যে কারনে ঝটিকা সেনা অভিযান করা সম্ভব হয়নি।
এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্যে প্রথম দিন সেনারা অভিযান দূরে থাক বিডিআরদের সাধারন আক্রমন সামাল দেয়ার মত প্রস্তুতিও ছিলনা। ১১.৪০ এ ব্রিগেড কমান্ডার আনোয়ারের নেতৃত্বে দুটি ব্যাটারি (ভারি বিমান বিধ্বংসি কামান উপকরন সহ সৈন্যদল) এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড নিউমার্কেট, সাইন্স ল্যাব, সাতমসজিদ রোডে মোতায়েন করা হয়।
এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড, পিছিয়ে নেয়া হয় ধানমন্ডি ১৫ নং রোডের কাছে
এই বাহিনী অস্ত্রসস্ত্র সুধুমাত্র বিমান হামলা প্রতিরোধ করা ছাড়া অন্যকোন কাজে ব্যাবহার করা যায় না, এই বিমান বিধ্বংসি কামানের গোলার ফিউজ বিশেষভাবে তৈরি, এই কামানের গোলা সর্ব্বচ্চ উচু তে উঠে নিচে পড়ার পুর্বমুহুর্তে আকাশেই বিষ্ফোরিত হয়, কামানের নলও বেশী করা নিচু করা যায় না। তাই এই কামান কোন অবস্থাতেই ভুমিতে আক্রমনের উপায় নাই। সুধু শব্দ ভিতি শৃষ্টি করা সম্ভব। সেটাও পরবর্তিতে আরেকটি ঝামেলরপুর্ন বিপদের শৃষ্টি হত, অবিষ্ফোরিত গোলাগুলো খুঁজে অপসারন করার।
এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডের ভারি বিমান বিধ্বংসি কামান ও অন্যান্ন উপকরন সাতমসজিদ রোডে জিগাতলায় মোতায়েন করা হচ্ছে।
সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে বিমান বিধ্বংসি ইউনিট এসে মেডিনোভার মোড়ের কাছে প্রধান সড়কটির নিয়ন্ত্রন নিতে দেখা যায়। এই আকাশ যোদ্ধারা যে স্থল যুদ্ধের জন্য সম্পুর্ন অনুপযুক্ত ছিল। এটা প্রমানিত হয় প্রথমেই কমান্ডিং অফিসারের গাফলতি দেখে, গানারদের মোতায়েন করে লাইন অব ফায়ারের ভেতর প্রধান সড়কের মাঝে। নাই কোন কংক্রীটের আড়াল, নাই বালুর বস্তার প্রতিবন্ধক। আর্মির দেখা পেয়েই ৪নং গেট ট্রাষ্ট ব্যাঙ্কের পাস থেকে বেপরোয়া ভাবে গুলি বর্ষন করা সুরু করে BDR, কানফাটানো মেসিনগানের ঠা ঠা ঠা শব্দে দিক-বিদিক ছুটাছুটি সুরু হয় পাবলিকের। কামানের কাছে দন্ডায়মান তিন-চারজন সেনা কবুতরের মত গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পরে। জিগাতলায় সেই দিন উপস্থিত গনমাধ্যম কর্মিরা তাদের আনাড়িপনা দেখে বিস্মিত হয়ে যায়। তারা সেনা মোতায়েনের সময় উপস্থিত পুলিশের পরামর্শ পর্যন্ত নেয়নি,
পরে তাদের লটবহর ১৫ নং কেয়ারি প্লাজার কাছে পিছিয়ে নেয়া হয়। গুলিবিদ্ধ সৈনিকদের CMH এ নেয়া হলে দুজনকে মৃত ঘোষনা করে। মৃত্যুর ঘটনাটি কঠোর ভাবে গোপন রাখা হয়, হয়তো সেনা মনবল হারানোর ভয়ে বা যুদ্ধ কৌশলও হতে পারে।
এই অপর্যাপ্ত উপকরন নিয়ে কেন "ঝটিকা অভিযান" চালানো হয়নি, এ নিয়ে এখনো কান্নাকাটি করে অনেক অবঃ ..
যেসব মতলববাজ সেনা কর্মকর্তা বলে তাৎক্ষনিক সেনা অভিযান চালাতে সরকার বাধা দিয়েছে, এদের কে ধরে থাবরানো দরকার। তাৎক্ষনিক কেন প্রথম দিন আক্রমন দূরে থাক এই ঢিলা বাহিনির আক্রমন সামাল দেয়ার ক্ষমতাও ছিলনা। তাহলে কেন তাদের হাজির করা হয়েছিল ? আমার ধারনা কারন একটাই, এই এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড ঢাকার সবচেয়ে কাছে বিমান হামলা থেকে বিমানবন্দর রক্ষায় মোতায়েন এবং এরা ২৪ ঘন্টাই পালা ক্রমে প্রস্তুত অবস্থায় থাকে। সুধুমাত্র এই বাহিনীটিকেই ২ ঘন্টার ভেতর মোতায়েন করা সম্ভব ছিল। কিছু না করার চেয়ে কিছু একটা মোতায়েন করা দরকার ছিল।
বিকেলের দিকে সাভার থেকে চার-পাঁচটি APC ও ট্যাঙ্ক হাজির করা হলেও এর কোন অস্ত্র, গোলা-বারুদ ছিলনা, ট্যাঙ্কের গোলাবারুদ রাজেন্দ্রপুরের একটি ভিন্ন অস্ত্রাগারে রক্ষিত ছিল। সে গুলো এনে ট্যাঙ্ক ও কামান প্রস্তুত করতে করতে বিকেল-সন্ধ্যা পর্যন্ত লেগে গিয়েছিল। (পরবর্তিতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সেনা কর্মকর্তারা এভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন) সন্ধ্যা পর্যন্ত APC (ট্যাঙ্ক) এ মেসিনগান ও যন্ত্রপাতি লাগাতে দেখা গেছে। এইসব সেনারা রিয়েল যুদ্ধ লাগলে যে কি অবস্থা করবে ...!
আর্মাড পারসোনাল ক্যারিয়ার (APC) ও ট্যাঙ্কে মেসিন গান ফিট করা হচ্ছে, সাতমসজিদ রোড আবাহনি মাঠের কাছে
২য় দিন তাদের ট্যাঙ্ক ও কমান্ডো বাহিনী সহ পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু তাদের ডাইরেক্ট কমান্ডো অপারেশন চালানোর কোন পরিকল্পনা চোখে পড়েনি, হয়তো নিজেরা অধিক হতাহত হওয়ার ঝুকি নিতে চায়নি। ১নং গেট (সিনেমা হল সংলগ্ন) এবং ৫ নং গেট (হাজারিবাগ) সেনা অভিযান চালানো ও জিম্মি মুক্তির সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান ছিল, ৫ নং গেট থেকে ১০০ গজ দূরে সেই দরবার হল,গেট থেকেই দেখা যায়! যেখানে ৫০ অফিসার তখনো জিম্মি!
এই গেট এলাকাটি আমার মতে সবচেয়ে কৌশলগত সামরিক পজিশন। লেদার টেকনলজি কলেজে থেকে ঘন বসতি বিল্ডিঙ্গের ফাঁকে ফাঁকে পজিশন নিয়ে দ্রুত অগ্রাভিযানের সবচেয়ে কার্যকর স্থান, কিন্তু সেখানে কোন সেনা উপস্থিতি দেখা যায়নি। বরং কিছু বিডিআর সৈনিককে রাস্তার টং দোকানের কাছে বিড়ি ফুকতে দেখা গেছে।
এই ম্যানহোলে লাশ লুকানোর চেষ্টা হয়েছিল। লাশ পরে কামরাঙ্গির চরের ড্রেনেজে ভেসে গিয়েছিল
৫নং গেট থেকে মাত্র ১শ গজ দূরে বিদ্রোহের মুলকেন্দ্র দরবার হল, অতচ সেই পয়েন্টে একটি সেনাকেও দেখা যায়নি। মুখচোরারা হয়তো বলবে হাসিনা সেখানে যেতে দেয়নি, এটা বলা হাস্যকর হবে কারন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা প্রথমদিন সকালেই সেনামুভমেন্টের অনুমতি দিয়ে প্রয়জনিয় সকল ব্যাবস্থা নেয়ার নির্দেশ জারি করেছিলেন। তাৎক্ষনিক সেনা আক্রমনের না করা হলেও ঝটিকা অভিযানের সর্বাত্বক প্রস্তুতি নিয়ে প্রয়জনীয় কৌশলগত অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর যমুনা কার্যালয়ে তিনবাহিনী প্রধানের কমান্ডে সকল বাহিনীপ্রধান সেখানে উপস্থিতিতে প্রয়জনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছিল। এখন এইসব অদ্ভুত দাবি ফাজলামি ছাড়া কিছু না। আমার ধারনা সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের এত কাছে যেয়ে পজিশন নিয়ে মারমুখি বিদ্রহিদের গুলির মুখে পরতে চায়নি। রিয়েলটাইম যুদ্ধে এরা যে কি করবে এখনি বোঝা যায়।
প্রথম দিন সন্ধ্যার পর একদফা অস্ত্র জমা দেয়ার পর, কিছু চরমপন্থি গ্রুপ দ্বিতীয় দিনেও অস্ত্র সমর্পন করতে টালবাহানা করে। এরপর সর্বাত্বক হামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়, সেটাও সরাসরি সম্মুখ হামলার না। নিজেরা আহত হওয়ার কোন ঝুকিই নেয়নি। সিলেট থেকে C130 বিমানে মার্কিন ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্যারাকমান্ডো আনা হলেও তাদেরও সম্মুখ হামলার ঝুকি নিতে বলা হয়নি। তাদের কোন তৎপরতাও চোখে পড়েনি। ভেতরে প্রায় ৯০জন জিম্মি আর্মি অফিসার, তিনশতাধিক বেসামরিক জিম্মি জীবিত থাকার পরও প্রস্তুতি নেয়া হয় ধ্বংসাত্বক ভারি আর্টিলারি (কামান) হামলার!
আবাহনির মাঠে জড়করা গোলোন্দাজ ও সাঁজোয়া বাহিনীর ভারি অস্ত্র-সস্ত্র
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ স্টাইলে ভারি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আর্টিলারি ব্রীগেড আবাহনির মাঠ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে একযোগে কামানের গোলাবর্ষন করে নিজেরা নিরাপদ থেকে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ ভাংগার প্রানঘাতি পরিকল্পনা নেয়া হয়। গোলাবর্ষনের মাধ্যমে নির্মুল করার পর APC আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার (ট্যাঙ্ক এর মত দেখতে) প্রবেশ করার পরিকল্পনা হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে পিলখানার আসেপাসের ৩ কিলো এলাকার লোকজন সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়া হয়।
(এদের কামানের একুরেসি-এরর ৩ কিলো? বজলুল হুদার কামানও মনে হয় এর চেয়ে একুরেট ছিল, ৩২ নং বঙ্গবন্ধুর বাসা লক্ষ করে নিক্ষিপ্ত কামানের গোলাগুলো পরেছিল ২ কিলো দূরে জেনেভা ক্যাম্পে)
এত ঘনবসতি এলাকা থেকে ২০-৩০ লক্ষ ইভাকুয়েশন এরপর যুদ্ধক্ষেত্রের মত কামান হামলা, আটক ৯০ অফিসার ও ৩০০ জিবিত জিম্মির নিরাপত্তার কি পরিনতি হবে? কোন ব্যাবস্থা বা কৌশল চোখে দেখা যায় নি, কি ভয়াবহ রক্তপাত হত সেটা মোটেই বিবেচনায় নেয়নি। আসেপাসের বেসামরিক জানমালের ক্ষতির কথা নাহয় বাদই দিলাম।
তার দরকার হয় নি। প্রধানমন্ত্রীর কড়া হুশিয়ারি দেয়া ভাষনের পরপরই বিদ্রোহীরা দ্রুত অস্ত্রসমর্পন শুরু করে।
বিদ্রোহ সামাল দিতে কতৃপক্ষের কি কোন গাফলতি ছিল?
না। কিছু ত্রুটি ও বিশৃক্ষলা থাকলেও এজাবত প্রাপ্ত সবগুলো রিপোর্ট পর্যালোচনা করে, বিদ্রোহ সামাল দেয়ার প্রক্রিয়ায় কোন বড় গাফলতি চোখে পড়েনি।
জিম্মিদের ছাড়িয়ে আনা, কোন রক্তপাত ছাড়াই, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপুর্ন ভাবে অস্ত্র সমর্পন।
জিম্মিরা বের হয়ে আসছে। ছবি এসোসিটেট প্রেস
৯০ জন অফিসার জ্যান্ত উদ্ধার। তিন শতাধিক মহিলা-শিশু সহ বেসামরিক জিম্মি জ্যান্ত উদ্ধার। কোন শক্তিপ্রয়োগ ব্যাতিরেকেই মাত্র ২৯ ঘন্টার ভেতর বিদ্রহের সমাপ্তি।
লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে সবাই প্রায় একই সময় (আনুমানিক ৯-৩০ মিঃ থেকে ১০টা) নিহত হয়েছিল। শুধু মিসেস শাকিল সহ গুটিকয় অফিসার সহ কিছু নন আর্মি পারসন কয়েক ঘন্টা পর নিহত হয় ।
সকাল সড়ে নটার দিকে জেঃ সাকিলের ফোন পেয়ে সেনা প্রধান মইনইউ আহাম্মেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ঘটনাটি জানিয়ে ফোন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষনিক তিন বাহিনী প্রধান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে তার দফতরে তলব করেন। সেনাপ্রধান কে প্রয়জনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে বলেন। সেনাপ্রধান বলেন ট্রুপস রেডি করতে কমপক্ষে দুঘন্টা লাগবে, উনি গাড়ীতে আসতে আসতে ঘটনার আপডেট জানাতে ত্থাকেন। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পুলিশের আইজি নুর মহম্মদও হাজির হন।
দফায় দফায় বৈঠক হয়। প্রধান মন্ত্রী উপস্থিত বাহিনীপ্রধানদের কাছে অভিযানের পরামর্শ চান। তারা সবাই ভেতরের অবস্থা না বুঝে এখনি রেইড চালানো ঠিক হবেনা বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন।
RAB এর একটি দলকে পাঠানো হয়েছিল ৩ ও ৫ নং গেটে, বন্দিদের বর্তমান অবস্থা, বিদ্রহীদের সংগে কথা বলার জন্য কিন্তু বৃষ্টির মত গুলিবর্ষনে রেবের দলটি পিছু হটতে বাধ্য হয়। এর পর কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাদের সংগে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ইতিমধ্যে কিছু TV সংবাদ কর্মি বিদ্রোহিদের সাথে কথা বলতে সক্ষম হয়, তাদের বক্তব্য ছিল অস্পষ্ট, বোঝাই যাচ্ছিল অন্য প্রান্তের কোন অবস্থা তাদের জানা নাই
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী অত্র এলাকার সাংসদ ফজলে নুর তাপস, জাহাংগির কবির নানক ও মির্জা আজম এবং কে দায়ীত্ব দেন, বিদ্রোহিদের সংগে নিগোসিয়েশন এবং ভেতরের অবস্থা জানার জন্যে।
এরা বিকেল ৩টার দিকে রাইফেলস স্কোয়ারের কাছে ৪ নং গেটে হেটে গেটের দিকে যেতে থাকেন। কিন্তু বৃষ্টির মত গুলিবর্ষনের মুখে কয়েক দফা তাদের যাত্রা বাতিল করতে হয়।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মেগাফোনে বার বার বিদ্রোহীদের গুলিবর্ষন বন্ধ করে কথা শুনতে বলেন।
উপস্থিত সামরিক কর্মকর্তারা এভাবে ভেতরে প্রবেশ অত্যন্ত ঝুকিপুর্ন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন, এত ঝুঁকি না নিয়ে চিঠি দিয়ে একজন টোকাই কে পাঠানোর জন্য মতামত দেন। ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ সম্ভব হয়, তারা গুলিবর্ষন বন্ধ করতে সম্মত হয়। দুইঘন্টা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার পর নানক একাই একটি সাদা পতাকা নিয়ে গেইটের ভেতর ঢুকতে রাজি হন।
নানক ভেতরের দিকে যেতে থাকেন। এরপরও থেমে থেমে গুলিবর্ষন চলছিল। নানক যে কি ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়েছিলেন ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। কারন ভেতরে বিশৃক্ষল বিদ্রোহীদের একাধিক গ্রুপ ছিল, একটি গ্রুপ যেকোন নিগোসিয়েশনের ঘোর বিরোধি ছিল, তারাই লাশ লুকিয়েছিল।
এই গ্রুপটি নিশ্চিতভাবেই জানত নিগোসিয়েশনে সাধারন ক্ষমা করা হলেও কোন অবস্থাতেই তারা মাফ পাবে না। লাশ লুকানোর জন্য তাদের একটি রাত দরকার ছিল। তারাই গুলি করছিল। অতচ একটি বড় পক্ষ প্রমান তো দুরের কথা, কোন সুনির্দিষ্ট কারন ছাড়াই নানককে খুনের মুল হোতা বলে, আর তাদের কথায় অনেক শিক্ষিত আবাল তা বিশ্বাসও করে।
এরপর বিদ্রোহীদের আন্তসমর্পনের আহবান জানান হয়, বিনিময়ে সাধারন ক্ষমা। বিদ্রোহীরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সাধারন ক্ষমার ব্যাপারটার নিশ্চয়তা চান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সিদ্ধান্ত হয়,
এখুনি বেসামরিক মহিলা শিশু সহ জিম্মিদের ছেড়ে দিতে হবে।
অস্ত্র সমর্পন আজ রাতের মধ্যেই সারতে হবে।
আটক সেনা কর্মকর্তাদের অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দিতে হবে।
সন্ধ্যার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা নিজেই অস্ত্র সমর্পন ও জিম্মি উদ্ধার পর্যবেক্ষন করতে পিলখানার ভেতরে যান। হাসিনার ব্যক্তিগত বুলেটপ্রুফ মার্সিডিস জিপটি একজন SSF ড্রাইভার সহ সাহারা খাতুন কে দেয়া হয়। পুলিশ IG নুর মহম্মদ সাহারার সাথে সহযাত্রী হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারন নুরমহম্মদের জামাতা ভেতরে নিখোজ। রাত্রি তিনটার সময় সাহারা খাতুন কে একজন মহিলা ক্যাপ্টেন সহ জিম্মি ৬০-৭০ জনের একটি দল নিয়ে বের হতে দেখা যায়।
সেই রাতে বেশ কিছু সৈনিক অস্ত্রসমর্পন করলেও শহিদুলের নেতৃত্যে একটি কট্টর পন্থি গ্রুপ সাধারন ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহ চালিয়ে যেতে থাকে।
এই শহিদুল সহ আট-দশ জনই আসল খুনি। খুন করে দরবার হলের দরজা বন্ধ করে রেখেছিল। তারা ভালভাবেই জানতো লাশ পাওয়ার পর সাধারন ক্ষমা কোন অবস্থাতেই প্রযোজ্য হবেনা, আর বিশ্বাস ভংগের কারনে সাধারন সৈনিকদের আক্রমনের শিকার হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা। পরে সব লাশ গভীর সুয়ারেজ ম্যানহোলে ফেলে সাধারন বিদ্রহিদের কাছে হত্যা গোপন করার প্লান ছিল। কিন্তু পানির চাপে কয়েকটি লাশ কামরাঙ্গিচর খাল দিয়ে ভেসে গেলে তা ভেস্তে যায়। পরে রাতে বাকি লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়। পিলখানার পশ্চিমদিকটা খুনিদের নিয়ন্ত্রনে ছিল। সাধারন বিদ্রহিদের কিছুই বুঝতে দেয়নি।
২৯ঘন্টা পর বিদ্রোহের অবসান, কর্নেল কামরুজ্জামান ও জিম্মি অন্যান্ন অফিসাররা বেরিয়ে আসছেন
সকালে সকল বেসামরিক জিম্মিকে বের করে আনা সম্ভব হয়। এরপর ৯০ জন জীবিত সেনাকর্মকর্তাকে বের করে আনা হয়। ইতিমধ্যে অস্ত্রসমর্পন শেষ করে সকল স্থাপনার নিয়ন্ত্রন আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ানের হাতে আসার পর বিদ্রহের সমাপ্তি হয়।
আর কোন সহিংসতা ও রক্তপাত ছাড়াই পরিস্থিতি সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। সাকিল সহ ৬১ জন কর্মকর্তা তখনো নিখোজ। পরদিন ২৭ তারিখ শুক্রবার সেনাবাহিনীর দলটি আর্মড ভেহিক্যাল সহ ভারি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে পিলখানায় প্রবেশ করে এবং হতভাগ্য নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
প্রথমে হাজার হাজার বিদ্রোহি পালিয়ে গেছে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে তালিকা তৈরি শেষ হলে পলাতকের সংখা মাত্র ১৯ বলে জানা যায়।
শহিদুল সহ চার পাঁচ জন খুনি বাসে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় RAB এর তল্লাশি চৌকিতে ধরা পরে এখন বিচারাধিন আছে।
৩য় পর্ব - জেনারেল শাকিলের পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট
১ম পর্ব - কি ঘটেছিল সেদিন দরবার হলে.?
NB:- এই পোষ্টের প্রায় সকল তথ্য বিদ্রোহের ৩য় বার্ষিকীতে প্রথম আলো ও ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ এ প্রকাশিত দৈনিক পত্রীকা গুলো থেকে নেয়া, ছবি ফেসবুক ও গুগল থেকে প্রাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০