মাঝরাতে কেউ এসে কড়া নাড়ে ঘুমে
অনাহুতের মতো, নিঃশব্দে, মৃদুপায়।
চিরচেনা সেই রূপে অথবা ছায়াতে কায়ার ভীড়ে
কিছুটা সময় যেন থমকে যায় সব।
অকারণ অস্হিরতার চাপা দীর্ঘশ্বাসে
উচিত অনুচিতের বিষ্ময়ঘেরা প্রশ্নেরা
কানে কানে কথা বলে নিশুতি বাতাসে।
ভদ্রতায়, স্বেচ্ছায় বা অনাগ্রহে
একবুক সাহস নিয়ে ভীত কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করতে হয়,
কতদিন পর!... কেমন আছো?
অস্হির দুটি চোখ আমার চোখে যেন স্হিরতা খোঁজে।
শান্ত কন্ঠে মৃদু হেসে জবাব দেয় - 'ভালো'।
কখনোবা এলোমেলো এই আমাকেই দাঁড় করায়
ঠিক একই প্রশ্নের কাঠগড়ায়।
বসার ঘরটা সামান্য গোছানোর অজুহাতে
মুখ লুকিয়ে কান্নার দমক সামলে নিয়ে
মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলি -
'দেখতেই পাচ্ছো!...বে-শ ভালো'।
কখনো সে হাতে রাখে হাত।
হাত ধরে আমায় টেনে নিয়ে যায়
সুদূর অতীতের কল্পলোকের ঘোরে।
ফেলে আসা স্মৃতি আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি
কিশোরী মনের প্রতিটিদিন যেখানে হতো আত্মহারা।
সেখানটায় তখন দিশেহারা হই আমি
অব্যক্ত থাকে যত জমাটবদ্ধ ব্যথা
ঘুমন্ত আমি শুধু চোখ মেলে দেখি।
আবার বহুবছর পর, এমনই কোন রাতে
ভীরুপায়ে সে চলে আসে কাছে,
স্মৃতির পুকুরে বাঁধা কালের সাঁকো ডিঙিয়ে
খুব বেশি কাছে।
আমি অবাক হয়ে স্পর্ধা দেখি।
মুহুর্তের ঝটকায় পিছিয়ে যাই কয়েক পা।
একহাতে ভালোবাসা আর অন্য হাতে জ্বালি তীব্র ঘৃণার বাতি।
ভয় পেয়ে যেন সে থমকে দাঁড়ায়।
আবার গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে প্রবল আকাঙ্খায়
কখনোবা মাথা নীচু করে পিছু হটে চলে যায়
এমন লুকোচুরিতেই আবার নিমিষে হারায় হওয়ায়!
ঘুম ভেঙে যাওয়া দ্বি-প্রহরের রাতগুলোতে
টলমলে চোখে আমি ঘেমে নেয়ে জেগে উঠি।
কান্না হাসির দোদুল্যতায় প্রতিবার নতুন করে নিজেকে সাজাই।
যে ছায়ার অভিব্যক্তি দেখার সামান্য ইচ্ছাটুকু অবশিষ্ট নেই,
নেই মধ্যবয়সে সে সম্পর্কের হিসাব মেলানোর ধৈর্য।
দু:স্বপ্নের সেসব নির্ঘুম রাতগুলোতে
ভেঙ্গেচুরে ব্যস্ততা বাড়াই প্রাসঙ্গিক ভাবনায় -
শোবার ঘরের ফুলদানীটায়
তাজা ফুল রাখা হয়না কতদিন!
বসার ঘরের কার্পেটটিও বহুদিনের পুরোনো;
বদলে দেবো কালই।
হাতঘড়ি, ওয়ালেট, পরিপাটি কাপড়-
সব কিছুই গোছানো আছে জায়গামত।
সকালে খবরের কাগজের সাথে কফি হাতে নিয়ে
ব্যালকনিতে কিছুটা সময় অনায়াসে বসা যাবে দুজন।
ওহ্! মনেকরে প্রিন্টার্স এর দোকানে যেতে হবে একবার।
এখন থেকে প্রতিরাতে নিশ্চিন্ত ঘুমের সুবিধার্থে
মনের দুয়ারে একটা নোটিশ টাঙাবো ভাবছি।
মাঝরাতের আলো আঁধারী সোডিয়ামের আলোয়
অনাহুতেরা যেন স্পষ্ট অক্ষরে পড়ে নিতে পারে
'বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ'।
ছবিসূত্র : ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৫৬