ঘটনার আগের দিন কর্নেল কামরুজ্জামানকে ব্যাজ পরিয়ে দেয়া হচ্ছে, পাসে হাস্যজ্জল জেঃ সাকিল।
পিলখানা। ফেব্রুয়ারি ২৫ – ২০০৯, সকাল আটটা। কুয়াশায় গাছের পাতার ফাঁকে হালকা সুর্য উঁকি দিচ্ছে। পাখিদের কিচির মিচির।
হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেংগে বিউগলের কঠিন সুর। পোপ..পো। আজকের বিউগলের আওয়াজটা অন্যান্ন দিনের চেয়ে কেমন যেন করুণ সুর মনে হচ্ছে , কেঁদে কেঁদে উঠছে ট্রাম্পেটের বাঁশি।
BDR সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে দরবার হলে, হন হন করে নিঃসব্দে ঢুকছে সৈনিকরা, আজও ওদের হাতে কোন অস্ত্র নেই, কারন থাকার কথা না, আইন-শৃক্ষলা রক্ষায় সুধুমাত্র বাহিরে ডিউটির সময়ই কেবল অস্ত্র ও গুলি দেয়া হয়, ডিউটি শেষে আবার জমা।
সকাল ৯টায় পুর্বনির্ধারিত মিটিং। যা দরবার নামে প্রচলিত, ইতিমধ্যে সব জোয়ানরা এসে গেছে। পাথরের মত গম্ভির মুখে বসে আছে সবাই।
এখানেই ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকান্ড।
কিন্তু কেন এ হত্যাজগ্য, এই ঘটনা কি পুর্ব পুর্বপরিকল্পিত? না নিছক উত্তেজনার বসে তৎক্ষনিক প্রতিক্রীয়া?
যেভাবে ঘটল
নয়াদিগন্ত পত্রিকার অংশবিশেষ
বেঁচে যাওয়া বেশ কিছু অফিসার আর ঘটনার পর সেদিনই পালিয়ে যাওয়া কিছু সৈনিক দুপুরে গনমাধ্যমের কাছে দরবার হলের সকালের ঘটনার বিস্তারিত বিবরন দেন। পরে মুক্ত হয়ে কর্নেল কামরুজ্জামান সহ অনেকেই তাৎক্ষনিক প্রতিক্রীয়ায় সেদিন সকালের দরবারের ঘটনার বর্ননা দেন।
যদিও পরে অনেকেই নানা ভাবে সেদিনের দরবার হলের ঘটনার বিবরন দেন, কিন্তু সেগুলো পরে ঘটনার নিষ্ঠুরতা জানার পর এবং স্বজনের কান্নাকাটিতে পরিস্থিতির চাপে কিছুটা মোটিভেটেড বলে মনে হয়েছে। বিপুল সংখক বিভৎস মৃতদেহ দেখে তীব্র প্রতিক্রীয়া, আবেগের ভেতর থেকে আসল সত্য বের করে আনা সত্যই কঠিন ছিল।
কি ঘটেছিল?
বিডিআর সৈনিকদের চাপা ক্ষোভ অনেক বছর আগে থেকেই ছিল বলে প্রাক্তন মহাপরিচালক জ়ে: ফজলুর রহমানের বক্তব্যে জানা যায়।
নব নির্বাচিত সরকার অপেক্ষাকৃত কম রক্ষনশীল, কম সেনা তোষনকারি এবং উদার মনে হওয়া প্রধানমন্ত্রীকে বেশ কিছুদিন আগেই তৈরি করা মুল তিনটি দাবি সহ ৬ দফা দাবি সহ একটি স্মারক লিপি দেয়ার উদ্যোগ চলছিল, তাদের ধারনা হয়েছিল নবনির্বাচিত আওয়ামি সরকারই তাদের জুলুম কিছুটা নিরসন করতে পারবে। কিছুদিন আগে স্থানীয় সাংসদ তাপস জিগাতলা দলীয় ক্যাম্পে এলে তার কাছে কিছু সৈনিক পরামর্শের জন্য আসে, তিনি সুধু রেশনের ব্যাপারটা ছাড়া অন্য ব্যাপার গুলো তার আওতার বাইরে বলে জানান। পরে তাদেরকে প্রপার চ্যানেলে যাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়। পরে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে যেয়েও কোন সুবিধা পায়নি। এরপরের মাসে বিডিআর সপ্তাহে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিজি সাকিল এভাবে দেয়া ঠিক হবেনা মন্তব্য করেন, নিজেই প্রধানমন্ত্রির হাতে তুলে দিয়ে কথা বলবেন বলে মত দেন।
কিন্তু দেয়ার কোন ইচ্ছা তার ছিলনা, কারন তাহলে তিনি অবস্যই প্রধানমন্ত্রীর SSF চিফ সিকুরিটি অফিসার কে জানানোর কথা। SSF কে না জানিয়ে কোনকিছুই দেয়া সম্ভব না। স্মারকলিপি না দেয়ার ইচ্ছা পোষন করলেও তা SSF বা DGFI এর নলেজে দেয়া উচিত ছিল। তাহলে হয়তো একটি বড় বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হত।
সেদিন প্রধানমন্ত্রী প্যারেডে সালাম গ্রহনকালে পিলখানায় আসলে তিনি তা দেননি বা আলোচনার চেষ্টাও করেন নি।
সেদিন দরবার হলে, প্যারেড হস্তান্তরের সময় DG জেঃ সাকিল ও কঃ মুজিব
পরদিন সকালে দরবার হলে পুর্ব নির্ধারিত BDR DG সাকিলের বক্তব্য সুরু করার কিছুক্ষন পরই উত্তেজনা বাগ-বিতন্ডা। স্মারকলিপি কেন দেয়া হয়নি, UN মিশনে না নেয়া, অপারেশন ডালভাত, সপিং মলের হিসাব। সিমান্তের চোরাই মাল আটকের-লুন্ঠনের ভাগ আফিসার সৈনিক অনুপাত ৮৯:১১ কেন? ৬০:৪০ চাই। এ সবের কোন সুরাহা না হওয়ায় একটা হট্টগলের সুত্রপাত। উচ্চস্বরে ধমকের সব্দ।
এরপর ডিজি সাকিল এভাবে হৈচৈ না করে একজনকে সামনে এসে বক্তব্য দিতে বলেন। সামনে একজনের যায়গায় দুজন এসেছিল বলে জানা যায়। বাকবিতন্ডায় একপর্যায়ে একজন জোয়ান কে স্টেজের উপরে দেখাযায়,
… হুমকির সুরে কিছু একটা বলে এবাউট টার্ন করে চলে যেতে চায়। একজন অফিসার খপ করে ধরে ফেলে, বলে “কি বলছ পাগলের মত” অপমানিত ডিজি সাকিলের হাতে পিস্তল। হট্টগোলের ভেতর স্টেজের সৈনিকটি জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়।
একজন সৈনিক স্টেজে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তাকে পাকড়াও করা হলে সে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পরে। সৈনিকটির নাম কাজল বলে জানা যায়
মানবজমিন পত্রীকার অংশবিশেষ।
আসলে সেদিন সকালে সত্যই কি ঘটেছিল তা হয়তো কোনদিনও জানা যাবেনা।
বেচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শি সেনা কর্মকর্তাদের টিভি তে বক্তব্যে দরবার হলের প্রথম দিকের ঘটনা গুলো অস্পষ্ট রেখে শেষের দিকে সৈনিকদের আসন ত্যাগ করে পরে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে এসে এলোপাথারি গুলিবর্ষনের কথাই বার বার বলা হয়েছে।
কিন্তু ২৬ তারিখের যুগান্তর, মানব জমিন, নয়া দিগন্ত, আমার দেশ প্রভৃতি পত্রপত্রীকাগুলোতে কিছু বেঁচে যাওয়া BDR সদস্য, দুজন বেঁচে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা যারা সেদিন দরবার হলের প্রত্যক্ষদর্শি। তারা বিস্তারিত বর্ননা দেন। বর্ননা তে অতিরঞ্জন ছিল, খন্ড খন্ড বিবরন গুলো বিশ্লেষন করে আসল সত্যই কি ঘটেছিল সেটা বোঝা মুসকিল। এরপরও যা বোঝা যায়-
একজনকে উচ্চস্বরে ধমক ও মারধরের মত ঘটনা। ডিজি সাকিলের পিস্তল উচিয়ে উচ্চস্বরে কাকে যেন কি বলছে. বেয়াদব দুটোকে কোয়াটার গার্ডে আটকে রাখার নির্দেশ। একজন সৈনিকের স্টেজের মেঝেতে লুটিয়ে পরা। আরেকজন পিস্তলের ফাঁকা গুলির শব্দে জানালা দিয়ে পলায়ন। উপস্থিত সৈনিকদের একযোগে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করা। এর পর সবাই হল ছেড়ে চলে যাওয়া।
মানবজমিন এ এক সৈনিকের বক্তব্যে সাকিলের পিস্তল থেকে গুলিবর্ষনের কথা বলা
হলেও এটা অতিরঞ্জিত বক্তব্য বলেই মনে হচ্ছে। অন্যান্ন সুত্রে এরও কোন সত্যতা পাওয়া যায়না। হয়তো সাকিলের হাতে কোন অস্ত্রই ছিলনা। কারো কারো বক্তব্যের উধৃতি দিয়ে কিছু পত্রীকায় বলা হয় মেঝেতে লুটিয়ে পরা সৈনিকটি একটি সাবম্যেশিনগান উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রথমদিন বিভিন্ন চ্যানেলে দেয়া বিবরন গুলো বিশ্লেষন করে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই অভিযোগ অমুলক, কারন পিলখানার সকল অস্ত্র ও গুলি পৃথকভাবে দুটি ভিন্ন অস্ত্রাগারে সুরক্ষিত ছিল। কিছু অফিসারের ব্যক্তিগত মোবাইলে ধারন করা ছবিগুলোতে কোন অস্ত্রধারি সৈনিক দেখা যায়নি। ছবিতে মেঝেতে পরে থাকা সৈনিকের সাথেও কোন আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়নি।
পরে বিশেষ আদালতে সেনা কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যে এগেয়ে কথা বলতে আসা দুই সৈনিককে 'অস্ত্রধারী' বলা হয়েছে, একজন সৈনিক লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বলা হয়। এ সময় এক রাউন্ড গুলিবর্ষনের শব্দ শোনা যায়,(গুলির শব্দ সম্ভবত পিস্তলের, সাব-মেসিনগানের হলে একপসলা গুলি হত) আর অপর সৈনিকটি গুলির শব্দের সময় দৌড়ে জানালা ভেঙ্গে পালিয়ে যায় বলা হয়। আদালতের শুনানিতে কে গুলি করলো এ কথার কোন জবাব জানতে চাওয়া হয়নি।
এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ডিজি সাকিল অকারনে ফাঁকা গুলিবর্ষন করলে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়। সাধারন সৈনিকরা সাভাবিক ভাবেই ভুল বোঝে। যে লুটিয়ে পরা সৈনিকটি বুঝি শাকিলের গুলিতেই মারা গেছে।
এরপরের ঘটনা ভয়াবহ
সৈনিকেরা দরবার হলে ত্যাগ করার পর বাইরে গুজব ছড়িয়ে যায় যে জেঃ সাকিল এক সৈনিক কে গুলিকরে হত্যা করেছে। এর পর সংগবদ্ধ হয়ে অস্ত্রাগার রক্ষীকে মারধর করে চাবি কেড়ে নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বের করা, ভিন্ন আরেকটি গোলাবারুদের গুদাম থেকে গুলিভর্তি ম্যাগাজিন তুলে নেয়া। একটি দল দরবার হলের দিকে যায়, এর পর প্রথম গুলিবর্ষনের শব্দ, অটোমেটিক রাইফেলের, ব্রাস ফায়ার।
প্রত্যক্ষদর্শি সৈনিকের বক্তব্যে জানা যায় যে হত্যাকারিরা প্রথমে আকাশের দিকে ফাঁকা গুলিবর্ষন করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে, পর উত্তেজনা বেড়ে গেলে কয়েক জন দরবার হলের দেয়াল, বদ্ধ দরজা-জানালা লক্ষ করে এলোপাথারি ব্রাশফায়ার করতে থাকে। ডিজি সাকিল ও অফিসাররা বার বার ধমক দিয়ে সৈন্যদের দরবারে ফিরে আসতে বলতে থাকে , এর ভেতর সেনাপ্রধানের সাথে ফোনে কথা হয়। এর কিছু পরেই একপশলা গুলি ছুটে আসে, কিছু গুলি নরম দেয়াল-পার্টিশন কাঁচের দরজা ভেদ করে সাকিল সহ অন্যান্নদের দেহে বিদ্ধ হয়, অনেকেই মাটিতে শুয়ে প্রানে রক্ষা পান, কর্নেল কামরুজ্জামান সহ অনেকে স্টেজের পাসের উইংসে ঢুকে পরে গুলির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। হাজার হাজার গুলি নিক্ষিপ্ত হলেও কোন বিদ্রহীকেই দরবার হলে ঢুকে দেখে গুলিকরতে দেখা যায়নি। দরবার হল লক্ষ করে হাজার হাজার গুলি নিক্ষিপ্ত হলেও অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তার গায়ে কোন গুলি লাগেনি। হত্যাকারিরা হত্যা নিশ্চিত করতে একবারও হলে ঢুকেনি। বা লক্ষস্থির করে গুলি করতে দেখা যায় নি।
বিদ্রোহি BDR ও বেঁচে যাওয়া সেনা কর্মকর্তারা এব্যাপার টি নিশ্চিত করেছেন। (টিভিতে সাক্ষাৎকারে বলছিলেন ওরা (বিদ্রোহীরা) কাপুরুষ, সামনে এসে গুলি করার সাহস নাই) মুক্তি পেয়েই কর্নেল কামরুজ্জামান তাৎক্ষনিক ভাবে গনমাধ্যমকে দেয়া তার বক্তব্যে এব্যাপারটি সমর্থিত হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পরে ওনার দেয়া বক্তব্য আমার কাছে অতিরঞ্জিত ও মোটিভেটেড মনে হয়েছে।
কিছু রক্তপিপাসু সৈনিক ঘটনার পরপরই সাকিলের বাসভবন আক্রমন করে, অগ্নিসংযোগ-লুন্ঠন করে এতে মিসেস সাকিল নিহত হয়। সন্ধার পর কিছু দুষ্কৃতিকারি সৈনিক কিছু অফিসারের বাসা লুন্ঠনের সময় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এগুলোকেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করা যায়।
বেশিরভাগ সেনা অফিসার গুলিতে স্বল্প আহত হয়েও পরে রক্তক্ষরনে মারা যায়। কোন বিডিয়ার সৈনিকেই দরবার হলে ঢুকে গুলি করতে দেখা যায় নি। বিকেলের আগে কেউই আহতদের অবস্থা দেখতে আসে নি। বিকেলে বেঁচে যাওয়া বাকি একশত জন অফিসারের ৫০ জন কে একটি পৃথক ভবনে আটকে রাখা হয়। বাকিরা পালিয়ে ছিল। ইউনিফর্ম খুলে পালিয়ে থাকা আরো কয়েকজন সেনা অফিসার কে ধরে ঐ ভবনে রাখা হয়। কিছু তরুন সেনা কর্মকর্তা ব্যাজ ছিড়ে সৈনিকদের সাথে মিশে যায়, কিছু ফ্যামিলী কোয়াটারে অতিথি সেজে থেকে যায়। পরে লুন্ঠনরত সৈনিকরা এদের দেখে চিনে ফেললেও হত্যা বা বন্দি করার চেষ্টা করেনি। এরপর এই ৯০-১০০ জন অফিসার বন্দিদের উপর আর কোন হত্যা প্রচেষ্টা বা নির্যাতন করার সংবাদ পাওয়া যায় নাই। এমন কি ২য় দিন বিদ্রহিদের খাদ্যসঙ্কট দেখা দিলেও বন্দি সেনা কর্মকর্তাদের দের যথাযথ খ্যাদ্য দেয়া হয়েছিল। সবকিছু বিশ্লেসন করে এতে কোন সুপরিকল্পনার ছাপ দেখা যায় না।
আপাত দৃষ্টিতে বিদ্রোহ পরিকল্পিত হলেও এই হত্যাকান্ড সুপরিকল্পিত বলা যাচ্ছে না। এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হয়ে থাকলে বাকি বন্দি ১০০ জন সেনা কর্মকর্তা বেঁচে থাকার কথা না। বরং এই বিদ্রোহটিকে আনাড়িপনা ও বিশৃক্ষল বিদ্রোহ বলা যায়। এটি কোন সংগবদ্ধ চক্রের পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হয়ে থাকলে লাশ লুকানোর জন্য বা নিগোসিয়েশন এর নামে অযথা দুইদিন সময় নষ্ট করতো না। হত্যাকান্ড ঘটে যাওয়ার পর তাদেরকে অস্থির ও সিদ্ধান্তহীনতা দেখা গেছে। পরবর্তিতে তারা আর কোন হত্যাকান্ড ঘটায়নি।
যদিও অনেক সেনা কর্মকর্তা এটাকে সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে থাকে। বলে একটি প্রতিবেশী দেশের সিমান্তরক্ষী হত্যার প্রতিশোধ নিতে আওয়ামি সরকারের সহায়তায় পরিকল্পিত ভাবে সেনা নির্মুল ঘটনা। বলে দরবার হলে ঢুকে গুলি করা হয়েছিল। পাবলিককে আবাল পাইছে আর কি? অনেক মতলববাজ বিষেশজ্ঞ নামধারি অবঃ উলংগ ভাবে মিথ্যা আর ভুল তথ্য দিয়ে বলে - নানক সহ সরকারের মন্ত্রী এমপিরা হত্যায় জরিত! নবনির্বাচিত সরকারের মদদেই এই হত্যাকান্ড।
বিভ্রান্তিকর মন্তব্য
বিদ্রহের ১২ ঘন্টা পর বহুল আলোচিত প্রাক্তন বিডিয়ার মহাপরিচলক জেনারেল অবঃ ফজলুর রহমান সহ দুজন প্রাক্তন BDR প্রধান BBC কে একটি সাক্ষাৎকার দেন। তিনি এই বিদ্রহের কারন হিসাবে সরাসরি BDR পরিচালকদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। ডিজি সাকিল গং দের তীব্র সমালোচনা করে বলেন দুর্নিতি, অনিয়ম এবং পরবর্তিতে “কমান্ড ফেইলিওরের” কারনে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। তত্তাবধায়ক সরকারের সেইসময়ের কিছু কর্মকান্ডও সৈনিক অসন্তোষের কারন বলে উল্লেখ করেন। BBC কে তিনি আরো বলেন তার আমলেও সৈনিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছিল। তিনি কতৃপক্ষকে শক্তিপ্রয়োগ না করে শান্তিপুর্ন ভাবে মোকাবেলা করতে পরামর্শ দেন।
তার BBC কে দেয়া বক্তব্য যুগান্তর, আমারদেশ, প্রভৃতি পত্রীকায় পরদিন ফলাও করে প্রকাশীত হয়।
বিডিআরের প্রাক্তন পরিচালক মেজর জে: (অব) ফজলুর রহমানের BBC তে সাখ্যাতকারের অংশ (যুগান্তর)
বিষ্ময়কর ব্যাপার হল এর দুদিন পর এই ফজলুর রহমানই ভোল পালটে ফেলেন।
যায়যায়দিন পত্রীকায় সাখ্যাৎকারে সরকারের সমালোচনা করে বলেন প্রথম দিন ঘটনার পর পরই আলোচনায় সময় নষ্ট না করে সেনা অভিযান চালানো হলে নাকি অনেক জীবন বাঁচানো যেত.!! কিভাবে উদ্ধার অভিযান চালানো দরকার ছিল? তিনি কোন ব্যখ্যা দেন নি।
ভেতরে প্রায় ৯০-১০০ জন সেনা জিম্মি আর পরিবার বর্গ সহ তিনশতাধিক বেসামরিক ব্যক্তি, ১৬,০০০ বিদ্রোহী। সেইসময় সেনা অভিযান চালানো হলে অবস্থা হত ভয়াবহ, জিম্মিদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যাবহার করত বিদ্রোহীরা। লাশের সংখা ২-৩ হাজার হত, আর দেশব্যাপি ছড়িয়ে থাকা ক্যাম্পের সৈনিকদের প্রতিশোধমুলোক পালটা হামলায় দেশজুড়ে উম্মত্ত তান্ডব সুরু হয়ে যেত, তখন এই স্বঘোষিত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফজলুর রহমানরাই বলতেন সরকারের আনাড়ী সিদ্ধান্তের কারনেই এই বিপুল রক্তপাত। অতচ এই ফজলুর রহমানই বিদ্রোহের প্রথম দিন BBC র সাথে টেলিফোন সাক্ষাতকারে না না কাহিনী গাইলেও তার কোন বক্তব্যেই দ্রুত সেনা অভিযানের কোন তাগিদ দিতে দেখা যায় নি। ..। ২৬ ও ২৭ তারিখের কোন পত্রিকায় কেউ কোন দ্রুত সেনা হামলা চালানোর তাগাদা দেয়ার কথা খুজে পাই নি। বরং বেশিরভাগ পত্রিকাই বিডিআর সৈনিকদের নির্যাতিত-অবহেলিত হওয়ার কাহিনীই বেশী তুলে ধরেছে। ২৭ তারিখে বিএনপির একটি দুতিন লাইনের বিবৃতিও দেখলাম, সেখানেও দ্রুত সেনা অভিযানের তাগিদ নেই।
চলবে ..
পরবর্তি অংশ -
২য় পর্ব - যে কারনে সেনা অভিযান সম্ভব হয়নি
৩য় পর্ব - জেনারেল শাকিলের পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট
NB:- এই পোষ্টের প্রায় সকল তথ্য ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ এ প্রকাশিত দৈনিক পত্রীকাগুলো ও বিদ্রোহের ৩য় বার্ষিকীতে প্রথম আলো থেকে নেয়া, ছবি ফেসবুক ও গুগল থেকে প্রাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭