somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাসঃ উড়াল পঙ্খি মন - প্রথম পর্ব

১২ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উড়াল পঙ্খি মন
মিজান রহমান শ্রেষ্ঠ

সকালে ঘুম থেকে উঠেই খুব অস্বস্থি বোধ করছি।
এমন কেন লাগছে ঠিক বুঝতে পারছিনা। এসময় আমার পাশে কারো থাকা উচিত। আমাদের একই এপার্টমেন্টের তিনটি বেড রুমে আমরা সাতজন থাকি। আমার রুমে আমি একাই থাকি। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনবে বলে মনে হচ্ছে না। আমি চিৎকার করে শফিক ভাইকে ডাকলাম। শফিক ভাই আমার পাশের রুমে থাকেন।
আমার ডাকে শফিক ভাই এলেন না এলো মামুন নামের আমাদের এই ম্যাচের সবচেয়ে লম্বা ছেলেটি। কিন্তু একি! ওকে এমন দেখাচ্ছে কেন? প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার মামুনকে বেটে খাটো দেখাচ্ছে।
- ‘মামুন তোমার এ অবস্থা কেন?’
- ‘কি অবস্থা ভাই? আপনার কি শরীর খারাপ?’
- ‘তাইতো ছিল। খুবই অস্বস্থি লাগতে ছিল। এখন লাগছেনা কিন্তু তোমার এ অবস্থা কেন?’
- ‘আমার আবার কি অবস্থা?’
- ‘কেন তুমি কিছুই বুঝতে পারছোনা?’
- ‘কই নাতো?’ নিজেকে পরীক্ষা নিরিক্ষা করলো ও।

আমার সত্যিই এখন কোন অস্বস্থি লাগছেনা। বমি বমি ভাব ছিল তাও নেই। মামুনকে দেখার পরই আমি ভাল হয়ে গেলাম। পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি যার উচ্চতা সেই মামুন এক রাতের ভেতর কি করে বেটে-খাটো হয়ে যাবে। এটা কি করে সম্ভব? আমি নিশ্চিত তিন ফুটের সামান্য বেশী হতে পারে। মোটামোটি স্বাস্থ্যবান মামুনের উচ্চতা করে যাওয়ার কারণে ওকে তো মোটা ফ্যাটি দেখার কথা তাও তাকে মনে হচ্ছেনা। কারণ খাটো হওয়ার সাথে সাথে তুলনামূলক ও স্লিম ও হয়েছে। বামনদের সাধারণত যেমন দেখা যায় তেমন না। একজন মানুষ এতো খাটো হলে তাকে বামন বামন মনে হবার কথা। কিন্তু ওকে বামনদের মতো লাগছে না।

ওকে বললাম,‘আমার মশারীটা তুলে দাও।’ ও লাফ দেয়ার মতো ভঙ্গি করে আমার খাটের উপরে উঠলো। খাটো হওয়ার কারণে এমনটি করতে হলো। মশারীর খুলতে গিয়ে মশারীর নাগাল পাচ্ছে না। আমি বললাম, ‘কি ব্যাপার এমন হচ্ছে কেন?’
ও বলল, ‘ধুর! আপনার মশারী এতো উপরে ক্যান?’
আমি বললাম, ‘দেখ এই মশারী কিন্তু এর আগেও তুমি তুলেছো। তখন কিন্তু এমন হয়নি, আজ তুমি খাটো হয়ে গেছো। এক রাতের মধ্যেই তুমি এমন হয়ে গেলে। তুমি কি কিছু বুঝতে পারছোনা?’
- ‘কই না তো?’
- ‘ভালো করে দেখো। তুমি সত্যি সত্যি খটো হয়ে গেছো। এটা কোন সমস্যা না, তুমি চিন্তা কইরো না। মনে হয় হরমোনের কোন পরিবর্তন বা সমস্যার কারণে এটা হতে পারে। আমি তোমাকে ডাক্তার দেখিয়ে দেবো। পিজিতে বড় প্রফেসর আছে আমার পরচিত। শোনো নাই এক রাতের মধ্যেই অনেক ছেলে মেয়ে হয়ে যায় আবার মেয়ে ছেলে হয়ে যায়। ঐরকমই হরমোনের কোন সমস্যা মনে হয়।’
মামুন খাটের উপর টুল তুলে নিয়েছে। টুলের উপরেও যেন মশারীর নাগাল পায় না। ওকে খুব অদ্ভুত ও খুব আকর্ষণীয় লাগছে। ভাবছি ওকে যে ডাক্তরের কাছে নিয়ে যাব লোকজন দেখে কতইনা যেন হাসাহাসি করবে। তারপরও একজন লোকে হঠাৎ করে চোখের সামনে এমন এক সমস্যায় পড়লে তা দেখে বসে থাকবো তা তো হয় না। ওর একটা ভালো সমাধান হোন এটাইতো চাওয়া উচিৎ।
।২।
আমাদের ম্যাচটি একটি বিলাস বহুল এপার্টমেন্টে।
আমিই প্রথম একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলাম। যদিও এখন আমাকে ভাড়া দিতে হচ্ছে না। বলতে গেলে এখন আমি এই এপার্টমেন্টের মালিক। এখানে তিনটি বড় বেড রুম আছে। আছে আলাদা ড্রইং রুম ডাইনিং স্পেস। সুসজ্জিত কিচেন। মোট তিনটি বাথরুম।
এপার্টমেন্টের মালিকের সাথে আমার ছিল বিশেষ সম্পর্ক। কোন আত্মীয়তার সুত্র নয়। তাদের একটি বেড রুম এমনিতেই খালি পড়ে থাকে বলে আমাকে সাবলেটে ভাড়া দিয়েছিল মাত্র দশ হাজার টাকায়। এছাড়া অন্যান্য চার্জের কোন কিছুই আমাকে গুনতে হতো না। ধানমন্ডির এমন এক প্লেসে এমন একটি এপার্টমেন্টের ভাড়া মাসে পঞ্চাশ ষাট হাজার টাকার মতো। আমি শুধু এই একটি রুমই (এটাচ বাথ) ব্যবহার করি, অন্য দুটি বেড রুম, ড্রইং ডাইনিং কিচেন সবই তারা ব্যবহার করছেন আমার প্রয়োজন হয়না।
এখানে ওঠার দুমাস পর এপার্টমেন্টের মালিক মেডিকেল চেকআপের জন্য সপরিবারে দেশের বাইরে গেলেন। বললেন, ২৫ দিন পরই ফিরে আসবেন। সেই যে গেলেন তার আর কোন খোজ খবর নেই। একমাস গেলো, দুইমাস গেলো না কোন খবর নেই। ডেভলপারের লোকজন আসে, সার্ভিস চার্জ মেইনটেনেন্স চার্জ চায়, আমিই দিয়ে দেই। কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল আসে আমি দিয়ে দেই। কেউ তাদের খোজও করে না। ছয় মাস পরও যখন তাদের খবর নেই তখন বাইরের টুলেট বোর্ডে টুলেট টানিয়ে দিলাম। ভাড়াটিয়া আসে পছন্দ হয় কিন্তু সাবলেটে থাকার মতো কাউকে পাইনা। আর আমি তো এপার্টমেন্ট ছেড়ে যেতে পারিনা। শেষে কয়েকজন মেচ মেম্বার জোগার করে বাকী দুটো বেড রুম ভাড়া দিয়ে দিলাম। দুইরুমে ছয়জন ভাড়াটিয়া। এপার্টমেন্টটা মেচ বাসায় পরিনত হলো।
একবার সিকিউরিটি ইনচার্জ এসে বলল,‘এপার্টমেন্টটা ম্যাচ বানিয়ে ফেললেন?’
আমি বললাম,‘আমার এপার্টমেন্ট আমি যা খুশি তাই করবো তুমি বলার কে?’ সে থতমত করে চলে গেল।
মাঝে মাঝে ভাবি এই বুঝি মালিক এল কিন্তু না সে আর আসে না। তাদের আর কোন খবর নেই। আবার ভাবি আসলেই কি? তারটা তো তাকেই দিয়ে দেব। যতদিন না আসে পাহারা দিয়ে তো রাখতে হবে। ছয়জনের কাছ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা নিচ্ছি। নিজের চাকরীটা এখন ছেড়ে দিয়েছি। আরামে ঘোরাঘুরি করছি আনন্দেই আছি।
মেচের শফিক ভাই বয়সে সবার বড়, আমারও। অন্যেরা সবাই আমার বয়সে ছোট। এপার্টমেন্ট এর মালিক হিসেবে সবাই আমাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে। এখ সবাই জানে এটা আমার নিজের কেনা এপার্টমেন্ট। শফিক ভাই মতিঝিলে একটি কর্পোরেট চাকরি করেন আর মামুন একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসীতে পড়ে। অন্যেরা সবাই ভাল চাকরি করছে। এখানে আমার মর্যাদাই আলাদা। যা বলি সবাই তাই শোনে।

মামুন আমার মশারী তুলে হামাগুড়ি দেয়ার মতো করে খাট থেকে নেমে গেল। আমার প্রচন্ড হাসি পেলেও কোন মতে হাসি থামিয়ে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করছি। কিন্তু একি! আমাকেও প্রায় হামাগুড়ি দিয়েই নামতে হচ্ছে। কোন ভাবেই সাভাবিক ভাবে নামতে পারছি না। বিছানা থেকে নিচে নেমে দেখি আমার উচ্চতা মামুনের চেয়েও কম। এটা কি করে সম্ভব!
- ‘মামুন!’ আমি মামুনকে চিৎকার করে ডাকলাম। মামুন ততক্ষণে আমার রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।
আমার চিৎকারে মামুন আবার দৌড়ে এল।
- ‘মামুন আমাকে ধরো। আমার মাথা ঘুরছে।’
খুব সাভাবিক ভাবেই মামুন আমাকে ধরলো। আমি আর টাল সামলে রাখতে পারছিলাম না। লম্বা ছেলেটা আমাকে তুলে বিছানায় তুলে দিল। তবে তাকে এজন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কারণ আজ ওর নাগাল পেতে সমস্যা হচ্ছিল।
বিছানায় শুয়ে নিজেকে ফিরে পেলাম। মামুনকে বললাম,‘শফিক ভাইকে ডাক।’
ও বলল,‘শফিক ভাই অফিসে চলে গেছে।’
- ‘আর বাকী সবাই।’
- ‘সবাই অফিসে গেছে। ঘড়ি দেখেন নাই এগারোটা বেজে গেছে। নয়টার পর আমি ছাড়া বাসায় কেউ থাকে?’
ওর অফিস নেই বলে মাঝে মাঝে ওকেই শুধু বাসায় পাওয়া যায়। তাও যদি ক্লাস থাকে ওকেও পাওয়া যায় না।
আমি বললাম,‘আজ তোমার ক্লাশ নেই?’
ও বলল,‘ছিল। আপনার শরীর খারাপ দেখে যাইনি।’
- ‘শরীর খারাপ আমার আর অফিসে যাওনি তুমি। তোমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল তাইনা?’
ও কিছু না বলে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমার ছোট সাইজের দেহ বিছানার সামান্য অংশ জুড়ে রইল। আমি উঠে বসলাম। আমার সেই আগের মতো অস্বস্থি লাগতে শুরু করেছে। বমি বমি ভাব। বিছানা থেকে নেমে যাব এমন সময় মামুন বালতি ভরে পানি নিয়ে রুমে এল। আমি বললাম, ‘কি করছো এসব?’
- ‘আপনার মাথায় পানি দিয়ে দেই। ভাল লাগবে। মনে হচ্ছে আপনার শরীর তেমন ভাল না।’ ও আমার কপালে হাত দিয়ে বলল, ‘জ্বর উঠতেছে মনে হয়।’
আমি মাথায় পানি দেয়ার জন্য শুয়ে পড়লাম। ও কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে পানি দিল। খুব দরদী ছেলেটা আমাকে যথেষ্ট ভাল জানে। ফার্মেসীতে না পড়ে ওর সরাসরি ডাক্তারী পড়া উচিৎ ছিল।
পানি দেয়া শেষ করে তোয়ালে দিয়ে ভাল ভাবে মাথা মুছে দিল। আমি বিছানায় উঠে বসলাম। কেমন ছোট খাটো বেটে মানুষ আমি। খুবই বিশ্রী লাগছে আমাকে। সকালে উঠে এখনো ফ্রেশ হওয়াই হয়নি। হামাগুড়ি দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বেসিনের সামনে গিয়ে দাড়ালাম কিন্তু বেসিনের নাগাল পাওয়া সম্ভব হলো না। বেসিনের আয়নায় নিজেকে দেখার শত চেষ্টা করে সম্ভব হল না। পায়ের নিচে একটা টুল নিয়ে বেসিনে দাড়াতে হলো। বেসিনের আয়নায় নিজেকে দেখে নিলাম। কেমন পুতুল পুতুল মনে হচ্ছে। পুতুল আমি বা আমার পুতুল মুর্তি।
ডাইনিং এ সকালের নাস্তা এখনো পড়ে আছে। খিদেও পেয়েছে দারুন। ডাইনিং এর চেয়ারে বসতেই টের পেলাম সত্যি সত্যি কত ছোট হয়ে গেছি আমি। অনেকটা লাফ দেয়ার মত করে চেয়ারে উঠতে হল। টান টান হয়ে উকি দিয়ে বসতে একদম খারাপ লাগছিল। তাই চেয়ারের উপরেই পা তুলে বসলাম। তাতেও স্বস্থি পেলাম না। শেষে ড্রইং রুমের সোফার উপর পা তুলে বসে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। কারণ সেখানেও স্বস্থি পাচ্ছিলাম না পায়ে ফ্লোরের নাগাল পাইনা বলে।
হঠাৎ করে আমাদের দু’জনের হরমনের না কিসের সমস্যা হল না কি ভাইরাস জনিত কোন সমস্যা, আমি ঠিক ভেবে পেলাম না এ কি করে সম্ভব! মামুনকে ডেকে বলি, ‘মামুন, হসপিটালে যাবা কখন?’
- ‘ভাই এত উগ্ধিগ্ন হচ্ছেন কেন? কি হয়েছে আমিতো ঠিক কিছুই বুঝতে পারছিনা।’
- ‘কি বলছো এসব! তুমি কিছুই দেখছো না?’
তাহলে কি আমি ভুল দেখছি? আমি কি ভুল দেখছি? আমি কি ভুল দেখছি? আমার মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে, আমি কি ভুল দেখছি এসব? প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার মানুষটাকে দেখছি মাত্র সাড়ে তিন ফুট সাইজে। নিজেকে ছোট দেখছি। এসবই ভুল দেখছি ও কিছুই দেখছে না? আমি কি মানষিক ভারসাম্যহীণতায় ভূগছি? তাই বুঝি মামুন আমার মাথায় পানি ঢেলে আমাকে সুস্থ্য করার চেষ্টা করেছে।
মুখে আর কোন খাবার উঠতে চায়না। প্লেটের বাকীটুকু কিচেনে রেখে বেচিনে মুখ ধুয়ে নিচ্ছি। সেই একই কাজ টুল নিয়ে বেসিনে দাড়াতে হলো। মামুন ও বেসিনে দাড়ায় টুল নিয়ে, তারপরও ও বলছে কোন সমস্যাই ও দেখতে পাচ্ছেনা। আমিই সব সমস্যা দেখে হজম করতে পারছিনা। ও যেন কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা কিছুই বুঝতে পারছেনা। ওর উপরেই প্রচন্ড রাগ নিয়ে ডাকলাম, ‘মামুন! এদিকে এসো।‘ মামুন ছুটে এল।
বারান্দার দেয়ালের হাইট স্কেলটা এপার্টমেন্ট তৈরির সময়ই গেথে দেয়া হয়েছিল। আমরা প্রায়ই এখানে নিজেদের মেপে মেপে দেখেছি। ঠিক পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতা আমার। সেনা বাহিনী কিংবা যে কোন একটা বাহিনীতে দাড়ালেই আমার চাকরীটা হয়ে যেত।
জীবনে চাকরীরর জন্য একবারই ইন্টারভিউ ফেস করেছি। চাকরীও হয়েছে ঐ একবারেই। তারা আমাকে নিয়েছে আমার হাইট, ওয়েট ও স্মার্টনেস সবকিছু দেখেই। সেই স্মার্ট আমাকে আজ আমি একটা পিচ্চি বাচ্চার সাইজ দেখতে পাচ্ছি। ঘরের সকল জিনিস পত্র ঠিক আগের মতোই আছে। শুধু আমি আর মামুন আমাদের দু’জনের সাইজই বদল হয়ে গেছে। ওকে এনে দেয়ালের স্কেলটার সামনে দাড় করালাম। বললাম, ‘উচ্চতা দেখ।’
ও স্কেলটার সামনে দাড়িয়ে নিজের মাথার উপর হাত দিয়ে পয়েন্ট আউট করলো। বলল, ‘তিন ফুট আট ইঞ্চি।’
- ‘তাহলে? বুঝলে এবার?’
- ‘কি বুঝবো? ঠিকইতো আছে।’
আমার মাথা গরম হয়ে মেজাজ চরমে উঠে যাচ্ছিল, ‘ঠিক আছে মানে কি? তোমার কোন জনমে তুমি তিন ফুট আট ইঞ্ছি ছিলে?’
- ‘সারা জীবনইতো ছিলাম।’
এবার আমার ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা। বললাম, ‘কি বলছো এসব? তুমিতো এর আগে পাঁট ফুট দশ ইঞ্চি ছিলে। অনেক লম্বা ছিলে তুমি এজন্য তোমার ক্লাসের কেউ তোমাক খেপাতো না?’
- ‘খেপাতো। এখনো খেপাবে। কারণ আমি কি কম উচ্চতার নাকি? এই যে আপনার চেয়ে আমি কত লম্বা দেখেছেন?’ ও আমার পিঠের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে নিজেকে বড় জাহির করার চেষ্টা করল।
এবার আমি হাইট স্কেলটার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে মেপে দেখালাম। তিন ফুট পাঁচ ইঞ্চি। বললাম, ‘দেখলে, দেখলে কত খাটো হয়েছি আমি।’
- ‘ভাইয়া সব ঠিকই আছে। আপনি ভুল বুঝছেন।’
- ‘ভুল বুঝছি! ভুল বুঝছি আমি? এই দেখো’ বলেই পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি বরাবর দেখানোর চেষ্টা করলাম। না তা সম্ভব নয়। আমি সেটার নাগাল পাচ্ছিনা। বললাম, ‘টুলটা নিয়ে আসো।’
ও দৌড়ে গিয়ে টুলটা নিয়ে এল। আমি টুলের উপর দাড়িয়ে পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি বরাবর দাগটা দেখালাম। সেখানে দাগ টেনে আমার নাম লিখে রাখা আছে। আমি স্পষ্ট দেখলাম এবং ওকে দেখালাম, ‘এই যে দেখো আমার নাম লেখা “রাকিবুল ইসলাম রকি”। এই যে দেখো আর একটু উপরে পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি বরাবর তোমার নাম লেখা “মামুন”।’
- ‘কি জানি ভাইয়া। মনে হয় কোন সমস্যা হইছে।’

। ৩।
সেল ফোনে ক্রিং ক্রিং শব্দ হচ্ছে। তমা ফোন করেছে। ফোন ধরতে মন চায় না। মনটা ভিষন খারাপই মনে হচ্ছে। মোবাইল বেজেই যাচ্ছে। একবার দুইবার তিনবার ... অসংখ বার।
আজ বারোটায় ওর সাথে দেখা করার কথা। ও চারুকলার সামনে দাড়িয়ে থাকবে। জরুরী কোন কথা আছে। মনেমনে নিজেকে বোঝালাম, ‘জরুরী কি? জরুরী কি? মেয়েদের আবার জরুরী কথা! বিয়ে হয়নি তো একই পেচাল। কবে বিয়ে করবো? বাবা মা ছেলে দেখেছে। দ’একদিনের মধ্যেই পাকাপাকি হবে। এখনই যদি বিয়ে না করি তাহলে চিরদিনের জন্য হারাতে হবে এসবইতো।’
ঠিক তাই যদি হয়। কি করার আছে আমার? তমা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া অসাধারন এক সুন্দরী মেয়ের নাম। আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে ও। আমার কোন্ ভাগ্যে ওকে কাছে পেয়েছি জানি না। কিন্তু আজ আমার এ অবস্থা দেখলে ও কি আর কোন দিন আমার কাছে আসবে?
আমি নির্বাক হয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে মোবাইলে কত বার রিং হচ্ছে তা গুনে যাচ্ছি। তখন মুঠোফোনে ম্যাসেজ আসার টোন বেজে উঠছে। আমি তাকাচ্ছিই না।

[চলবে]





২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×