সপ্তম পর্ব পর্যন্ত প্রকাশের পর -----
দুই দিনে কাটমুন্ডুর অনেক কিছুই দেখা হলো প্রায়ই আমার সঙ্গি ছিল প্রহরীর স্কুল পড়ুয়া ছেলেটা। ক্লাস সেভেনে পড়ে অথচ অনেক ভালো ইংরেজী জানে। আমাকে অনেক কিছু ও ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। নেপালের সংস্কৃতি নেপালের নানা তথ্য ও আমায় দিয়েছে। এই দুইদিনে একবারও প্রভা তাদের এই অফিসে আসেনি। তবে প্রফেসর নারায়ন এসে আমার খোজ খবর নিয়ে গেছেন। আমার ভাঙ্গানো নেপালী টাকা ফুরিয়ে গেছে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় আমি ডলার ভাঙ্গাতে পারিনি শেষে প্রফেসর নারায়নকে ১০ ডলার ধরিয়ে দিয়ে ৭০০ টাকা নিয়ে এলাম। সবার কাছ থেকে পোখারা যাবার ভালো লোকেশন নিয়ে পোখারার দিকে রওয়ানা দিলাম।
মাইক্রোবাসে মাত্র ২৫০টাকায় পোখারায় চলে এলাম। মাইক্রোবাস থেকে নাম্তেই দালালদের উৎপাত দেখে কারও সাথে কোন কথা না বলে একটা গলি পথে ডুকে গেলাম। হাটতে হাটতে স্থানীয় ভাষায় হোটেল লেখা দেখে ডুকে পর্লাম। জিজ্ঞেস কর্লাম, ইজ দিজ এ হোটেল?
একজন বল্ল, ইয়া দিজ ইজ এ হোটেল।
আমি থাকার জন্য একটি সিঙ্গেল রুম চাইলাম। একটি মেয়ে ২০/২১ বছর বয়সের হবে, সে আমাকে দোতলায় নিয়ে একটি ডাবল বেডের রুম দেখিয়ে বল্ল, সিঙ্গেল রুম খালিনেই। এই রুম সিঙ্গেল রুমের ভাড়া রাখা হবে। কথা নেপালী ভাষায়ই বলছিল। ইংরেজী বল্তে পারেনা। আমি নেপালী ভাষা বুঝিনা। অন্য একজন নেপালী হোটেল বোর্ডার আমার দোভাষীর কাজ কর্ছিল।
হোটেলটা সম্পূর্ণ স্থানীয় নেপালীদের জন্য। কোন বিদেশীর জন্য নয়। বাইরের সাইনবোর্ড শুধু নেপালী ভাষায় লেখা, কোথাও ইংরেজীতে কিছু লেখা নেই। আমি নেপালী ভাষায় হোটেল লেখাটা কোন মতেই বুঝতে পেরেই ভিতরে ঢুকে পরেছি। কারণ স্থানীয় হোটেলের ভাড়া অবশ্যই সহজলভ্য হবে। হলোও তাই। ডাবল রুম পেয়ে গেলাম মাত্র ১০০টাকায়। অবশ্য সিঙ্গেল রুমের ভাড়াই ১০০টাকা।
মোটামোটি নিশ্চিৎ কর্লাম যে এই রুমটাই আমি নেব ঠিক এই সময়ে দেখলাম পাশেই ৭/৮টি বেডের একটি রুম আমি মেয়েটার কাছে জান্তে চাইলাম ওইটা কিসের রুম?
মেয়েটা বল্ল, ওইটা কমন রুম। একসাথে অনেকজন এখানে থাকে। অন্য লোকজনের সাথে যদি আপনি থাক্তে চান তাহলে ওখানে আপনি থাক্তে পারেন।
জিজ্ঞেস কর্লাম, ভাড়া কত?
বল্ল, ৫০টাকা।
আমি জিজ্ঞেস কর্লাম, ওখানে আর কে কে আছে?
আমাকে সেই বোর্ডারকে দেখিয়ে বল্ল, ওখানে এখন পর্যন্ত আর এক জনই আছে।
আমি দেখলাম সেই আমার দোভাষীর কাজ কর্ছে এবং এর মধ্যেই সে আমার সাথে বন্ধুর মতো ব্যবহার কর্ছে। তার সাথে থাক্তেতো আমার কোন সমস্যা নেই বরং মাঝখান থেকে আমি এমন সস্তায় হোটেল পেয়ে যাচ্ছি আর পাচ্ছি একজন বন্ধুও যার কাছ থেকে নেপাল সম্পর্কে অনেক কথা জানাও যাবে।
আমি তাই মেয়েটিকে বল্লাম, আমি ওই রুমটাতেই থাকবো।
আমার বিছানা গুছিয়ে দিতে একটি মেয়ে এল ১৬/১৭ বছরের। সে আমার বিছানা গুছিয়ে দিলো। মেয়েটির চেহারা খুবই সুন্দর। আমি প্রায় তার রূপে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। জিজ্ঞেস কর্লাম, হোয়াট ইজ ইউর নেইম?
সে বল্ল, স্বরস্বতি, এবং জান্তে চাইল চা খাব? অথবা কফি?
আমি কথাটি ঠিক বুঝতে পার্লামনা। বল্লাম, আমি নেপালী ভাষা জানিনা। আমার সাথে ইংরেজী কথা বল। সে আমার সাথে ইংরেজীতে কথা বলার চেষ্টা কর্ল। কিছুটা হচ্ছিল পুরোটা না। মাঝে মাঝে আমাকে বা তাকে কথা বুঝনোর জন্য অভিনয়ও কর্তে হচ্ছিল।
আমি বল্লাম, কফি খাবো।
স্বরস্বতি নামের মেয়েটা কফি আন্তে চলে গেল।
------ চলবে -------
ভ্রমন কালঃ ২০০৫