেন আস্ত ফ্রাই করে রাখে। ঘুম থেকে উঠেই মনে পড়ল সেই ইলিশ মাছ এর কথা। তারাতারি তাবু প্যাক করে দৌড় দিলাম নামার বাজার এর দিকে। আলতাফ ভাই এর হোটেলে এসে দেখি আমাদের পাঠানো ইলিশ মাছ ফ্রাই ও অর্ডার করা চেউয়া মাছ ভুনা রেডি । আহ ! যেমন স্বাদ ইলিশ মাছ তেমনি চেউয়া মাছ এর ভুনা। চেউয়া মাছ স্থানীয়রা তেমন পছন্দ করে না। খুব কমন মাছ, মাত্র ২০ টাকা কেজি। আলতাফ ভাই আমাদের জন্য উনার বাড়ি থেকে রান্না করে এনেছেন চেউয়া মাছ ভুনা। অন্যদের কথা জানি না, তবে আমার কাছে ইলিশ মাছের থেকেও ভালো লাগলো খেতে । খাবার শেষে আবার মসজিদ বোর্ডিং এ বিশ্রাম , গোসল ।। বিকালে বের হলাম নদীর পারে। এবার সাথে গাইড ৭/৮ বছরের সোহাগ। নদীর পার দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম অনেক দূর। নদী পার হয়ে দূরে দেখা যাচ্ছিল একটা চর । সোহাগ কে জিজ্ঞেস করতেই জানালো ওটা কবিরের চর। ওখানে ডাকাত থাকে। আরও কিছুদূর যেয়ে দেখি গাছে ঝুলানো বড় আকৃতির মাছের মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। হাসান কি মাছ জিজ্ঞেস করতেই সোহাগ জানালো “ইয়া মাছ ন, ইয়া ছুছুম” । কাছে যেয়ে দেখলাম বেশ বড় আকারের ডলফিন । স্থানীয়রা তেল সংগ্রহ করছে, সোহাগ জানালো, “ছুছুম এর তেল মালিসের কাজে লাগে” । আমরা ছুছুম এর সাথে ফটোসেশন সেরে সন্ধার আগে গেলাম চটাখালি খাল এর পাশে। সোহাগ জানালো সন্ধায় হরিন আসে পানি খেতে। রাত পর্যন্ত থাকলাম খালের পাশে। দেখলাম হরিন আসছিলো পানি খেতে। রাত আঁটটায় বাজারে ফিরে , আবার আলতাফ ভাইএর হোটেল খাওয়া, মোবাইল , ক্যামেরার ব্যাটারি চার্জ দেয়া।। ঘুরাঘুরি করে সময় কাটানো । ঘুমাতে গেলাম রাত সারে ১১ টায়। বালিশে মাথা লাগানোর ৩০ সেকেন্ড এর মধ্যে ঘুম । আজকের মতো এখানেই শেষ। পরবর্তী এ্যালবামে নিঝুম দ্বীপ টু মনপুরা ভ্রমন ।
ছবি এখানে পোস্ট করলাম না । সম্পূর্ণ অ্যালবাম পাবেন এই লিঙ্ক এ
Click This Link