somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সবুজ প্রজাপতি এবং অসময়ের শ্রাবণধারা

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।

ম্লান কোনো এক বিকেলে


উদভ্রান্তের মতো ছুটতে ছুটতে মেয়েটা সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো। ওর ভীত- সন্ত্রস্ত পায়ের কাঁপন দেখে মনে হচ্ছিলো আমি ওকে এই মুহূর্তে পিছু ডেকেও থামাতে পারবো না। আমার ফ্ল্যাটটা সতেরো তলায়। ও এভাবে সিঁড়ি ভেঙ্গেই শেষ পর্যন্ত নিচে নামবে কি না কে জানে! নাকি প্রাথমিক দ্বিধা, ক্রোধ কিংবা অভিমান কমে গেলে বাটন চেপে লিফট থামাবে বুঝতে পারি না। মানুষ যখন তার পরিনতি জেনে যায় তখন তার নতুন করে আর কিছু করার থাকে না কিংবা করেও লাভ হবে না ভেবে হাল ছেড়ে দেয় শেষ পর্যন্ত। তাই ছোট করেই মেয়েটিকে বললাম ‘ কণা, দাঁড়াও। শুনে যাও।’। যদিও জানতাম এই ডাক শুনে কণা দাঁড়াবে না। তাই ছুটে গিয়ে ওকে আটকাইনি আর ।


আমার ফ্ল্যাটের দরজা আটকাবার আগ পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছিলাম চটিতে ফটফট আওয়াজ তুলে কণার অনেকটা দৌড়ানোর ভঙ্গীতেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাবার শব্দ। শুন্য ঘরে করা কোনো শব্দ বা ধাতব জিনিসের শব্দে যেমন একটা অনুরণন তরঙ্গায়িত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি ওর চটির শব্দ সিঁড়ি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে । মূলত বিল্ডিং এর সবাই চলাচলের জন্য লিফট ব্যবহার করে বলেই পায়ে হাঁটার এই বিকল্প সিঁড়িটা একাকীত্বেই ভোগে বেশীরভাগ সময়েই। আর কণার এই ক্রোধ- দ্বিধার- অভিমানের মিলিত চটির কোরাস আজ ছড়িয়ে পড়ে যেন সিঁড়ির একাকীত্ব কিছুটা ঘুচিয়ে দিলো।


“ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার বুয়েট, পিএইচডি আমারিকা। সুদর্শন, ৫ ফুট ১১, বয়স ৩৬। সঙ্গত কারণে ডিভোর্স। ছুটিতে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।উদারমনা , ধর্ম নিরপেক্ষ আগ্রহী পাত্রীগণ যোগাযোগ করুন সরাসরি। গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। মোবাইল এবং ঠিকানা- ….. …. …. ”


গত চার মাস আগে এরকম একটা বিজ্ঞাপন বাংলাদেশে আসার পর কয়েকটা জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় দিয়েছিলাম পাত্রী চাই জানিয়ে। কণার সাথে পরিচয় অবশ্য এই পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে নয় । ডিভোর্সড, অবিবাহিত, বিধবা সব ধরনের পাত্রীর খোঁজই পেয়েছিলাম। তবে বিজ্ঞাপনটা ছাপা হবার পর আগ্রহী পাত্রীরা ছাড়াও পাত্রীদের অভিভাবকদের আগ্রহ চোখে পড়েছিলো তার চেয়েও বেশী এবং নগ্ন ভাবে। কেননা আমি ডিভোর্সড হলেও অবিবাহিত পাত্রীদের অভিভাবকদের কাছে মূল্যবান ব্যাপার ছিলো আমার একটা আমেরিকান পাসপোর্ট আছে। এখনো বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমেরিকা স্বপ্নের দেশ হয়ে আছে।

আহা , আমেরিকা তুমি যে আমায় তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়েছ এ খবর তো কাউকে বলতেও পারছি না। সন্তর্পণে কেবল গোপন অসুখের দীর্ঘশ্বাসই বাড়িয়ে যাচ্ছি কেবল!

২।

ধূলিকণা এবং সবুজ স্বপ্নের সূচনা


লোকটি আমাকে ডাকতো ' ধূলিকণা' বলে। শুনে প্রথমদিকে একটু মজা পেলেও খুব দ্রুতই এই নামটি আমার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিলো। কখনো ' ধূলি ' কখনো ' কণা ' কিংবা কখনো শুধু ' ধূল ' । এই ধূলিকণা নামটা শুনলেই কেমন একটা হালকা পালকের নরম অনুভূতির কথা মনে হয় । সে যাই হোক , বলা যায় আমি ছিলাম তার নৈঃশব্দ্যের সকল গান যা আমি ধীরে ধীরে অনুভব করেছিলাম।


সবুজ রঙের লুকোচুরি দেখতে বেশ লাগে আমার - এরকম একটা বাক্যের মধ্য দিয়েই হয়েছিলো বসুন্ধরার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমাদের গল্পের শুরু। বারিধারা বসুন্ধরার যে জমির প্রকল্পটা ছিল হাঁটতে হাঁটতে ওখানে চলে গিয়েছিলাম আমরা। সবে কিছু কিছু প্লটে শৌখিন ডিজাইন করা বিল্ডিং মাথা তুলে দেখে নিচ্ছিলো তাদের জন্য গড়া নতুন পৃথিবী।


শীত আসতে তখনো দেরী ছিলো । কারণ এখনো এখানটার খালি প্লট গুলোতে কাশফুলের ছিটেফোঁটা দেখা যাচ্ছিলো যখন বাতাস এসে ঢেউ তুলে দিচ্ছিলো তাদের শরীরে আর আশেপাশের গাছের ডালে। যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া বসুন্ধরার আকাশটাকে ভারী করে না রাখলেও গাছের পাতারা যথেষ্ট সবুজ নয়। তাই সবুজ রঙের লুকোচুরি নির্ঝরের কাছে বেশ লাগে - এটা যে শুধুই কথার কথা তা ভেবে হাসি পাচ্ছিলো ।

সেই সবুজের লুকোচুরি কিন্তু আপনার মাঝেও আছে এটা কি জানেন - বলে আবার নীরবতা ভাঙে নির্ঝর। উচ্ছ্বসিত হয়ে বলি - তাই নাকি ? হুম , আপনি সবুজরঙা মেয়ে ; অনেক সতেজ! oh , what a silly dialogue - মনে মনে ভাবি আমি।

সেদিন তার সাথে খুব বেশী বাক্য বিনিময় আমার হয়নি। তবে রাতে ঘরে ফিরে আলমিরা খুলে খুঁজে দেখছিলাম সবুজ বা সবুজে আচ্ছাদিত আমার কোনো জামা বা শাড়ি অন্য জামা-কাপড়ের ভিড়ে কোথাও লুকিয়ে আছে কি না। আসলে ঘর বলতে আমার নিজের বাড়ির ঘর নয়। আমি থাকতাম উত্তরার একটা লেডিস হোস্টেলে। অনেকক্ষণ ধরেই আলমিরা খুলে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই রুমমেট কাকলী জানতে চায় অনেকদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি কি না । ওকে সে উত্তর না দিয়ে বরং ওর চোখ দিয়ে দেখে নিতে চাই আসলেই আমি সবুজরঙা হয়ে গেছি কি না।


তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে মূলত সেদিন থেকেই আমার দ্বিতীয়বারের মতো পরিণত বয়সে এসে সবুজ হয়ে ওঠার শুরু কিংবা আমিই যেন আবার নিজের অলক্ষ্যেই অপেক্ষা করছিলাম কেউ আমার সতেজতাকে আবিষ্কার করুক। সেদিন থেকে খুব ভালো মতো খেয়াল করতে লাগলাম নিজের ত্বক, হাত- পায়ের আঙুল , চোখ এবং চুলও। ধীরে ধীরে আমার এই রঙের রূপান্তর আমার মাঝে এক ভালো লাগার বীজ মনে হয় বুনে দিয়েছিলো । হঠাৎ করে আসা এই সবুজ বাতাস আমার মাঝে তৈরি করেছিলো সেই সাথে এক স্বপ্নও।


৩।
বোহেমিয়ান সত্ত্বা


বলা যায় আমি ছিলাম ফেলো- ডি- সি। নিজেকে পোড়াতে ভালো লাগতো । অবশ্য আমার ঝকঝকে ব্যক্তিত্বের আড়ালে ব্যক্তিগত বিষণ্ণতা অথবা সুখানুভূতি ঢাকা থাকতো অন্যদের সামনে এবং আমি সে ব্যাপারে সফল ছিলাম।

একমুঠো নির্জনতা বা একা থাকতেই বুঝি ডিভি লটারি পেয়ে আমার আমেরিকার মাটিতে পা রাখা। ভুল বললাম, আমেরিকায় মাটি আবার কোথায়! পাথর খুঁড়ে খুঁড়ে খুঁজে ফিরবো নির্জনতা কিংবা ঘরে ফিরবো না বলেই হয়তো পথে বেরিয়েছিলাম না জানার পথে। বুয়েট ক্যাম্পাস, চারুকলা, ছাদের চিলেকোঠার রুমটা, বন্ধু- বান্ধব, মা-বাবা কিংবা বিত্ত- বৈভবের মাঝেও কেন নিজেকে ডানা ভাঙা শালিক মনে হতো জানি না। রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন গেঁথে ছিলো আমার নৈঃশব্দ্যের সুর! মুক্তি নেই কোথাও। বলা যায় সবার কাছ থেকে জবাবদিহিতার ভয়েই একরকম আমার আমেরিকায় পালিয়ে আসা।


আমেরিকায় গিয়ে যখন পড়াশুনা , জীবিকা, প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্নে দম ফেলার ফুরসত পেতাম না, থিসিস তৈরি করতে করতে রাত ভোর হতো, তখন খুব ক্লান্তি এসে ভর করলেও আমার ছোট রুমটায় সঞ্জীব চৌধুরী গেয়ে উঠতো -

‘চোখটা এত পোড়ায় কেন ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও…সমুদ্র কি তোমার ছেলে, আদর দিয়ে চোখ নামাও!’


তবে আমেরিকাবাসের মাস ছয়েকের মাঝেই আমার জীবনে লাগে নতুন এক ওয়েভ। নিউজার্সির আকাশটায় হারিয়ে গিয়েছিল সঞ্জীব, অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড, জাতিকে বাঁচাবার উন্নয়নের যে ছক আর উপায় নিয়ে ভাবতাম , ছেলেবেলায় রেল কলোনির দেয়াল ভরিয়ে তুলতাম যে সংলাপে ‘ দীর্ঘজীবী হও স্বদেশ ’ – তা সত্যিই আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম আমার ভেতর থেকে। বদলে সেখানে জায়গা করে নিয়েছিল নারী বা যৌনতা বিষয়ক ভাবনা। উইকেন্ডের দুটো দিন নারী দেহে খুঁজে ফিরতাম সোনালী রঙা পানীয়ের প্রস্তুতপ্রণালী এবং ডুবে যেতাম মাদকতায়।

কার্লার সাথে পরিচয় হয়েছিল এক বারের উন্মাতাল ড্যান্স ফ্লোরে। সেই থেকে শুরু হয়েছিলো আমাদের এক উদ্দাম জীবনের যেখানে বিয়ে নামক বন্ধন ছিলো না। তবে সংস্কার বলে একটা ব্যাপার পরিবার থেকে গেঁথে দেয়া হয়েছিলো বলে কিছুদিনের মাঝে ঘোরের মাঝে পড়ে আমি আর আর কার্লা বিয়ে করি শেষ পর্যন্ত ।প্রথম দিকে আমাদের দাম্পত্য জীবনে স্বস্তি ছিলো ভীষণ। সেই সাথে ছিল রাতের নীল আলোয় বিছানায় কার্লা আর আমার দুর্দান্ত পারফরমেন্স। তবে নিজেকে পোড়াবার অভ্যাস থেকেই বোধ হয় আমি কার্লার প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকলাম ধীরে ধীরে , যদিও আমার আচরণে স্থূলভাবে তার প্রকাশ ছিলো না। যখন আমি উদভ্রান্তের মতো নক্ষত্র খুঁজে ফিরতাম জানালা খুলে তখন বাইরে থেকে আসা ফিনফিনে ধারালো বাতাসে ত্বক সচেতন কার্লা গায়ে গাউন জড়াতে জড়াতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতো সম্ভবত এই ভেবে তার জীবনসঙ্গী নির্বাচনে কোনো ভুল হয়ে গেলো না তো ! তবুও মাঝে মাঝে নিউজার্সির চাঁদের আলো দেখার জন্য আমার শিরা- উপশিরায় আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলে কার্লা বিরক্ত হয়ে উঠতো - Oh Honey , Shut the window বলে ওর বিরক্তির উপর কাতরধ্বনি লেপটে দিয়ে আমার বিপরীতে পাশ ফিরে শুয়ে থাকতো। একসাথে থাকতে গিয়ে ও আবিষ্কার করতে পেরেছিলো আমার কর্পোরেট সত্ত্বার মাঝে খুব সন্তর্পণে ছড়িয়ে ছিলো এক অরণ্য। শুধু কার্লা সেই অরণ্যের রঙটাই দেখতে পায় নি।

তবে কি স্বাধীন সত্ত্বাও শৃঙ্খলিত হতে পারে ! – এই বিপন্ন বোধ যখন আমাকে কার্লার পাশে জর্জরিত করতে লাগলো , জীবনটা রঙহীন হয়ে যেতে পারে ভেবে আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবুজ দেখতে চাই আমার ব্যালকনীতে দাঁড়িয়ে। যদিও আমাদের ফ্ল্যাটে রঙের প্রাচুর্য ছিলো দেয়ালে দেয়ালে আর কার্লার পছন্দের রঙ ছিল – লাল। ওহ কী বীভৎস ! সেই লালের মাঝে আমি খুঁজে পেতাম কার্লার কামনাত্তেজক কণ্ঠ । ওর হাতের আঙুলের পলিশ করা লাল রঙা নখ , ঠোঁট আর অন্তর্বাসের লাল রঙে আমি অস্থির হয়ে ভাবতাম আগে কেন আমি অন্ধের মতো অস্থিরতায় কার্লার লাল লাভায় সাঁতার কেটেছিলাম সাতপাঁচ না ভেবে ! যদিও আমার অস্থিরতা বাহ্যিক আচরনের উপর ছাপ ফেলতো না ।

অরণ্য কখনো কর্পোরেট মানুষের বসবাসের জায়গা হতে পারে না আর এটা কার্লা বুঝতে পেরেছিলো বলেই ওর প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে চলে গিয়েছিলো একটা ছোট চিরকুট আমার জন্য বিছানায় ফেলে -

" I have lost my smile with you. Hope we together ( Alex & me ) create a new wave again. Stay fine. Your - Carla "

কার্লা যাবার আগে ঘরে রাখা আমার দুইটা ক্রেডিট কার্ড এবং কিছুদিন আগের সই করা একটা চেক নিয়ে গিয়েছিলো যা আমি রেখেছিলাম আমাদের ফ্ল্যাটের ইন্সটলমেন্ট দেয়ার জন্য ।

প্রতারণাও তাহলে কখনো কখনো শিল্প হতে পারে বা তৈরি করতে পারে একজন শিল্পীকে - ভেবে আমি অনুভুতিশুন্য হয়ে যাই কিছু সময়ের জন্য। কেন যেন মনে হয় জীবনে অপ্রাপ্তি বা পূর্ণতায় আমার অভ্যন্তরে খুব বেশী পরিবর্তন আসেনি। কার্লা চলে যাওয়াতে আমি খুব একটা ব্যথিত হয় নি বরং নির্ভার হয়েছিলাম। অনেকদিন পর আমার বোহেমিয়ান সত্ত্বা তাই সঞ্জীব চৌধুরীকে আবার মনে করলো -

ওই কান্না ভেজা আকাশ আমার ভালো লাগে না
থমকে থাকা বাতাস আমার ভালো লাগে না
তুড়ির তালে নাচতে থাকা ভালো লাগে না
এই মরে মরে বেঁচে থাকা আমার ভালো লাগে না..

৪।

লতা-গুল্ম আর কচি ঘাসের জীবন


' প্রিয় পাখি ,

আজ আমার ক্লাস সেভেনের ফাইনাল পরীক্ষার শেষ দিনে স্কুল থেকে তামান্না, স্বপ্না আর আমি আমরা সরাসরি আমাদের বান্ধবী লাবনীদের বাসায় চলে যাই। ওদের বাসায় আমরা যখন মনোপলি খেলায় ব্যস্ত আর লাবনীর মা আমাদের দুপুরের খাবার টেবিলে সাজাচ্ছিলো , ওর টিপুভাই অকারণেই আমাদের সামনে ঘোরাঘুরি করছিলো বলে আমরা লাবনীকে ওর ভাইয়ের স্বভাব নিয়ে ক্ষেপাচ্ছিলাম , ঐ সময়েই আমাদের কাজের মেয়ে তাসলিমা দৌড়ে দৌড়ে এলো লাবনীদের বাসায় । বললো – কণা আপা, আপনের মায় আপনেরে আমার লগে অখনই বাসায় যাইতে কইছে। কি নিয়া জানি খালাম্মায় চেইত্যা রইছে।’ একবুক ভয় নিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গ ছেড়ে বাসায় গেলে জানতে পারি আমার বয়সে নাকি বন্ধু- বান্ধবীর সঙ্গ ভালো না। লাবনীদের বাড়িতে উঠতি বয়সী ছেলে আছে। তাছাড়া ঋতুবতীও হয়েছি তাই রাস্তায় খেলাধূলাও বন্ধ করার ব্যাপারে নজর না দেয়ায় মা নিজেই নিজেকে দোষারোপ করলো । আর ফুপাতো ভাই সুজন এলে যেন তার সামনেও না যাই বলে মা চলে গেলো সামনে থেকে। সেদিন দুপুরে আমার আর খাওয়া হলো না।

শুরু হয় আমার বড় দু’বোন এর কারণে আমার শিকল পড়া জীবনের অসহনীয় দিনাতিপাত এবং আমার সবুজ, রঙিন কৈশোরকে ধুয়ে-মুছে রঙহীন করার ষড়যন্ত্র। হুম, আমি আমার শৃঙ্খলিত জীবনকে তাদের তৈরি করা ষড়যন্ত্রই বলি।



এই বয়সেই দেখ আমার কতো কষ্ট আর তোকে কেন সব জানালাম জানিস ? এই অন্ধকার, আমার বুকের কষ্টগুলো সবই তুই অন্য কোথাও রেখে আসবি দূরে কোথাও উড়ে গিয়ে আর ফেরার সময় রঙধনুর রঙ নিয়ে আসবি যা আমার মা, বোনেরা তুলে দিচ্ছে রোজ একটু একটু করে ।

আমি তোর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকব রে পাখি।

তোর রঙহারা বন্ধু

- কণা ’


হঠাৎই আলমিরার সামনে দাঁড়িয়ে মনে পড়লো সেদিন লাবনীদের বাসা থেকে ফেরার পর আমার পায়ে যে শিকল পড়ানোর সূচনা করা হয়েছিল, আমার লতা- গুল্মের কচি ঘাসের গন্ধওয়ালা পোশাকটা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিলো সেদিন আমার পড়নে সবুজ রঙের কামিজই ছিল; আমার স্কুল ড্রেস।

সে সময়টায় আমার পিঠাপিঠি ভাই মুহিব মাঝে মাঝে আমার জন্য স্নিগ্ধ বাতাসের এক খোলা জানালা হয়ে উঠতো । তবে আমার কাছে ওর একটা অদ্ভুত দাবী ছিলো । সুমি আপার কাছে ওর হয়ে প্রেমপত্র লিখে দিলে ও আমাকে গল্পের বই এনে দিবে বাসার কাউকে না জানিয়ে এই ছিলো ওর দাবী। সে যে কি দুরূহ কাজ একজনের হয়ে প্রেমপত্র লিখে দেয়া। তবে একই সাথে আমার ডায়েরিতে চিঠি লেখা চলছিল আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী কাল্পনিক পাখিকে উদ্দেশ্য করে ।

‘ বুঝলি পাখি ,

আমি এখন অন্য এক জগতে চলে গেছি। বলতে পারিস এ এক আনন্দের জগত। যে জগতে আছে স্বপ্ন, বিপ্লব, স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার প্রত্যয় এবং নাতিশীতোষ্ণ ফাল্গুনীবাতাস।

আজ সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন পড়লাম। একটা ভালো রেজাল্ট করতে পারলেই আমিও ঠিক দীপাবলি’র মতো হয়ে যাবো। আর তখনই আমি চলে যাবো এই বাসাটা ছেড়ে। তবে দীপাবলির বিয়ে করার মতো ভুল আমি করছি না। আমিও তোর মতো স্বাধীন হব রে পাখি।
’৭১ এর হাতিয়ারের মতো গর্জে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমি। সাথেই থাকিস।

তোর সাহসী বন্ধু
- কণা ’


মা , দেখে যাও তোমার ছোট মেয়ে কেমন সংগ্রামী হয়েছে। দেখো মা, কণা ডায়েরিতে এসব কি লিখে রাখছে – বললো মেজো আপা রুনা। সামনে তোর এসএসসি পরীক্ষা আর তুই বিয়ের কথা চিন্তা করতাছো কারণটা কী ? এই ঘরে আয়, আমার কথা শুইন্যা যা – শোবার ঘর থেকে মায়ের গলা শুনতে পাই আমি।

মা, আমি তো বলেছি আমি বিয়ে করতে চাই না।

বিয়ার নাম তুই মুখে আনবি কেন নির্লজ্জ মেয়ে – বলে মা।

তুই আমার ডায়েরি ধরসিস কেন রুনা আপা – বলে আমি আমার ডায়েরি রুনা আপার হাত থেকে কেড়ে নিতে চাইলে মা জানায় বাবা আসলে খাবার টেবিলে ডায়েরি পড়া হবে। তুই বেশী বারছস , তোর ডানা কাটনের ব্যবস্থা করতাছি দাঁড়া।

আমার ডানা কেটে ডায়েরি জব্দ করা হলেও এসএসসি পরীক্ষার পর মুহিব ভাইয়া আমাকে আরেকটা স্বপ্নের খাতা কিনে দেয় ওর বান্ধবী সুমিকে এখন থেকে নিয়মিতভাবে চিঠি লিখে দিবো এই শর্তে। ততদিনে আমি গর্ভধারিণীর ' জয়িতা ' হয়ে উঠেছিলাম।

" প্রিয় পাখি ,
আমি খুব শীঘ্রই এই বাসা ছাড়বো। কোনো এক পাহাড়ে গিয়ে থাকবো। ওখানে হবে আমার আলাদা একটা পৃথিবী। ইচ্ছা আছে আদিবাসীদের জ্ঞানের আলো দিবো , অধিকার সচেতন করে তুলবো, স্বপ্ন দেখতে , স্বাবলম্বী হবার প্রত্যয়ে গড়ে তুলবো। আমি জানি আমি পারবো।

তখন তুই আমার সাথে থাকবি তো পাখি ?

- তোর সাহসি বন্ধু
কণা "


নাহ বেশী কথা লিখলে আমার পরিকল্পনা বাসার লোকজন জেনে ফেলতে পারে ভেবে এখন সংক্ষিপ্তভাবে কম কম লিখি। তবে এবার যে-ই আমার ডায়েরি ধরুক তার হাত কাটবো আমি - ভাবতেই এক সংগ্রামী উন্মাদনার অনুভবে আমার মাঝে একটা সবুজরঙা হাসি ছড়িয়ে পড়ে ।



৫।

অন্ধকারের নির্জনতায়


তিনদিনের ফোন কথোপকথনে রুম্পার গলার আওয়াজে বোঝা সম্ভব হচ্ছিলো না আমার পক্ষে ওর সঠিক বয়স কত। এটা মেয়েদের ক্ষেত্রে অবশ্য একটা কমন ফেনোমেনা। রূম্পা বলেছিল ওর বয়স পঁয়ত্রিশ।

- আমার ছেলে পার্থকে নিজের মনে করতে পারবেন তো কেমন নাক টেনে টেনে কান্নার ভঙ্গীতে জানতে চায় রূম্পা। হেলভেসিয়ার কোল্ড কফিতে চুমুক দিতে দিতে হাসি মুখে রুম্পার দিকে আমি তাকাই ওর কথা শুনে।

- একমাত্র পার্থর কথা ভেবে গত চারটা বছর একাই ছিলাম আমি ,বুঝলেন?

চারটা বছর একা থাকা একজন ইয়াং মেয়ের জন্য কতখানি কঠিন হতে পারে ভাবতে চাই আমি।কারন যৌবন আমেরিকা বা বাংলাদেশ ভিত্তিক নয় । তবে অন্তরালে যৌবন কি বাঁধা মেনে চলতে পারে কি না আমি জানতে চাই রুম্পার কাছে।

রূম্পা তার স্ট্রেইট করা চুল আর কানের লম্বা ঝোলা দুল নাচিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে আমার প্রশ্নের মানে বুঝতে তার অক্ষমতা প্রকাশ করে।ওর ঝুলে যাওয়া স্তন আর ঘন মেকআপের আড়ালে ওর ত্বকের কমনীয়তা খুঁজতে গিয়ে মনে মনে ওকে প্রস্ট বলে একটা গালি আমার মনে এলেও এক সময় আমার যথেচ্ছ যৌনাচারের কথাও আমার মনে পড়ে যায়।

- পার্থর ছবি দেখতে চান ?বলে রূম্পা ওর মোবাইল আমার সামনে এনে দেখায় ওর ছয় বছর বয়সী ছেলের ছবি।

আমি কি আসলেও দ্বিতীয়বারের মত কোনো নির্দিষ্ট নারী দ্বারা বাঁধা পড়তে চাই কিনা এ ভাবনাটা হঠাৎ করেই এল সিরিয়াস ভাবে রুম্পার সামনে বসে । যদিও পত্রিকায় পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দেবার আগেই তা আমার ভাবা দরকার ছিল। আর সেই বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরেই আজ রুম্পার সাথে দেখা করতে আসা। নিছক বাংলাদেশে এসে সময় কাটানোর জন্য এই বিয়ে বিয়ে খেলায় নামলাম কিনা বুঝে উঠতে পারছি না এখনো। ইচ্ছে করলেই আমার মোহাম্মদপুরের ফ্ল্যাটের নির্জনতায় রুম্পার শরীরের ম্যাপটা দেখে নিতে পারতাম। নিউজার্সি থেকে ফেরার আগেই মা- বাবাকে ফোনে জানিয়েছিলাম বাংলাদেশে এসে এবার খুলনায় না গিয়ে ঢাকায় নিজের ফ্ল্যাটেই উঠবো আমি।

পার্থ খুব সুন্দর একটা বাবু – আমার কাছ থেকে এই কমপ্লিমেন্ট শুনে রূম্পা যেন মাটিতে তার পা খুঁজে পেলো । রুম্পাকেই আমি বিয়ে করছি এই ব্যাপারটা নিশ্চিত করতেই যেন ও বলে উঠলো – আমি জানতাম আমার ছেলেকে আপনার পছন্দ হবেই।

শিশুরা সবসময়ই সুন্দর বলে আমি উঠে দাঁড়াই। চলুন এবার যাওয়া ফেরা যাক - বলি আমি ।

আবার কবে দেখা হচ্ছে রুম্পার এই প্রশ্নে ওকে সন্তুষ্ট করবার জন্য তখনকার মত শুধু এটুকুই বলতে পারি ফোনে নিশ্চয়ই যোগাযোগ হবে।

সিঙ্গেল মাদাররা বিয়ে কেন করতে চায় সন্তান থাকার পরেও – কথার এক ফাঁকে রুম্পার কাছে জানতে চেয়েছিলাম। সে কি শুধুমাত্র বাচ্চার ভরণপোষণ , একজন বৈধ অভিভাবকের অনুসন্ধান কিংবা ভবিষ্যতের নিরাপত্তার কথা ভেবেই নাকি এসব ছাপিয়েও একজন নারীর একাকীত্ব বা সঙ্গির প্রয়োজনও অনুভব হয় বলে ? কিন্তু রুম্পার আনস্মার্ট জবাবে ওর গৃহিণীসুলভ মনোভাব এবং তার ছেলে পার্থ ছাড়া আর ভিন্ন কোনো ভাবনা খুঁজে পেলাম না।


একজন মানুষ মা বা বাবা হবার পরেও তার আলাদা একটা পরিচয় সে মানুষ , এই বোধের অভাব অনেকের মাঝেই আমি দেখেছি এবং আজকে রুম্পাও আমাকে হতাশ করলো । শিক্ষার আলো তাহলে মানুষের কোন বোধে প্রকাশ পায় ভেবে সন্দিহান হয়ে পড়ি আমি। একজন ব্যক্তিসত্ত্বা হিসেবে নিজের প্রতি নিজের যতক্ষণ না মনোযোগ এবং ভালবাসা আসবে ততক্ষন পর্যন্ত সে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠবে না। রূম্পা বা রূম্পার মত মেয়েরা শেষপর্যন্ত একটা মাংসপিণ্ড হয়েই জীবনে বেঁচে থাকে, যাদের চোখে থাকে না কোনো স্বপ্ন অথবা গায়ে থাকে না কোনো সবুজ পোশাক যা জীবনের প্রতীক।

৬।

সবুজ বিপ্লব এবং বিজয়


শুধুমাত্র ‘ মেয়েমানুষ ’ হয়ে আমার পক্ষে জীবন কাটানো সম্ভব হয়ে উঠবে না আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আমার ছটফটে স্বভাবটা একমাত্র মুহিব ভাইয়া বাদে আমার পরিবারের আর কারো পছন্দ ছিলো না। আমার মা, নানি, চাচি এবং আমার বড় দুই বোন ভবিষ্যতে আমি যে গৃহিণী হিসেবে অকৃতকার্য হবো এবং স্বামীর সংসারের ভাত আমার কপালে নেই – এই দুশ্চিন্তায় তারা শিউরে উঠতো কিনা জানি না তবে আমাকে রোজ এসব মনে করিয়ে দিতে ভুলতো না। তাই এইচএসসি পাশের পরপরই আমার মা যখন আমার বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা শুরু করলো , তখন আমার প্রিয় পাখিটা এসে জানতে চায় ‘ কি গো মেয়ে, এবার কি করবে? পালাও তুমি। পায়ে যে শিকল পড়লো বলে!’

আমার দীপাবলি কিংবা জয়িতা , নাচোলের ইলামিত্র হয়ে ওঠা হয় নি তবে পালিয়েও যাইনি ঘর ছেড়ে। বাবার সাথে খাবার টেবিল ছাড়া খুব একটা কথা হতো না আমার । তবে উপরে উপরে বাবা কাঠিন্য দেখালেও উনি ছিলেন আমার জন্য আরেক স্নেহের আঁধার। তাই খাবার টেবিলেই বাবাকে বলি –

- আমাকে ঢাকা যেতে হবে ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা দিতে। আপনি সাথে চলেন।
- এত দূর যাবার দরকার কি তোমার ? এখানেই স্থানীয় কোনো কলেজে ভর্তি হয়ে যাও না কেন !

দেখেন না আব্বা , আমি কি পাস কোর্সে পড়ি নাই? আমার কি ভালো বিয়ে হয় নাই ? আর কণা কাউরে না জানাইয়া ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফর্ম আনাইয়া আবার জমাও দেওয়াইছে কারে দিয়া , আব্বা ওরে জিগান – বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুনা আপা নালিশ করে। ভাবখানা এমন যেন তার কথাতেই সব কিছুর সিদ্ধান্ত বা সুরাহা হয়ে যাবে। একটা মেয়ের জীবন বা পরিচয় যে শুধুমাত্র বিয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় তা কবে যে আমার ঘরের মানুষগুলো বিশেষ করে আমার বোন বুঝতে পারবে তা চিন্তা করছিলাম আমি। রিপন ভাইয়া মানে মেজো আপার হাসব্যান্ড জাপান থাকতো বলে রুনা আপা শ্বশুর বাড়ি না থেকে আমাদের বাড়িতেই থাকতো আর আমার জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলছিলো বলে ওর প্রতি ছিলো আমার ভীষণ রাগ।

- দেশের যা অবস্থা , হরতাল- অবরোধ লেগেই আছে। কীভাবে এতদূর যে তোমাকে পড়তে পাঠাই ঢাকাতে … বাবার মুখের কথা শেষ করতে না দিয়েই মা বলতে থাকে –

- তোমার মাইয়ার মতিগতি তো আমার ভালো ঠেকে না। দেখবা রাজনীতিতে জড়াইয়া যাইব, দেশ উদ্ধারে নামব। ওর তো ঝাঁসির রানী না হইলে হইব না! কত কষ্ট কইরা কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন থেইক্যা ওর নাম কাটাইতে আজিজের হাতে পায়ে ধরছিলাম ভুইল্যা গেছো ? ওর কোনো জায়গায় পরীক্ষা দিতে হইব না। ভালো দেইখ্যা একটা পোলা পাইলে বিয়া দিয়া দেও।

ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে কলেজের ডিবেট প্রতিযোগিতা আর বর্তমান রাজনীতি নিয়ে ছাত্রসমাজের ভাবনার পাশাপাশি সাধারণ জনগনের মতামত তুলে ধরতে আমাদের পাঁচজনের যে টিম ছিল তার পেপারওয়ার্ক এবং মাঠ পর্যায়ের কাজেও আমি ছিলাম মা এটা জানে না। তবে জানতে পারলে মা আজিজ ভাইয়ের গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলতো নিশ্চিত। আর মেজো আপার সাথে যে আজিজ ভাইয়ের একটা লুকোচুরি সম্পর্ক ছিলো ঐ কলেজের ছাত্রী অবস্থায় তা মনে হয় এখন মেজো আপা ভুলে যাবার ভান করছে। কত জ্ঞানী জ্ঞানী ভাষণ এখন মেজো আপার মুখে। ভন্ডামি দেখলে গা জ্বলে যায়। সুখে থাকার অভিনয় করতে করতে এখন কোনটা অভিনয় আর কোনটা সুখ নিজেই বোঝে না বোধহয় !

- দেখছেন আব্বা , আপনের ছোট মাইয়াটা একটা ফাজিল। ওর চুপ কইরা থাকা দেইখ্যা বুঝতাছেন না আপনে মানা করলেও ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিবো

- আহ রুনা , দেক না ও পরীক্ষা। আর চান্স না পেলে তো ভর্তি হচ্ছে না।

- জাহাঙ্গীরনগর আর রাজশাহী ইউনির ফর্ম এনেছিলাম। ওখানেও আমার পরীক্ষা দিতে হবে - বলে আমি খেতে থাকি।

আমার স্বপ্ন, মানুষ হয়ে অধিকারবোধের লড়াই বৃথা যেতে দেইনি আমি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পদার্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমার সবুজ বিপ্লব।

৭।
পরিবর্তনের হাওয়া অথবা আলোর মিছিলে


কার্লা চলে যাবার পর যে আমি খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলাম তা নয়। ওর সাথে এক ফ্ল্যাটে থাকতে গিয়ে বরং মনে হতো নিজের ঘরেই নিজেকে অতিথির মতো থাকতে হচ্ছে। ও একটা টেলিকম কোম্পানিতে কাজ করতো বলে ওর ছিল শিফটিং ডিউটি। তাই বেশীরভাগ সময়েই সকালের নাস্তা বা ডিনার আমাকে একাই করতে হতো । তখন খুব রিল্যাক্স বোধ করার কারণেই হয়তো কার্লার কাছে জবাবদিহিতা করতে হতো বেডরুমে কেন খাবারের টুকরো অংশ পড়ে থাকে কিংবা পানির গ্লাসটা এখানে কেন ইত্যাদি নানান কিছু নিয়ে ।

আসলে এত বছর থেকেও আমার পক্ষে ষোল আনা আমেরিকান হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তেমনি করে কার্লারও আমার বাঙ্গালিয়ানা সত্ত্বাকে ভালোবাসা হয়ে ওঠেনি , যা এক সাথে সংসার না করলে বোঝা হতো না। কার্লা অবশ্য আমাকে সবসময় বলতো আমার নাকি Typical Indian Tendency যদিও তার এশিয়ান কালচার, মূল্যবোধ নিয়ে যথেষ্ট ধারণা ছিল না। আমার কিছু আচরণ বা অনুভূতিকে কার্লা ট্রিট করতো কর্পোরেট সোসাইটিতে বসবাসের অনুপযোগী হিসেবে এবং সেই মানবিক আবেগগুলোর কারণেই সে এশিয়ানদের আচরণের দুর্বলতা ভাবতো এবং নিজের প্রভাব, ইংরেজ জাতি হিসেবে ও এশিয়ানদের চেয়ে উচ্চে অবস্থান করছে এসব ভেবেই ও খুব আরাম পেতো । যতদিন যাচ্ছিলো একমাত্র শারীরিক ব্যাপার ছাড়া কার্লা আমার আমার সঙ্গ পছন্দ করতো না আর আমিও ভালবাসাহীন সঙ্গমে ক্লান্তি বোধ করতাম একটা দাম্পত্য সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে। তাই বোধ হয় আমরা আলাদা হয়ে যাই যা প্রকাশ্যে এনেছিলো কার্লা।

এবার দেশে ফিরে নির্জনতা পেতেই খুলনায় মা – বাবার কাছে ওঠা হয় নি। একমাত্র সন্তান হিসেবে হয়তো আমার কাছে তাদের প্রত্যাশাটা বেশীই ছিল কিন্তু একমাত্র ফোনে খোঁজ- খবর নেয়া এবং টাকা- পয়সা দেয়া ছাড়া তাদেরকে অন্য কোনোভাবে আমি সন্তুষ্ট করতে পারিনি এ যাবত পর্যন্ত ।

সঙ্গ ছাড়া মানুষের ব্রেইন যেমন ভোঁতা হয়ে যায় তেমনি করে ভোঁতা হয় শরীরও। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় দেশে ফেরার ক’দিন পরই মাথায় যন্ত্রণা শুরু হলে গিয়েছিলাম বসুন্ধরার এপোলো হসপিটালে নিউরোলজি বিভাগে। ডাঃ অমিত , ইন্ডিয়ান ভদ্রলোকটি বেশ হাসিখুশি স্বভাবেরই ছিলো ।আমার সমস্যার কথা সব শুনে কিছু ওষুধপত্র ধরিয়ে দেবার পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনে নতুন করে প্রবেশের পরামর্শ দিলো এবং সাথে দিয়েছিলো ইসিজি, সিটিস্ক্যান জাতীয় কিছু পরীক্ষা।

সেখানেই ওয়েটিং রুমে বসে পত্রিকার পাতা ওলটাচ্ছিলো কণা। তবে পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে ভালো , মন ফুরফুরা করা টাইপের কোনো খবর যে ছিলো না তা কণার দীর্ঘশ্বাস ফেলে পত্রিকাটা পাশে সরিয়ে রাখতেই বুঝতে পারছিলাম। যদিও আমার চোখ কণাকে দেখার পাশাপাশি সেখানকার টিভি স্ক্রীনে এনিমেল প্ল্যানেট চ্যানেল দেখে দেখে বোর হচ্ছিলো ।

- এক্সকিউজ মি স্যার, মিস্টার অমিত উইল বি লেট ডিউ টু আ সিরিয়াস অপারেশন। উই আর ভেরি স্যরি ফর ইওর ইনকনভিনিয়েন্স। এসিস্ট্যান্ট মেয়েটির কথা শুনে কণা খুব বিরক্ত হয়ে জানালো ফোনে যখন ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়েছিলো তখন হসপিটাল থেকে আমাদের জানিয়ে দেয়া উচিত ছিলো ডাক্তারের অপারেশনের শিডিউল দেয়া আছে। আর কম্পিউটারাইজড হসপিটালগুলোর এটাও জানা উচিত আমাদের সময়ের মূল্য আছে, অফিস ম্যানেজ করে তবেই আমাদের বের হতে হয়।

- স্যরি ম্যাম, উই এপোলাইজড টু ইউ হার্টলি– বলেও এসিস্ট্যান্ট মেয়েটি কণাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না।

- ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড , টিল দেন ইউ ক্যান এনজয় নেসক্যাফে বলে কণাকে ওয়েটিং রুমের কর্নারে রাখা কফি মেশিনটি দেখালে কণা বলে

- আরে বলবেন না , সময়ের মুল্য নিয়ে দেখি না কাউকেই সিরিয়াস হতে। বিরক্ত লাগে খুব।

এভাবেই কথার সূত্রপাত কণার সাথে এবং ডাক্তারের আসার আগ পর্যন্ত এখানে বসে থাকার চেয়ে বাইরে হেঁটে আসলে মন্দ হয় না জানাতেই কণা রাজি হয় বলে আমরা হসপিটালের বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বসুন্ধরা বারিধারার যে কিছু জমির প্লট আছে ওখানে গিয়ে থামি।

কণা সংস্কারগ্রস্ত কোনো মেয়ে ছিলো না কিংবা ধর্মভীরুও নয়। সেদিন সেদিন হাঁটতে হাঁটতে ওর সাথে আমার বেশী কথা হয় নি। তবে ওর সাথে হাঁটতে হাঁটতে এক ফাঁকে মনে হয়েছিলো দেশে ফিরে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন না দিয়ে ‘ বন্ধু চাই ’ বিজ্ঞাপন দিলে ভালো হতো বরং। কয়েকবছর আগে আরমান ভাই বান্ধবী চাই বিজ্ঞাপন দিয়েছিলো নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে ছুটি কাটাতে এসে। বাংলাদেশে তার যে সময় ভাল কেটেছিলো তা উইকেন্ডের পার্টিতে যোগ দিলেই বুঝতে পারতাম। তবে আসল কথা হচ্ছে এই যে আমি মাংসসর্বস্ব মানুষ নই । তাই কণার সংক্ষিপ্ত সব উত্তরে বা ছোট ছোট দুই একটা বাক্যে নিজের অজান্তেই ঝলমলে একটা রোদ্দুরের গন্ধ পাচ্ছিলাম, আকাশটাকেও মনে হচ্ছিলো নীচে নেমে এসেছে অনেকখানি যেন চাইলেই ছুঁয়ে দেয়া যাবে। গাছের পাতাগুলোও সবুজ আর প্রানবন্ত লাগছিলো বলেই কণাকে বলে ফেলেছিলাম সবুজ রঙের লুকোচুরি খেলা দেখতে বেশ লাগে আমার।

কথায় কথায় কণা জানিয়েছিল ওর মাইগ্রেনের ব্যথাটা বাড়ায় ডাক্তারের কাছে এসেছিলো চেক করাতে।

- হুম , মাইগ্রেন একটা ভয়াবহ যন্ত্রণারই নাম বটে বলেছিলাম আমি। মন- মেজাজের সুস্থতা অসুস্থতার সাথে মাইগ্রেনের চেহারা রঙ বদলায় – আমার এই কথা শুনে কণাও তাতে সম্মতি জানায়।

আমি কোনো উত্তর করি না । বদলে ভাবি – একটা মরুভূমির এপ্রান্তর ওপ্রান্তর জুড়ে যে বিশাল সীমারেখা , সেখানে অনেক কিছুই হয়তো অংকিত আছে না পাবার ভাষায় যেরকম করে একজন মৃত মানুষের হাতের রেখায় থাকে না কোনো সবুজপাতা কিংবা সোনালী লতা-পাতায় থাকে না শিশিরকণা বা জলের স্পর্শ। তবুও কি মরুভূমি গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে না বাতাসে কেঁপে কেঁপে সেও একটু সবুজ হয়ে উঠবে , রাত্রির নীল আলো ঢেউ খেলবে তার রুপোলী বুকে !

নিজেকে কণার সামনে একজন মৃত মানুষ মনে হতে থাকে যে কিনা আলোর মিছিলে যেতে চেয়েও ছটফটিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলো অনেক কাল আগেই ।

৮।
স্বপ্নের নির্মাণ এবং পথ চলা


কৈশোরের যে বোধ , মাথা নত না করা অন্যায়ের সামনে এবং মানুষ হিসেবে বাঁচার অধিকার বোধের এই তরঙ্গগুলো আমার মাঝে কীভাবে গেঁথে গিয়েছিল তা খুঁজতে বসতাম তখনই যখন মা আর বোনদের ফোন আসতো বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হবার পরও কেন বাড়ি যাচ্ছি না , ছেলে বন্ধু জুটিয়ে উচ্ছন্নে ভেসে গেছি নিশ্চয়ই কিংবা মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়লাম কিনা ইত্যাদি নানান হীন চিন্তায় তারা বুঁদ থাকতো আর এসব শুনে আমারও মন বিষিয়ে উঠতো আরো বাড়ির ব্যাপারে। তাদের প্রতি দিন দিন অনীহাই তৈরি হচ্ছিলো আমার।

আমার ভাই মুহিব ছিলো খুব সাধারণ স্বপ্ন দেখা টাইপের একজন মানুষ। তাই ডিগ্রী পাসের পরপরই ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিলো । ওর অবশ্য ছোট একটা দুঃখ ছিলো সুমি আপাকে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে পারেনি বলে। আমার এই ভাইটা সেই ছোটবেলা থেকে আজ অবধি আমার একটা খোলা জানালা হয়েই আছে আমাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর একজন হচ্ছে আমার বাবা। দেশের বাইরে থেকে মাঝে মাঝে ফোন করে মুহিব ভাইয়া আমাকে বলতো ও একেবারেই পাখি হয়ে গেছে। তাই এতো দূরত্ব অতিক্রম করে ওর বাংলাদেশে আর আসতে ইচ্ছে করতো না। সুমি আপাকে বিয়ে করতে না পারার পেছনেও কারণ ছিলো আমার মেজো আপা আর আমার মা কারণ সুমি আপাকে তাদের পছন্দ ছিলো না । কেন যে তারা অমন করতো কে জানে!

আমার বাবার মাঝে লুকিয়ে ছিলো একজন গভীর সত্ত্বার মানুষ আর এই সত্ত্বাকে অপরিসীম ধৈর্যে সবার অগোচরে লালন করে কি করে মায়ের মত বিপরীত মনের একজন মানুষের সাথে দীর্ঘ চল্লিশটা বছর সংসার করলেন ভেবে সত্যিই অবাক লাগতো । সেবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি না গিয়ে বান্ধবী লামিয়াদের বাড়িতে কাটিয়েছিলাম সময়টা। হলে ফেরার পর বাবার একটা চিঠি পেলে অমঙ্গল আশংকায় বুকটা খালি খালি লাগলেও চিঠিটা মেলে ধরেছিলাম চোখের সামনে –

পার্বতীপুর


স্নেহের কণা,

আমার চার ছেলে- মেয়ের মাঝে তোমার মানসিক গড়ন একেবারেই আলাদা এবং তুমি খুব সংবেদনশীল বলেই জানি। আমিও খুব অন্তর্মুখী মানুষ তুমি জানো । তাই ঘরে কারো সাথেই আমার তেমন বাক্য বিনিময় হয় না। তবে তোমার মায়ের আর বোনদের তোমাকে ঘিরে সন্দেহ বাতিকগ্রস্ততা এবং অকারন দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করতে দেখে তোমাকে ফোন না করে চিঠি লিখলাম। কারণ ফোনে এতো কথা আমি হয়তো তোমাকে গুছিয়ে বলতে পারতাম না।

আমি , তুমি বা আমরা মানুষরা কেন বেঁচে থাকি তা কি কখনো ভেবেছ ? জীবনে প্রত্যেকেরই একটা লক্ষ্য থাকে একটা সৌধ গড়ে তোলার , জীবনকে বড়, মহৎ এবং কীর্তিময় করে তোলার জন্য আমরা প্রতিনিয়তই স্বপ্ন দেখি। মনে রেখো যত দীর্ঘজীবন তুমি পাবে তোমার সাফল্য বা ব্যর্থতাও তত দীর্ঘ হবে।

সংশয় বা হতাশা কখনো আলগোছে মানুষের চিন্তা- চেতনায় ঢুকে পড়লে চলার পথটা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে। তখন হয়ত বেঁচে থাকবার বা জন্মাবার কারণ নিয়ে ভাবতে গেলে একটাই উত্তর আসবে – জানি না কেন বেঁচে আছি। কোনো কারণ নেই , কোনো উদ্দেশ্যেও নেই - এরকমটাই মনে হতে পারে।
তোমাকে এসব বলবার অর্থ আশা করি বুঝতে পেরেছো । তোমার জীবনটা তোমার , প্রত্যেকেরই অধিকার আছে নিজের মত করে বাঁচার। তোমার মায়ের কাছে প্রায়শই শুনতে পাই তুমি নাকি তোমার জীবনটা একলাই কাটাতে চাও। এখনো তুমি মাস্টার্স শেষ করোনি। হয়ত শেষ পর্যন্ত বাকী জীবনটা তুমি একা থাকার সিদ্ধান্তে নাও থাকতে পারো । তবে বাবা হিসেবে এটুকু বলবো , যে সিদ্ধান্তই তুমি নাও না কেন কখনো যেন তোমার মাঝে আফসোস না কাজ করে নিজের কৃতকর্মের জন্য।

তোমার বহির্মুখী মনে স্থিরতা আসুক, তুমি থিতু হও তোমার চিন্তায় এবং কাজে।
পারলে বাড়ি এসে কিছুদিনের জন্য ঘুরে যেও।
- তোমার বাবা


ভোরের হলদে আলোর গুড়োয় বাবার চিঠিটা আমাকে এক নাম না জানা সৌরভ দিয়েছিলো আর চোখের কোলটা একটু ভিজে উঠেছিলো আমার বাবার বিরহী সত্ত্বার জন্য।

মাস্টার্স ফাইনালের পর পার্বতীপুর কিছুদিনের জন্য বেড়াতে গেলেও স্বাবলম্বী হবার তাগিদে জীবিকার অন্বেষণে ঢাকা চলে এসেছিলাম পায়ের বেড়ীবাঁধ পড়ানোর চক্রান্ত থেকে মুক্ত হয়ে। মা বারবার বলেছিল আমার মুখ আর দেখতে চায় না। আমারও অভিমানে চার বছর হতে চললো আর ওমুখো হওয়া হয়নি ।

আমি আমার চিন্তায় স্থির ছিলাম। যদিও আমাদের আর্থিক অবস্থা মুহিব ভাইয়া বিদেশ যাবার আগেও বেশ ভাল ছিলো তবুও নিজের উপার্জন যে একটা মানুষের জীবনে বাড়তি আনন্দ যোগ করতে পারে তা বেশ উপভোগ করছিলাম নিজে যখন মহাখালির ব্র্যাক সেন্টারে জয়েন করলাম হেলথ প্রোজেক্টে ফ্লোর ম্যানেজার হয়ে।

৯।
সবুজের হাতছানি


বাংলাদেশের অভিভাবকরা তাদের মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে পাত্রের শিক্ষা, পরিবার , তার চরিত্রগত দিক এসব দেখার চেয়ে দেখলাম তারা আর্থিক নিরাপত্তা এবং আমেরিকান ভিসাকেই গুরুত্ব নিয়ে দেখছে। এক্ষত্রে পাত্রের আগের একটি বিয়ে থাকলেও তা দ্বিতীয়বার বিয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না এবং আমেরিকান পাসপোর্টের এমনই মাজেজা যে এক্ষেত্রে অবিবাহিত মেয়েদের ভিড়ই ছিল বেশী।

এর মাঝে রূম্পার সময়ে- অসময়ের ফোনে যথেষ্টই বিরক্ত হচ্ছিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে এইসব পাত্রী আর অভিভাবকদের আগ্রহ খালি ঘুরে ফিরে একটা দিকেই যাচ্ছিলো – বিয়ের কতদিন পর তারা আমেরিকা যেতে পারবে!

প্রথম পরিচয়ে কারো ফোন নাম্বার বিশেষত মেয়েদের ফোন নাম্বার চাওয়া শোভন নয়। তবে সেদিন শেষপর্যন্ত হসপিটালে ডাক্তার দেখিয়ে কণার কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় ইচ্ছাকৃতভাবেই কণার আগ্রহ বোঝার জন্য বলেছিলাম –

আশা করছি আবার আপনার সাথে কথা হবে। সে পর্যন্ত ভাল থাকবেন সবুজরঙা ‘কণা’।

তখন হয়তো ভদ্রতা করেই কণা ওর ভিজিটিং কার্ডটা এগিয়ে দিয়েছিলো। বলেছিলাম ওর সাথে যোগাযোগ করবো কিন্তু করা হয়ে ওঠেনি। আসলে আমি ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করিনি। ভয় পাচ্ছিলাম। পুড়ে যাবার ভয়।

দেশে ফেরার পর আমার ঘুম হতো না ভালভাবে। আর বুঝেও পেতাম না ঠিক কোন সময়টায় ফোন করলে কণাকে বিব্রত করা হবে না। হুট করেই ক’দিন আগে সকাল সাতটার দিকে কণাকে ফোন দিয়ে বেশ বিব্রতভাবেই নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাই ওর ঘুম ভাঙ্গালাম কিনা। যদিও ও জানালো ওর ঘুম ভেঙ্গেছে আগেই বিছানায় গড়িয়ে নিচ্ছিলো কিন্তু ওর ঘুম ঘুম আদুরে কণ্ঠে বেশ বুঝতে পারি আমার ফোনেই ওর ঘুম ভাঙলো মাত্র।

- বাহ, আপনি তো বেশ আর্লি রাইজার বলে সপ্রতিভ হয়ে ওঠার চেষ্টা করে কিংবা ঘুমের রেশ কাটতে ও হয়তো বিছানায় উঠে বসে।

- আসলে কখন ফোন দিলে আপনাকে ঠিক ফ্রী পাওয়া যাবে বুঝতে পারছিলাম না বলি আমি। তাছাড়া এমনিতেও আমার ঘুমের সমস্যা কিংবা ট্রাভেলজনিত ব্যাপার সব মিলেমিশেই এই সক্কালবেলাতেই ঘুম ভেঙে যাবার কারণ।

- হুম বলে চুপ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ কণা। সকালে না আমার মুড আসলে ঠিক থাকে না একমাত্র ছুটির দিন ছাড়া , বুঝলেন নির্ঝর ? সকালের ঘুমটা আমার খুব প্রিয় কিনা – এটুকু বলার পর শুনতে পাই কণা আবার হাই তোলে।

আমি আসলে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না কি কারণে কণাকে ফোন দিয়েছি বা এবার আমার ফোনটা রাখা উচিত কি না। একটুপর ওকে নিশ্চয়ই অফিস দৌড়োতে হবে হয়তো । আমি রেখে দিতে চাইলে কণা জানায় অফিস ছুটির পর সময় নিয়ে কথা বলতে পারবে। আমি ওর ছুটির সময় আর লোকেশন বুঝে নিয়ে ফোন রাখি।

সন্ধ্যা ছয়টার আগেই আমি কণার অফিসের কাছে পৌঁছে যাই। কণা যদি আমার কাছে জানতে চায় ঠিক কি কারণে আমি ওর কাছে এসেছি বা ফোন দিয়েছিলাম সকালে তাহলে এর সঠিক উত্তর আমি আমি দিতে পারবো না। তবে ওর কথা ভাবলেই যে আমার মাঝে একটা ভাল লাগার বুদবুদ তৈরি হয় সে কথাও ওকে বলা নিশ্চয়ই এতো সহজ নয় আমার জন্য।

কণা আমার গাড়িতে উঠলে ’পরে ওর হোস্টেলের পথে ড্রাইভ করতে থাকি উত্তরার দিকে। ততক্ষণে আমাকে জিজ্ঞেস করে করে কণার জানা হয়ে যায় এবার দেশে আমি অনেকদিনের জন্য এসেছি এবং আমার বাবা- মায়ের কথা, খুলনায় কাটানো আমার ছেলেবেলার কথা।

গাড়িতে আমি যদিও কম কথা বলছিলাম কিংবা বলা যেতে পারে আমার কথাগুলো কণার কাছে এসে হারিয়ে যাচ্ছিলো । কণা মাঝে একবার জানতে চায় বাংলাদেশে কেন একেবারেই চলে আসছি না। এইবারের ছুটি কাটানোর মাঝে নির্ভর করবে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকবো কি না। সাথে ওকে আরও জানাই পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনের কথা , আমার প্রাক্তন স্ত্রী কার্লার কথা। আমার সংক্ষিপ্তভাবে বলা সব কথার মাঝেও যে একটা দীর্ঘশ্বাস বা আমার অতৃপ্ত বোহেমিয়ান সত্ত্বাটা তাকে ছুঁয়ে দিতেই যেন কণা জানতে চায় আমার ছুটে চলা শেষ হবে কবে?

আমার সেই উত্তর জানা নেই বলেই কণাকে জিজ্ঞেস করি ওর চাকরী জীবন কেমন উপভোগ করছে। কলকল করে কণা হয়ত অনেক কিছুই বলে গেলো যার সব কথা স্পষ্ট ভাবে আমার কানে ঢুকলো না। বরং আমি ওর সজীবতায় বুঁদ হয়ে থাকি। এ যুগের মেয়েদের মাঝে আমি অনেক ফ্রাস্ট্রেশন দেখি কিন্তু কণা যেন সে সবের বাইরে।

- কণা, সেদিন কিন্তু বসুন্ধরার ছবির মত সাজানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমি আপনার সম্পর্কে ভুল কিছু বলিনি । আপনার মাঝে আসলেই কিন্তু একটা সবুজ আলো আছে !

- হুম , আপনার এই কথাটা সেদিন রাতে আমাকে কিন্তু নিজের রুমে ফেরার পর ভাবিয়েছিলো

- সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন?

- ছেলেবেলায় আমার একটা স্বপ্ন ছিল বটে মানুষ হিসেবে বাঁচবো । উত্তরণের পথ যেন তথাকথিত নারীসুলভ সংকীর্ণতায় শৃঙ্খলিত না হয়ে যায় পরিবারের মানুষ দ্বারা সেজন্য ঘর ছেড়েছি চার বছর হয়ে গেলো । সে স্বপ্নটা পরিনত বয়সে এসে এখনো আছে একই রকম – স্থির, অবিকৃত এবং একাকী। বলে কণা চুপ করে থাকে।

বাইরে ব্যস্ত নগরী , রাজপথের আলোর ফোয়ারা , বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড গাড়ির শীতল কামরার কাঁচ ভেদ করে ভেতরে আসতে পারে না বলেই আমাদের নৈঃশব্দ্য গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে থাকে। কণার উচ্চারিত শেষ তিনটা শব্দ নিজের ভেতরে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে থাকি - স্থির , অবিকৃত এবং একাকী।

কণার একাকী জীবনকে স্বাগত জানাবো কিনা ভাবতে থাকি। কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারি না । এই প্রথম পরিণত বয়সে এসে একেবারেই অন্যরকম এক অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হই আমি। বেদনা কাকে বলে টের পেতে থাকি , হয়তো এই অনুভূতিকেই বলে ' পুড়ে পুড়ে যাওয়া '। আমার মনে হতে থাকে কণা কোচর ভর্তি কদমফুল নিয়ে আমার পাশেই বসে আছে । ভীষণ ইচ্ছে করে আমার মৃত্যুকাতর নিঃসঙ্গ হাত দুটি বাড়িয়ে ওকে বলি ফুলগুলো আমার হাতে তুলে দিতে।


আমি বেঁচে উঠতে চাই। ঘুমহীন নিঃশব্দ রাত্রি , চার দেয়ালের ঘন তমিস্রা - এ সব যেন মৃত্যুর মতো এক ভয়ংকর চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । কণার তেজস্বী অথচ কোমল ত্বক, মেঘচুল আর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বিড়বিড় করে বলতে থাকি - আমি আবার ঠিক বেঁচে উঠবো তোমাকে নিয়ে। প্রাণপণে চাইতে থাকি আমার এই কথাগুলো ইথারে ভেসে ভেসে কণার কাছে চলে যাক। ও জানুক। যেভাবেই হোক , আমার যে বাঁচতে হবে ।

১০।
আমার প্রজাপতি হয়ে ওঠা এবং অতঃপর … … …


ইদানীং বাবার কথা খুব মনে পড়ছে আমার। আসলে বলতে চাচ্ছিলাম অনেক বছর আগে আমাকে লেখা বাবার চিঠিটার কথা মনে পড়ছে খুব বেশী , যে সময়টায় আমি একরাশ স্বপ্ন নিয়ে একরকম জোর করেই চলে এসেছিলাম শহরে পড়াশোনা করতে। বাবার চিঠির একটা লাইন এই মুহূর্তে বিশেষভাবে একটা মানে হয়ে দেখা দিয়েছে “ হয়ত তুমি তোমার সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারো ”। বাবার ঐ চিঠিটা আমার জন্য ছিলো একটা আলোকবর্তিকার মত , সেই তখন থেকে আজ অবধি।

আসলে প্রেম-ভালবাসা, বিরহ এইসব নিয়ে কখনো মাথা ঘামানোর কথা চিন্তাই হয়নি আমার। কেমন পুতুপুতু টাইপ একটা ব্যাপার মনে হতো আমার। স্কুলে থাকতে তো মারিয়া, বীথি, মণি ওদের কত ক্ষেপাতাম এসব নিয়ে! ওদের ছলছল চোখ আর ছেলে বন্ধুকে লেখা প্রেমপত্র নিয়ে আমি , লাবনী , তামান্না খুব হাসতাম। মনে আছে একবার খুকু ম্যাডামের কাছে বীথীর ছেলেবন্ধুর চিঠি তুলে দিয়ে ওর সেই বয়সের প্রেমে বাঁধা দেয়াতে ওর জন্মের শত্রু হয়ে গিয়েছিলাম।

কয়েকদিন যাবত বিশেষ করে নির্ঝরের সাথে সেদিন অনেকটা সময় কাটিয়ে আমি নিজের মাঝে অন্য এক আমিকে অনুভব করছিলাম যে অনুভবের কথা আগে শুধু বইতে পড়েছিলাম। ওর সাথে পরিচয়ের প্রায় তিন মাস হতে চললো । এর মাঝে আরও কয়েকবার দেখা হয়েছে তার সাথে , ফোনে কারণে- অকারণে কথাও হয়েছে। তবে কথা বলার কারণের চেয়ে অকারণটাই ছিলো বেশী। আর এই অকারণ অনুভবের পুরোটা জুড়েই ছিলো অস্থিরতা। টের পাচ্ছিলাম খুব ধীরে আমার একা থাকার সিদ্ধান্তটা বদলে যাচ্ছে।

গতকাল নির্ঝর জানিয়েছিলো ওর হালকা জ্বর আর মাথা ব্যথায় কিছুটা অসুস্থ বোধ করছে। আজ আমার ছুটি থাকায় ওকে জানাই বিকেলে আমি আসবো ওকে দেখতে।
আহা ! আমি ডুবে যাই যেন প্রত্যাশার অথৈ জলে!

১১।
অসময়ের শ্রাবণধারা এবং শীতবোধের স্থবিরতায়


কণার চোখে আমার বেঁচে ওঠার আশ্বাস দেখেছিলাম বলেই পাত্রীর সন্ধান দিতে আসা ফোন কলগুলো আমাকে যথেষ্ট বিরক্ত করছিলো । যদিও আমি পত্রিকার বিজ্ঞাপনটা ছাপাতে নিষেধ করেছিলাম পত্রিকার অফিসে ফোন করে । তবে এর মাঝে রূম্পার শারীরিক আবেদনময় ফোন কলগুলো রাতের বেলায় এড়ানোটাও আবার আমার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো । মনের আর শরীরের ক্ষুধাবোধ যে একই রেখায় চলে না তা বোঝার জন্য যথেষ্ট জ্ঞানী হবার প্রয়োজন নেই। পত্রিকায় পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনের সাথে মোহাম্মদপুরের আমার এই ফ্ল্যাটের এড্রেসটা ছিল বলে রূম্পাকে ফোনে শরীর খারাপের অজুহাতে দুর্বলভাবে এড়াতে চাইলেও দুপুরে ওর বাজানো ডোরবেলের শব্দে ঘুম ভাঙে আমার।

মানুষের জীবনে জাগতিক চাহিদা পূরণ হলে কিংবা জাগতিক বোধের বাইরে যখনই কোনো অপার্থিব বোধের জন্ম হয় তখনই বোধ হয় মানুষ অসুখী হয়ে পড়ে, শুরু হয় তার অন্তর্দহন। কেউ পোড়ে সঙ্গোপনে আর কেউ বা ভালবাসে পোড়াতে। আমি সঙ্গোপনে পুড়ি বলেই আমি ছিলাম দুর্বোধ্য; কার্লা বা রূম্পা এবং ক্ষণস্থায়ীভাবে যেসব নারীরা এসেছিলো আমার জীবনে তাদের কাছে ।


তাই রূম্পা আমাকে অঝোর ধারায় কোনো স্বার্থ নিয়ে এই নির্জন ফ্ল্যাটে স্নাত করাতে এলেও আমার মানসিক দহন বা অতৃপ্তিকে সে নেভাতে পারে না বিন্দুমাত্র। বিছানায় আমার পাশে রূম্পার নগ্ন শরীরটা যখন ওর উপর উপগত হয়েছিলো তখনও শুধুমাত্র রূম্পা আমার শারীরিক উত্থান দেখেছিলো যা শরীরের চাহিদা মিটিয়েছিলো মাত্র। অবশ্য তা বোঝার বোধ এই মেয়ের নেই বললেই চলে।

বিছানার সাইড টেবিলের উপরে রাখা মোবাইলের শব্দে আমার ভাবনা যখন ছুটে গেলো দেখি রূম্পা গুটিসুটি মেরে আমার বুকের ভেতর সেঁধিয়ে যাবার পায়তারা করছে। রূম্পা শুধুমাত্র একটা নারী দেহই লাভ করেছিল। তাই ভালবাসাহীন একটা সঙ্গমকেই সে অধিকারবোধের চূড়ান্ত স্বীকৃতি ভেবে নিয়ে যখন মোবাইলের রিঙের শব্দে বিরক্তি প্রকাশ করলো ততক্ষণে ফোনের অপরপাশে কণা জানায় ও বিকেলে আসছে আমার বাসায়।

কণার মানসিক সান্নিধ্য পাবার পর অন্য কোনো মেয়ের নিঃশ্বাসের শব্দও আমার ভাল লাগছিলো না আসলে। বরং এটা ভেবে সান্ত্বনা বা অপরাধবোধ থেকে মুক্তি খুঁজছিলাম রূম্পার সাথে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া শারীরিক ব্যাপারটা জীবনের একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র যা একটা শাওয়ার নিলেই সব ক্লেদ ধুয়ে মুছে যাবে। আমি কণার কাছে কোনো কিছু নিয়েই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম না তবু কেন যেন অস্বস্তি হচ্ছিলো আমার। কণার কথা ভাবলেই আমার ভেতর থেকে একটা আশ্চর্য নীল পাখি ডানা মেলে উড়তে চায়।

আমি এখন একা থাকতে চাচ্ছি রূম্পা। তুমি যাবার সময় দরজাটা টেনে ভেতর থেকে লক করে দিয়ে চলে যেও বলে ওকে কথা বাড়ানোর সুযোগ না দিয়ে শাওয়ার নিতে আমি ফ্রেশরুমে ঢুকে পড়ি। এই মুহূর্তে ওকে অসহ্য লাগছিল।

আমি জানি না শুধুমাত্র আমি অসুস্থ বলেই কণা আমাকে দেখতে আসছে কি না কিংবা বিশেষ কিছু বলবে কি না । এক অসহনীয় অপেক্ষার ছটফটানিতে ডুবে গেলেও আমার কণার কথা ভাবতে ভালো লাগছিলো বাথটাবের পানিতে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে আমি অনুভব করতে থাকি আমার বুকের কাছটায় কণার গরম নিঃশ্বাস। আর ঠিক তক্ষুনি আমার মৃত বিমর্ষতার সব রঙ , ছায়ারা কণাকে আলিঙ্গন করে সবুজ হয়ে ওঠে। বাস্তব- অবাস্তবের ভেদ মুছে যায়।

শাওয়ারে ঠিক কতক্ষণ সময় পার হয়েছে হিসেব করে উঠতে পারি না। ডোরবেলের আওয়াজে সম্বিত ফিরলে ড্রেস-আপ করে বের হয়ে দেখি রূম্পা গেট খুলে নিজে বের হলো আর গেটের বাইরে একজোড়া চোখ স্থির হয়ে আমাকে দেখছে। আ ফাকিং বিচ রূম্পা। ওর কলজেটাকে পেলে ছিঁড়ে খুঁড়ে মাটিতে পুঁতে রেখেও শান্তি হতো না আমার সে সময় ।

কণার স্থির ঐ দু’চোখে কি ছিলো ? ঘৃণা , রাগ কিংবা হয়তো আরক্ত কোনো অভিমান বা স্বপ্ন ভঙ্গ। কণা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো অদ্ভুত নিষ্পলক চোখে।

এরপরেই কণা দৌড়োতে দৌড়োতে লিফট ছেড়ে উদভ্রান্তের মত সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। আমি খোলা দরজার বাইরে এসেও নির্জন সিঁড়িতে ওর চটির ফটফট আওয়াজ পেতে থাকি। আমি জানতাম ওকে ফেরানো যাবে না তাই একবারই বলেছিলাম মাত্র ‘ কণা, দাঁড়াও। শুনে যাও।’

কণা দাঁড়ালে, আমার কথা শুনতে চাইলে কি বলতে পারতাম ওকে? ওর চোখ দেখেছে রূম্পাকে বের হতে আমার ফ্ল্যাট থেকে তা তো আর মিথ্যে নয়। আমার ইচ্ছে হয় কণার চোখের মধ্যে এক প্রহর কেঁদে নিতে।

কিছুক্ষণ পর সূর্য অস্ত যাবে। বিকশিত চাঁদ উঠবে আমার নির্জন ফ্ল্যাটটিকে গ্রাস করতে আমাকে সহ। আমি ডুবে যাই হতাশার চোরাবালিতে। নাম না জানা এক বোধ এসে আমাকে স্থবির করে রাখে। চোখের কোলে বড্ড অভাব বোধ করি সে সময় দু’ফোঁটা নোনা জলের।

( সমাপ্ত)

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৮
৫৮টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×