somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোতি বসু

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কলকাতায় ১৯১৪ সালের ৮ জুলাই একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় জ্যোতিরিন্দ্র বসুর। বাবা নিশিকান্ত বসু ছিলেন পেশায় চিকিত্সক, মায়ের নাম হেমলতা বসু। আদি নিবাস বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলায়। শিক্ষাজীবনের শুরু কলকাতার সেন্ট লোরেটো স্কুলে। ম্যাট্রিক পাস করেন সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে। বর্তমান প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হওয়ার পর ব্যারিস্টারি পড়তে চলে যান লন্ডনে। আইনের ছাত্র হয়েও নিয়মিত লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে সমাজতন্ত্রী চিন্তাবিদ হ্যারল্ড লাস্কির বক্তৃতার একজন নিবিষ্ট শ্রোতা ছিলেন।
লন্ডনে থাকার সময়ই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন জ্যোতি বসু। লন্ডনে ইন্ডিয়া লিগ ও লন্ডন মজলিসে যোগ দেন এবং ভারতীয় ছাত্রদের সংগঠিত করেন। সে সময় লন্ডন সফরে যাওয়া জওহরলাল নেহরু ও সুভাস বসুর জন্য সেখানে সমাবেশেরও আয়োজন করেছিলেন তিনি। লন্ডনে থাকতেই ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের আন্দোলনে যুক্ত হন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯৪০ সালে মুম্বাই হয়ে কলকাতায় ফেরেন জ্যোতি বসু। তাঁর ফিরে আসায় পরিবারের সদস্যরা আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠলেও যখন শুনলেন, জ্যোতি রাজনীতি করতে চান, তাঁরা কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে ওই বছরই কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ায় (সিপিআই) যোগ দেন। আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ভারতের রেল শ্রমিক সংঘের নেতা হয়ে ওঠেন তিনি। ওই সময় ভারতে সিপিআইকে নিষিদ্ধ করা হলে দলের পালিয়ে থাকা নেতাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে থাকা নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র হয়ে ওঠেন জ্যোতি।
১৯৪৬ সালে অবিভক্ত ভারতে প্রথমবারের মতো বাংলার প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ভারত বিভাগ ও ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বরাহনগর আসন থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৫৭ সালে তিনি বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে সিপিআই থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। সমমনা রাজনীতিকদের নিয়ে গড়ে তোলেন সিপিআই(এম)। বিধানসভার বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে নজরে আসেন পশ্চিমবঙ্গের প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিক বিধানচন্দ্র রায়ের। ১৯৬৭-পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। নকশালবাদী আন্দোলন জোরদার হওয়ায় সেখানে কেন্দ্রের শাসন জারি করা হয়। ওই সময় স্বল্প মেয়াদে পশ্চিমবঙ্গের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসকে হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসে বামপন্থী জোট। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জ্যোতি বসু। তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। তাঁর সরকার কৃষি খাতে বেশ কিছু সংস্কার নিয়ে আসে। তাঁর নেতৃত্বেই পশ্চিমবঙ্গ শিল্পায়ন ও কৃষির আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে চলে। পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে অনেক পশ্চিমা দেশ সফর করেছেন তিনি। টানা ২৩ বছর দায়িত্বে থাকার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।
লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পরপরই বিয়ে করেন জ্যোতি বসু, কিন্তু ওই বছরই স্ত্রী মারা যান। এর পরপরই মাকে হারান। কয়েক বছর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্ত্রী কমল বসুর প্রথম সন্তানটিও জন্মের পর মারা যায়। পরে ১৯৫২ সালে একমাত্র ছেলে চন্দন বসু জন্মগ্রহণ করেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ফ্যাসিবাদের উত্থান, বিশ্বযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশ বিভাগ, ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বার্লিন প্রাচীরের পতন, বিশ্বায়ন আর সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ পার করেছেন। কংগ্রেসের শাসন অবসানের জন্য হাত মিলিয়েছেন ডানপন্থী বিজেপির সঙ্গে। ভারতের রাজনীতিতে তিনি একজন অনুপ্রেরণা হিসেবেই অমর হয়ে থাকবেন। জ্যোতি বসু সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়ায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছেন, ‘জ্যোতি বসু ছিলেন একজন মহান দেশপ্রেমিক, অনুপ্রেরণার এক অনন্ত উত্স।’ কলকাতার রাজনৈতিক বিশ্লেষক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী জ্যোতি বসু সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনি কমিউনিজমকে সম্মানজনক চেহারা দিয়েছেন।’

সূত্র: ওয়েবসাইট
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×