somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেপাল ভ্রমন - (পঞ্চম পর্ব)

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব প্রকাশের পর

কাকরভিটা থেকে কাটমুন্ডুর উদ্দেশ্যে বাস ছাড়তেই আমি আমার পাশের সিটের যাত্রীর সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম। ১৭/১৮ বছরের তরুন। নামটা ঠিক মনে নেই। কাটমুন্ডু যাচ্ছে কিছু একটা করার জন্য। বেকার ছেলে। আর্থিক সমস্যা থাকায় গ্রামের বাড়ীতেই এতদিন কাজ কর্তো। এখন বাড়ীতেও কাজ নেই তাই কাটমুন্ডু যাচ্ছে। আমার সাথে খুব ভালো ভাবেই ইংরেজীতে কথা বল্ল। জিজ্ঞেস কর্লাম, লেখাপড়া কতদূর করেছো?
বল্ল, ক্লাস ফোর ফাইভ।
বল্লাম, ক্লাস ফোর ফাইভ পড়েই এত ভালো ইংরেজী জানো, আমাদের দেশেতো এমএ পাশ করেও এত ভালো বল্তে পার্বেনা।
ও মিটিমিটি হাস্লো।
এর পর ধান, গম, পানি, চাল থেকে শুরু করে কোনটাকে নেপালী ভাষায় কি বলে খুটিয়ে খুটিয়ে সব জিজ্ঞেস কর্লাম।
ও সব কিছুর উত্তর দিল। এভাবে বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা। চমৎকার পাহাড়ী এলাকা দেখতে দেখতে মন ভরে যাচ্ছিল।
নেপালে ট্রেন আছে? ওকে জিজ্ঞেস কর্লাম।
বল্ল, না নেপালে কোন ট্রেন নাই। বেশীর ভাগ এলাকা পাহাড়ী বলে কোন চলাচলের কোন সুযোগ নাই।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। বাস একটা খাবারের দোকানের সামনে এসে থেমে গেল। রাতের খাবারের জন্য বিরতী। এর মধ্যে কোন ক্ষুধাও পেয়ে গেল বেশ।

আমি হোটেলের মধ্যে ঢুকে গেলাম। টিনের চাউনিতে কাঠের বেড়ায় তৈরি ঘর। হাত মুখ ধুয়ে খাবারের মেনু দেখতে কাবারের সামনে গেলাম। হট ইস দিস, প্রত্যেকটা খাবারের দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করতে থাকি। একটা মাংশের বল দেখিয়ে জিজ্ঞেস কর্লাম, হট ইস দিস
ইট ইস কুকুরা মাসা, উত্তর দিল দোকানী।
আমার ভিতর ভয় এসে গেল। কোন মাংশই আর খাবোনা। নিশ্চয়ই কুকুরের মাংশ হবে কুকুরা মাসা। আমি মাছই খাবো। কোনটার কি নাম বল্ছে ভাল ভাবে না জিজ্ঞেস করেই একটি মাছের অডার কর্লাম। এর মধ্যে আমার পাশের সিটে বসা সেই ছেলেটা এলো। তাকে জিজ্ঞেস কর্লাম, কুকুরা মাসা কি?
ও বল্ল, কুকুরা মাসা হচ্ছে মুরগীর মাংশ।
আমিতো মনে মনে হাসতে হাসতে শেষ। আমার মুখ দেখেও বোঝা যাচ্ছিল যে আমি হাসছি। ওকে কিছুই বুঝতে দিলামনা। এরমধ্যে ও কুকুরা মাসার অডার করেছে। এসেছেও গেছে ওর প্লেটে মুরগীর মাংশ। খাওয়া শেষে আবার এসে গাড়ীতে বস্লাম। গাড়ী আবার কাটমুন্ডুর দিকে চল্তে শুরু করেছে।

চাদনী রাতের চাঁদের আলোতে নেপালকে দেখতে দেখতে যাচ্ছি। হঠাৎ গাড়ী থেমে গেল। গাড়ী নষ্ট। ঠিক করে তারপর আবার গাড়ী চলবে। আমরা সবাই গাড়ী থেকে নেমে গেলাম। যে যেভাবে পার্ছে জল বিয়োগ কর্ছেন। কেউ কেউ সিগ্রেটের ধোয়া ফুক্সেন। এসময় গাড়ী থেকে ৪/৫ জন মেয়ে নেমে এল। আমি জল বিয়োগ করে যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম প্রায় সেখানেই দাড়িয়ে আমি মেয়ে গুলো এসে আমার কাছেই দাড়ালো। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি আর চেষ্ঠা কর্ছি কখন এদের সাথে কথা বল্ব এবং পরিচিত হবো। হঠাৎ ২জন মেয়ে আমার প্রায় কাছাকাছিই পিছাব করার জন্য বসে পড়লো। আমিতো লজ্জায় শেষ তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সড়ে এলাম। ভাবলাম, বাংলাদেশে হলে এমন করে পার্তো এই মেয়ে গুলো।

আধা ঘন্টা পর গাড়ী কোন রকমে ঠিক হয়েছে। বাকী টুকু ঠিক করা হবে কাছাকাছি কোন বাজারে গিয়ে। আমরা আবার গাড়ীতে উঠে বস্লাম। গাড়ী ধীর গতিতে চল্তে চল্তে কোন একটা বাজারে এলো আবার সবাই নেমে গেলাম। সেই মেয়েগুলোও নাম্লো। বাজারের দোকান গুলো তখনও খোলা ছিল। রাত তখন সাড়ে ১০টার মতো। বেশীর ভাগ দোকানগুলোতেই দেখলাম মেয়েরা দোকান কর্ছে। একটা দোকানে গেলাম। একজন ১৫/১৬ বছরের মেয়ে দোকান চালাচ্ছে। মুদি ও মনোহরী দোকান। তার কাছে কিছু প্রশ্ন কর্বো কর্বো করে কর্তে পার্ছি। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা ভয় লাগ্ছিল। শেষে জিজ্ঞেস কর্লাম, হট ইস ইউর নেম?
সে কিযেন বল্ল কিছুই বুজ্লাম না।
বল্লাম, আই ডোন্ট নো নেপালী।
সে আবারও নেপালী ভাষায়ই কি যেন বল্ল।
একটা চকেলেটের প্যাকেট দেখিয়ে জিজ্ঞেস কর্লাম, কিত্না প্রাইজ?
আমাকে যা বল্ল আমি বুজ্লাম না। শেষে হাতের ইসারায় বোঝানো হলো। আমি দাম দিয়ে গাড়ীতে এসে আমার পাশের সিটের যাত্রীকে খুজ্লাম। ভাব্লাম ওকে নিয়ে গেলে হয়তো এখানের কারো সাথে ভালো ভাবে কথা বলা সম্ভব হবে। কিন্তু ও তখন ঘুমের ঘোরে।
ওকে আর ডাক্লাম না। আবার নেমে এদিক সেদিক ঘুর্লাম। গাড়ী ঠিক করার কাজ চল্ছে। ড্রাইভারকে দেখলাম তোয়ালে বিছিয়ে রাস্তায় শুয়েই ঘুমুচ্ছে। গাড়ী কখন ঠিক হবে আর কখন আবার যাত্র শুরু হবে বুঝতে পার্ছি না। বাজারের দোকান গুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার আমাদের গাড়ী আছে বলে বন্ধ কর্ছে না। আমি গাড়ীতে এসে বস্লাম। পাশের সিটের ছেলেটি একেবারেই ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে। আমি ও আরাম করে বসে ঘুমানোর চেষ্টা কর্লাম।

--- চলবে ----
ভ্রমণ কাল ২০০৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×