somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগে ফেবু ও ব্লগে কিছু ছেচড়া কুকুর এসব নিয়ে মাতামাতি করতো, এখন ম্যাডাম নিজেই

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২য় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার ২ কোটি লোক প্রাণ হারিয়েছিল।
২য় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালে ইউরোপ ও ভুমধ্যসাগর অঞ্চলে মোট ৬০ লাখ ইহুদী মারা হয়েছিল।
মাওসেতুং উথ্যান পরবর্তি সময় চীনে দুর্বিক্ষে ১ কোটির বেশী লোক না খেয়ে মারা গেছিল।

এসবগুলোই রাউন্ড ফিগার। লাশ কেউ গুনে দেখেনি।
তবুও এগুলো বাস্তব সত্য, চির সত্য। সেসব দেশের কেউ বা অন্যকেউ, এমনকি নাৎসি সমর্থক মহলগুলোও এসব নিয়ে সন্দেহ করে না। কেউ করে না। কারন গণহত্যা বাস্তব সত্য, একুরেট সংখা, তালিকা করা অসম্ভব ও অপ্রয়জনীয়। কারন সেসব দেশে আমাদের দেশের মত পাপিষ্ঠ ছাগু সমর্থক, প্রকাশ্য দেশ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী নেই।
বাংলাদেশ বাদে পৃথিবীর কোন দেশ নিজ দেশবাসিদের উপর নৃসংস আচরনকারি খুনিদের সমর্থন করে না।
নিজদেশে নিজ দেশবাসির উপর হানাদার দ্বারা গণহত্যা অস্বীকার করে না। প্রশ্নই আসে না।
আমাদের দুর্ভাগ্য এসব দেখতে হচ্ছে।

আমাদের দুর্ভাগ্য যুদ্ধকরে জয়লাভের পরও পরাজিত পাপিষ্ঠ ছাগু, স্বাধীনতা বিরোধীদের ও তাদের সমর্থক বড় একটি দলের দেশ বিরোধী আস্ফলন দেখতে হচ্ছে।
আগে শুশিল বা বিরোধী রাজনৈতিক ছোট বড় নেতারা এসব বিতর্ক এড়িয়ে যেত। সুধু ফেবু-ব্লগে ছেচড়া কুকুরগুলো এসব নিয়ে মাতামাতি করতো।
এখন ডিসেম্বরের এই বিজয়ের মাসে বড় একটি জনপ্রীয় দলপ্রধানের মুখদিয়ে এসব শুনতে হল!
ইউরোপের কোন দেশে কেউ এইরুপ বক্তব্য উচ্চারন করলে "হলকষ্ট ডিনায়েল এক্টে" তার দেড় বছর জেল হতো কনফার্ম।

কিছু তথ্য সংযোজন।

৭২ এ ৮ই জানুয়ারী মুক্ত হয়ে বংগবন্ধু লন্ডনে বিবিসির কাছে সাখ্যাতকারে, হঠাৎ না জেনেই ৩০ লাখের কথা বলেন নি।
১০ তারিখ ঢাকায় ফিরেও একই কথা বলেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে মে মাসে গ্রানাডা টিভিতে একটি ডকুমেন্টারিতে খালেদ মোশাররফ বলেছিলেন ১০ লাখের বেশী নিহতের সম্ভাবনা। (প্রথম দু মাসেই ১০ লাখ!)

১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল ও ৭ জুন মাওলানা ভাসানী সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাছে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার চলছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। মওলানা ভাসানী বিবৃতিতে আরো বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চল আজ দশ লাখ বাঙালির রক্তে স্নাত এবং এই রক্তস্নানের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতা আসবে।

৭১ এর ২৫সে মার্চের পর পাকি সামরিক জান্তা সকল বিদেশী সাংবাদিক ঢাকা থেকে বিতারিত করেছিল। এরপর কোন বিদেশী ঢুকতে দেয়া হয়নি।
মার্কিন টেলিভিশন CBS News ও ন্যাসানাল জিওগ্রাফিক পত্রিকা 'প্রকৃতি গবেষনার' কথা বলে যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা এসে রিপোর্ট লিখেছিল -
পুর্বপাকিস্তানে ভয়াবহ গণহত্যা হচ্ছে, নিহতের সাম্ভ্যাব্য সংখা ২ মিলিয়ন ক্রস করতে পারে। (যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়েই ২০লাখ)

কবি আসাদ চৌধুরী ৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে “বারবারা বিডলারকে” নামে একটি অসাধারণ কবিতা লেখেন, সেখানে নিহতের সংখ্যা ১৫ লাখ উল্লেখিত ছিল।

লন্ডনে প্রকাশিত হ্যাম্পস্টেড এন্ড হাইগেট এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১ অক্টোবর ১৯৭১ সালে ২০ লাখ মানুষকে হত্যার কথা বলেছে।

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের গৌরবময় খবর প্রথম পাতায় ছাপিয়ে তাশ বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে সোভিয়েট পত্রিকা প্রাভদা লিখেছিল ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) নিহত হওয়ার কথা। ঢাকার ইংরেজি দৈনিক অবজারভার পত্রিকা প্রাভদায় ছাপা প্রতিবেদনের আলোকে ৩০ লাখ উল্লেখ করে একটি রিপোর্ট ছাপে।

৭১ এর ডিসেম্বরে বালাদেশের পুর্বদেশ ও আজাদ পত্রিকায়ও ৩০ লাখের কথা কয়েকবার এসেছে।
ডিসেম্বর জুড়ে রেডিওতে বিপুল জনপ্রীয় চরমপত্রে ১৬ই ডিসেমবরের পর "৩০ লাখ ও একসাগর রক্তের বিনিময়ে" বলা হতে থাকে।


৪ জানুয়ারী ৭১, দৈনিক আজাদ।


ঢাকার ইংরেজি দৈনিক অবজারভার পত্রিকা ৪ জানুয়ারী ৭১ প্রাভদা পত্রিকার উধৃতি দিয়ে নিহত ৩০ লাখ উল্লেখ করে।

জামাতি লবিষ্ট নিয়জিত বাষ্টার্ড বার্গম্যান, ক্যাডম্যান ও ভাড়াটে লেখক শর্মিলা বসু একবারও বাংলাদেশে না এসে কোন সুত্র, রেফারেন্স উল্লেখ না করেই ৩ মিলিয়ন সংখাটিকে নজিরবীহিন বলেছেন। জনসংখার ৪% নিহত হওয়া 'অবিশ্বাস্য', বলে আসছেন।
চতুর ভাড়া করা ফরমাসেয়ি লেখক এদেশে না এসে মাঠপর্যায়ে কোন অনুসন্ধান না করে এসেই কথিত টেবিল গবেষনা দিয়ে কিভাবে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করছে ভাবাই যায় না।

অথচ কম্বোডিয়ার খেমারুজরা ২৬০ দিনে তাদের দেশের জণসংখার ২১% খতম করেছিল,
রুয়ান্ডায় ১০০ দিনের দাংগায় মোট জনসংখ্যার ২০% নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছিল।
চীনের নানকিং শহর মাসাকারে এক মাসেই ৩ লাখ নিহত হয়েছিল,
আর্মেনিয়ায় জনসংখ্যা ছিল ৪৩ লাখ। তুর্কি যোদ্ধারা জোড়পুর্বক বাস্তুচুত করে ভিন্ন স্থানে সরিয়ে দিতে নৃসংস ভাবে প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনিয় (জনসংখ্যার ৩৫%) হত্যা করেছিল।

আর বাংলাদেশে, ৮ কোটি জনগণের দেশে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, বিধ্বস্ত চিকিৎসাসেবা (মানুষ স্বল্প আহত হলেই বিনা চিকিৎসা ঔসধপত্রের অভাবে মৃত্যু) আর দেড় লাখ পাকি সৈনিক আর দুই লাখ প্রশিক্ষিত মুজাহিদ-রাজাকার নিয়ে ৩০ লাখ ফিগার, মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪% মানুষের মৃত্যু এদের কাছে অবিশ্বাস্য অসম্ভব মনে হয় কোন কারনে?
১ কোটি শরনার্থি ভারতে যাওয়ার পথেই তো অনেক অসুস্থ বয়বৃদ্ধ মারা পরেছিল। ভারতীয় শরনার্থি শিবিরেও লক্ষাধিকের মৃত্যু হয়েছিল।

পাকিস্তান যুদ্ধ শেষে পরাজয়ের কারন অনুসন্ধান করতে "বিচারপতি হামিদুর রহমান তদন্ত কমিশন" প্রতিবেদনে দেখা যায় - পূর্ব পাকিস্তানে নিয়জিত সামরিক-আধাসামরিক সেনা সদস্যদের নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষনের যতেচ্ছ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। হিন্দু ও আওয়ামী সমর্থকদের দেখা মাত্র হত্যা করতে নির্দেশ ছিল। আর ইয়াহিয়া নিয়াজি সহ সব জেনারেলরা ঘোষনাই দিয়েছিল পুর্বপাকিস্তানে লক্ষাধিক হত্যা করতে। লাহরে পাকিস্তানি সেনাদের এক বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, ‘Kill 3 million of them and the rest will eat out of our hands’. এখানে সুস্পষ্ট যে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম থেকেই পরিকল্পনা ছিল লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে জনসংখার বড় একটি অংশ কমিয়ে ফেলতে।

১৯৭০-৭১ এ বিপুল সংখক মানুষ হঠাৎ নিহত বা নিখোজ হওয়ার অকাট্য প্রমান পাওয়া যায় UNDP এর পপুলেশান গ্রোথ ইন্ডেক্সে মানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তালিকায়, হঠাৎ ড্রপ। 6.5 মিলিয়ন মিসিং ৬৫ লক্ষ মানুষের হিসাব মিলছে না। ৭০ এর ঘূর্ণিঝড় ও ৭১ গণহত্যায় বিপুল সংখক নিহতের সমর্থনে এটাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল।

কিন্তু এতকিছু বলেও লাভ হবেনা। কুলাঙ্গার এদেশীয় পাকি সমর্থকরা আবার নতুন স্টোরি তৈরি করবে।
বঙ্গবন্ধু তখন সুধু ৩ লক্ষ বা ১ লক্ষ বললেও লাভ হত না, ওরা তখন আরো কমিয়ে শুধু ৩ হাজার বলতো, তালিকা দাবি করতো।
সম্পুর্ন তালিকা করা হলেও ওরা বিশ্বাস করত না, ডেথ সার্টিফিকেট দাবি করতো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×