
আজকে ঢাকার বিরাট অংশ সাইকেলে চষে বেরিয়েছি, ইজরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের কারণে চরম জনদুর্ভোগ ছিল। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীরা গোলচত্বরে অবস্থান নেয়। এছাড়া পুরো রাস্তাজুড়ে ছিল মিছিল। যানবাহন যেতে পারছিল না।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে খুবই ভালো কথা, সেটা নিজের দেশের মানুষের ক্ষতি করে কেন? কেন গোলচত্বরে অবস্থান নিতে হবে? কেন রাস্তাজুড়ে মিছিল করে এগোতে হবে? রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো যেত না? জনদুর্ভোগ হয়েছে, জরুরিসেবার বাহন আটকে থেকেছে যানযটে, কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। এই বিক্ষোভে দেশের মানুষের ক্ষতি ব্যতিত ইসরায়েলের কিছুই আসবে-যাবে না।
এবার বিক্ষোভের প্রসঙ্গে আসি। এই বিক্ষোভটা হওয়ার প্রয়োজন ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ, কিন্তু হয়ে গেছে মুসলমানের বিক্ষোভ। অন্য ধর্ম বা মতের মানুষও অংশ নিয়েছে বিক্ষোভে, কিন্তু সেটা আমলে না নিয়ে ইসলামপন্থীরা বিক্ষোভকে কেবল মুসলমানের বিক্ষোভ বানিয়ে ফেলেছে তাদের কর্মকাণ্ডে। নিজের চোখ আর কানকে তো অবিশ্বাস করতে পারি না। বিক্ষোভে গলার রগ ফুলিয়ে জ্বালাময়ী কণ্ঠে ‘ইসলামী স্লোগান’ দিতে দেখেছি। শুধু বাংলাদেশের মুসলমানরাই ‘ইসলামী স্লোগান’ দিয়েছে তা নয়, আরও কিছু দেশের ভিডিও চোখে পড়েছে, সেখানেও ‘ইসলামী স্লোগান’ দিয়েছে, জ্বালাময়ী কথা বলেছে, ইসলাম কায়েমের কথাও বলেছে।
বাংলাদেশে তো আরেক ধাপ এগিয়ে ভাঙচুর আর লুটপাটও হয়েছে। বাটার শোরুম লুট হয়েছে, কেএফসি-পিৎজা হাট ভাঙচুর হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছেলেকে পিটিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আল-কায়েদা জঙ্গি বিন লাদেনের ছবি প্রদর্শন করেছে বিক্ষোভে।
এখন যদি বলি মুসলমানের কোনো প্রতিবাদ মিছিলই দিন শেষে নিরীহ প্রতিবাদ মিছিল থাকে না, তা হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক এবং সহিংস, হয়ে ওঠে জিহাদ, তাহলে কিছু মানুষের খুব মন খারাপ হবে আর আমার গায়ে সাম্প্রদায়িক ট্যাগ লাগিয়ে দেবে।
একবার ভেবে দেখুন তো আজকের প্রতিবাদ অন্যভাবে হতে পারত না? সব সময় কথা বলতে হয় না। নীরব থেকেও প্রতিবাদ করা যায়। আজকে যদি সারাবিশ্বেই প্রতিবাদ সমাবেশে কোনো বিদ্বেষপূর্ণ জ্বালাময়ী বক্তৃতা না হতো, কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটতো, যদি ইসলাম কায়েমের বাসনা প্রকাশ না করত, জিহাদের ডাক না উঠত, লাদেনের ছবির প্রদর্শন না হতো, কেবল হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকত মানুষ, কেবলই নীরবতা পালন করত, গাজা ও রাফায় নিহত মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাত, সেটা আরও বেশি আবেদন তৈরি করত না? সেটা মানুষের মনের আরও গভীরে পৌঁছাত না?
নীরবতার পরিবর্তে উগ্র কর্মকাণ্ড প্রদর্শন করে তারা আবারও প্রমাণ করেছে যে- মুসলমানরা এমনই, লুণ্ঠনপরায়ণ, চোর, সহিংস, জিহাদী। এই বার্তাটাই অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। এরপর কোনো সভ্য মানুষ মুসলিমদের পক্ষে কোনো বিক্ষোভে যেতে কুণ্ঠাবোধ করবে। বিক্ষোভে বিন লাদেনের ছবি প্রদর্শন করা মানে বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে- মুসলমানরা সন্ত্রাসী লাদেনের পক্ষে, জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার পক্ষে, মুসলমানরা আসলে জিহাদী।
দিনশেষে বিক্ষোভকারীরা আসলে ইসরায়েলের পক্ষেই কাজ করেছে। ইসরায়েল সারাবিশ্বের বিক্ষোভের এইসব ফুটেজ সংগ্রহ করে জনমত নিজের পক্ষে নিতে যুক্তি দেখাতে পারবে যে- ‘দ্যাখো, মসলমানরা কতটা সন্ত্রাসী, আমরা ঠিক কাজ-ই করছি।’
সারাবিশ্বের মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছাবে যে মুসলমানরা জিহাদের মাধ্যমে ইসলাম কায়েম করতে চায়, তারা সহিংস সম্প্রদায়। ভালো মুসলমান আর মন্দ মুসলমানকে একই পাল্লায় রাখবে। ভালো মুসলমানদেরকেও মানুষ বিশ্বাস করতে চাইবে না। মুসলমানদের কর্মকাণ্ডই আগামী পৃথিবীকে দুই ভাগে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে- একদিকে মুসলমান আর আরেকদিকে পৃথিবীর অন্যান্য সম্প্রদায়।
আজকের পরে যদি কেউ বলে যে- জিহাদী মুসলমানদের শিক্ষা দিতে ইসরায়েল ঠিক কাজ করছে! এর কী জবাব দেবেন? নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তো এই কথা বলার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিলেন!
মুসলমানদের যে-কোনো প্রতিবাদ সমাবেশ শান্তিপূর্ণ না হয়ে কেন জিহাদ হয়ে ওঠে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে মুসলমানদেরকেই, সমাধানও তাদেরকেই করতে হবে।
৭ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





