ফুলসহ ফুলদানি
.............
বহু নরক বাদে
ছবিতে তাকে দেখলাম,
হাত রেখেছে কার কাঁধে-
কী তার নাম-
জানি সব জানি,
এই জানার মধ্যেই হারিয়ে ফেলেছি
ফুলসহ ফুলদানি!
*রচনাকাল: ২০১১ সাল
অভয়ারণ্য
.........
এই কংক্রিট শহরে
আজ থেকে আমি এক বনভূমি।
শিরায় শিরায় নদী-
মাছ খলবল করবে খেয়াল খুশিতে
নৌকা, মাঝি, পাল
বক এবং হরিয়াল
সব থাকবে,
শুধু ধীবর থাকবে না।
বৃক্ষ, ফুল, ফল থাকবে
পাখি ও পতঙ্গ থাকবে
বৃক্ষ নিধন হবে না
পাখি শিকারিও থাকবে না।
আজ থেকে এই বুক
অভয়ারণ্য তোমার
কষ্ট হলে, খা খা হলে
ঝাঁপিয়ে পড়বে
কিন্তু খবর্দার, কখনও কাঁদবে না!
*রচনাকাল: ২০০৮
বাগান
.......
মাথায় জবার উঁকি দেখে তাকে খুব বাগান ভাবলো মন!
২ বছর আগে লেখা কবিতা
খুন
...
ছুরির ফলায় হাসছে যে নৃশংসতা,
আমি তাকে খুন করতে চাই!
শ্রোতাবন্ধু
..........
এতো এতো কথাবন্ধুর ভীড়ে আমি শ্রোতাবন্ধু খুঁজি!
২০১৪ সালের মার্চে লেখা
পিপাসা
.........
গ্লাসের মাপা পানিতে যে পিপাসা মেটে না
দিদি সেটা বোঝে না মোটেই।
এদিকে দীঘিকে, নালাকে সূর্য করছে পান,
টিভি ও বিলবোর্ডে পেপসি, মোজোর আহ্বান।
ফারাক্কায় উৎপাদিত বিদ্যুতে
ঝলসে যাচ্ছে বাংলার বুক।
বারিধারা-বনানীতে থাকে যে যমুনা
ধনীর দুলাল দেয় তাহাতে চুমুক!
না থাকা তার হাঁটতে থাকা
.....
একদিন অভিনব শরৎকালে
না থাকার ভান করে
বসে থাকব দৃশ্যহীন দূরে কোথাও।
হেমন্তের পাতাদের হলুদ হতে, ঝরে যেতে
প্রলুব্ধ করবে শীত।
নদীতে পানি শুকালে
দুই পাড় এক হওয়ার দূরাশা করতে থাকবে।
শীতকে পেছনে ফেলতে বসন্ত
বরাবরের মতো হাওয়া হয়ে ফিরবে, ফুরফুরে।
যেহেতু নশ্বরতা আছে পৃথিবীতে
আছে ঋতুচক্র,
তাই বসন্ত মারিয়ে গ্রীষ্মকেও ফিরতে হবে
বর্ষা পেটে নিয়ে।
যে খুব নীরবে হাঁটতো, বসতো গিয়ে একমাত্র টুলে,
আচমকা বৃষ্টির দমকায়,
না থাকা তার হাঁটতে থাকা
বসে থাকা
খুঁজতে থাকবে
ফাঁকা বারান্দার ভুলে!
জীবনের শীত
.........
পাতা নেই ক্ষেতের পাশের ন্যাড়া গাছে
ক্ষেত জুড়ে শাক-সব্জি ফুটে আছে!
কবিতাগ্রন্থের নাম
....................
একটা নামের তালাশে কী আশ্চর্য!
শুক্রবারের বগলে অতর্কিতে ঢুকে যায়
সোমবারের বাম হাত
রাতের উরু চুলকে ঘাঁ বানিয়ে ফেলে
ডান হাতের নিরীহ নখ
দাঁতে ছিড়ে ফেলে ভোর, রাতের কামিজ।
রাস্তায় তখন মানুষের ছায়া নিয়ে খেলছে
শীতকালীন পুলিশ,
নাপিতের চাকু উঠেছে পাণ্ডার পকেটে
সুযোগের পাতে তুলে গণতান্ত্রিক উপায়ে
সিনেমার এক্সটাকে কামড়ে খেলো
যার দুইটা আঙুল।
(এর কিছুই দেখল না মরা গলি, ঘুম।)
অথচ একটা নামের জন্য কিনা
সন্তর্পনে মদের গেলাসে
ডুবে গেলো এন্টার্কটিকা,
ভাবনাকে চুলকাতে পাখা ঘষল পেঙ্গুইন
কোথাও বেজে উঠল শেয়াল-সাইরেন
রোদের কঞ্চিতে খোঁচা মারল পাড়ার সকাল।
নাম কি জোনাক ফুল?
*এ বছর জানুয়ারিতে লেখা
২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর লেখা কবিতা
স্মৃতির বিকেল
................
নিজেকে ঝলসে খেতে
এই রাত উৎকৃষ্ট সময়।
এদিকে উত্তরের হাওয়া এসে
কাঁপিয়ে দিচ্ছে ভাবনার বরই গাছ,
মায়াকে নস্টালজিক করে তুলছে
বিগত জলপাই পাতা।
বুকের ভেতরে বসেছে হাট-
তাতে কয়েকটা স্মৃতির বিকেল
না বেচতে পেরে
ফিরে যাচ্ছে মেঘলা হাটুরে,
যেন সে কবেই হেরে গেছে
জীবনের বিগ ম্যাচে।
তাই-
আমি তার কয়েকটা বিকেল কিনতে আজ
নিজেরই বুকের মধ্যে
অতর্কিতে ঢুকে পড়তে চাই!
মৌমাছির মনীষা
...................
সবথেকে নিজেকেই ঠকিয়েছি বেশি।
বেহিসেবে করেছি খরচ রোদ আর রংধনু।
উদ্বাস্তু আগুনও দিয়েছি থাকতে,
জরুরী ঝামেলা জমা রাখতে
বজ্রপাতকে দিয়েছি বুকের ড্রয়ার।
কয়েক অালোববর্ষ ধরে প্রতীক্ষাকে
শিখিয়েছি মৌমাছির মনীষা,
দুপুরের সকল কড়া প্রশ্নের জবাব আমি
মৌন মহাদেশে রেখেছি জমা।
যতটা সুষমা থাকার কথা মুখের দাবানলে
তার সবই সারাটা স্বপ্নজুড়ে ভাসিয়ে দিয়েছি
অনচ্ছ জলের আড়ালে!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২