অনন্তির রুমের জানালাটা এখনও খোলা; আকাশ সেই জানালার মুখোমুখি দাঁড়ায়; দূর থেকে অযথাই চেয়ে থাকে; তার সাথে আর কোন দিন, কোন কালে দেখা মিলবেনা জেনেও ভাবতে ইচ্ছে করে; ভাবতে ইচ্ছে করে-এখনও দু’টো পাথর চোখ তার জন্য প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে অথচ শূন্যতা ভরে থাকে জীবনের চারপাশ।
তেত্রিশ বছর আগে ফেলে আসা স্মৃতির নুড়ি কুড়িয়ে কি হবে, তবু অনাদরে ফেলে আসা প্রেয়সীকে আজ মন থেকে মূছে ফেলা যায় না কিছুতেই। অলক্ষ্যে স্মৃতির ডায়রি খোলেঃ-
যাকে ছাড়া দিশেহারা; ঈগল দৃষ্টিতে যাকে অহর্নিশ স্বপ্ন আঁকে, আর ভালবাসা থাকে হৃদয়ের চিলেকোঠায়, সে অনন্তি একদিন আচমকা লাল বেনারসি পরে আকাশের সম্মূখে এসে দাঁড়ায়। অনন্তি বড্ড কান্ত তখন, বড় অসহায় কাদো কাদো কন্ঠে বলে-
"আকাশ, এই দেখ তোমার অনন্তি, তোমার সাথে পালাতে চাই অন্য কোথাও হারাতে চাইনা কোন দিন।" আলো-আঁধার, আশা-নিরাশার উৎকন্ঠা তার চোখে মুখে।
অথচ মর্মাহত হল আকাশ, এত দিনের সুখ স্বপ্ন মুহূর্তেই দুমড়ে মুচড়ে একাকার করে দিল হৃদয়ের একুল ওকুল। তারপর অনন্তিকে ফেরানোর ব্যর্থ চেষ্টা। আকাশ বলে-
"অনন্তি, নিজের জীবনের চাকাই ঘুরছে তো ঘুরছে না তোমায় নিয়ে কোথায় যাব বল!"
অনন্তি অলঙ্কার জড়ানো, মেহেদী রাঙা দু’টো হাত রাখে আকাশের হাতে, চোখে এক সমুদ্র জল, খুব শান্ত কন্ঠে বলে-
"আকাশ, আমি কিছু বুঝিনা, আমি চলে এসেছি আর কোন দিন ফিরতে পারবো না, ফিরে যাব না কখনোই।"
"অনন্তি, তুমি ফিরে যাও।" শুধু এটুকুই বলা হল আকাশের।
অতঃপর নিরুদ্দেশ হল আকাশ, একজন কাপুরুষের মত। হয়ত সে আর ফিরবে না- অনন্তি বুঝেও বুঝতে চায় না কিছুতেই। প্রতীক্ষায় থেকে থেকে দৃষ্টির সীমানায় ভেসে ওঠে জীবনের এপিঠ ওপিঠ। নিজেকে প্রশ্ন করে-এমন কি হতে পারে? শিশিরের শব্দের মত অন্ধকার নেমে আসে পৃথিবীর বুকে, একটা অসমাপ্ত গল্পের সীমারেখা টানে জীবন খাতায়। আকাশ হয়ত ফিরবে, হয়ত ফিরবে না কোন দিন-এমন দোলাচলে অনন্তি কত দিন, কত কাল প্রতীক্ষায় ছিল তা আর জানা হল না- শুধু জানা গেল কোন এক বিস্মৃত প্রহর হতে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরো অনেক দিন পরে আকাশ জানলো-অনন্তি তার পিত্রালয়েও ফিরে যায়নি। হয়ত এমনটি চায়নি আকাশ কিন্তু মুক্তিতো চেয়েছিল।
এখন সে অনন্তির খোলা জানালায় বার বার ফিরে তাকায়, রাতের আকাশ দেখে, সমস্ত দিনের ব্যস্ততার শেষে নির্ঘুম রাতের কষ্টরা ঘিরে থাকে মুক্ত আকাশ।
ডিসেম্বর/২০১২
----- ০০০ -----