১৩ নভেম্বর সকাল সোয়া ৮টার লাইভ
................................
পুলিশের গাড়ি
সাইরেন বাজাইতে বাজাইতে
নূর হোসেনের বিবর্তন
বহন করিতে করিতে
নারায়ণগঞ্জে যায়।
এই নূর হোসেনের খোলা বুকে
'স্বৈরাচার নিপাত যাক' লেখা নাই
তার বদলে রহিয়াছে বুলেট প্রুফ জ্যাকেটে,
তাতে লেখা র্যাব,
মাথায় হেলমেট।
এই মাত্র তারে নিয়া পার হইলো গাড়ি
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনের গেট!
২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর লেখা কবিতা
হেলান
...................
যেন একটা গান
এরূপে বেজে চলছে তার জীবনের অগ্রহায়ন।
আর দূর কোন্ পরাগায়নের সময়
তার দিকে আসছে এগিয়ে-
সেও তাই দুই ডানা সামনে এগোয়
কে তবে মৌমাছি?
নির্ভাবনায় হেলান দিয়ে বসে
ভাবে এইসব-সেইসব ভাবে।
এভাবে সে আসলে
নিজের আবছায়ায় তদ্রাচ্ছন্ন হয়ে-
কিছুটা উড়ছে আর বাকিটা যাচ্ছে বয়ে!
মানুষের আচার-ব্যভার
...........................
পৃথিবীতে এখনোতো কালশী রয়েছে
পরিচিত হলগেটে রয়েছেতো
কাঠ গোলাপের রাগ
তেরটা তুলার রাতেরে রেখেছি থুব
খুব আলগোছে
পানি কাটি, কাটি পানি, পানি হও ভাগ।
এক ধারা ভাগ হয়ে হলে হোক তবে
দুইটা সাগর
দুরত্ব রচনা করা এই সমাদর
নিতে চাই, পথ করে নিতে। মৃদুলয়ে
হেঁটে যাব এবারের শীতে।
সরে সরে বয়ে যাবে দুই দিকে দুই
মহাধারা
পৃথিবী যেহেতু গোল, তবে মিলবে কী
এসে ফের তারা?
নাহলে প্রমাণ হবে
এই ভবে
পৃথিবী গোলতো নেই মোটে আর
চ্যাপ্টা করছে তারে মানুষের আচার-ব্যভার।
প্রার্থনা
.....
ছায়ায় বসিয়া যারা, গাছকেই ছায়া দিচ্ছে, ধরে নেয়
পায়ে ধরি প্রভু, তার যেন কালক্রমে গাছ হয়ে যায়!
জীবন
..............
নতুন নতুন বাঁকা পথে, ফেলে যাই পুরনো চেহারা
নিজেই পালকি, নিজে চড়ে বসি তাতে, নিজেই বেহারা
হাত থেকে মুছে ফেলি ধরা হাত, দৃশ্য মুছে ফেলি চোখে
ধৈর্যকে ধারণে নেয়া, এই পণ প্রয়োজন আছে ইহলোকে
বলি আর ভাবনাকে ঘষি, কণ্ঠ থেকে স্বর যাক তোলা
এবেলা গেলো-বা ফের, ঘুরেফিরে এসে জুড়ছে ওবেলা
ওবেলার পরে রাত, মানে আছে চন্দ্রালোকে সম্ভাবনা
খোলা মাঠে শুয়ে ভাবি, শুধু একটাই কাজ- তারা গোনা
গুনতে বুনতে তন্দ্রা, উঠে দেখি তারা নেই, আছে ভোর
সব গোনা ভুল তবে, অদৃশ্যত বোনা, অগনিত ফোঁড়?
এইভাবে ভেঙে-টেঙে যাবে নির্মাণের সব কারুকাজ
সময়ের মধ্যে আছে ভাঙাযোগ্য স্রোতেরই আওয়াজ
তার আগে ছায়ায় জিরানো ধীরস্থির, হরিদ্রাভ মাঠে
প্রান্তর বুনেছে শস্য, যার কাটার সে তা-তো দাঁতে কাটে।
কাটা-মোছা যজ্ঞে বরাবর, সময়তো ছুরি-ইরেজার
এই সাড় ডুবে-ভেসে চলা, যে নদীতে নেই কোনো পাড়!
আকাশি জীবন
........................
নতুন টাকার মতো চকচকে বন্ধুগণ-
তাদের ধনুক হাসির ইঙ্গিত
আমার অর্থহীনতাকে বিদ্রুপে টোকা দেয়!
কারও কারও সাথে নাকি কথা বলা
কুলাবে না-
নাইবা কুলালো যোগ্যতায়!
তার চেয়ে তর্ক রেখে, প্রতিক্রিয়া রেখে
যাই নিজের নদীর কাছে,
বসি পাড়ে।
গিয়ে দেখি,
টাকা-পয়সা নেই নদীদেরও,
তাও তারা নিরবধি ধাবমান।
পাখিদেরও নেই কোনো অর্থকড়ি
তবে বিস্তারিত আনন্দ আছে,
আছে নিজস্ব ডানার চাঞ্চল্যে
আকাশে আকাশে ওড়ার
জীবনব্যাপী অবকাশ।
নদীর নিকটে গেলে, যোগ্যতা ছাড়াই
পাখিদের সাক্ষাৎ পেয়ে যাই।
নদী বেশ শেখায়
জল ধারণ করেও বয়ে বয়ে যাওয়ার ক্ষমতা
পাখিরা দেখায়
শিকারি এয়ারগানের বিপরীতে
গান গাওয়া আকাশি জীবন!
২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর লেখা কবিতা
বুদ্বুদ
........................
এরোপ্লেনের শব্দে লাফ
চৌকাঠের বাধা, ফাটা ভুরু।
ফোনের ওপাশে অন্ধকার মুখের আভাস,
ফোঁপানো আষাঢ় রাত্রি।
জ্বলন্ত সিগারেট হাতে ঘুম,
আগুন, আগুন!
অর্ধদগ্ধ করতল, ঘায়ে বসা মাছি,
কাত হয়ে পড়া জীবনে
অতর্কিত হাসি।
ইষদুষ্ণ চুমু।
নির্জন সন্ধ্যায়
সাঁকোতে পা ঝুলিয়ে বসা ভয়,
জোঁকের শরীরে দেয়া নুন।
চাকায় থেতলানো সিনেমা ফেরতে মাথা,
ডাব কাটতে গিয়ে কার
কেটে ফেলা ছটফটে চারটা আঙুল,
হাতির পায়ের নিচে পিষ্ট মাহুত-
বিতৃষ্ণার ভেতরে ঢুকে তুলছে বুদ্বুদ!
বছর বিশেক আগেকার দিন
১.
বাদাম বাগানে যে কথা উড়িয়েছি-
সেওতো অনেক আগে
তখনও অতোটা দেখা হয়নি
জটিল জটিলতর জীবনের বাঁক।
খেলার পেছনে ছিলো সন্ধ্যার ত্বরা,
পড়ার টেবিল,
অন্ধকারে ভয়।
আত্মীয়যাত্রায় ছিলাম খুশী,
কেবলামুখী ঘুমের ভেতরে ভূত পোষাপুষি ছিল।
অন্তমিলও ছিল নিজের সাথে।
এখন যেমন তুমুল বিরোধ
তেমনটা ছিলো না মোটে
তখনও প্রকৃত সারস যেতো না উড়ে
গেলেই নিকটে!
২.
দিনের ফুরিয়ে যাওয়া আসলে শেষ কথা নয়
তাও দেখি রাতের চিবুকে লাগা কুয়াশার দাগ
মুছতে গিয়েই ভিজে যায় ভোরের আস্তিন। সূর্য
সেজদা ভঙ্গিতে ডুবে গেলে কার মনে মনে পোষা
ডুবুরি হবার অভিপ্রায়! যতো সহজিয়া ছিল
চোখ, দৃশ্য ততটা সহজ নয় মোটে, যতো কুঁড়ি
শেষাবধি এসে ফুল, তারো বেশি ঝরে যায় বোঁটে!
নেই
....
কিছুই লাগে না ভালো
ধারালো ধারালো আবহাওয়া
যা্ওয়া নেই, কেবলই আসা-
তামাসা এই- তোলে ঘূর্ণি ভেতরে বাহিরে,
ঘিরে ধরে।
ঘরে-বাইরে কিছু নেই কোনো,
হারানো কিংবা পাওয়া; যাতে ভাবা যাবে- বেশ,
অবশেষ শান্তিসহ হয়েছে হাজির!
দার্শনিক
.........
থৈহীন রাতের মধ্যে একা জোনাক পোকাটা
জ্বলছে-নিভছে,
সে আমাকে চক্রাকারে দেখাচ্ছে
আলো-আঁধারের যাত্রাপালা।
মহাকালের মধ্যে দেয়াল ঘড়িটা
টিকটিক করে বেজেই চলেছে,
ওই টিকটিক আর তার মধ্যবর্তী সময়টা
খেলছে আমাকে নিয়ে
শব্দ-নৈশব্দের খেলা।
একটা জোনাক পোকা আর দেয়ালের ঘড়ি
দার্শনিক হয়ে উঠেছেন রাত্রিবেলা!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০১