জানাজা
.......
ভেতরে কে গো তুমি ঝরা পাতার উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছো মর্মর ধ্বনি তুলে?
শীতের এমন ভুলে ভেঙে যাচ্ছে পাতার শুষ্ক প্রাণ
রাতের নৈঃশব্দ ভেঙেচুরে যায়
তাতে
কুয়াশা কুয়াশা দিনে আমাকে দাঁড়াতে হলো নিজের জানাজায়!
গুমোট
..............
সন্ধ্যা নাগাদ
বাতাসে বাতাসে কারা
উড়াল বিষাদ-হাহাকার,
চায়ের দোকানে কানাঘুষা
চাপা আফসোস; শোক-
গলি শেষের শান্ত ডোবায়
মুণ্ডুহীন পড়ে আছে
পাড়ারই নীরিহ যুবক!
*২০০৮ সালে লেখা কবিতা
২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর লেখা কবিতা
পড়ে আছি
.............
হুলস্থুল শীত পৃথিবীতে
গুটিয়ে আসা কুয়াশায়
পাতা ঝরা গাছের শোকের তলায়
বিস্ময়বোধক চিহ্ন হয়ে পড়ে আছি,
প্রলম্বিত ভোর-
নড়লেই ভেঙে যাচ্ছে ঝরা পাতার কোমর!
নদীর হাসাহাসি
................
তাহলে কঠোরতা পৃথিবীর প্রকৃত সুহৃদ
যার হৃদয়ে মোহর মারা আছে-
ধীরে বওয়া শীতের বাতাস কাঁপাতে এলে
এহেন চিন্তা থেকে ঘাড় ঘুরাতে হয় পিছে।
তাতে কুয়াশার পাতলা পোশাকের স্বচ্ছতা ফুঁড়ে
চোখে যায় দূর গাঁয়ের শ্যামলা উরুতে
কতো বাসনা যে জাগে।
তাতে কামনার স্রোত নিয়ে
বয়ে যাওয়া নদীর হাসাহাসি।
ও শ্রীমন্ত, এমন অসহ্য দিনে তোর স্তন
মুখে পুরে শান্ত করে রাখ নারে মাসী,
আজন্ম শিশুর জীবন নিয়ে বাঁচি!
শিস দিতে দিতে
...................
বিবাহযোগ্য তুলসী গাছ
বিষন্নতা নিয়ে যাও সমুদ্রে বেড়াতে
খালি পানির বোতলে তাকে ছুড়ে দাও ঢেউয়ে-স্রোতে
সোফার কুশন, মগ, পেপার ওয়েট ছুড়ে কী হবে আর
বানরকে বাদাম ছুড়ে দিতে চলো যাই পুরনো ঢাকায়,
গলায় পেঁচিয়ে নেবে নাও সন্দেহযোগ্য মাফলার।
অস্থিরতা নিয়ে যাও বনে বা পাহাড়ে
যেসব গল্প ছিলো বলতে বলতে তার
কফিতে মিশিয়ে দাও বিষ
শিস দিতে দিতে তবে নিচে নেমে এসো।
হাইকু
........
১. মুখে মৌন সবুজ
অকাট্য স্থির
দৃষ্টি কাছে; সমুদ্রে।
২. ছিল স্থির দুরত্ব
কথা ঘুরিয়ে
বাড়ালো অন্ধকার।
৩. বৃষ্টির খোঁজে দেখি
কচু পাতায়
সামান্য দাগ নেই।
স্বরূপ সন্ধানে
..................
কতো ভঙ্গি আছে মানুষের ঘুমানোর
ধনুক নিয়মে ঘুম আমার অভ্যাসে
কেউ কেউ কাৎ হয়ে শোয় এক পাশে
ঘুমে ঠিক ভঙ্গির বদলে জাগে ভোর
অদ্ভূতুরে পৃথিবীর কৌনিক নীতিতে
দেশে দেশে দিন-রাত চক্রাকারে খেলে,
আমারো সকল রাত্রি, দিন করে দিতে?
সামান্যে ঘোরাবো, ভাবি, বাঁকাবো তাহলে।
কোন দিকে কতো ডিগ্রি বাঁকালে নিজেকে
এ জীবন রশ্নিময় কোন কোণ থেকে
ও কম্পাস জানো সব- কথা বলো, চাই
যে অ্যাঙ্গেলে আলো, তবে বক্র হয়ে যাই।
বক্র চাঁদ, বাঁকা নদী, বক্র রংধনু
স্বরূপ সন্ধানে তবে বক্র হবে তনু!
শ্রোতা সব
..............
আবহমান নৈশব্দের ছায়ায়
জীবনকে বসিয়ে রেখে
কোথায় চলে এসেছি আমরা!
চোখে-মুখে খিস্তি, প্রলাপ,
চিৎকার, হর্ন।
এরই মধ্যে আকাশে ফেটে ছড়িয়ে পড়ছে
আতশবাজির উজ্জ্বল প্রাণ,
মুহূর্তের এমন স্ফূরণ
বিদ্রুপ ছাড়া কিছু নয় আসলে
হৃদয়কে এই কথা বলে দূর মহামতী পাহাড়;
স্থির অহংকারে যিনি
পাঠ করছেন মৌনতার ভাষা
শ্রোতা সব মেতে হট্টগোলে!
গোলক ধাঁধাঁ
............
হায়রে গোলক ধাঁধাঁ
তোমার কারণে পৃথিবীর লম্বা হতে বাধা!
ভোর দেখা
...........
নিস্তরঙ্গ জীবনে কম্পমান মাটি
তরঙ্গায়িত করেছে মোদের।
ভোর রাতে পাড়াময় গুঞ্জন তুলেছে।
কেউ কেউ বহুদিন বাদে মাটিকে দিয়েছে
খালি পায়ের সাক্ষাৎ।
তারপর আবারও মন্থরতা নেমে এলে
ভোর এসে হাজির হয়েছে।
যে যার তরঙ্গ করে ভাঁজ
ঘুমাতে যাওয়ার আগে
হেই নাগরিক-
ভোর দেখা ভীষণ জরুরি ছিলো আজ।
বিভ্রান্তি
...............
মানুষ মূলত ৯৯৯টা মুখ নিয়ে ঘোরে,
আর কবিরা ৯৯৯৯টা।
তাই তাদের এক মুখের কথার জন্য আরেক মুখকে
দোষ দেয়া যায় না। আর কোন সময় তারা কোন
মুখ দিয়ে কথা বলছেন, তা চিহ্নিত করাও দুরুহ ব্যাপার।
কখনো কখনো কুৎসিত মুখটায়ও মোড়ানো থাকে
সুন্দর র্যাপিং পেপার!
ধূলিকণার ভাবনা
..........
এইভাবে পথেঘাটে,
সাঁতার কেটেই কি জনম যাবে-
ধূলিকণা ভাবে!
ট্রাক
....
আশা রাখো, নিয়ন্ত্রণ রাখো, সাবধানে চলো হে ব্রেকফেল করা ট্রাক!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮