somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশে বইমেলা হোক পৃথিবীর সব ভাষার, সব মানুষের

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা উদ্বাহু হয়ে নাচি, কিন্তু একুশে বইমেলা আন্তর্জাতিক হবে কি না সেই প্রসঙ্গ উঠলে আমরা নানা কায়দা-কৌশলের আশ্রয় নিই, যাতে কোনোভাবেই একুশে বইমেলা আন্তর্জাতিক না হয়। কী সেই কায়দা? কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পত্রিকায় ‘কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে! জল্পনা’ এই শিরোনামে একটা সংবাদ দেখলাম। সেখানে বাংলাদেশের একজন প্রকাশক যা বলেছেন তার অংশবিশেষ এই- ‘বাহান্ন সালের ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাসব্যাপী ওই বইমেলা হয়ে আসছে। কেবলমাত্র বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের লেখকদের বই-ই সেখানে থাকে। শুধু ভারত নয়, অন্য কোনও দেশকেই সেখানে আমন্ত্রণ করা হয় না।’

একেই বলে কায়দা! একুশের বইমেলা কেবলমাত্র বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের লেখকদের বইমেলা। আবার অনেক লেখক-প্রকাশককেই বলতে শুনি যে- একুশে বইমেলা বাংলা ও বাঙালির বইমেলা। কিন্তু কেন একুশে বইমেলা ‘বাংলা ও বাঙালির বইমেলা’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে? একথা বলে কি আমরা আমাদের মনিপুরী, গারো, হাজং, ত্রিপুরা, চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে অসম্মান করি না? একুশের বইমেলা তো তাদেরও বইমেলা, তাদের ভাষায়ও বই প্রকাশ এবং বিক্রি হওয়া উচিত একুশের বইমেলায়।

একুশের বইমেলা আন্তর্জাতিক হওয়ার ভয়টা আসলে কোথায়? ভয়টা মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা বইয়ের! যদি ভারতে পশ্চিমবঙ্গ নামে বাঙালীদের একটি রাজ্য না থাকত কিংবা তাদের ভাষা বাংলা না হতো, তাহলে আমরাও উদার হয়ে বলতাম একুশের বইমেলা আন্তর্জাতিক হোক। আমরা মাছ খাই বেশি, চলাক মানুষ, আমাদের উদারতা ব্যবসা বোঝে!

ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফ্রেন্স, তামিল, তেলেগু ইত্যাদির ভাষার বইয়ের স্টল একুশের বইমেলায় ঢুকতে দিতে অসুবিধা ছিল না। কিন্তু সমস্যা তো ভারতের বাংলা ভাষার বই! তারা আমাদের একচ্ছত্র আধিপত্যে ভাগ বসাবে। আমাদের বই বিক্রি কমে যাবে।

আচ্ছা, আমাদের যারা প্রকৃত লেখক; সেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, শহীদুল জহির, শওকত আলী, হুমায়ুন আজাদ, হাসান আজিজুল হকের বই কি খুব বেশি বিক্রি হয়েছে বইমেলায়? হয়নি, মেলায় যাওয়া বেশিরভাগ মানুষ এদেরকে চেনেইনি। এখনো সেলিনা হোসেন বা হরিশংকর জলদাসের কোনো বই মেলায় এক হাজার কপি বিক্রি হয়? মনে হয় না। তাহলে কোন বই, কাদের বই বিক্রি কম হবে বলে আমরা ভারতীয় বই বইমেলায় ঢুকতে দিতে চাই না? এসব বই বিক্রি কম হলে বাংলা সাহিত্যের খুব বেশি ক্ষতি হবে কি?

ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিলে অবৈধ পথে ভারতীয় পণ্য আনতে আমাদের কষ্ট হয় বলে, আমরা তাদের গালাগালি করি। আর আমরা যে সংস্কৃতিতে কাঁটাতার দিই তার বেলা? প্রতিবছর নাটক এবং নৃত্যের ডজন ডজন দল ভারতে আমন্ত্রিত হয়ে যায়, আমরা কয়টা দলকে আমন্ত্রণ জানাই?

আমরা প্রতিবছর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় অংশ নিই, সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট প্যাভিলিয়নেও আমাদের স্থান সংকুলান হয় না, আমরা পাঁচ হাজার বর্গফুট দাবি করি। এবছরও ৪৩ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। আমরা সংস্কৃতির আদার-প্রদান করতে যাই। আদানটা বেশ ভালোই হয়, প্রদানের বেলায় অজুহাত অই এক জায়গায়- এটা আমাদের নিজস্ব বইমেলা। এখন পশ্চিমবঙ্গের পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড যদি তাদের বইমেলায় বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থাকে ঢুকতে না দেয়, তাহলে কিন্তু আমরা ‘মালাউনের বাচ্চারা আমাদের ঈর্ষা করে’ বলে চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়বো!

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের নিজস্ব থাকেনি, এটাকে আমরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছি। একুশের বইমেলা কেন সংকুচিত করে রাখবো?

একুশের বইমেলায় ভারত, রাশিয়া, মেক্সিকো, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের বইয়ের স্টল থাকলে একুশের গৌরব আরও বাড়বে। একুশে বইমেলা হোক পৃথিবীর সব ভাষার, সব মানুষের


ঢাকা।
২১.০২.২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×