"বৌ, ঘরে যাইয়া রাহুলের লগে আড্ডা দিবা না। ঐ হারামজাদায় তোমার ধারে কাছে আইলে অরে স্যান্ডেল দিয়া পিডাইবা। আমাগো পোলাপানের মুখের দিকে তাকাইয়া তোমার কি একটুও মায়া লাগে না!"
"এইসব কি কইতাছেন আপনে। আপনার মাতা পুরাই খারাপ।" রাগান্বিত চোখে স্ত্রী রাহেলার এ কথাগুলো শুনে স্বামী আনোয়ার থেমে যায়।
প্রতি দিনের মত আজও আনোয়ারকে রাস্তার পাশে থালা নিয়ে বসিয়ে দিয়ে যায় রাহেলা। আনোয়ারের এক পা হাঁটুর উপর পর্যন্ত কাটা। হাতের ডানায় লাঠিতে ভর করে একটি পা দিয়ে হাঁটতে হয় তাকে। পেশা ভিক্ষে হলেও রোজগার ভাল। তাদের কথাবার্তা, চাল-চলনে আর্থিক স্বাচ্ছন্দের ভাব বিদ্যমান। ভিক্ষের জন্য বসিয়ে দিয়ে রাহেলা যেতে উদ্দত হলে আনোয়ার তার হাত দু'টো ধরে বলে-
"দ্যাহো, তোমারে আমি কম ভাল পাই কও। তোমার কিসের অভাব। হেরপরও হারা দিন ঐ রাহুলের লগে তোমার হাসি-ঠাট্টা, ইয়ার্কি-মশকরা দেখলে আমার শরীলে আগুন ধইরা যায়। মন চায় ঐ হারামজাদারে কোপাইয়া টুকরা টুকরা কইরা হালাই।"
"হুঁ, চুপ করেন। বেশী কতা ভাল না।" কথাগুলো বলে আর মুহূর্ত অপেক্ষা করলোনা রাহেলা। মনে হল স্বামীর কথাগুলো তার কাছে অসহ্য লাগছিল।
আনোয়ারের সম্মূখে এখন ধূসর পৃথিবী; রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিক্ষে করা এখন যেন নিস্ফল মনে হয় তার কাছে। মাঝে মাঝে মন চায় সবকিছু ফেলে অন্য কোথাও চলে যেতে। কিন্তু রাহেলার মত এত সুন্দর করে কে তাকে সেবা করবে। সেই মায়াবী মুখ আর সন্তানদের কথা কেবলই নাড়া দেয় মনকে। আবার ভাবে বিধাতা যেন এই কষ্ট সহ্য করার জন্যই তাকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে রেখেছেন।
রাহেলার ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙ দেখলে আনোয়ারের বুক আঁৎকে ওঠে। রঙিন শাড়িতে যখন তাকে সুন্দর লাগে তখন অন্য কোন ভাবনায় ডুবে থাকে আনোয়ার। হয়ত সে ভাবনার যথেষ্ট কারণ আছে। ইদানীং স্বামীর অগোচরে রাহেলা রাতের বেলা বিছানা ছেড়ে বাইরে চলে যায়; হয়ত কোন ধ্বংসের নেশায় মেতেছে সে। কখনও রাতেই ফিরে আসে আবার কখনও রাত শেষে। এসব দৃশ্য দেখে দেখে আনোয়ারের ভেতরে চাপা কষ্ট, প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে। মাথায় একটা খুনের নেশা চেপে বসে। রাহেলাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার নেশা। কিন্তু বার বার মন স্থীর করে বার বার ফিরে আসে। (কিছু কিছু লোক থাকে যারা কখনোই প্রতিশোধ নিতে জানে না।) তারপর দিন যায়- প্রতিশোধের ঘোর কেটে যায় তার-তবুও একটা দগদগে ক্ষত থেকে যায় ভেতরে।
অন্যদিকে রাহেলাকে কখনও কখনও সকলের অগোচরে কাঁদতে দেখা যায়; সেটা হয়ত নিঃশব্দ কান্না, অর্থহীন অথবা অন্য কোন কষ্টের জল থাকে তার চোখে।
(সমাপ্ত)
জুন/২০১৩
----- ০০০ -----
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২৯