পালা করে হাতছানিতে শৈশব আমায় আজও ডাকে।
সবুজ শাড়ির নীল আঁচলে তখন আমি ক্লান্তির ঘাম মুছি।
দু'চোখে কাপড় বেঁধে শৈশব তখন ফিরে আসে কানামাছির ছলে।
একঝাঁক বন্ধু আমাকে ঘিরে আলতো ছুঁয়ে কোরাস করে -
'কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ'।
মনের ভুলে পেছন ফিরে হাতড়ে হাতড়ে আমিও তাদের খুঁজি।
চোখ থেকে আঁচল সরে গেলে,বুকে বাজে এক অস্ফুট আর্তনাদ -
কোথায় আছিস তোরা? আয় না!
সবাই মিলে একসাথে আবার ছুঁয়ে দেখি শৈশবটা!
ঘুমভাঙা দিনের শুরুতে
দুই ফিতার স্যান্ডেল পায়ে জড়ানোর সময়
ঝকঝকে টাইলসে মনের ভুলে আজো খুঁজি
নয়ঘরা ছয়ঘরার এক্কা দোক্কা খেলার মসৃন ইটচারা।
তবলার সুরে নৃত্যরত মৌমাছি সেদিন সারাটাক্ষণ জুড়ে
'কুতকুত', 'কুতকুত', বোল তোলে আমার শূন্য মনের দেয়ালে।
দুপুরবেলার ঘুমপালানো চোখটি বুজে
দস্যিমনে আজও হারাই -
চড়ুইভাতি, পুতুল বিয়ে, রান্নাবাটির ঘরকন্যার খেলায়।
কোথায় সেসব কুড়িয়ে আনা রঙিন লেইসের শাড়ি?
ভাঙা গয়না, জুতার বাক্সে সাজানো স্বপ্নবাড়ি!
এলোকেশী, শাড়ি পড়া সেই হাতে বানানো কাপড়ের পুতুলটাকে
প্রিয় বন্ধুর পুতুল বরের সাথে বিয়ে দেবার ব্যথাটা
ঠিক তেমনভাবেই দুমড়ে ওঠে আজও।
বিকেল বেলার জানলার কাঁচ গলে
দৃষ্টি যেন থমকে দাঁড়ায় পাশের বাড়ির উঠোনে।
নিজেকে আবার ফিরে পাই লাল জামা,
সাদা ফিতার দূরন্ত কলাবেনীর দোলে।
'ইচিং বিচিং চিচিং চা, প্রজাপতি উড়ে যা'!
হাতের কাপে ছলকে ওঠা গরম কফির উষ্ণতায়
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে আনমনে হাসি।
শুনতে পাই গীর্জার প্রার্থনা সঙ্গীতের সুরে
সমবেত স্বরের আরেকটি সুমধুর সুর-
'ওপেনটি বায়োস্কোপ, নাইন টেন টেইস্কোপ...।'
শেষ বিকেলে ছাদের নির্জনকোণে
গোধূলীর আলো বিধৌত বিমর্ষ আমাকে,
দু'চোখ আলতো চেপে মায়াবী সুরে শৈশব ডাকে
ফুলটোকা খেলার জমাট আসরে।
'আয়রে আমার গো - লা- প'।
দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে নিরবে দু'চোখ রাখি দিগন্তরেখায়।
গহীনে ব্যথার ফুলটোকা?
নাকি সময়ের নূ্্যজতা; আমি জানি না!
শূন্যতায় দৃষ্টি মেলে রঙিন স্মৃতির ফানুশ উড়াই সাঁঝবেলার ওই মায়ায়।
ছবি কৃতজ্ঞতা : ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০৬