১। ভোর
………
সারা রাত জাগার পর
ঘুমানোর আগে
সূর্যের আশ্চর্য জেগে ওঠা
পুনরায় দেখে নিতে চাই।
সে চাওয়ার মধ্য দিয়ে
বয়ে যায় শ্রীমন্ত নদী,
নদীর উরুতে গিয়ে বসি।
দেখি,
পাখিরা উড়তে উড়তে
ভোর নিয়ে আসে
আমাদের সামান্য গ্রামে।
২। বজ্রপাতের বাড়ি
...................
বজ্রপাতের প্রাণে ঢুকে গেলে বাল্যবন্ধু
ঝনঝন করে বেজে ওঠে।
যারা কতো কী হতে গিয়ে
মুখমণ্ডলের ভাঁজে ভাঁজে শুকিয়ে ফেলেছে ডজন ডজন নদী,
তাদের কাছে ও ছিল
কিছু হতে না চাওয়ার ইয়ার্কি।
কারও কারও মধ্যকার গােপন সুরঙ্গে
ও নাকি বেশ কয়েকবার-
বলেছিলো, চোরাবালি, আলেয়া, বর্ণনাতীত
বোঝাতে পারব না।
একটা পাখির হৃদয়ে ওর যাতায়াত ছিল নিয়মিত
এ বিষয়ে কথা বললে, মনে হতো দুপুরের দীঘি
টলটল টলটল টলটল।
আমাকেও নিয়ে যাবে, বলেছিলো।
অনেক দেরির ইচ্ছায় ভাবি, যাব।
ওকে পেতে তাই জীবন জুড়ে পুষে রাখছি ববর্ষাকাল
খুঁজছি বজ্রপাতের বাড়ি!
৩। ঢেঁকি
(নিশাকে)
.......
নদীর ঢেউকে আমরা তবলার আত্মীয়
বলে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হলাম। পাখির গান
শুনতে ছুটলাম স্মৃতিতে।
ঘাতকের দুঃখের মতো ভালোবাসলাম বাঁশিকে।
নীরবতাকে ঈর্ষা করলাম শত্রুর খ্যাতির মতো।
সন্ধ্যার বিষণ্নতাকে পাঠাতে চাইলাম নরকে।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল। আর বন্ধ ঘরে
মনে হচ্ছিল আমি আজন্ম বধির।
অথচ তার বুকের ঢেঁকির পাড়
শুনতে পাচ্ছিলাম স্পষ্ট।
যেন ওই বুকের মধ্যেই মৌসুমের সব ধান
চাল হয়ে উঠবে বলে পণ করে ঢুকে পড়েছে,
দূর করতে তৃতীয় পৃথিবীর অনাহার।
৪। অ্যালার্ম ঘড়ি
............
একদিন নিজেরই পানীয়ে মিশিয়ে রাখব বিষ কৌশলে।
তারপর ভুলে যাব। ঘণ্টাখানেক বসব বারান্দায়। আধখাওয়া
পাওরুটিকে ঘিরে পিঁপড়ার হামাগুড়ি দেখতে দেখতে বিতৃষ্ণায়
পিপাসা নাড়বে কড়া।
তখন কোজাগরী। নদীতে ঝুঁকে দেখে নেবে নিজের মুখ
চন্দ্রকুসুম।
বাড়ির নিকটে এসে নাম ধরে চিৎকার করবে ঢেউ।
ঘুমের মধ্যে শব্দ করবে কারও রুগ্ন ফুসফুস।
হিম হাওয়ায় শীতে কাঁপতে থাকবে জানালার পর্দা।
মসজিদের মাইকে 'আল্লাহু আকবর' বাজতে বাজতে
চলে যাবে বিদ্যুৎ-
ডানা নিয়ে হাজির হবে নিস্তব্ধ সুবেহ সাদিক!
আহা ভোর! ডাকতে থাকবে অ্যালার্ম ঘড়ি!
৫। সয়ে যাবে
................
কুয়াশার ধূম্রজালে আচ্ছন্ন যে কোনো দিনে
ধরি যদি আমার যেখানে সাধ চলে যেতে
গিয়ে, বসে আছি ব্রিজে কোনো, একা পা ঝুলিয়ে।
যেন কোনো কাজ নেই, কারোর আভাস নেই,
পরানের তাড়া নেই বহুকাল হলো। আরো
আরো কাল যাবে ক্রমে, পা ঝুলিয়ে একভাবে
নদীর নিকটে। তবু আর জলের নাগাল
পাবো নাগো। পাঁচ হাত নিচ দিয়ে বয়ে যাবে
ধারা। কতোসব কথাটথা ঢেউ- আর গাছে
গাছে নৃত্যরত ডালের পাতারা। আমি চুপ,
নিজের সাথেই খুব নিজে বিরূপ। আমার
বিরাগভাজন কেউ নাই। বৃথা কলোরব।
আমি যেন শব পৃথিবীর। সয়ে যাবে, ধীর।
জলের স্বভাব আমি বুঝে যাব ততোদিনে
কচুপাতার স্বভাব নেবোগো আয়াত্বাধীনে।
৬। বিমান ভ্রমণ
……….
বিমান ভ্রমনকালে প্লেন উড়ছে মানে আপনিও উড়ছেন, তা কিন্তু নয়।
৭। উদ্বায়ী
……….
কিছুটা উদ্বায়ী বলে
মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে জীবন!
৮। এইটুকু
............
মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছি দমকা বাতাস
সে কুচিন্তার অশান্তি ঝাঁট দিতে থাকুক।
এই ফাঁকে মালিকে বলেছি, সুহৃদ,
ভাবনার মধ্যে স্রেফ একটা জবা গাছ
বাতাসে কাঁপতে থাকা বিনয়ী ফুল,
আর তার পরিচর্যা-
এইটুকু শুধু।
৯। কান্না
....................
খুব ভারী লাগছে নেরুদা,
হজম করছি জটিল ভ্রুকৃুটি, জীবনের।
পরিজন নিয়ে বাড়িফেরা মানুষের হল্লা
কে যেন আমার কানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে, অসহ্য।
দূর থেকে নক্ষত্রের এতো প্রলোভন
আর কাছের গাছে জুড়ে থাকা জবা
আমাকে ধরে টানাটানি করছে।
শরীর ছিঁড়ে দু'টুকরো হয়ে যাচ্ছে হে কবি।
মহাশূন্যে তীরের ফলা হয়ে ঝুলে আছি,
আর বৃষ্টি শেষের রামধনুকে ধনুক ভেবে
শঙ্কায় মানুষজন-
যেন কুটিল রঙের সাথে ষড়যন্ত্রে মিলে
যে কোনো মুহূর্তে
বুকে বুকে দ্রুত বেগে বিদ্ধ হতে যাব!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২১