হাসপাতালে শিশুদের Assessment করার সময় চাইল্ড সাইকোলজিস্ট হওয়ার কারণেই বোধহয় শিশুদের মা-বাবার মনের ভেতরে জমানো অনেক কথা’ই শুনতে হয়।
যেমন, বেশ কয়েকমাস আগে এক মা তার সন্তান’কে নিয়ে আসে, যাকে Assessment করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর (Severe) level – এ পাওয়া যায়। মায়ের সাথে Counselling session-এর মাঝে তিনি একটি কথা বলে যা আমার মনে দাগ কেটে রাখে।
(শিশুটির মাঃ “স্বামী হারানোর পর ছুটেছি শুধু টাকার পিছনে। একমাত্র পোলার ভবিষৎতে যেন ওর কষ্ট না হয়। কিন্তু হেই টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে পোলাটার দিকে খেয়াল দেই নাই ।
আজ আমার অনেক টাকা কিন্তু পোলাটা হইয়া রইছে প্রতিবন্ধি।
অহন পোলাটা আমার এই টাকা খাইব গরু-ছাগলের লাহান। কোন স্বাদ পাইবো না-।
আল্লায় একদিক থেইক্কা দিলে অন্যদিক দিয়া কমাইয়া দেয়।")
অনেকদিন পরে, ঐ ঘটনার সাথে আরেকটির ঘটনার association হয়ে যায় অনেকটা কাকতালীয়ভাবে।
ছেলেটির সাথে দেখা হয় ডেসটিনি টাইপ একটি প্রতিষ্ঠানে। আমার’ই এক বন্ধু আমাকে ভুরুং-ভারং বুঝিয়ে নিয়ে গেছে ঐখানে। যখন’ই দেখলাম – এটা ডেসটিনি টাইপ। আমার বন্ধুটি জানে যে, আমি এসবে ইন্টারেস্টেড না। তাই সে ছলনার আশ্রয় নেয়। তাই তখন প্রচুর ক্ষিপ্ত হয়ে যাই। তখন ঐ প্রতিষ্ঠানের এক ছেলে, ভার্সিটিতে পড়ুয়া, বুদ্ধিমত্তায় Average এর উপরে হওয়া স্বত্ত্বেও যাকে আমি রামগর্দভ বলে সম্বোধন করতে চাইছি। (কারণ-) সে নিজের থেকেই বলা শুরু করল যে, তার বাবা সামান্য সরকারী চাকরী করে তার অন্যান্য ভাইবোনদের বাংলাদেশের নামকরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা খরচ করে। ঢাকায় বাড়ি করেছে। তাদের জন্য অনেক কষ্ট করছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। তার অন্যান্য ভাইবোনেরা বাবার কষ্ট বুঝে না। যে যার যার মত করে টাকা উড়াচ্ছে। তাই সে চাচ্ছে, তার বাবার কষ্ট কিছু কমাতে। সে কারণে সে এখানে টাকা ইনভেস্ট করছে।
তার এই কথা শুনে আমার দৃষ্টি পড়ল তার বাবার কর্মকান্ডের উপরে। আমি মুখ বুজে না থাকতে পেরে বলেই ফেললাম, আপনার বাবা সামান্য সরকারী চাকরী করে এতো কিছু কিভাবে করছে। সে নিশ্চয়’ই ঘুষ খায়। সে তার প্রতুত্তরে বলল যে, তার বাবা ঘুষ খায় না। তার বাবার কাজে খুশি হয়ে অন্যেরা তাদের বাসায় এসে কিছু দিয়ে গেলে এটা ঘুষ না, বরং উপহার।” তার ভাষ্যমতে, ঘুষ খেলে এতদিনে ধরা পড়ে চাকরি চলে যেত। উপহার বলেই তার বাবার চাকরি এখনো বহাল তবিয়তে আছে। এবং নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরী করে দিয়ে যাচ্ছে বলে সে খুশি তার বাবার কাজে। অনেক তর্ক-বিতর্ক হল। ফলাফল শূণ্য।
তখন আমি ভাবতে থাকি, ঘুষ খাওয়ার সময় আল্লাহ্ এদের কিছু করে না কেন?
তখন আমার সেই মায়ের কথাটা মনে পড়ল,
“আল্লায় একদিক থেইক্কা দিলে অন্যদিক দিয়া কমাইয়া দেয়।" যারা ঘুষ খায়; আল্লাহ্ তাদের টাকা দিয়া ভরাইয়া দেয়। অন্যদিকে সবাইকে বানিয়ে দেয় কোন এক দিক থেকে প্রতিবন্ধী। শান্তি এদের কাছে সোনার হরিণ হয়ে থাকবে চির জীবন।
এরা টাকা খাইব গরু-ছাগলের লাহান। কোন স্বাদ পাইবো-না।”
তখন মনে মনে ওদের জন্য করুণা হলঃ
আহারে !!!!! (আফসোস) এরা টাকা খাইব গরু-ছাগলের লাহান।
স্বাদ আর শান্তি এদের কপালে নাই।