somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নদোষ-১ (শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)

০১ লা মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
ঢাকা শহরের কোন এক চড়ুই ডাকা ভোর। অসমাপ্ত আর ভাঙা ভাঙা কিছু স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় ধ্রুব'র। ফ্রয়েড আর আরও আরও যত মনোবিজ্ঞানী তাদের আজীবন পরীক্ষা-লব্ধ সমস্ত থিওরী ভুয়া মনে হতে থাকে। স্বপ্ন নাকি মাত্র কয়েক সেকেন্ড ধরে স্থায়ী হয়, সে সময় রেপিড আই মুভমেন্ট হয়, স্বপ্নে কোন রঙ দেখা যায় না ইত্যাদি। ধ্রুব আজ যতগুলো স্বপ্ন দেখেছে তার স্থায়ীত্বকাল যে কোন পূর্ণ দৈর্ঘ্য ইংরেজী ছবির চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তবে ভাঙা ভাঙা স্বপ্নগুলোর কোনটিতেই মধুর কোন পরিসমাপ্তি আসেনি। ঈষৎ ঊষ্ণ শরীরে এখনও স্বপ্নীল উত্তেজনার রেশ। স্বপ্নের ঘোরটা এখনও কাটেনি মনে হয়। চট করে একবার চাদরের নিচে হাফ প্যান্টে হাত বুলিয়ে দেখে ধ্রুব। না, চটচটে বা ভেজা কোন কিছু অনুভূত হচ্ছে না।

অন্য সময় একটু বেলা করেই ঘুম ভাঙে ওর। আজকাল সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছে। বিছানায় শুয়ে শুয়েই আধবেলা কেটে যায়। স্বপ্ন দেখতে খুব ভালবাসে ধ্রুব। আরাম আরাম লাগে। আজকের বিষয়টা আলাদা। স্বপ্নের ঘোর বুঝি এখনও কাটেনি। মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে। স্বপ্নের বিষয়বস্তু মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুই মনে আসে না। বিছানার পাশে শাদা পর্দা টানা জানালা। ভোরের আলোর ছটায় পর্দাটা আলোকিত। ঘরের মধ্যে একটা বেশ আলো আঁধারির নাটুকে পরিবেশ। জানালার বাইরে থেকে চড়ুই আর শালিকের কিচির মিচিরের শব্দ ভেসে আসছে। পাশ ফিরতেই টিভির উপরে পুরনো দেয়াল ঘড়িটার দিকে চোখ যায়। ৬: ১২। ক্ষুধায় পেট মোচরাচ্ছে। এসিডিটির কারণে পেট জ্বলছে। মুখ ভরে থুথু উঠে আসছে। তবু বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না। আবার চোখ বন্ধ করে ধ্রুব।

ধ্রুব'র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম,বি,এ-র পাট চুকেছে বেশ কয়েক মাস আগে। মনে করেছিল ভাল কোন একটা মাল্টি ন্যাশলাল কোম্পানীতে জব করবে। বি,বি,এ-র পর পরই একটা বহুজাতিক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেছিল কয়েক মাস। কিন্তু পরে এম,বি,এ ক্লাশে শাহ স্যারের চাপে পড়ে জব ছাড়তে হল। এম,বি,এ-টা ভালভাবে শেষ করতে পারলে আর কোনদিকে তাকাতে হবে না; তখন এই ভেবেই বেশ ভাল বেতনের চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হলো না।

কোন এক অজ্ঞাত কারণে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচাররা ছাত্র ছাত্রীদেরকে ভাল নম্বর দিতে চান না। বিশেষ করে ছেলেদের। অথচ এই টিচাররাই যখন প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোতে যান তখন তাদের মধুর ব্যবহার আর নম্বরের ব্যপকতায় শিক্ষার্থীর বুক ফুলে ফুলে ওঠে। বিনে পয়সায় সেই স্ফীত বক্ষ দেখতে কার না ভাল লাগে। অবশ্য প্রাইভেট ভার্সিটি(!)গুলো থেকে সরকারী ভার্সিটির টিচারদেরকে অনেক বেশি টাকা-পয়সা দেয়া হয়। সেটা একটা কারণতো বটেই। তবে কথাটা আংশিক সত্য। কারণ, এই তো সেদিন ধ্রুব-র এক বন্ধু লেকচারার হিসেবে ঢাবি-তে নিয়োগ পেয়েছে। ধ্রুব জানে বেসিক বাদ দিয়ে শুধু খাতা দেখে আর পরীক্ষার হলে গার্ড দিয়ে একজন টিচার গড়ে যে পরিমাণে আয় করতে পারেন সেটা তাঁর এবং তাঁর পরিবারের চলার জন্যে যথেষ্টের চেয়েও বেশি। যেমন প্রতিটি খাতা কাটলে একজন টিচার পান ২৫ টাকা। তার মানে যত বেশি পরীক্ষা তত বেশি টাকা। আর গার্ড দিলেতো কথাই নেই। পরীক্ষাভেদে গার্ডের জন্য পাওয়া যায় বিভিন্ন অংকের টাকা। এছাড়াও ইভিনিং এম,বি,এ আর এক্সিকিউটিভ এম,বি,এ ইত্যাদি ক্লাশে লেকচার দেয়ার সুযোগ তো থাকছেই। যাই হোক, তারপরও টিচারদের মনে শান্তি নেই। ইস্ আর কিছু টাকা যদি পাওয়া যেত। তাই তো তারা দল বেঁধে প্রাইভেট ভার্সিটির দারস্থ হন। আর পাবলিক ভার্সিটির পিন্ডি চটকান। অথচ তিনি বা তারা হয়তো ওই পাবলিক ভার্সিটিরই প্রোডাক্ট। তারা যে দাম পান সেটা যে তাদের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের কল্যাণেই পান সে কথা বেমালুম ভুলে যান। যে শিক্ষার কল্যাণে এই সমস্ত টিচাররা দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে নিয়োগ পান তার মূলে রয়েছে লবিং আর লুব্রিকেটিং-এর মিলিত নির্যাস। তবে সেটা শুরু হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার প্রথম দিন থেকেই। তবে সবাই তো আর এক রকম নন। যারা ভাল তারা তো ভালই। কেউ একটু বেশি ভাল আর কেউ একটু কম এই যাহ্! আর বেশির ভাগ প্রাইভেট ভার্সিটির ক্যাম্পাস একটু ছোট হলেও লেখাপড়ার মান খুব উঁচু। চড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দেখা গেল হয়তো ধানমন্ডির এক বিল্ডিং-এই চার পাঁচটা প্রাইভেট ভার্সিটি। প্রতিযোগিতা তো হবেই। এত ক্লোজ কনটেস্ট পৃথিবীর আর কোন দেশের ভার্সিটিগুলোতেই হয় না। রীতিমত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। পাবলিক ভার্সিটিগুলোকে তো তারা গোনার মধ্যেই ধরে না। এই ভার্সিটিগুলোর আবার রয়েছে নানা ব্র্যাঞ্চ। গুলশান ব্র্যাঞ্চ, ধানমন্ডি ব্র্যাঞ্চ, বারিধারা ব্র্যাঞ্চ, মহাখালি ব্র্যাঞ্চ, ফার্মগেট ব্র্যাঞ্চ ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত ঢাকাকে মসজিদের শহর নামেই অবহিত করা হয়। তবে যে হারে ব্যাঙের ছাতার মত ভার্সিটি গড়ে উঠছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হবে ভার্সিটির দেশ আর ঢাকা হবে ভার্সিটি নগরী। প্রিলিমিনারী বি,সি,এস-এ প্রশ্ন করা হবে- নিচের কোনটি ভার্সিটির নগরী?-
ক) চীন খ) ফ্রান্স গ) অস্ট্রেলিয়া ঘ) বাংলাদেশ ঙ) কানাডা
প্রার্থীরা চোখ বন্ধ করে উত্তর ভরাট করবেন ঘ) বাংলাদেশ। এরপরও হয়তো প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে পাশ করা কোন বাঙ্গালীজ ছাত্র অন্য কোন উত্তর দাগিয়ে আসতে পারেন। কারণ বাংলাদেশের কোন অর্জন চাই সেটা ভাল হোক বা খারাপ তথাকথিত প্রাইভেট শিক্ষার্থীরা তা নিয়ে থোরাই পরোয়া করেন। প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে পাশ করে বি,সি,এস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। ধ্রুব নিজেও অবশ্য কখনও বি,সি,এস পরীক্ষা দিতে আগ্রহ বোধ করেনি।

ছোটবেলা থেকেই খুব ভাল ছাত্র ছিল ধ্রুব। নটরডেম কলেজ-এর ইংলিশ মিডিয়ামে সাইন্স নিয়ে পড়াশুনা করেছিল। গ্রুপ-এইট। রেজাল্ট মোটামুটি ভালই ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বছর কিছুদিন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশুনা করেছিল। পরে মাইগ্রেট করে গেল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। একটি মেয়ের প্রেমে পড়ল ও। সপ্নভঙ্গের বুঝি সেখানেই শুরু। মেয়েটির বাবা ছিলেন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাতে অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না। মেয়েটিও এই উচ্ছ্বল স্বতঃস্ফূর্ত ছেলেটিকে বেশ পছন্দ করত। তবে ভালোবাসত না। ভার্সিটিতে ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলটি ছিল তখন সবচেয়ে বড়। ওই সার্কেলে ধ্রুব'রই এক বন্ধুর প্রেমে পড়ল মেয়েটি। (হয়তো শরীরবৃত্তিক চাহিদা পূরণে আদি কামনার যৌন সম্পর্ক গড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই ওদের দেহ-মন পরস্পরকে কাছে টেনেছিল; হয়তো। ধ্রুব বোঝে। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারে না)। বিষয়টা ধ্রুব যখন বুঝতে পারে অবস্থা তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ধ্রুব'র স্বপ্ন ভেঙে যায়।

পরের বছর আবার পরীক্ষা দিয়ে অন্য ডিপার্টমেন্ট-এ ভর্তি হল। আগের মত আর হাসতে পারে না ধ্রুব। সবার সাথে মিশতে পারে না। পরীক্ষাগুলোতে মনোযোগ দিতে পারে না। শেষে এক বন্ধুর কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাংস্কৃতিক দলে যোগ দিল। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের শখ ছিল ওর। এবারে সেই প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পেয়ে ধ্রুব মন-প্রাণ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল রিহার্সেলের কাজে। দলে ধ্রুব-র পারফরমেন্স মুগ্ধ করল সবাইকে।

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১:৪৫
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×